ওহে প্রিয় পর্ব- ৪০

0
2559

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪০
_________________
-‘ইউ নো হোয়াট সুন্দরী? জেলাসি ইজ দ্যা বেষ্ট ফিলিংস’।

দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কন্ঠে শীতলতা মিশিয়ে উক্ত বানীটি উচ্চারণ করলো হ্যাভেন। থমথমে আকার ধারণ করলো আহির পুরো মুখশ্রী। সত্যি জেলাস ফিল করছে সে। এই অল্পতে এতো বেশী রিয়্যাক্ট সে কি করে করলো? তার সহ্য ক্ষমতা কখনোই এতো উইক ছিলো না। রূপসাকে সহ্য করার মতো মেয়ে সে তাহলে শিফাতো তার কাছে চুনোপুঁটি। পরোক্ষণেই ভাবলো সে যখন হ্যাভেনের জীবনে ছিলো না তখন হ্যাভেনের মনে রূপসার অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু তার বর্তমানে অন্য কোন মেয়ের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া কি এতোই সহজ? যদি মানতেই হয় পুরোপুরি সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মানবে। সম্পর্ক থাকাকালীন এসব কখনোই মেনে নেবে না সে কখনোই না। মনের সঙ্গে যুদ্ধ চললেও দৃষ্টি তার হ্যাভেনের দিকে স্থির ছিলো। হ্যাভেনের দৃষ্টিজোরাও তার দিকে নিবদ্ধ। পুরুষের চোখের গভীরতা এতো প্রখর হতে পারে জানা ছিলো না আহির। সেই শুরু থেকেই এ দুটো চোখের গভীরতা উপলব্ধি করে আসছে৷ তবে ভিন্নতা এটুকুই এ দৃষ্টিতে আগে হয়তো ক্রোধ নয়তো কামুকতা মিশে থাকতো। তবে আজ এ দুটোর একটিও নেই। বরং আজ এ দৃষ্টিতে গভীর কিছু রয়েছে, গভীর কিছু উপলব্ধি করতে পারছে সে। সেই গভীর কিছু’কে চাইলেই ভালোবাসার খাতায় নাম দিতে পারবে । কিন্তু ভালোবাসা তো এতোটা সহজ নয়। ভালোবাসা মানে অনুভূতিদের ঢেউখেলা। সেই ঢেউগুলো তার হৃদয়ে যেদিন ঢেউ তুলতে সক্ষম হবে সেদিনই এই দৃষ্টিজোরা পূর্ণতা পাবে তার আগে নয়।

দু’জন মানুষের দৃষ্টিজোরা একে অপরকে খুবই নিখুঁতভাবে পরখ করতে ব্যাস্ত৷ একজোরা মানব-মানবীর উষ্ণ নিঃশ্বাসের শব্দ পুরো ঘরময় করে তুলেছে মুখরিত। পুরুষটির সমস্ত ইন্দ্রিয় চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করছে নারীটির দিকে। নিঃশ্বাসের বেগ ক্রমশ বাড়ছে। দু’হাতে চেপে রাখা কোমড় থেকে একটি হাত আলগোছে সড়িয়ে আহির ঘাড়ে আলতো চেপে ওষ্ঠজোরা নিজের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু পারলো না। আহির নরম হাতের শক্ত চাপ পড়লো তার ওষ্ঠজোরায়। পুরো মুখশ্রী তে কাঠিন্যতা বজায় রেখে নিচু কন্ঠে রুক্ষতা মিশিয়ে বললো,

-‘ এসব কি অসভ্যতামো? আপনি দেখছি সত্যি গিরগিটি ‘।

এক ঢোক গিলে চোখজোরা বন্ধ করে ফেললো হ্যাভেন। আবার কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই শীতল দৃষ্টি মেলে তাকালো আহির মুখপানে। তখনো আহির হাত তার ওষ্ঠজোরা ছুঁয়ে আছে। সে হাতের তালুতে আলতো করে চুমু খেলো হ্যাভেন৷ সঙ্গে সঙ্গে হাত সড়িয়ে নিয়ে নিজেকে পুরোটাই সড়িয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আহি। কিন্তু পারলো না। যে হাতজোরা দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করছিলো সে হাতের একটি দখল করে নিলো হ্যাভেন৷ আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে সে হাতের দিকে একবার আহির চোখের দিকে একবার তাকালো। তারপর আবার হাতের দিকে তাকিয়ে গুনগুনিয়ে বললো,

