কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৩
তিরার এই বেহাল অবস্থাতেও আরশি তার কাছে যেতে পারছিল না পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষা শেষ হতেই চলে গেল। নিজের চোখে তিরার এই অবস্থা দেখে আরশি আর সহ্য করতে পারল না। সাথে সাথেই কল করল যাদিদকে। এর আগে যাদিদের সাথে কখনো ফোনে কথা বলার প্রয়োজন পড়েনি। তাই যাদিদ আরশির নাম্বারটাও চেনে না। ফোন ধরে কিছুটা চমকে গেল সে যখন আরশি নিজের পরিচয় দিল। যাদিদ আরশির ফোন একেবারেই আশা করেনি।
“ভাইয়া আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“বলো।”
“আমি আপনাকে অনুরোধ করছি ভাইয়া তিরাকে এভাবে কষ্ট দেবেন না। এই কষ্ট ওর সহ্যক্ষমতার বাইরে।”
“আরশি আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার অধিকার আমার মাকেও দেইনা।”
এ কথার পর আর কিছু বলা কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব না। আরশিও পারল না। খুব রাগ হলো তার। তিরাকে বলল,
“তুই এই একগুঁয়ে লোকটাকে ডিভোর্স দিয়ে দে।”
তিরা অবাক হয়ে বলল,
“কী বলছিস তুই? এসব কথা মুখেও আনবিনা।”
“কেন? যে তিরা খুব ছোট ছোট কারণে দুনিয়ার পাগল প্রেমিকদের ছেড়েছে সে এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও একটা একগুঁয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন লোককে ছাড়তে পারবে না?”
“প্রেমিক আর স্বামী এক না। তুই বুঝবিনা।”
“আল্লাহ যেন কখনো আমাকে এসব না বোঝায়। তবে তোর জায়গায় থাকলে আমি অবশ্যই ডিভোর্স দিতাম। এবং আরো অনেক আগে।”
“ভালোবাসলে পারতি না। এত সোজা না।”
“ভালোবাসা আত্মসম্মানের থেকে বড় না তিরা।”
“যাদিদের বাচ্চা আমার পেটে আরশি।”
“যে বাবা বাচ্চার প্রতি এমন অন্যায় করতে পারে সেই বাবাকে কোনো দরকার নেই এই বাচ্চার। ওকে তুই নিজেই মানুষ করবি।”
“আমি পারব না।”
“তাহলে কী করতে চাস তুই?”
“আমি এ বাড়িতেই থাকব। বাবা মা আমার অনেক খেয়াল রাখে। আমি তাদের সাথেই থাকব। এই ঘরে যাদিদের সাথে অনেক স্মৃতি, প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় যাদিদের স্পর্শ। এই ঘরেই থাকব। এখানেই বাচ্চা জন্মাবে, এখানেই বড় হবে। কতদিন ফিরবে না যাদিদ? কতমাস? কতবছর? যেদিনই হোক একদিন তো ফিরবে? অবশ্যই ফিরবে। না ফিরলে ডিভোর্স দিয়ে দিত।”
আর কিছুই বলল না আরশি। পুরো ছুটি তিরার সাথে কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে গেল।
এভাবেই কেটে গেল আরো কয়েক মাস। তিরা ও বাচ্চা মোটামুটি সুস্থ্যই আছে। প্রেগন্যান্সির ৭ মাস চলছে। একদিন হঠাৎ করেই রেহানা আলমের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে লুকিয়ে তিরার কিছু ভিডিও করলো। যাতে তিরা কিছু টের না পায়। খুব সাধারন ভিডিও। এই যেমন তিরা খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, পেট ধরে হাঁটছে এইসব। তারপর তা পাঠিয়ে দিল যাদিদকে। ভিডিওগুলো দেখে যাদিদের মধ্যে কী যেন হয়ে গেল। অস্থির লাগছে তার, খুব অস্থির। তিরা অনেক মোটা হয়ে গেছে, তার চোখের নিচে কালি পড়েছে, বিদ্ধস্ত চেহারা। সেই চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের কিছুই অবশিষ্ট নেই। যাদিদ বারবার ভিডিওগুলো প্লে করে তিরার পেট দেখছিল। অস্থির ভাবে পায়চারি করছিল। ইচ্ছে করছে এক্ষুণি তিরার কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু এই মুহুর্তে ছুটি মিলবে কি? ছুটি তার পাওনা আছে তবে হুট করেই ছুটি পাবে না জানে সে! অস্থিরতায় হাত পা কাঁপতে লাগলো!
ছেলেকে ভিডিও পাঠিয়ে রেহানা বেশ নিশ্চিন্তে ছিলেন। একরকম ধরেই নিয়েছিলেন যাদিদ যেভাবেই হোক আসবে। কিন্তু পুরো একটি সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও যখন সে আসলো না তখন রেহানার মন খারাপ হয়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে এই ছেলেকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করানোই ভুল হয়েছে। ছেলে বয়সে এবং হাতে-পায়ে বড় হয়েছে কিন্তু বিয়ের উপযুক্ত হয়নি। যাদিদ এখনই বিয়ে করতে চাইছিল না, সেই শখ করে বিয়ে দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন!
তিরা সকালবেলা দাঁত ব্রাশ করে বাথরুম থেকে বের হয়ে চমকে গেল। যাদিদ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তিরা কয়েক সেকেন্ড যেতেই আবার বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। যাদিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল, এটা কী হলো!
চলবে…