#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-৫”
হঠাৎ গাড়ির সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত গাড়ি ব্রেক কষল ন্যায়রা। ন্যায়রাও তো ড্রিংক করে আছে তাই তারও গাড়ি চালাতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে তবুও সে চেষ্টা করছে ঠিক মতো ড্রাইভ করার। কিন্তু এত চেষ্টার পরেও কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে তাদের গাড়ির সামনে পরে গেল। ন্যায়রা গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটির কাছে গেল। মেয়েটির হাতে বাজারের ব্যাগ। কিছু বাজার সামগ্রী নিচে পড়ে আছে। ন্যায়রা তাড়াতাড়ি করে মেয়েটিকে বলল,
— এক্সকিউজ মি, আপনি ঠিক আছেন তো?
–হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। তবে আপনাদের এভাবে গাড়ি চালানো ঠিক হয়নি। আপনি রং সাইডে ঢুকে পড়েছেন। নিয়ম মেনে গাড়ি চালান নয়তো বড় কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।
–হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন ভুলটা আমারই। আচ্ছা আমি সাবধানে গাড়ি চালাতে চেষ্টা করব।
–অবশ্যই
ওদের কথার মাঝে আয়ান গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। কোনো রকমে গাড়ি ধরে টলতে টলতে সামনে এসে বলল,
–এই মেয়ে, তুমি এখানে? তুমি এখানে কী করছ? আমাকে ফলো করছ? কেন? আরও দয়া চাই বুঝি তোমার? এই দেখো আমি কিন্তু তোমাকে আর কোনো দয়া করতে পারব না আই মিন করব না। তোমাকে…….
আয়ানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ন্যায়রা বলল,
–আয়ান তুই গাড়ি থেকে বেড়িয়েছিস কেন? আর ওনাকে এসব কী বলছিস? তোর মাথাটা কী একেবারে খারাপ হয়ে গেছে? চল তাড়াতাড়ি গাড়িতে চল।
ন্যায়রা আয়ানকে ধরে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিল। তারপর মেয়েটির কাছে এসে বলল,
–সরি, ও আসলে সেন্সে নেই তাই এসব আবল- তাবল বকছে। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
মেয়েটি মাথা নেড়ে ন্যায়রার কথায় সম্মতি দিল।মেয়েটির উত্তর পেয়ে ন্যায়রা তাকে বিদায় জানিয়ে আয়ানকে নিয়ে গাড়ি টান দিল।
ওদের গাড়ি চলে যেতেই মেয়েটি পেছন ফিরে মিনমিনিয়ে বলল,
–আসলেই আপনি খুব খারাপ মি.আয়ান চৌধুরী। এভাবে মাতাল হয়ে রাস্তাঘাটে মাতলামো করে বেড়ানো টা নিশ্চয়ই কোনো ভদ্র ছেলের কাজ নয়?
মেয়েটি নিচে তাকিয়ে দেখল তার কেনা দ্রব্যাদি রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেয়েটির খারাপ লাগল ভীষণ। এভাবে জিনিসের অপচয় তার একদমই পছন্দ নয়। বসে বসে রাস্তা থেকে জিনিস গুলো তুলতে লাগল সে।
এতক্ষণের এই মেয়েটি আর কেউ নয়, “সে হলো মৃধা।” আগামী দিন থেকে সকাল থেকে তার হাতে কোনো সময় থাকবে না এজন্য সে ভেবেছিল রাতেই বাজার টা করে রাখবে। মুগ্ধকে দিয়ে করানো যেত কিন্তু ওর আবার ফাইনাল এক্সাম চলছে এজন্য মুগ্ধ ও সময় পাবে না। তাই মৃধা রাতেই এসেছিল বাজার করতে। টুকিটাকি বাজার করে বাড়ির দিকে ফিরছিল সে। ঠিক সেই মুহূর্তে আয়ানদের গাড়ি রং সাইডে এসে মৃধার গায়ে ধাক্কা দিয়ে দেয়। ঠিক সময় ব্রেক করতে পারায় মৃধার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু বাজারগুলো কিছুটা নষ্ট হয়েছে। ন্যায়রা আয়ানের পি.এ হলেও ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় তার সঙ্গে মৃধার দেখা হয়নি। কারণ ন্যায়রা তখন অফিসের কাজে একটু বাহিরে গিয়েছিল। তাই আজকে ন্যায়রাকে প্রথমে মৃধা চিনতে পারেনি। পরে যখন আয়ানকে দেখল তখন সে মনে মনে ভাবল ন্যায়রা হয়তো আয়ানের গার্লফ্রেন্ড।
—————————
গাড়ি এসে থেমেছে চৌধুরী বাড়ির দোরগোড়ায়। বাড়ির ভেতরে প্রতিদিনের মতো আজও আফরোজ চৌধুরী লিভিং রুমে পায়চারি করছেন আর ঘড়ির কাঁটায় চোখ বুলাচ্ছেন। রাত যখন সাড়ে দশটা ঠিক তখনই ন্যায়রার কাঁধে ভর দিয়ে নেশাগ্রস্থ আয়ান বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। এই দৃশ্য চোখে পড়তেই ক্রোধে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল আফরোজ চৌধুরীর। এই অন্যায়ের শাস্তি আয়ানকে এবার পেতেই হবে। ন্যায়রা আয়ানকে নিয়ে কয়েক পা ভেতরে ঢুকতেই আফরোজ চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন,
