#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
খা খা রোদ্দুরে তপ্ত আশপাশ।সেই রোদ্দুর গায়ে মেখে আহনাফ এগিয়ে এলো ওদের দিকে। আভা আহনাফকে একনজর দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। কেনো যেনো ওর বুকের স্পন্ধন একটু বেশিই দ্রুত চলছে। মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে হৃদয়টা বেরিয়ে আসবে। আহনাফ আভার দিকে একপলক তাকালো। আভার চোখে মুখে অস্তিরতা দেখে সে মৃদু হাসলো। তারা আর সিনথিয়া আহনাফকে দেখে সুর টেনে বললো,
— ” আসসালামুয়ালাইুম জিজাজি..। ”
আহনাফ ওদের দিকে চেয়ে হেসে বললো,
— ” যেভাবে সালাম দিলে আজকে তো আর লাঞ্চ করা লাগবে না। সালাম শুনেই পেট ভরে গেছে। ”
তারা এবার আভার দিকে তাকালো। আহনাফকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
— ” আভা, তুই সালাম দিলি না জিজুকে? ”
আভা চোখ রাঙিয়ে তারার দিকে তাকালো। তারা সেই চাহনিকে পাত্তা দিলো না। আবারো দাত কেলিয়ে বললো,
— ” দে, সালাম দে। সালাম না দেওয়া ব্যাড মানার্স, জানিস না? ”
আভা কোনো উপায় না পেয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে মিহি সুরে বললো,
— ” আস. আসসালামুআলাইকুম। ”
আহনাফ আভার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে সালামের উত্তর দিলো। আভা সঙ্গেসঙ্গে পাশ ফিরে গেলো। তার দৃষ্টি আপাতত রাস্তার দিকে নিবদ্ধ। চোখের সামনে থাকা এই হাইওয়ে- টাই তার কাছে যেনো খুবই আশ্চর্য এর। আসলেই কি তাই? নাকি এসবই নিজের এলোমেলো দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা মাত্র!
সিনথিয়া জিজ্ঞেস করলো,
— ” তাহ, জিজু আসতে কোনো কষ্ট হয়নি তো? ”
আহনাফ আভার দিকে তাকালে আভা সঙ্গেসঙ্গে নজর চুরি করে। আহনাফ আভার দিকে তার দৃষ্টি স্থির করে বলে,
— “এখন তাকে দেখে সব কষ্ট হাওয়া হয়ে গেছে। ”
তারা আর সিনথিয়া একসাথে সুর টানলো। আভার দিকে চেয়ে টিপ্পনী কেটে বললো,
— ” হায়! কি প্রেম! জিও হোক! ”
আভা লজ্জায় ইতি-অতি তাকালো। আহনাফের সবার সামনে ওমন লাগামহীন কথা তার মাথা নুইয়ে দিচ্ছে। ছিঃ! ওভাবে না বললে কি চলছিলো না তার? আহনাফ মাথা চুলকে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালো। বললো,
— ” এখন চলো? আজকে যা খাইতে চাইবে তাই খাওয়াবো। আফটার অল অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে তো! ”
তারা, সিনথিয়া আর রাইমা একত্রে হইহুল্লোড় করে উঠলো। আহনাফ তাদের পাশে থাকা ফুচকার দোকানে নিয়ে গেলো। আহনাফ ফুচকার দোকানে সামনে গিয়ে মামাকে বললো,
— “মামা, আট প্লেট ফুচকা রেডি করুন প্লিজ। ”
বৃদ্ধ লোকটা ফোকলা দাঁতে হেসে মাথা নেড়ে ফুচকা বানাতে লাগলো। তারা অবাক হয়ে বললো,
— “জিজু, আট প্লেট কিসের জন্যে? ”
