কনফিউশন পর্ব ৩২

0
512

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৩২

রশ্নি রান্না করছিলো। আরশি পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“ভাবি আমাকে একটা হলুদ শাড়ি কিনে দেবে? সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ বানিয়ে দিতে হবে।”
শাড়ি আরশি নিজেও কিনতে পারে। কিন্তু রশ্নিকে বললে সে যে খুশিটা হবে সেটা মিস করতে চায় না আরশি। ননদের কথা শুনে রশ্নি খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলল,
“তুই শাড়ি পরবি?”
“হুম।”
“সত্যি! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা।”
আরশি হাসলো৷ রশ্নি বলল,
“আজ বিকেলেই যাব শাড়ি কিনতে।”
“আচ্ছা।”
রশ্নির যেন তর সইছিল না। দুপুরে খাওয়ার পরেই তৈরি হতে লাগলো। আরশি বলল,
“এত তাড়া নেই তো ভাবি।”
“অবশ্যই তাড়া আছে। ব্লাউজ বানাতে হবে না?আমার কতদিনের শখ তোকে শাড়ি পরা দেখব! যা যা তৈরি হয়ে নে।”

আরশি একটা বাদামী পাড়ের হলুদ শাড়ি কিনলো। তারপর ব্লাউজ বানাতে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। বাড়ি ফিরে ননদ ভাবি দুজনে মিলে শাড়িটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। ঠিক তখন রশ্নি বলল,
“আমি কিন্তু আজও জানলাম না ছেলেটা কে?”
আরশি বুঝেও না বোঝার ভান করল,
“কোন ছেলেটা?”
রশ্নি হেসে বলল,
“যার জন্য অসম্ভব সম্ভব হতে চলেছে।”
আরশি হেসে বলল,
“হবে কেউ একজন।”
“আমি জানতে পারি না?”
“জানাব। যেদিন সে তার ভালোবাসার কথা আমাকে বলবে সেদিন আমি তোমাদের সবাইকে জানাব। তার আগ পর্যন্ত সে নাহয় শুধু আমার ভেতরেই থাকুক।”
“ঠিকাছে তোর যখন ইচ্ছে হবে বলিস। আমি অপেক্ষায় থাকব।”

তিরা আরো একটা নির্ঘুম রাত পার করে সকালে ক্লাসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল, তখনই ফোনটা এলো। কাব্য ফোন করেছে। তিরা ফোন ধরে বলল,
“একী! এ কে ফোন করেছে আমাকে?”
“তোমার আব্বাজান।”
তিরা হেসে বলল,
“তা আব্বাজান হঠাৎ মেয়েকে মনে পড়ল?”
“আমি সুইডেন চলে যাচ্ছি।”
“ওমা তুমি আবার বিদেশে যাবে কেন?’
“পিএইচডি করতে।”
“বাবা রে এত পড়াশোনা করে কী করবে?”
কাব্য হেসে বলল,
“নাথিং।”
“আমার তো গ্রাজুয়েশন টাও আর করতে ইচ্ছা করে না।”
কাব্য আবারো হেসে বলল,
“আচ্ছা শোনো যে কারণে ফোন দিয়েছিলাম সেটা বলি।”
“বলো।”
“যাওয়ার আগে একবার দেখা হলে ভালো হতো না? এসোনা একবার ঢাকা। তুমি আমি আরশি আবার একসাথে, বেশ মজা হবে।”
“আরশিও অবশ্য অনেকবার আমাকে বলেছিলো ঢাকা যাওয়ার জন্য।”
“তাহলে তো হয়েই গেলো, দুজন মানুষের কথা তো আর ফেলে দেয়া যায় না। চলে এসো।”
“কবে যাবে তুমি?”
“এই মাস এবাড়িতে আছি। এরপর বাসা ছেড়ে কক্সবাজার চলে যাবো। নেক্সট মান্থের লাস্ট উইকে ফ্লাইট। শেষ কদিন তো বাড়িতেই থাকতে হবে।”
“আচ্ছা তার মানে আসলে এই মাসেই আসতে হবে।”
“হ্যাঁ।”
“আমার অবশ্য কোনো পিছুটান নেই। গেলেই যেতে পারি। আমার স্বামী সংসার এসব হচ্ছে নামকোবাস্তে!”