-‘ ওহে সুন্দরী তুমি হাতটা শুধু ধরো আমি হবো না আর কারো ‘।

-‘ এসব কি আচরণ আজব লোক আপনি ছাড়ুন তো ভাল্লাগছে না ‘।

-‘ উফফ জান এতো নড়ো না। আসো কিছু গোপন কথা বলি ‘।

চোখ জোরা ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো আহি। হ্যাভেন ওষ্ঠ কোনে দুর্বৃত্ত হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,

-‘ নো টেনশন সুন্দরী হাজব্যান্ড ওয়াইফ বিষয়ক কোন ওয়ার্ড উচ্চারণ করবো না, আর না কোন কাজ করবো ‘।

শেষ কথাটা বলেই চোখ মারলো হ্যাভেন। চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেলো আহির। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরোবার উপক্রম। নাক ছিটকে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

-‘ ছিঃ আপনি চরম লেভেলের অসভ্য। ছাড়ুন অসহ্য লাগছে সিরিয়াস ছাড়ুন ‘।

হ্যাভেন আলতো ভাবে আহির আঁকড়ে ধরা হাতটি নাড়াচাড়া করতে করতে আহির দিকে দৃষ্টি মেলে বললো,

-‘ শিফা নানাভাইকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। বলতে পারো আমাদের ভাইবোন দের মাঝে নানাভাইয়ের জন্য সবচেয়ে বেশী পাগল শিফাই ছিলো। নানা ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে যতোবারই এখানে এসেছে বাড়ি আসার পূর্বে গোরস্থানে গিয়ে নানাভাইয়ের কবরটা দেখে এসেছে, দূর থেকেই দোয়া,দরূদ পড়ে আসে আর কি। দুপুরে সেখানেই নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে। শুধু ওর ইচ্ছের জন্য নয় আমারও অনেক দিন যাওয়া হয়নি যাবো যাবো করছিলাম তাই ও যখন বললো তাই ভাবলাম ঘুরেই আসা যাক ‘।

মনে প্রশান্তি এলেও মুখে দাম্ভিকতা ফুটিয়ে আহি বললো,

-‘ ভালো কথা এগুলো আমায় বলছেন কেনো ‘?

-‘ মন্দ কথা আপনি প্রচুর জেলাসি ফিল করছেন তাই বলছি ‘।

-‘ একদমই জেলাসি ফিল করছিনা ছাড়ুন নয়তো খারাপ কিছু ঘটে যাবে ‘।

-‘ উহুম খারাপ কিছুই ঘটবে না তোমার স্বামী একদম গুড বয় হয়ে গেছে যদি তেমন কিছু ঘটার হয় তো তোমার সম্মতিতেই ঘটবে ‘।

-‘ ছিঃ আপনি এতো অশ্লীল কথাবার্তা বলছেন কেনো ‘?

-‘ বউয়ের সঙ্গে অশ্লীলতা করতে বাঁধে না বললেই বাঁধে ‘?

-‘ লিসেন আমাদের সম্পর্ক আর পাঁচ টা স্বাভাবিক হাজব্যান্ড,ওয়াইফের মতোন নয় ‘।

-‘ লিসেন সুন্দরী আমাদের সম্পর্ক টা আর পাঁচ টা স্বাভাবিক সম্পর্কের চেয়েও দুর্দান্ত স্বাভাবিক হবে ‘।

-‘ যা শুরু করেছেন কখনোই হবে না মিলিয়ে নিয়েন’।

-‘ স্বাভাবিক করার জন্যই শুরু করেছি ডিয়ার এতো সহজে হার আমি মানবো না ‘।

-‘ ওও আই সি তো ডিয়ার উল্লুক হাজব্যান্ড এই চেহেরাটা কি তারই প্রমাণ ‘?

