#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia Afrin Nishi
“পর্ব-১৩(বিয়ে-প্রথমাংশ)”
–‘ওপেন ইওর আইস’
খুব নির্মলতার সঙ্গে কথাটি বলল আয়ান। তবুও মৃধা চোখ খুলল না। আয়ানের নির্মলতা নিমেষেই দুর হয়ে সেখানে নেমে এলো তুমুল কঠোরতা । সে এবার ধমকের সুরে বলল,
–‘ আই সেইড ওপেন ইওর আইস’
মৃধা এবার তড়িৎ গতিতে চোখের পাতা খুলে ফেলল। চোখ খুলেতেই স্বীকার হলো আয়ানের রক্তিম দৃষ্টির। সে আবার দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল অন্য প্রান্তে। আয়ান মৃধার অন্য দিকে তাকানো টা ঠিক সোজা ভাবে নিল না। তার কাছে মনে হলো মৃধা তাকে ইগনোর করছে। সে মৃধার হাত আরও জোরে চেপে ধরল। ফলস্বরূপ মৃধা ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। মৃধা আয়ানের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য প্রবল চেষ্টা চালাতে লাগল। কিন্তু আয়ানের শক্তির সামনে সে অক্ষম। জোরাজুরির এক পর্যায়ে আয়ান বলে উঠল,
–‘ আমার কথা অমান্য করার ফল মোটেই ভালো হয় না মিস. মৃধা মেহরিন।’
মৃধা চোখ মুখ কুচকানো অবস্থায় বলল,
–‘ আমি আপনার কোনো কথাই তো অমান্য করি নি স্যার। আপনার সকল কাজ সঠিক নিয়মে শেষ করেছি। তাহলে..?’
আয়ান একটা তাচ্ছিল্য হাসি টেনে বলল,
–‘ ওহ আচ্ছা, তাই বুঝি। তো আপনাকে কী আমি বলেছিলাম অফিসে এসে কাজকর্ম সব ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে কলিগদের সঙ্গে পিরিত করতে?’
মৃধা ব্যথাতুর নয়নে আয়ানের দিকে চেয়ে বলল,
–‘ আমি কিছু বুঝতে পারছি না স্যার। আপনি এসব কী বলছেন? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই পিরিত?”
আয়ান এবার মৃধার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
–‘ কিচ্ছু বুঝতে পারছ না তাই তো? তাহলে আমিই বুঝিয়ে দেই। অফিসে এসে লাল গোলাপ নেওয়া হচ্ছে, মুচকি হেসে কথা বলা হচ্ছে, এগুলো কিছুই না তাই না?’
এবার মৃধা বুঝতে পারল আয়ান কিসের জন্য এমন করছে। কিন্তু নয়নের সঙ্গে কথা বললে আয়ান কেন এতটা ক্ষিপ্ত হয় সেটাই মৃধার অজানা। হঠাৎ মৃধা অনুভব করল তার চিবুকে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। আয়ান তার মুখ চেপে ধরার ফলে এই যন্ত্রণার সৃষ্টি হচ্ছে । মুহুর্তেই সকল ভয় দুর হয়ে তার মনে প্রবল রাগ এসে বাসা বাঁধল। মৃধা নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে আয়ানকে স্বজোরে ধাক্কা মারল। বেসামাল হয়ে আয়ান অনেকটা দুরে ছিটকে সরে গেল। মৃধা রাগে ফুঁসছে। আয়ানের চোখে চোখ রেখে রাগান্বিত স্বরে সে বলতে শুরু করল,
–‘ আপনি আমাকে কী পেয়েছেন টা কী? নিজের প্রপার্টি মনে করেন আমায় যে যখন যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ইউজ করেন? আমি কার সঙ্গে মিশবো, কথা বলবো, দ্যা’স নন ওফ ইওর বিজনেস। আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কোনো রাইট নেই আপনার। আমি অন্য ছেলের সঙ্গে কথা বললে আপনার কোথায় প্রবলেম শুনি?বাই দি ওয়ে, আপনি কোনো ভাবে জেলাস নয়তো?’
