#কাছে তুমি
পর্ব-০২
#রোকসানা আক্তার
২.
রেস্টুরেন্টর একদম কোণার একটা ক্রিশ্চালের চেয়ারে বসে আছে রিয়াশ।তার হাতের সামনে একটা কোকোলার বোতল পড়ে আছে ।তার চোখমুখ গোমড়া ভাব।গোমড়ার মাঝে রাগের ছাপ স্পষ্ট! রিয়াশের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না মাত্র পাঁচদিনের মাথায় সানা এতটা পরিবর্তন হবে।এইতো কিছুদিন আগে মেয়েটি তার পেছন আঁটার মতো লেগে থাকতো।মাকে এটাসেটা বাহানা করে তার রুমে চা নিয়ে যেত।ছাদে এসে ফুল নেড়ে নেড়ে সুরেলা গান ছেড়ে দিত।শেষ মুহূর্তে তার মনের আকুপাকু কথা গুলোও বলে দিলো!মানছে সে হঠাৎ সানার ওমন কথায় কি উত্তর করবে নিজেই ভেবে পায়নি।আর এমন হওয়াটা স্বাভাবিক।কারণ ভালো লাগার মানুষটা যদি তার নিজের মনের কথাগুলোই সে তাকে বলে দেয় তখন তার খুশির সীমা থাকে না।অতি খুশিতে সে প্রায় বাকরুদ্ধ, স্তব্ধ হয়ে যায়।রিয়াশের সেদিন তাই হয়েছিলো।আর সানা তা বুঝে নি।অবশ্য এখানে রিয়াশেরই দোষ সেও যে সানাকে মনে মনে খুব ভালোবাসে তা সে সানাকে বুঝতে দেয়নি।সানা রুমে চা নিয়ে এলো ভাব নিয়ে থাকতো।কথা বলতো না।দেখতো সানা তার ভাব লুক দেখে কি রিয়াকশন করে। যখন সানা বিরক্তি হয়ে তাকে বিড়বিড় করে বকতো তখন রিয়াশ লুকিয়ে লুকিয়ে সেই কি কিউট হাসি দিতো তা সানার নজরে আসতো না।এরকম সবক্ষেত্রেই করতো!সানাকে রিয়াশের মনে ধরেছিলো প্রায় একবছর আগে সাফার ব্রার্থডে পার্টিতে।
সাফা রিয়াশের ছোট্টবোন।সেদিন সানা লালরঙ্গা একটা লেহেঙ্গা,সাথে হাইহিল স্যু পড়ে যখন সবার সামনে এলো রিয়াশ এবং রিয়াশের ফ্রেন্ডরা যেন চড়কগাছ হয়ে গেল!এই একটা মেয়ে যে এতগুলা মানুষের মাঝে প্রথমেই চোখ পড়ার মতো!রিয়াশের ফ্রেন্ডরা ত সেদিন রিয়াশের পিছুই ছাড়তেই চায়নি।”দোস ওই মেয়েটারে আমার চাই,ওই মেয়েটারে আমার চাই ই চাই “-বলতে বলতে একদম রিয়াশের কানটা জ্বালাপালা করে দিলো!কিন্তু রিয়াশ তাদের সবাইকে এক ধমকে থামিয়ে দিলো।আমেজ মাখানো গলায় বললো,
“তোরা আমার গফকে নিয়ে যাবি!এত্ত সাহস তোদের!?”
সবাই সেদিন আড় নয়নে রিয়াশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর সানার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস হলো না কারো!অথচ আর মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে তার লাল পরীটা অন্যের হয়ে যাবে!
“কোকোলা টা ত শেষ করবি রিয়াশ!এভাবে মন খারাপ করে পড়ে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে?”
আবেদের কথায় ঘোর কাটলো রিয়াশের।আবেদ,তুলি,রাহুল ওদের সাথে দেখা করতেই মূলত রেস্টুরেন্টে এসেছে রিয়াশ।এরা তার জানেন জান দোস্ত।এদের সাথেই সবকিছুই শেয়ার করে সে।
“রিয়াশ?এখানে সানার কোনো দোষ নেই।তুই মেয়েটিকে ভালোবাসিস অথচ মুখ ফুটে একবারও বলিস নি।তাহলে মেয়েটি কি আশা নিয়ে পড়ে থাকবে?তার নিজের ত একটা ভবিষ্যত আছে।” (তুলি)
“ভালোবাসার কথা মানুষকে মুখ ফুটে বলা লাগে?বুঝে নেওয়া যায় না?ভালোবাসতে আগে অভিমান বুঝা লাগে!”(রাহুল)
” এই তুই সবসময় উল্টোটা বেশি বুঝিস!সবাই কি আর তোর মতন মানুষদের মনের কথা পড়তে পারে!”