কপালের একপাশ থেকে গাল অবদি আঙুল ছুঁয়িয়ে প্রশ্নটি করলো আহি। হ্যাভেন তার নিচের ওষ্ঠে দাঁত কেটে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

-‘ সময় পাইনি চুল,দাঁড়ি কাটার। তোমার মতো বউ যার কপালে আছে তার এই চেহেরা, এই দশার থেকেও করুণ দশা হওয়া উচিত ছিলো। কি দরকার এতো প্যারা দেওয়ার? আর একবার কাছে এসেই দেখো না পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার পদস্থলে দান করবো আই প্রমিস ইউ সুন্দরী ‘।

-‘ আপনি দয়া করে আমায় ছাড়ুন এই ঘ্যান ঘ্যান আর ভাল্লাগে না ‘।

-‘ ওকে ফাইন ছাড়ছি তার আগে শুনে নাও আমাদের মাঝে কি ডিল হয়েছে খুব ভালোভাবেই স্মরণে আছে আমার। তাই ভিলেনগিরি কম করবে আর এসব থ্রেট দিয়ে ব্লাড প্রেশার বাড়ানোর ধান্দা একদম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো ‘।

হেসে ফেললো আহি। অতি সমীপে সে হাসিটি দেখে হৃদস্পন্দন থেমে গেলো হ্যাভেনের। হায়! এ হাসিটায় এতো মুগ্ধতা মিশে রয়েছে? আগে কেনো এভাবে হাসেনি আহি? নাকি আগে কখনো তাকে হাসানো হয়নি? একটিবারো খেয়াল করা হয়নি তার হাসিটি চাঁদের আলোকেও হার মানায়। থমকানো গলায় হ্যাভেন বললো,

-‘ আই লাইক ইট সুন্দরী। আগে কেনো এভাবে হাসোনি ‘?

হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো আহির। রাগান্বিত সুরে বললো,

-‘ আপনি এবার অভিনয় শুরু করবেন না প্লিজ ‘।

আহিকে ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো হ্যাভেন। শার্টের কলার ঠিক করে নিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে আহির দিকে এক পলক চেয়ে আবার দৃষ্টি সড়িয়ে নিলো। পিছন ঘুরে এক হাত মুঠ করে আরেক হাত পকেটে গুঁজে দিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। দীর্ঘ একটি শ্বাস ছেড়ে
এক ঢোক গিলে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

-‘ আমায় নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করো না আহি। আঁধার রাতে চাঁদের আলো ছাড়া অন্য কোন আলো যেমন পৃথিবী জুরে আলোকিত করতে পারেনা তেমনি আমার আঁধারে পৃথিবী’টাকে তুমি ছাড়া অন্য কেউ আলোকিত করতে পারবে না’।
________________
শুক্রবার। আগামীকাল শনিবার রিদির গায়ে হলুদ। টুকটাক কেনাকাটা বাকি থাকায় সকাল সকাল বাড়ির মেয়েরা কেনাকাটা করতে গিয়েছে। সাথে গেছে কয়েকজন ছেলেরাও। এখনো ফেরেনি। আহি বিষন্ন মুখে রিদির রুমের জানালার পাশে বসে আছে। এ বাড়িটায় কতো হৈচৈ হচ্ছে। বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কতোশতো আয়োজন। রিদির চোখে,মুখে সর্বক্ষণ সুখের বিচরণ। সব স্বপ্ন, আশা পূরণের উচ্ছ্বাস। এ’কটা দিন বেশ লক্ষ্য করেছে সে। হবু বরের সঙ্গে রিদির বন্ডিংটা বেশ ভালো। তার পাশে শুয়ে শুয়েই তো মেয়েটা হবু বরের সঙ্গে কথা বলে। রিদি যখন তার বরের সঙ্গে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখকর স্বপ্ন বুনে আহি তখন তার দু’বছরের দাম্পত্য জীবনগুলো দুঃস্বপ্ন মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বাড়ির সকলে মিলে যখন রিদির বিয়ের নিয়ম কানুন গুলো কিভাবে পালন করা হবে এই আলোচনা করে আহি তখন তার বিয়ের অদ্ভুত নিয়মগুলো স্মরণ করে বদ্ধ শ্বাস ত্যাগ করে। একদিকে প্রশান্তি অপরদিকে দম বন্ধ হয়ে আসছে আহির৷ ভালো লাগছে না কিছু। মন চাচ্ছে ছুটে পালাতে এ বাড়ি থেকে ইচ্ছে করছে অনেক দূরে চলে যেতে যেখানে গেলে তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলো তার মনে আর কড়া না নাড়বে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আফসোস একটুখানি কান্নার সুযোগও আজ তার নেই।
.
পাশের বাড়ির একজন মহিলা এসেছে তার ছেলের বউকে নিয়ে। রিদির সঙ্গেই দেখা করতে এসেছিলো কিন্তু তারা এখনো কেনাকাটা করে ফেরেনি৷ তাই আলাপে আলাপে রুবিনার ছেলে বউকে দেখতে চাইলো। রুবিনা তাদের বসিয়ে রেখে উপরে এলো আহিকে ডাকতে। কিন্তু আহিকে বিষন্ন মুখে বসে থাকতে দেখে বললো,