আহনাফ মুচকি হেসে বেঞ্চে বসলো। কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে পিছন দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,
–” তোমরা ফুচকা সবসময় দুই প্লেট করে খাও। সেটা জানি আমি। ”
সিনথিয়া মাঝখানে কথা কাটলো। বিস্ময় নিয়ে বললো,
— ” কিন্তু সেটা আপনি জানলেন কি করে? ”
আহনাফ খানিক অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ঘাড় এক হাতে ঘষে আভার দিকে তাকালো। আভা নিজেও প্রশ্নবোধক চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ মেকি হেসে বললো,
— ” জেনেছি একভাবে। বাট কিভাবে সেটা বলা যাবে না। ”
আহনাফের কথায় কেউ আর জোর করলো না। আভা এখনো আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ আচমকা আভার এক হাত টেনে আভাকে ওর পাশে বসিয়ে দিলো। আহনাফের হঠাৎ করা এমন আচরণে আভার মুখ হা হয়ে গেলো। অবাক হয়ে বললো,
— ” কি করছেন? ”
আহনাফ ভ্রু বাঁকা করে বললো,
— ” কি করছি? ”
আভা উত্তর না দিয়ে পুনরায় উঠে দাঁড়াতে চাইলে আহনাফ আভার এক হাত বেঞ্চে চেপে ধরে। আহনাফ আর আভার অবস্থা দেখে বাকি সবাই মুখ টিপে হাসলো। আভা অসহায় নজরে চারপাশে একপলক তাকিয়ে আবারও ছটফট করে উঠলো। আহনাফের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
— ” দেখুন, এখানে ওরা আছে। খারাপ ভাববে। আপনি একা বসুন। আমাকে উঠতে দিন। ”
আভা উঠে দাঁড়াতে চাইলে আহনাফ ওদের দিকে তাকিয়ে সশব্দে বলে,
— ” হেই গার্লস,আভা আমার পাশে বসেছে। সো তোমার কেউ এদিকে তাকাবে না। ওকে? ”
সবাই হেসে চেঁচিয়ে বললো,
— ” অক্কে জিজাজি। ”
আহনাফ আভার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
— ” দেখছো, ওরা কেউ দেখছে না। সো, কিপ কুয়াইট। ”
আভা একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দিলো। চুপচাপ ঠায় বসে রইলো আহনাফের পাশে। মৃদু সুরে বললো,
— ” অসভ্য একটা..! ”
আভা ফিসফিস করে কথাটা বললেই আহনাফ ঠিকই শুনলো সে-কথা। আহনাফ আভার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
— ” এখনো অসভ্যতামি শুরুই করলাম না। তাও এই উপাধি দিয়ে দিলে? তো নির্দোষ হয়েও কেনো অপবাদ পাবো? অসভ্যতামি করেই না হয় উপাধিটা নেই? কি বলো? ”
কথাটা বলেই আহনাফ আভার কোমর একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আভা এতে খুব বড় ঝটকা খেলো। সবার অগোচরে আহনাফের হাত নিজের কোমর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু আহনাফ এমন করে ধরে রেখেছে ছাড়ানোই মুশকিল। আহনাফ আভার এমন জোরাজোরি দেখে বাঁকা হেসে বললো,
— ” আমার থেকে ছাড়া পাওয়া এত সহজ না সুন্দরী। তাই সহ্য করো। ”
আভা এবার করুন চোখে আহনাফের দিকে তাকালো। অনুরোধের কণ্ঠে বললো,
— ” প্লিজ..!”