আরশি সকালে গাছে পানি দিতে দিতে কাব্যর জানালায় উঁকি দিলো। কাব্য বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। আজ অফিস নেই নাকি! আরশি হাতে পানি নিয়ে কাব্যর মুখে ছিটিয়ে দিলো। কাব্য সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো। ঘুম চোখে আরশিকে জানালায় দেখে হাসলো। বলল,
“গুড মর্নিং।”
“গুড মর্নিং। এখনো ঘুমুচ্ছো যে অফিস নেই?”
“আজ ছুটি নিয়েছি, শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে।”
“সেকী! জ্বর নাকি?”
“নাহ।”
“এদিকে এসো দেখি।”
কাব্য উঠে হাই তুলতে তুলতে জানালার কাছে গেলো। যেহেতু বাসাটা একটু উঁচু, ওদিকে আরশি দাঁড়িয়ে আছে বাগানে নিচুতে তাই কাব্য হাটু গেড়ে বসলো। আরশি জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে কপালে হাত দিল। এরপর বললো,
“জ্বর নেই তো।”
“আমি জানি।”
“ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।”
“তোমার বাগানের কাজ শেষ?”
“নাহ। শেষ করে আসছি, বই নেব।”
“ওকে।”

কাব্য ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। চা বসিয়ে প্যানকেক বানানোর প্রস্তুতি নিলো। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে আরশিকে দেখা যায়। সে এখন বিভিন্ন গাছের মাটি নিড়িয়ে দিচ্ছে। চুলগুলো একটা খোঁপা করা কিন্তু সামনে কিছু চুল বেড়িয়ে এসে বারবার চোখের উপর পড়ছে। আরশি বারবার মাটিমাখা হাতের উল্টোপিঠের সাহায্যে চুলগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। কাব্য একটা শিষ দিতেই আরশি তাকালো। ইশারায় জানালার কাছে আসতে বলল। আরশি ওই অবস্থাতেই জানালার কাছে এসে বলল,
“কী?”
কাব্য জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে অবাধ্য চুলগুলোকে আরশির কানের পাশে ভালো করে গুঁজে দিল। আরশি আচমকা কেঁপে উঠলো, সুড়সুড়ি লাগলো কিন্তু কিছু বলল না। ভাললাগাটা খুব বেশিই ছিলো। কাব্য বলল,
“যাও কাজ শেষ করে এসো।”
আরশি কাজ করতে করতে ভাবছিলো কাব্য এতো খেয়াল করে কীভাবে? সারাক্ষণই কি তাকিয়ে থাকে তার দিকে?
আরশি কাজ শেষ করে সোজা কাব্যর রান্নাঘরে চলে এলো। কাব্য বলল,
“আচ্ছা এইযে তুমি হুটহাট আমার বাসার ভেতরে চলে আসো তোমার ভয় করে না?”
“তোমাকে কীসের ভয়?”
“ভয় আমাকে না, ধরো ভাবি যদি দেখে ফেলে?”
“দেখে ফেললে কিছুই হবে না, বলে দেব সব। আর আমার আসাতে যদি তোমার আপত্তি থাকে তাহলে সরাসরি বলতে পারো। আর আসবো না।”
কাব্য শেষ প্যানকেকের গোলাটুকু হাতের সাহায্যে প্যানে ঢেলে দিলো। তারপর মাখা হাতটা আরশির গালে মুছে দিয়ে বলল,
“আসতেই হবে। সকাল বিকেল বারবার।”
আরশির মনে হলো এক্ষুণি তার দমবন্ধ হয়ে যাবে। তারপর আবার দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“এহহে এটা কী করলে?”
কাব্য কেকের গোলাগুলো আরশির গালে লেপ্টে দিতে দিতে বলল,
“স্পেশাল গালকেক!”
আরশি এবার হেসে ফেলল। কাব্য বলল,
“অবশ্য বেক হওয়ার জন্য গালটাকে গরম করতে হবে।”
আরশি কাব্যর হাতের বাহুতে থাপ্পড় মেরে বলল,
“অসভ্য কোথাকার।”
কাব্য হেসে বলল,
“কেন আমি কি বলেছি আমি গরম করব?”
“উফফ।”

আরশি এবার প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেল। বেসিনের সামনে গিয়ে গালটা ধুতে ধুতে ভাবছিলো,
“কি দারুণ হতো যদি এই স্পেশাল গালকেকটা ধুয়ে না ফেলতে হতো? যদি সারাজীবন রেখে দেয়া যেতো!”

কাব্য দুজনের জন্য চা ও প্যানকেক ট্রেতে সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো। আরশি তখন বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে গাল মুছছে। কাব্য বলল,
“এসো আমার সাথে খাও একটু।”
আরশি পিরিচ দিয়ে চা ঢেকে রেখে একটা প্যানকেক তুলে নিল। কামড় দিয়ে বলল,
“তুমি প্যানকেক জিনিসটা এতো ভাল বানাও কী করে বলোতো?”
“কাব্য খেতে খেতে বলল,
“প্রাকটিস। আচ্ছা আজ কী বই নেবে?”
“হিমুর বই, তুমি বেছে দাও। নীলপদ্মর মতো ভাল বই দেবে। কি পিচ্চি পিচ্চি বই! একসাথে কয়েকটা দাও।”
“যোহুকুম।”
কাব্য খেতে খেতেই বইগুলো বের করল। আরশি কোনোমতে চা শেষ করেই বলল,
“আচ্ছা আমি উঠি। বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
আরশি বইগুলো নিয়ে চলে গেল। কিন্তু কাব্য তখনো আরশির গালে কেকের গোলা লেপ্টে দেয়ার মুহুর্তটায় বুঁদ হয়ে রইলো!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here