“আমি আবার কি উল্টো বুঝলাম!যেখানে রিয়াশ বুঝেছে সানা তাকে ভালোবাসে।সেখানো সানারও বুঝা উচিত ছিল !ফল্টটা এখানে কার?”(রাহুল)
“ফল্টটা তোর,গাধারাম!সানা ত সরাসরি সেদিন বলেই দিয়েছে।তারপরও রিয়াশ সেদিন তার ভালোবাসার কথা বলে নি এটাই সবথেকে বড় ভুল করেছে।”
“বলবে ভেবে নিয়েছে তাই সময় নিয়েছে।ভালোবাসাটা অনেকটা অপেক্ষার পর ফেলে ফিলিংসটা সেই হয়, বুঝলি?”
“এইজন্যো ত সানা এখন ছ্যাকা খাবিয়া বাঁকা বানাইয়া দিয়া যাইতেছে।”
“প্লিজ তোরা চুপ কর!এমনিতেই রিয়াশের মনটা ভালো না তারউপর তোদের নাদুসনুদুস কথাবার্তা। ” (আবেদ)
বলেই আবেদ এবার রিয়াশের দিকে ফিরে।বলে,
“তুই কোকোলা টা শেষ কর।তারপর আমরা একটা প্লান বানাই কীভাবে সানাকে ব্যাক করা যায়।”
“হুম,দোস্ত।আমরা থাকতে তোর এত্ত কিসের টেনশন!” (তুলি)
রিয়াশ ফ্রেন্ডদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর কোকোলা টা হাতে নেয়।তিন ঢোক খেয়ে কোকোলাটা টেবিলের উপর আবার রেখে দিয়ে বন্ধুদের দিকে ফিরে বলে,
“কাল ত মুখের উপর ওই কথাগুলো বললোই।তারপর থেকে ওর সাথে কথা বলার সুযোগও পাচ্ছি না।ও বাইরে বেরুলে সারাক্ষণ মার সাথে লেগে থাকে।আর ভেতরে গেলে তার রুমে!মোবাইলও চালায় না যে মেসেজ অথবা ফোন করতে পারবো!আর আগামী কাল ওর এনগেজমেন্ট। সময়ও হাতে খুব কম।এখন এই অল্প সময়ে কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না!”
“একটা কাজ করি সানার কাছে তুলিকে সন্ধের দিকে পাঠাই।সানা কেন তোর কাছে ব্যাক করবে না এটার কারণ তুলি জানবে।আর তোর সাথে কথা বলার ওয়ে করে দিবে!”
“তারপরও যদি সানা না বুঝে তাহলে একেবারে কিডন্যাপ।কি দোস্ত ঠিক কইছি না?”( তুলি)
“হুম।” (আবেদ)
“হোয়াট কিডন্যাপ!” (রিয়াশ)
“অবাক হবার কিছুই নেই রিয়াশ।এছাড়া ত আর উপায় দেখছি না।তোর ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে হলে এটা তোকে করতেই হবে!”
রিয়াশ কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর মৃদু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
৩.
রাত প্রায় ন’টা বেঁজে পাঁচচল্লিশ মিনিট।কিছুক্ষণ আগে হলো সবাই ডিনার সেরেছে।এই বাসায় ডিনারটা একটু তাড়াতাড়িই করা হয়।মিসেস রিমা বেগমের আদেশ সবাই দশটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বে।তাহলে সকালের সবুজ প্রকৃতি দেখতে পাবে।সবুজ প্রকৃতির হাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যে খুব ভালো।সানা তার রুমের বিছানার উপর পা ভাঁজ করে বসে আছে।কিছুতেই চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।ন’টা ত্রিশ থেকে চেষ্টা করে আসছে ঘুমতে।চেষ্টাতে যখন ব্যর্থ হলো তখন মুখে একগাদা বিরক্তি নিয়ে আবার বসে পড়লো।আসলে ঘুমটা হচ্ছে না মূলত তুলির আপুর কারণে।তুলি আজ সন্ধেই তার সাথে দেখা করে গিয়েছে।রিয়াশের ব্যাপারটা বলতে।কিন্তু এখানেও সে তুলির সবগুলো কথার পাল্টা জবাব দিয়েছে। না রিয়াশের লাইফে আর ফিরে যাবে,আর না তারসাথে দেখা করবে!নিজের কথার উপর অটুট থেকেই তুলিকে রিক্ত হাতো যেতে বাধ্য করলো।ওমন বিহেভে এখন নিজেই নিজেকে স্বস্তি দিতে পারছে না সানা।ভেতরটা কেমন উসখুস করছে!
এমন সময় দরজায় করাঘাত পড়ে।সানা পাশ থেকে ওড়নাটা ভালোভাবে গাঁয়ে জড়িয়ে নিয়ে দরজাটা খুলে ।তাকিয়ে এ বাড়ির কাজের লোক মিনা আপা এসেছে।
“আপা?রিয়াশ ভাইজান কইছে আপনে উনার লাইগা এক কাপ কফি করে নিয়া যাইতেন।মাথাটা নাকি উনার প্রচন্ড ব্যথা করতাছে।”
“আপনি করে দিননি?”
“আসলে ভাইজান কইছে আমার হাতের কফি নাকি উনার ভাল্লাগে না।তাই আপনে কইরা দিতেন।”
“ফুপী ঘুমিয়ে গেছে?”
“হ।হক্কলে ঘুমাইসে।”
চলবে……