-‘ তোমার কি মন খারাপ মা ‘?

চমকে ওঠলো আহি। ঝাপসা দৃষ্টিতে শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,

-‘ না মা মন খারাপ না এমনিই বসে ছিলাম’। বলেই ওঠে দাঁড়ালো।

রুবিনা বললো,

-‘ বললাম ওদের সাথে যাও ঘুরে আসো গেলে না তো ‘।

-‘ সমস্যা নেই আপনি কিছু বলবেন ‘?

-‘ হ্যাঁ নিচে চলো পাশের বাসার ভাবি এসেছে তার ছেলের বউকে নিয়ে তোমাকে দেখতে চাইলো তাই ডাকতে এলাম ‘।

মুখটা ছোট হয়ে গেলো আহির। একটুও ভালো লাগছে না তার। এখন নিচে গেলেই সেই বিরক্তি কর বাক্য গুলো শুনতে হবে। যেমন- আল্লাহ বউতো বেশ সুন্দরী! হায় হায় হ্যাভেন তো পুরো আকাশের চাঁদটাই ছিনিয়ে এনেছে মা গো মা!

সকল বিরক্ততাকে চেপে রেখে ওষ্ঠ কোনে নকল হাসি ঝুলিয়ে নিচে চলে গেলো আহি। মহিলাটির সঙ্গে এবং তার পুত্রবধুর সঙ্গে পরিচিত হলো। সত্যি আহিকে দেখে তারা আহির ভাবনাতিত বুলিগুলোই আওড়ালো বরং আরো বেশী। কথার ফাঁকে আহি লক্ষ্য করলো মহিলাটির পুত্রবধূ লাবনীর পেটটা বেশ উঁচু। আহির নজরকে লক্ষ্য করে লাবনী চোখে,মুখে লাজুকলতা ফুটিয়ে বললো,

-‘ পাঁচ মাস চলছে দোয়া করো বোন ‘।

মৃদু হাসলো আহিও। কিন্তু বুকের ভিতরটা তার ভীষণ ভারী হয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ। তার বাচ্চা টা থাকলে আজ তারও পাঁচ, ছ’মাস চলতো। তারও এমনটা পেট উঁচু হয়ে জানান দিতো একটি নিষ্পাপ শিশুর আগমনের। শরীরটা কেঁপে ওঠলো কেমন৷ হাত,পায়েও কম্পন ধরে গেলো। নিজের অস্বাভাবিকতা বুঝতেই কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

-‘ আপনারা বসুন আমার একটু কাজ ছিলো তাই ওঠছি’।

আহি প্রায় অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই নিচ থেকে চলে গেলো। হ্যাভেন আর হ্যারি জুম্মার নামাজ পড়ে কেবলই বাড়িতে ঢুকেছে। তখনই নজর পড়ে আহির ছুটে উপরে যাওয়ার দিকে। ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে ফেলে হ্যাভেনও আহির দিকে এগিয়ে যায়।