আহনাফ আভার এমন করুন গলা শুনে দমে গেলো। চুপচাপ আভার কোমড় থেকে হাত ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। চুল সোজা করে ভদ্র ছেলে হয়ে বসে রইলো। আহনাফের থেকে ছাড়া পাওয়ায় আভা কিছুটা স্বস্তি পেলো। জোরে নিঃশ্বাস নিলো কয়েকটা। এতক্ষণ মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে। এবার যেনো মুক্তি পেলো। আভা যখন নিজেকে মুক্ত পাখি ভাবছে ঠিক তখন আহনাফ আভার একহাত চেপে ধরলো। আভা চমকে উঠে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও আহনাফের দিকে তাকালো। আবারো হাত ছাড়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে আহনাফ দৃঢ় কন্ঠে বললো,
— ” নো ওয়ে। কোমর ছেড়ে দিয়েছি। বাট হাত ছাড়া যাবে না। সো চুপচাপ বসে থাকো। ”
আভা মাথা নুইয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। এই ছেলে যখন একবার বলেছে হাত ছাড়বে না তখন হাজার অনুরোধ বিফলে যাবে এটা নিশ্চিত। আভা তাই চুপচাপ বসে রইলো আহনাফের পাশে।
ফুচকা খাওয়ায় মগ্ন সবাই। তারা,সিনথিয়া আর রাইমা সবাই আহনাফের সাথে নানা কথা বলছে। আভা একহাতে ফুচকার প্লেট নিয়ে বসে আছে। কিন্তু খাবে কি করে? ডান হাত তো আহনাফের হাতে বন্দী। একসময় তারা আভাকে লক্ষ্য করে বললো,
— ” ওই খাচ্ছিস না কেনো? অন্যসময় ত আমাদের কাছ থেকে কেড়ে কেড়ে খাস। খা! ”
আভা অসহায় নজরে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ আভার দিকে ভ্রু নাচিয়ে তাকালো। আভা ইশারায় হাতের দিকে তাকালো। আহনাফ ইশারা বুঝে বাঁকা হেসে আভার হাত ঝপ করে ছেড়ে দিলো। এতে আভা যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। কাপা হাতে একটা ফুচকা মুখে পুড়লো। আহনাফ গালে হাত রেখে আভার দিকে তাকিয়ে আছে। আভা আহনাফের এমন স্থির দৃষ্টি দেখে কেশে উঠলো। মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই আহনাফ বলে উঠলো,
— ” একা একাই খাচ্ছো? আমাকে খাওয়াবে না? ”
আভা হতবাক হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ ভ্রু নাচাতেই আভা বললো,
— ” খেতে হলে অর্ডার দিন। আমি কেনো খাওয়াবো? ”
আহনাফ দুঃখ দুঃখ গলায় বললো,
— ” টাকা শেষ আর ওয়ালেটও আনিনি। ”
আভার কথাটা যেনো বিশ্বাস হয়নি। চোখ ছোটছোট করে আহনাফের দিকে চেয়ে রইলো ও। তারা ওদের কথপোকথন দেখে বললো,
— ” ওই, জিজু কত সুন্দর করে খেতে চাইছে? আর তুই মানা করছিস? খাইয়ে দিলে কি তোর হাত খসে পড়ে যাবে? হ্যাঁ? ”
আহনাফ অসহায় গলায় বললো,
— ” দেখো ওরাও বুঝতে পারছে আমার দুঃখ। শুধু তোমার মন-ই পাথর। ”
আভা আহনাফের ন্যাকামু দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। পাশ থেকে তারা আর সিনথিয়া পুনরায় আভাকে জোর করলে আভা না চাইতেও আহনাফের মুখের সামনে একটা ফুচকা ধরে। আহনাফ ফুচকা খাওয়াই ভান করে আভার হাতে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আভা রীতিমত এতে চমকে গেলো। তাড়াহুড়ো করে হাত সরিয়ে আনলো। আহনাফের দিকে কড়া চোখে তাকাতেই আহনাফ বাঁকা হেসে নিজের ঠোঁট মুছলো। আহনাফের এমন দৃষ্টি দেখে আভার চোখ বড়বড় রসগোল্লার মতন হয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে খা খা হয়ে গেলো। আভা এক ঢোক গিলে মাথা নুইয়ে ফেললো। আহনাফ শীতল গলায় শুধালো,
–” কি হলো খাইয়ে দাও। ”
আভা এবার নিজের হাতে থাকা ফুচকার প্লেট আহনাফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ” এবার যতখুশি খান। মন প্রাণ ভরে খান। ”
আহনাফ প্লেট নিলো না। প্লেটটা আঙ্গুল দিয়ে আভার দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বাঁকা হেসে উঠে দাঁড়ালো। প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বললো,
–” হুট করেই খাওয়ার মুড চলে গেছে। তাই বাকি ফুচকা তুমিই খাও। আমি বিল মিটিয়ে আসছি। ”
#চলবে