আয়ান এতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃধার কথা গুলো শুনছিল। মৃধার শেষ কথাটা বার বার তার কানে বাজতে লাগল,’আপনি কোনো ভাবে জেলাস নয় তো?’ আয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকাল মৃধার দিকে। মৃধা কপট রাগ নিয়ে আয়ানের দিকে চেয়ে আছে। আয়ান এবার আবার মৃধার নিকটে এসে পড়ল কিন্তু এবার আর মৃধার গাঁয়ে টাচ করল না। কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে পরল। তারপর বলল,
-‘ ইয়েস ইউ আর মাই প্রপার্টি মিস.মৃধা মেহরিন.’
এই অফিসে এক বছর পর্যন্ত তুমি আমার প্রপার্টি। এই এক বছর আমি যেভাবে বলব তোমাকে সেভাবেই চলতে হবে।এমনকি এই এক বছরে তুমি চাকরিও ছাড়তে পারবে না। এটা একটা কন্ট্রাক্ট বলতে পারো।সেভাবেই লেখা আছে এপয়েন্টমেন্ট লেটারে।তুমি হয়তো ভালো করে চেক করো নি। আর রইল বাকি জেলাসির প্রশ্ন? সেটা তো নিছকই তুচ্ছ বস্তু। আমার কোনো জেলাসি ফিল হচ্ছে না বরং তোমাকে তোমার দ্বায়িত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছি ব্যস।’
কথা গুলো বলে আয়ান একটা বাঁকা হাসি হাসল।সে শুরু থেকে প্ল্যান করেই এসব করে রেখেছে মৃধাকে জ্বালানোর জন্য। এদিকে
আয়ানের কথা শেষ হতেই মৃধা অবাক নয়নে চেয়ে রইল তার দিকে। এসব কী বলছে আয়ান? সে এখন তাহলে আয়ানের কেনা গোলামের মতো আছে? এপয়েন্টমেন্ট লেটার টা যদি আর একবার চেক করে নিতো তাহলে আর তার এই অবস্থার স্বীকার হতে হতো না। মৃধার ভাবনার রেশ কাটল আয়ানের কন্ঠে,
–‘ এতো না ভেবে নিজের কাজ করো যাও। আর এখন থেকে ভুলেও আমার কথার অমান্য করার চেষ্টা করবে না। আশা করি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি। ওই নয়নের থেকে একশত হাত দুরে থাকবে। মাইন্ড ইট।’
কথা শেষ করে আর এক মুহুর্ত দাড়াল না আয়ান। গটগট করে হেঁটে প্রস্থান করল সেই স্থান থেকে। আর মৃধা মাথার চুল টেনে ধরে বসে পরল মেঝেতে। না জানি এই এক বছরে তাকে আর কী কী সহ্য করতে হবে?
