ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-৩৭

0
1501

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৩৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” হ্যাই, রাত্রি! ”
পিছন থেকে পুরুষালি ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে আভা আর আহনাফ দুজনই পিছন ফিরলো। কে ডাকলো আভাকে?
কিন্তু, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছেলের দিকে তাকিয়েই আহনাফের মুখ শক্ত হয়ে গেলো। চোখে ঝিলিক দিলো, সুপ্ত রাগের আভাস! আভা নিজেও চিনতে পারলো না সেই শ্যামবর্ণের ছেলেকে! ছেলেটা মৃদ হাসি নিয়ে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। আহনাফের দিকে একনজর তাকিয়ে আভার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” হ্যাই, আমি নুহাশ। মিনহাজের বন্ধু। ”
‘ মিনহাজের বন্ধু ‘ কথাটা শুনে আভা তেমন অবাক না হলেও, অবাক হলো আহনাফ। নুহাশের দিকে তাকালো আহনাফ। চোখে প্রশ্নের ছাপ! জিজ্ঞেস করলো,
— ” তুই মিনহাজের বন্ধু? ”
নুহাশ হেসে উত্তর করলো,
— ” কেনো? হতে পারি না? ”
আহনাফ আর ব্যাপারটা ঘাটালো না। আভার দিকে চেয়ে থমথমে কণ্ঠে বলল,
— ” এখান থেকে চলো, আভা। আমার তোমার সাথে কথা আছে। ”
আভা আহনাফের চোখে তাকিয়ে বুঝলো, আহনাফ এই মুহূর্তে মারাত্মক রেগে আছে। তাকে এখন হাবিজাবি প্রশ্ন করা মানেই বিপদ! আর সিংহের রাগের কাছে বরাবরই আভা পরাজিত। তাই, নুহাশের দিকে চেয়ে সৌজন্যসুলভ বললো,
— ” আপনি কোল্ড ড্রিংকস নিবেন? ওদিকটায় আছে। ভাইয়াও আছে সেখানে। এনজয়! ”
নুহাশ হেসে উত্তর করলো,
— ” থ্যাংক ইউ, সুইট লেডি। ”
‘ সুইট লেডি ‘ শব্দটা আহনাফকে রাগানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল। সে দাতে দাত চেপে আভাকে বললো,
— ” চলো আমার সাথে। ”
অতঃপর আভাকে টেনে নিয়ে আসলো নুহাশের সামনে থেকে।

ছাদের একপাশে এসে দাঁড়ালো আহনাফ। আভাকেও টেনে নিজের সামনে দাড় করালো। আভা এখনো আহনাফের রাগের কারণ ধরতে পারছে না। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে আহনাফের দিকে। আহনাফের এমন ধোঁয়াশা ব্যাবহার তার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। আভা ভয় ভয় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— ” আপনি তখন..? ”
— ” অ্যাই লাভ ইউ! ”
আচমকা আহনাফের বলা কথা শুনে আভা থতমত খেয়ে গেল। তবে, অন্যদিনের মত অস্বস্তি হলো না। বরং, উত্তর দিতে মন চাইলো এই বাক্যের। তবে, কোথাও যেন একটা সংকোচ রয়ে গেলো। গলার মাঝেই বাঁধা পড়ে গেলো বহু প্রতীক্ষিত উত্তরটার। আহনাফ আভার দিকে এগিয়ে এসে আভার দুবাহু খামচে ধরলো। আভার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,
— ” তুমি খুব ভালো করেই জান, আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার উপর কেউ নজর দিক, সেটা আমার মোটেও পছন্দ না। নিজেকে কখনোই অন্যের জন্যে এভেইলেবল করে দিবে না। কারণ তুমি আহনাফের চয়েজ। আর আহনাফের চয়েস সবসময় অমূল্য, দুর্লভ! গেট ইট? ”
আভা হতবম্ভের মত আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফের মুখে ‘ ভালোবাসি ‘ শব্দটা এই প্রথম শুনেনি ও। এর আগে বহুবার আহনাফ বলেছে সেই শব্দ। তবুও, আজকের বলা শব্দটা অন্যদিনের চেয়ে আলাদা। একদম আলাদা। আভার মনে হচ্ছে, তার কান স্বার্থক! একটা ছেলে তাকে পাগলের মত ভালবাসে, এক মেয়ের কাছে এর চেয়ে বড় পাওনা আর কি থাকতে পারে পারে? আহনাফ আভার চুপ থাকা দেখে আবারও বললো,
— ” সে সামথিং? ”
আভা কাপা কণ্ঠে উত্তর করলো,
— ” কি বলব? ”
— ” তুমি কি এখনো আমায় ভালোবাসতে পারো নি, বউফ্রেন্ড? ”
আভা কেপে উঠলো। আহনাফের কণ্ঠে কিছু একটা ছিলো। যা ওর মধ্যে থাকা সমস্ত ইন্দ্রিয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। আভা এবার কোনো উত্তর করলো না। কিন্তু এটা বেশ বুঝতে পারছে, আহনাফের প্রতি আভা দুর্বল হয়ে গেছে। ততটা দুর্বল, যতটা দুর্বল হলে আহনাফ নামক মানুষটা আভার আকৃষ্টে পরিণত হতে পারে। আভাকে চুপ থাকতে দেখে আহনাফ একটু কষ্ট পেলো। সে আভার বাহু ছেড়ে দিয়ে পিছন ফিরলো। কোমরে এক হাত রেখে আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে শান্ত সুরে বললো,
— “জাস্ট, ফরগেট ইট। কেউ তোমাকে ডাকছে। যাও, দেখে আসো। ”
আভা ছলছল চোখে তাকালো আহনাফের দিকে। আহনাফ কি তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন? আর কতই বা সহ্য করবেন? একটা মানুষ তোমাকে পাগলের মত ভালবাসে, কিন্তু তার সেই ভালোবাসার বদৌলতে তুমি প্রতিদান স্বরূপ শুধু কষ্টই দিয়ে গেলে।এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে?

