কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৩৪
“আমাকে মাফ করে দাও যাদিদ। সত্যিই আমি সবসময় শুধু নিজের কথা ভেবেছি। তোমার দিকটা কখনো ভাবিনি আমি।”
“আচ্ছা তিরা আর কতবার এক কথা বলবে? সন্ধ্যায় তো মাফ চাইলে। এখন আবার? আমি তোমার দূরের কেউ নই, এত মাফ চাইতে হবেনা আমার কাছে। তুমি যদি পাগলামি কমাও, ধৈর্য ধরে থাকো আর আমাকে একটু বুঝতে পারো তাহলে আমরা খুব সুখী হতে পারব।”
“আমি আর কোনো পাগলামি করব না। সবকিছু বুঝব দেখো।”
যাদিদ হেসে বলল,
“আচ্ছা ঠিকাছে। এখন একদম কান্নাকাটি না। হাসো তো একটু।”
“হাসলেও তুমি দেখতে পাবেনা।”
“পাব। আমি তিরাকে সবসময় দেখি।”
তিরা হাসলো। যাদিদ বলল,
“এইতো সুন্দর লাগছে। এবার লক্ষী মেয়ের মত আমার কথা শোনো।”
“বলো।”
“তুমি আগামীকাল খুলনা চলে যাবে।”
“আর কিছুদিন থাকি যাদিদ। এখানে আরশির সাথে সময় খুব ভালো কাটে।”
“হ্যাঁ সেজন্যই তুমি যেতে চাওয়ামাত্রই আমি যেতে দিয়েছি। কিন্তু তিরা বাবা মা ওখানে একা। আমার আর কোনো ভাইবোন থাকলে হয়তো তোমার উপর এত চাপ থাকতো না। কিন্তু যেহেতু নেই, বাবা মায়ের সব দায়িত্ব তোমাকে আমাকেই নিতে হবে। দুদিন তো থাকলে। আবার কিছুদিন পর গিয়ে থেকো। এখন ফিরে যাও প্লিজ।”
তিরার আবার মন খারাপ হয়ে গেল। যাদিদ জানে সে বাবা মায়ের কোনো খেয়ালই রাখতে পারেনা, উল্টো তারাই তিরার খেয়াল রাখে তবুও যাদিদ জোর করছে। যাদিদ সবসময় নিজের ইচ্ছেটা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। যাই হোক, মানুষটাকে বোঝার প্রতিজ্ঞা যখন নিয়েছ তখন যত কষ্টই হোক চেষ্টা সে করবে। পরদিন সকালের বাসেই তিরা খুলনা চলে গেল।
রশ্নি আরশিকে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিল। ভালোভাবে পিনও মারা হয়েছে। আরশি ঘরের ভেতর কয়েকবার হেঁটে দেখলো হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। অসুবিধা না হলেও অস্বস্তি হচ্ছে। আরশি হুট করে বলে বসলো,
“আচ্ছা ভাবি শাড়ি টা খুলে যাবে না তো আবার?”
রশ্নি হেসে বলল,
“এত নার্ভাস কেন তুই? কোনোদিন তো তোকে এত নার্ভাস হতে দেখিনি।”
“ভাবি লজ্জা লাগছে আমার। তার সামনে এভাবে গেলে চোখ দুটো দিয়ে গিলে খাবে আমাকে। তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই যদি?”
রশ্নি এবার শব্দ করে হেসে ফেলল,
“বাসা চেনে তো? কোলে তুলে নিয়ে আসতে পারবে?”
“ধ্যাত ভাবি!”
“তুই একটা পাগল আরশি। ছেলেরা তো দেখবেই। এটাই তাদের ন্যাচার। সামনে যাবি প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগবে, পরে ঠিক হয়ে যাবে।”
“ভাবি আমি না ওকে বলিনি শাড়ি পরব। আমি বরং খুলে ফেলি। জামা পরে যাই। শাড়ি পরা আমার কর্ম না। রাস্তার লোকজন কী ভাববে বলো?”
