কন্ট্রাক্ট অফ ম্যারেজ পর্ব-৭

0
6784

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-৭”

আজ মৃধার জবের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন বেশ ভালোই কেটেছে তার তাই আজও খুশি মনে তাড়াতাড়ি করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরল সে। মুগ্ধ এক্সাম দিতে চলে গেছে। আর মৃধার মা রান্নার জোগাড় করছে।

অফিসে গিয়ে বেশ ভালোই কাজ করছিল মৃধা৷ হঠাৎ ম্যানেজার এসে বলল, “ছোট স্যার আপনাকে ডাকছে।” মৃধা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই বুঝল ম্যানেজার সাহেব আয়ানের কথা বলছে। মৃধা ম্যানেজারকে বলল
সে তার হাতের কাজটুকু কম্পিলিট করেই যাচ্ছে। ম্যানেজার মৃধার উত্তর পেয়ে চলে গেলেন।

পাঁচ মিনিট পর,

— আসব স্যার?

দরজা নক করার আওয়াজে ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলল আয়ান। দরজায় মৃধা দাড়িয়ে আছে
মৃধাকে দেখা মাত্র আয়ান একবার ঘড়ির কাঁটায় চোখ বুলালো। তারপর মৃধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— পাক্কা পাঁচ মিনিট লেট করেছ। লেট পারসন আমার একদম অপছন্দ

মৃধা অপরাধীর ন্যায় বলল,

— সরি স্যার, হাতে অল্প একটু কাজ ছিল। ওটা শেষ করে এলাম তাই লেট হলো।

— নো এক্সকিউজ, এই অফিসে সবাই জানে এখানে সবার আগে আয়ান চৌধুরী তারপর বাকি সব কিছু।

— সরি বললাম তো স্যার, আর কখনো এমন হবে না।

— উহুম সরি তে কাজ হবে না। দোষ যখন তুমি করেছ শাস্তি টা তো তোমাকে পেতেই হবে।

মৃধা বিষ্ময়কর চাহনি নিয়ে বলল,

— কী শাস্তি?

আয়ান একটা মুড নিয়ে বলল,

— তুমি এখনি আমার জন্য একটা ব্ল্যাক কফি করে নিয়ে আসবে। এটাই তোমার শাস্তি।

আয়ানের এমন লাগামহীন শাস্তির কথা শুনে মৃধার মেজাজ চরম আকারে খারাপ হয়ে গেল। সে বিদ্রোহী কন্ঠে বলল,

— অনেক হয়েছে। বাড়াবাড়ির একটা লিমিট থাকা উচিত। আপনি আমার অফিসের বস আর আমি আপনার কর্মচারী হলেও আমার অবশ্যই নিজস্ব কিছু আত্মসম্মান আছে। একে তো আপনি আমাকে শুরু থেকেই তুমি করে সম্মোধন করছেন তারওপর এখন আবার বলছেন কফি করতে। আপনি কী আমাকে আপনার বাড়ির কাজের লোক মনে করছেন? এক্সাক্টলি বলুন তো?

মৃধার এমন ধমকানি শুনে মুহূর্তেই আয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

— হেই স্টপ, গলা নামিয়ে কথা বলো। এটা আমার অফিস আমার যেমন ইচ্ছে তেমন করে চালাবো। যেহেতু তুমি আমার বেতনভুক্ত কর্মচারী সেহেতু অফিস আওয়ারে তুমি আমার সমস্ত অর্ডার শুনতে বাধ্য। এটাই এখানকার রুলস। তোমার যদি এই রুলস পছন্দ না হয় তাহলে দরজা খোলাই আছে ইচ্ছে হলে তুমি বিদায় নিতে পারো। কী দিব নাকি বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে?? (শেষ কথাটা আয়ান এক ভ্রু উচিয়ে মৃধার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল)

আয়ানের শেষ কথাটা মৃধার মনে গভীর রেখাপাত সৃষ্টি করল। এতক্ষণের অগ্নিমূর্তি নিমেষেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সবে মাত্র তার পরিবার একটু আনন্দের মুহূর্ত উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে এখন যদি এই চাকরি টা চলে যায় তাহলে আবার সেই কষ্টের দিন ফিরে আসবে। নাহ নাহ, এমনটা মৃধা কখনোই হতে দেবে না। মৃধা এসব ভাবছে আর নিরব সৃষ্টিতে চেয়ে আছে আয়ানের মুখপানে। আয়ান মৃধার এমন দৃষ্টি দেখে তাচ্ছিল্য করে বলল,

— কী দম ফুরিয়ে গেল বুঝি। আমি খুব ভালো করেই জানি কার দৌড় কতো দুর। এখন যাও তাড়াতাড়ি কফি টা করে নিয়ে এসো।

এই বলে আয়ান আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দিল। আয়ানের দৃষ্টি সরতেই মৃধা জোর পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে গেল। উদ্দেশ্য কিচেন। মৃধা চলে যেতেই আয়ান একবার দরজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

— তুমি এই আয়ান চৌধুরীর সঙ্গে পাঙ্গা নিয়েছ মি. মৃধা মেহরিন। এর জবাব তোমাকে আমি তিলে তিলে দিব। এটা তো সবে শুরু।