— ” আভা, গো ফ্রম হেয়ার। একটু একা থাকতে চাই আমি। প্লিজ। ”
আভা দু একবার ঢোক গিলে কান্না আটকালো। তবুও, এক চিকন জলের রেখা গড়ালো তার চোখে বেয়ে। দুহাত দিয়ে চোখ মুছে আভা চলে এলো সেখান থেকে।
________________
— ” তুই মেয়ে, নাকি? এখনো জিজুকে ভালোবাসি বলিস নি। হাও রুড, ইয়ার! ”
আভা মুখ ভার করে বসে রইলো চেয়ারে। কি বলবে? কিছুই বলার নেই তার। সিনথিয়া এবার বলে উঠলো,
— ” তাহলে,এখন গিয়ে বলে দে। বলে দে যে, আহনাফ তোমাকে দেখলে আমার মনে কুচ কুচ হোতা হে,, কিয়া কারো হাই, কুচ কুচ হোতা হে! ”
সিনথিয়ার ফাটা গলায় গান শুনে রুম জুড়ে হাসির ধুম পড়ে গেলো। তবে, আভা হাসলো না। সেই মুখ ভার করেই বসে রইলো। সাথী উঠে এসে আভার পাশে দাড়ালো। আভার কাধে হাত রেখে ভাবুক গলায় বললো,
— ” একটা প্ল্যান করা যেতে পারে। ”
‘ প্ল্যান ‘ সবাই উৎসুক হয়ে তাকালো সাথীর দিকে। সাথী আভার দিকে চেয়ে হেসে বললো,
— ” একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করলে কেমন হয়? ”
সবার চোখ মুখ উজ্জ্বল হলো। তারা তাচ্ছিল্যের সহিত বলে উঠলো,
— ” আমরা আর সারপ্রাইজ প্ল্যান? ভুলে যা সেসব।সেসব ক্রিয়েটিভ আইডিয়া আমাদের দ্বারা হবে না। ”
তারার কথা শুনে সবাই মুখ লটকালো। আভা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। ভেজা গলায় বললো,
— ” উনি কষ্ট পেয়েছেন আজ। শুধুমাত্র আমার জন্যে। আমার খুব খারাপ লাগছে,ইয়ার। ”