–দাড়াওওওও, আর এক পা ও সামনে এগোবে না। ওখানেই থেমে যাও।
ন্যায়রা অসহায় দৃষ্টিতে আফরোজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
–প্লিজ দাদুভাই আমাদের ভেতরে আসতে দিন। আয়ানকে এই মুহুর্তে ঘুমতে দেওয়া খুবই জরুরি।
আফরোজ চৌধুরী যেন আরও রেগে গেলেন ন্যায়রার কথায়। তিনি রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,
— এই মেয়ে একদম চুপ।কোন সাহসে তুমি আমাকে দাদুভাই বলছ? তোমাকে না কতবার করে বলেছি আমাকে দাদুভাই বলবে না তবু কেন বলছ? আর হ্যাঁ এই আফরোজ চৌধুরীকে বুঝাতে এসো না কোনটা জরুরি আর কোনটা জরুরি নয়।দাড়িগুলোতে আর এমনি এমনি পাক ধরেনি।ঠিক ভুল বিচার করার মতো যথেষ্ঠ জ্ঞান আমার আছে। রাত-বিরেতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে মাতলামো করা হচ্ছে। এই মুহুর্তে এই বাড়ি থেকে ওটাকে নিয়ে বেড়িয়ে যাও। আমার বাড়িতে ওর কোনো জায়গা নেই।
চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পেয়ে আদ্র নিজের ঘর থেকে নিচে নেমে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে সে বলল,
— কী হয়েছে দাদুভাই। এভাবে চিৎকার করছ কেন ? শরীর খারাপ করবে তো।
–দেখো দেখো বড় দাদুভাই, তোমার আদরের ছোট ভাইয়ের কার্যকলাপ নিজের চোখেই দেখো। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পরনারীর সঙ্গে ঢলাঢলি করতে করতে বাড়িতে ঢুকেছে। দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে।
–আচ্ছা দাদুভাই আমি দেখছি আয়ানকে। কিন্তু তুমি এভাবে উত্তেজিত হইও না প্লিজ নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।
–অসুস্থ হলে হলাম তাতে কার কী যায় আসে? আমি মরলে সবাই তো বেঁচেই যায়। আমার কথা ভাববার সময় কী কারও আছে?
আদ্র আফরোজ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–কে বলল তোমাকে ভালবাসার কেউ নেই? আমরা সত্যিই তোমাকে খুব ভালবাসি। আয়ান ছোট তাই একটু ভুল করে ফেলে। প্লিজ এবারের মতো ওকে মাফ করে দাও।দেখো আর কখনো ও এমন অন্যায় করবে না।
–নাহ দোষ যখন করেছে শাস্তি তো তখন ওকে পেতেই হবে। আজ রাতে কিছুতেই ও বাড়ি থাকতে পারবে না। ওই মেয়েকে বলো ওকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে।
আদ্র বুঝতে পারল তার দাদুভাই আজকে ভীষণ ক্ষেপে গেছে। তাকে ম্যানেজ করা এখন একদমই ইম্পসিবল। তাই সে ন্যায়রাকে ইশারায় বুঝিয়ে দিল আয়ানকে নিয়ে চলে যেতে। ন্যায়রাও আর কোনো কথা না বলে আয়ানকে কোনরকমে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই আদ্র তার দাদুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরে দিয়ে আসল। আর নিজেও চলে গেল তার ঘরে। বিছানায় শুতে শুতে সে মনে মনে ভাবল,
— নাহহ, দিনকে দিন আয়ান টা বড্ড বেপরোয়া হয়ে উঠছে।এখনই কন্ট্রোলে না আনলে সবকিছু একসময় কন্ট্রোললেস হয়ে পড়বে। আমি কালই ওর সঙ্গে কথা বলব। ওর জন্য দাদুভাই অনেক কষ্ট পাচ্ছে।
————————-
এদিকে মৃধা বাড়িতে ফিরে তার মায়ের কাছে বাজার টা ধরিয়ে দিয়ে নিজে চলে গেল ফ্রেশ হতে। কেন জানি তার ভীষণ অস্থির লাগছে। বারবার শুধু আয়ানের কথা মনে পড়ছে। ঘৃণা হচ্ছে, রাগ হচ্ছে হয়তো অভিমানও হচ্ছে। কিন্তু এমন ফিলিংস-এর কারণ মৃধার অজানা।
মৃধার মা বাজার গুলো তুলে রেখে ওদের জন্য খাবার সাজিয়ে দিল।মুগ্ধ তখন পড়ার টেবিলে। মৃধা ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে মুগ্ধকে ডেকে নিল।তারপর তিনজনে একসঙ্গে বসে রাতের খাবার সম্পন্ন করল। কাল আবার মৃধার জন্য নতুন ভোরের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হবে স্নিগ্ধ আলোক রশ্নিরা। মৃধা আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পরল। কাল সকালে কিছুতেই দেড়ি করে ওঠা চলবে না। এমনিতেই মৃধা সময়ের ব্যাপারে ভীষণ পাঞ্চুয়েল তবুও কোনো রকম রিস্ক সে নিতে চায় না। জবের প্রথম দিন বলে কথা। অন্যরকম অনুভূতি। এই অনুভুতি টা কী জবের জন্য নাকি অন্যকিছু??
চলবে,