“কিছু ভাববে না। এমনকি কেউ খেয়ালই করবে না। শাড়ি ভিনগ্রহের পোষাক না সোনা। বাংলাদেশী পোষাক, সব মেয়েরাই পরে। এবার বেশি কথা না বলে গয়নাগুলো পরে নে।”
“না গয়না পরব না।”
“একটু সাজলিও না৷ গয়নাও পরবি না। একদম সাদামাটা লাগবে।”
“সেটাতেই আমাকে স্বাভাবিক লাগবে ভাবি। শাড়ি পরেছি এটাই অনেক।”
“তাহলে চুলটা অন্তত খোলা রাখ।”
“ঠিকাছে, তোমার এই কথাটা রাখলাম।”
রশ্নি হাসলো। কাব্যর ফোন আসতেই আরশি রশ্নির থেকে দূরে গিয়ে ফোন ধরল,
“বলো।”
“উবার ডেকেছি। গাড়ি অলরেডি বাসার নীচে পৌঁছে গেছে, আমি রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে উঠব। তুমি নামো।”
“আচ্ছা।”
রাস্তায় মাথায় যেতেই আরশি কাব্যকে দেখে ড্রাইভারকে দাঁড়াতে বলল। কাব্য বাইরে থেকে অতটা খেয়াল করল না। গাড়িতে উঠতেই হলুদ শাড়ি পরা আরশিকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। হা করে চেয়ে রইলো। নিশ্বাস নিতেও ভুলে গেল। গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে। আরশি আড়চোখে কাব্যকে দেখছে। কাব্য এবার চোখ ফিরিয়ে সোজা হয়ে বসলো। দুহাতে ঠোঁট চেপে ধরে হাসলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার নিজেই নিজের চুল টানলো। খুশিতে, উত্তেজনায় সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। আবার আরশির দিকে তাকালো। আরশি আড়চোখে তাকানো বন্ধ করল। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাঁপছে। ভাগ্যিস বসে আছে নাহলে যে কী হতো! কাব্য বলল,
“ধন্য আজ কাব্য।”
আরশি মুচকি হেসে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তবে এটা পরে নিক।”
কাব্য প্যাকেট খুলে দেখে নীল রঙের পাঞ্জাবি। সাথে সাথে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো৷ আরশি অবাক হয়ে বলল,
“এখানেই?”
কাব্য হেসে বলল,
“সো হোয়াট! একজন অসম্ভব সম্ভব করল।”
“যদি তাই তাহলে সেই একজনটা তুমি।”
কাব্য আবার হাসল। আরশি অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কাব্য শার্ট খুলে পাঞ্জাবি পরে নিল। তারপর আরশির একদম কাছে গিয়ে বসলো।
“আরশি।”
“বলো।”
“খুব খুশি হয়েছি, খুব। আমার মনে পড়েনা এত খুশি আমি শেষ কবে হয়েছিলাম!”
আরশি হাসলো। খুশিটা সে কাব্যর চোখেমুখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। কাব্যকে এত খুশি দেখে তার নিজেরও খুব খুশি লাগছে। কিছুক্ষণ পর কাব্য ফিসফিস করে বলল,
“তোমার হাতটা ধরতে দেবে?”
আরশি কাব্যর দিকে না তাকিয়েই বলল,
“এমনভাবে অনুমতি চাইছো যেন আগে কখনো ধরোনি!”
“এখন যেভাবে ধরতে চাই সেভাবে ধরতে অনুমতি লাগে আরশি।”
আরশি এবারো তাকালো না। মুচকি হেসে বলল,
“অনুমতি দিলাম।”
কাব্য আরশির একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিল। তারপর আরশির হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙুলগুলো রাখলো। তারপর হাতটা ভালোভাবে ধরল। আরশির হাতটা উপরের দিকে রেখে সেই হাতে চেয়ে রইলো। তারপর বলল,
“কি অন্যরকম লাগছে না?”
“হ্যাঁ।”
“ভালো লাগছে?”
“হ্যাঁ।”
“কিরে ভাই সবকিছুতেই দেখি হ্যাঁ বলছো!”
আরশি হাসলো। কাব্য বলল,
“ধরে থাকব এভাবে?”
“হ্যাঁ।”
“ছেড়ে দেব?”
“না।”
“যাক তাহলে বোঝা গেল যে তুমি র্যান্ডমলি হ্যাঁ বলছিলে না!”
আরশি এবার শব্দ করে হেসে ফেলল।
চলবে..