— ” সব কষ্টের দিন শেষ হোক। আহনাফের বউফ্রেন্ড আবার হেসে উঠুক! ওয়ে হয়ে, চাম্মাকচালো! ”
দরজার সামনে থেকে এক পুরুষালি কণ্ঠ শুনে রুমের সব মেয়েরা তাকালো ওদিকে। নুহাশ হাতে বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। নুহাশকে দেখে আভার মনে পড়ে গেলো, আহনাফের কথা। আহনাফ ইন্ডিরেক্টলি বলেছিল, নুহাশ থেকে দূরে থাকতে। আভা মুখ ফিরিয়ে নিলো। তাকালো আবারও জানালার দিকে। নুহাশ এসে বসলো সোফাতে। বিরিয়ানি চামচ দিয়ে খেতে খেতে বলল,
— ” অ্যাই হেভ অ্যা গ্রেট সারপ্রাইজ প্ল্যান, গাইস! ”
আভা এবার তাকালো নুহাশের দিকে। বাকি সবার চোখ একে একে নিবদ্ধ হলো নুহাশের উপর। নুহাশ বিরিয়ানি প্লেট একপাশে রেখে সবার দিকে ঝুঁকে এলো। ফিসফিস করে বললো,
— ” সমুদ্রের তীর ইজ দ্যা বেস্ট প্লেস ফর লাভার। তোমাদের যা করতে হবে….”
আর শোনা গেলো না কিছু। নুহাদের ফিসফিস আওয়াজে ভাটা পড়লো সমস্ত কথা।
______________________
আজ বিয়ে মিনহাজের। স্টেজে শেরওয়ানি পরে বসে আছে মিনহাজ। তার পাশে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে আরোহী মাথা নিচু করে আছে। আজ আরোহীর উপর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ছে মিনহাজের। আরোহীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। এতে আরোহী লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় রীতিমত আলুথালু হয়ে আছে। মিনহাজ এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো? তার লজ্জা লাগে, জানেনা সে? মিনহাজ সবার অগোচরে আরোহীর কোমর জড়িয়ে ধরলো। আরোহী কেপে উঠলো তাতে। মিনহাজ আরোহীর দিকে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
— ” ভয়ানক লাগছে আজ। এখন শুধু টুপ করে গিলে ফেলার অপেক্ষা, সুন্দরী! ”
ইশ! মিনহাজ কি বলে? একদম যা তা! আরোহী কি গিলে ফেলার জিনিস? মুখে একদম লাগাম নেই। কিন্তু, সবার সামনে মিনহাজকে কিছু বলতেও পারছে না। একদম পুতুল হয়ে বসে আছে স্টেজে। আর মিনহাজ সেই সুযোগটাই লুটছে।

আহনাফ একপাশে দাড়িয়ে আছে। হাতে কোল্ড ড্রিংকস। চোখ ঘুরিয়ে বারবার আভাকেই লক্ষ্য করছে ও। নুহাশ এখানে আছে, তারমানে আভা বিপদে। তাই, আভার উপর সর্বদা নজরদারি করছে ও।

— ” হ্যাই ব্রো! ”
আহনাফের পিঠে এক চাপর মেরে বললো নুহাশ। আহনাফ রক্তচুক্ষ নিয়ে তাকালো নুহাশের দিকে। নুহাশ আভার দিকে চেয়ে বলল,
— ” কেনো মিছেমিছে আভার পিছনে পড়ে আছ, ব্র! আভা তোকে ভালবাসে না। ”
আহনাফ নুহাশের দিকে তাকালো। চোখ বেয়ে যেনো লাভা গড়াচ্ছে। রাগ নিয়ে বললো,
— ” আভা আমাকে ভালোবাসলো কি বাসলো না, সেটা তোকে চিন্তা করতে হবে না। যা, নিজের কাজ কর গিয়ে। ”
নুহাশ হাসলো। বাঁকা হাসি। রিলাক্স হয়ে বললো,
— ” একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক, তাহলে। তুই আজ আভাকে সমুদ্রের তীরে বিয়ের জন্যে প্রপোজ করবি। আভা যদি তোর প্রপোজাল অ্যাকসেপ্ট করে তবে বুঝবো তোর প্রতি আভার ফিলিংস আছে।আর যদি না করে, তবে…বুঝিসই তো! ”
আহনাফ জানে আভার উত্তর কি হবে! তাও, নুহাশকে এক শিক্ষা দিতে সে রাজি হলো এই চ্যালেঞ্জ-এ।

#চলবে
গল্প শেষের দিকে। আর হয়তো দু থেকে তিনটা পর্ব আছে।

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/246908237353744/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here