,,,, ,,,, ,,,,
বাড়িতে আসতেই মৃধা তার মা আর ভাইয়ের কাছ থেকে তার নানা আফরোজ চৌধুরীর সমস্ত খবর শুনেছে। মৃধা ভীষণ অবাক হয়েছে সেই সঙ্গে নানা প্রকার চিন্তা এসে ভর করেছে তার মনের কোণে। কথায় আছে না, ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়’ মৃধার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। আয়ান থেকে যত নিজেকে দুরে রাখতে চায় নিয়তি তাদের ঠিক ততই কাছে টেনে নেয়।
আয়ান আর আদ্রও বাড়িতে ফিরে দাদুর মুখ থেকে সবটা শুনেছে। আদ্র তো বেজায় খুশি কিন্তু আয়ান ততটা খুশি হলো কীনা কে জানে? তার মুখ দেখে বোঝা দায়।
সবার অনুমতি ছাড়াই আফরোজ চৌধুরী নিজের মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। তিনি ঠিক করলেন আয়ান আর মৃধার বিয়ে দিয়ে মৃধাকে চিরকালের মতো নিজের কাছে রেখে দেবেন। এতদিন পর নাতনিকে কাছে পেয়ে তিনি আবার নতুন করে হারানোর বিরহ সইতে পারবেন না। নাতনিকে পরের ঘরে পাঠানোর থেকে এরুপ প্রক্রিয়াই উত্তম বলে মনে করেন তিনি। কাল বিলম্ব না করে এটা নিয়ে মৃধার মায়ের সঙ্গেও ফোনে আলাপ করে নিয়েছেন তিনি। মৃধার মা তো এই প্রস্তাবে খুব খুশি। নিজের পালিয়ে বিয়ে করে যে ভুল করেছিলেন তিনি এখন মেয়েকে বাবার কথা মতো ভাইয়ের ছেলের হাতে তুলে দিয়ে সেই ভুলের কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। এখন কথা হলো আয়ান আর মৃধাকে নিয়ে। তারা কী রাজি হবে এই বিয়েতে?
,,,,, ,,,,, ,,,,,
কাজের মধ্যে ফোন বাজলে প্রচন্ড রাগ উঠে আয়ানের। আর আজ বারবার শুধু এটাই হচ্ছে। এত রাতে কার ফোন চেক করতে গিয়ে স্কিনে ন্যায়রার নামটা দেখে বেশ বিরক্ত হয় সে। আয়ান প্রথমে ফোনটা তুলতে চায়নি পরক্ষণেই আবার কী মনে করে তুলে ফেলল। ফোন তুলতেই ন্যায়রার উদগ্রীব কন্ঠস্বর,’কী রে এতো লেট হলো কেন ফোন তুলতে?তুই ঠিক আছিস তো? তোর শরীর ঠিক আছে?’
আয়ানের রাগ হচ্ছে প্রচুর। তবুও রাগটাকে সংযত করে বলল,
–‘ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।অফিসের কাজ করছি তাই লেট হয়েছে। আচ্ছা বল কী বলবি। আমি আবার কাজ স্টার্ট করব।’
ন্যায়রা আমতা আমতা করে কিছু বলতে গিয়ে ও আবার চুপ হয়ে গেল। আয়ান এবার ধমক দিয়ে বলল,
–‘ কীরে এভাবে টাইম ওয়েস্ট করাচ্ছিস কেন? কিছু বললে বল, হারি-আপ?’
ন্যায়রা আবারও কিছু বলতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
–‘ ডিনার করেছিস তুই?’
আয়ান বেশ বুঝতে পারল ন্যায়রা কথা ঘুরাচ্ছে।তাই সে পাল্টা প্রশ্ন করল,
–‘কী বলতে চাইছিলি ক্লিয়ার করে বল। এভাবে কথা ঘুরাতে যাস না? ‘
ন্যায়রার গলা এবার শুকিয়ে আসছে। সে কিছুক্ষণ মিনমিন করে দ্রুত ফোন রেখে দিল।আয়ান আবার কল ব্যাক করেও তার নাগাল পেল না। কারণ ততক্ষণে তার ফোন সুইচড অফ। রাগে আয়ানের মাথার তাঁর ছিঁড়ে যাচ্ছে।সবগুলো ডাফার। এখন আর তার কাজেও মন বসবে না। ফোনটা অদুরে ছুড়ে মেরে হনহন করে হেঁটে কোথাও একটা বেড়িয়ে পরল সে।
চলবে,
(প্রিয় পাঠকমহল,,, আমি প্রতি পর্বে ১০০০+শব্দ ইউজ করি। কোনো কোনো পর্বে ১১০০,১২০০ শব্দ ইউজ করি। তবুও আপনারা অভিযোগ করেন পর্ব ছোট হয়। দিস ইজ নট ফেয়ার গায়েস😌)