রিদির রুমে ঢুকেই কাঁপা হাতে দ্রুততার সঙ্গে দরজা লক করতে যাবে তার পূর্বেই হ্যাভেন গায়ের জোর খাটিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। আহির পুরো মুখশ্রী লালচে বর্ণ ধারণ করেছে, চোখজোড়া দিয়ে যেনো রক্ত ঝড়ে পড়বে। হ্যাভেনকে দেখে ঠোঁট কামড়ে পিছন ঘুরে ডুঁকরে ওঠলো সে। হ্যাভেন উদ্বেগপূর্ণ চেহেরায় দরজাটা দ্রুত লক করে আহির সম্মুখে দাঁড়িয়ে উৎকন্ঠা হয়ে বললো,

-‘ এই কাঁদছো কেনো কি হয়েছে? কে কি বলেছে? আমিতো কিছু করিনি ইভেন তোমার থেকে দূরে দূরেই আছি। ওভাবে চলে এলে কেনো কেউ কিছু বলেছে’?

উত্তর দিলো না আহি। চোখ,মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো সে। নিঃশ্বাসে প্রবল অস্থিরতা স্পষ্ট। সেই অস্থিরতা আহির পাশাপাশি হ্যাভেনকেও গ্রাস করে নিলো। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো হ্যাভেন ক্রোধান্বিত কন্ঠে বললো,

-‘ কে কি বলেছে স্পিক আউট ড্যাম ইট!

হ্যাভেনের ধমকে খানিকটা কেঁপে ওঠলো আহি৷ সঙ্গে সঙ্গেই ধপ করে নিচে বসে পড়লো৷ পাগলের মতো নিজের চুলগুলো খামচে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। চমকে ওঠলো হ্যাভেন। বুকের ভিতরটা অদ্ভুত ভাবে মুচড়ে ওঠলো। ঘর্মাক্ত শরীর দ্বিগুণ ঘেমে ওঠে সাদা পাঞ্জাবি শরীরের সঙ্গে লেপ্টে যেতে শুরু করলো। আহির ক্রন্দনধ্বনি চার দেয়াল পেরিয়ে নিচ অবদি পৌঁছে গেছে বোধহয়। এতে হ্যাভেনের জায় আসেনা। সে নিজেও আহির পাশে বসে পড়লো। একহাতে আহিকে টেনে বুকে জরিয়ে শান্ত গলায় বললো,

-‘ কি হয়েছে বলো আমায় প্লিজ ‘?

ক্ষিপ্ত হয়ে হ্যাভেনের দুগাল খামচে ধরলো আহি। গতকালই সেভ করেছে হ্যাভেন ছোট ছোট দাঁড়ি ভেদ করে গালের চামড়ায় নখ ডেবে গেলো একদম। তবুও চুপ করে রইলো সে। বোঝার চেষ্টা করলো ঠিক কি ঘটেছে। তার সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে দুরূহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আহি চিৎকার করে বললো,

-‘ আই হেইট ইউ। আই জাষ্ট হেইট ইউ। মুক্তি চাই আমার আপনার থেকে মুক্তি চাই। পারছিনা আমি পারছিনা সহ্য করতে। শেষ করে দিচ্ছে আমাকে শেষ করে দিচ্ছে ‘।

থমকে গেলো হ্যাভেন। আহিকে সামলানোর চেষ্টা করে বললো,

-‘কে শেষ করে দিচ্ছে কি বলছো এসব ‘।

-‘ আপনি এবং আপনার করা অন্যায় গুলো শেষ করে দিচ্ছে আমায়। শেষ করে দিচ্ছে আমাকে আমার অনাগত সন্তান হারানোর যন্ত্রণারা। আমি পারছিনা সেসব ভুলতে পারছিনা। আমায় মেরে ফেলুন মেরে ফেলুন আমায় হয় আমাকে একদম শেষ করে দিন নয়তো আমার জীবন থেকে একেবারে চলে যান ‘।