কিচেনে,
ম্যানেজারের কাছ থেকে কিচেনের খোঁজ নিয়ে মৃধা চলে গেল কফি করতে। কিচেনে অনেকগুলো শেফ নিজেদের মতো করে কাজ করছে। অফিসের ক্যান্টিনের জন্য এসব রান্নার আয়োজন। মৃধা কাউকে কিছু না বলে কফি বানাতে লেগে পড়ল। মৃধার কাজের মধ্যে একজন শেফ এসে বলল,

— ম্যাম আপনাকে করতে হবে না। কী করতে হবে আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।

মৃধা হাসিমুখে শেফ-টিকে বলল,

— নাহ থাক, তার দরকার হবে না। আমার কাজ আমিই করে নিচ্ছি।

–ওকে ম্যাম

— হুম

——————————-

আয়ান খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। আর এদিকে কেউ তাকে আরও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আজকে আয়ানের সবকিছুই ন্যায়রার কাছে অন্যরকম ভালো লাগছে। সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আয়ানকে দেখছে। বন্ধুক্তের খাতিরে এতদিন তার মনের মধ্যে দমিয়ে রাখা অনুভূতিগুলোকে আয়ান সেদিন রাতে আবার তাজা করে দিয়েছে। এখন আর আয়ান থেকে দুরে থাকা তার জন্য একদমই ইম্পসিবল।

কফির মগ হাতে মৃধা আয়ানের কেবিনে নক করতে যাবে ঠিক তখনই ন্যায়রাকে এভাবে হ্যাবলার মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে কিছুটা আশ্চর্য হয়। পরবর্তীতে আবার সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে যায় তার। ন্যায়রা তো আয়ানের গার্লফ্রেন্ড তাকিয়ে থাকতেই পারে। এটা নিয়ে আশ্চর্যের কিছু নেই। নিজের ভাবান্তর শেষ করে ন্যায়রার পাশ দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল মৃধা। বেমালুম ভুলে গেল দরজায় নক করার কথা। মৃধা গিয়ে আয়ানের সামনে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

— এই নিন আপনার কফি

আয়ান কাজ করতে করতেই উত্তর দিল,

— নক না করে ঢুকেছ কেন? তোমার মধ্যে নূন্যতম ম্যানার্স টুকুও অবশিষ্ট নেই নাকী?এরজন্য তোমাকে আবার শাস্তি পেতে হবে।

আয়ানের কথা শুনে মৃধার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আবার শাস্তি? মৃধা আবার নতজানু হয়ে বলল,

— সরি সরি সরি স্যার, আর কোনো ভুল হবে না। এবারের মতো মাফ করে দিন।

— নাহ কোনো ক্ষমা নেই। তুমি যাও আরও এক মগ কফি করে নিয়ে এসো ন্যায়রার জন্য।

অগত্যা উপায়ন্তর না পেয়ে মৃধা চলে গেল আরও একটা কফি করতে।কারণ এতক্ষণে মৃধা বুঝে গেছে আয়ান যা বলে তাই করে।

এতক্ষণ ন্যায়রা মৃধা আর আয়ানের কথপোকথন শুনে বোঝার চেষ্টা করছিল এখানে হচ্ছে টা কী সেটা? কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে নি। অবশেষে সে আয়ানকে জিজ্ঞেস করে,

— এসব কী হচ্ছে?

— তেমন কিছুই না। এসব তুই বুঝবি না। আচ্ছা বাদ দে কাজের কথা বল।

ন্যায়রা একটা ফাইল আয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— ওকে, এই নে এই ফাইলটায় সাইন করে দে।

আয়ান ফাইল টা চেক করে সাইন করে দিল। কিছুক্ষণ পরেই মৃধা চলে এলো কফি নিয়ে। এবার আর কোনো রকম ভুল সে করল না। দু’জনকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে যখন সে চলে আসতে নেবে ঠিক তখনই ন্যায়রা বলে উঠল,

— এই তুমিও আমাদের সঙ্গে জয়েন করো।তুমি আমার বয়সে ছোটোই হবে তাই তুমি করেই বলছি কিছু মনে কোরো না।

মৃধা হেসে জবাব দিল,

— নাহ ম্যাম, আমি কিছু মনে করি নি।

— তাহলে বসো আমাদের সঙ্গে

মৃধা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আয়ান বলে,

— হোয়াটটট, এটা তুই কী বলছিস ন্যায়রা। আয়ান চৌধুরী কফি খাবে কিনা তার অফিসের একজন সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারীর সঙ্গে। হাউ স্ট্রেন্জ।হাসালি তুই। এই আয়ান চৌধুরী যার তার সঙ্গে মেলামেশা করা পছন্দ করে না।

আয়ানের এই ব্যবহার টা মৃধার মনে ভীষণ আঘাত দিল। কেন জানি এই লোকটার তিক্ত কথা গুলো তার হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? আয়ান তো ভুল কিছু বলছে না। তাহলে কেন মৃধার এতো কষ্ট হচ্ছে?
মৃধা থমথমে মুখে মলিন হেসে ন্যায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— স্যার ঠিকই বলেছে ম্যাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের আপনাদের সঙ্গে এতটা ক্লোজ হয়ে মেশার অধিকার নেই। আপনারা বরং ইনজয় করুন। আমি আসছি এখন……..
ন্যায়রা কিছু বলতে গেলে মৃধা তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জোর পায়ে হেঁটে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেল। মৃধার যাওয়ার পানে চেয়ে আয়ান মনে মনে ভাবতে লাগল,

— ডোজ টা কী একটু বেশি হয়ে গেল?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here