শেষ কথাটা বলেই হ্যাভেনের দুহাত নিজের গলায় চেপে ধরার চেষ্টা করলো আহি। হ্যাভেন আঁতকে ওঠে ঠাশ করে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ফলশ্রুতিতে আহি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে হ্যাভেনের হাত টেনে নিজেই নিজের গালে থাপ্পড় দিতে দিতে বললো,

-‘ একেবারে শেষ করে দিন না হ্যাভেন। আমার বুকের ভিতর খুব যন্ত্রণা হয় খুব। আমাকে মৃত্যু উপহার দিন না হ্যাভেন আই প্রমিস ইউ শেষ নিঃশ্বাস আপনার নামেই ত্যাগ করবো আমি ‘।

অন্তর টা জ্বলে যাচ্ছে হ্যাভেনের। মাথা কাজ করছে না ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে এই মেয়েটাকে খুন করতে তারপর নিজেও খুন হতে। তার এমন উল্টাপাল্টা ভাবনার মাঝেই আহি হ্যাভেনের বুকে মুখ গুঁজে মিইয়ে গেলো কেমন৷ প্রায় দশমিনিট দুজনের মধ্যেই নিরবতা চললো। তবে আহির বাঁধাপ্রাপ্ত নিঃশ্বাসের শব্দ আর হ্যাভেনের ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পাওয়া গেলো। তারপর চললো আরো কিছু মূহুর্ত। একসময় হঠাৎ করেই হ্যাভেন আহির মাথাটা ওঠিয়ে নিজের মুখোমুখি করে নিয়ে বললো,

-‘ আই এম সরি আহি কিছু সময়ের জন্য হলেও আমি আমার কথা রাখতে পারছিনা। তবে আজ আমি তোমার মাথা ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি আজকের পর তোমার আমার মিলন কেবল তখনই সম্ভব যখন তুমি স্বীকার করবে তুমি আমাকে ভালোবাসো। তোমার ভালোবাসা বিহীন এই হ্যাভেন আর তোমায় স্পর্শ করবে না আর না আসবে কাছে। তবে আমার ভালোবাসার শেষ স্পর্শটুকু তোমায় আমি দিয়ে যাবোই। হতে পারে এটাই শেষ ‘।

চমকে গেলো আহি হ্যাভেন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো কঠোর বাঁধনে আটকা পড়ে গেছে সে। গলায় উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করতেই পুরো শরীর শিউরে ওঠলো তার। ক্রন্দনরত কন্ঠে বললো,

-‘ আপনি ভুল করছেন ‘।

পাত্তা দিলো না হ্যাভেন নিজের মতো করে আহিকে কাছে টানতে থাকলো। এর আগেও বহুবার আহিকে সে জোর পূর্বক কাছে টেনেছে। এতে তার বিন্দু আফসোস হয়নি কিন্তু আজ হচ্ছে রক্তক্ষরণ যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতরটায়। তবু সে আজ আহিকে কিছুটা হলেও চায়। হতে পারে এটাই শেষ! হ্যাভেনের দুকাধে খামচে ধরে ঘনঘন শ্বাস ফেলছে আহি। হ্যাভেন যখন আহির ওষ্ঠজোরায় ডুবে ছিলো আহি তখন টের পেলো তার গালে টপ টপ করে পানি পড়ছে এবং তা বেয়ে গলা অবদি পৌঁছে গেছে। বিষয় টা বুঝতে কিছু সেকেন্ড লেগে গেলো তার। সেই সাথে নিজের চোখের অশ্রুকণাদেরও ধরে রাখতে পারলো না। যেই মূহুর্তে আহির অশ্রুকণারা ঝড়তে থাকলো সেই মূহুর্তে হ্যাভেন ওষ্ঠজোরা ছেড়ে আহির বক্ষঃ বিভাজনে গভীর এক চুম্বন এঁকে ত্বরান্বিত হয়ে দূরে সড়ে গেলো।

চলবে..
রিচেক দেইনি পরে সময় করে দেবো। নেক্সট পার্ট দু’দিন পর দেবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here