কাছে তুমি পর্ব-০৭ #রোকসানা আক্তার

0
408

#কাছে তুমি
পর্ব-০৭
#রোকসানা আক্তার

৯.
ফুল,ফিতা,বেলুন দিয়ে বাসর ঘরটি মোটামুটি ঘরোয়াভাবে সাঁজানো হয়েছে।দেখতে একদম অসুন্দর বলা যায় না।খুব চমৎকার হয়েছে!সানা ফুলসজ্জা বিছানার একদম কোণার দিকটায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে।চোখমুখে তার বিষণ্নতা রেখা!রিয়াশের সাথে বিয়েটা হয়ে আসলেই খুব অন্যায় করে ফেলেছে সে!ফুপীর রাগ।বাবার অভিমান আর মার কষ্ট সবগুলো চিত্র যেন চোখের সামনে একে একে জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠছে!কিছুতেই মনকে বুঝাতে পারছে না।কেউ ত আর মনে হয়না তাকে কখনো ক্ষমা করবে!ভুলগুলো ভুলে গিয়ে তাকে কাছে টেনে নিবে!তাহলে কী এভাবেই চলবে জীবনময় গতি?কী হতে চলবে পরের দিনগুলোতে?
ভাবতেই মুহূর্তে সানার বুকটা ভার হয়ে ওঠে।তারসাথে চোখের কোণা থেকে মোটা দুই ফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে আসে।দ্বিতীয় ফোঁটা পড়তে নিলেই কারো হাতের স্পর্শে চোখের নিচটা শুষ্কে উঠে।সানা কাতর জড়ানো চোখে সামনে তাকায়।দেখে রিয়াশ সেই পানিটুকু মুছে তার দিকে মায়া মায়া চোখ করে তাকিয়ে আছে। সানা এবার অস্ফুট একটা শব্দ করে রিয়াশকে এক ধাক্কা দিয়ে খানিকটা দূরে সরিয়ে দেয়।অভিমানী স্বরে বলে উঠে,

“আপনি আমাকে একদম ছুইবেন না!এই আপনার জন্যে আজ আমার এমন দিনটি দেখতে হলো!দূরে যান আমার থেকে!”

রিয়াশ ধাতস্থতা বজায় রেখে সানার দিকে এগিয়ে,
“কুল সানা কুল!আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।এই যে আজ না দেখছিস মার,মামার রাগ-অভিমান ক’দিন পর দেখবি সবাই সব ভুলে ঠিকই তোকে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে!”
“ভুল!কিছুই ঠিক হবে না!না আপনার মা এই সম্পর্ক মেনে নিবে আর না আপনার বাবা!কেউই মেনে নিবে না!আপনি খামোখা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলেন!”
“আমি তোর জীবন নষ্ট করি নি!আমি তোকে ভালোবাসি! আর আমাদের এই ভালেবাসায়ই একদিন সবার মন ঠিকই জয় করে নিব দেখিস!আমার উপর শুধু একটু বিশ্বাস রাখ!”
“না কোনো বিশ্বাস আর না কোনো ভরসা!আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই।সরেন এখান থেকে!আমি ঘুমাবো!”

বলেই সানা পাশ থেকে একটা বালিশ টেনে নিয়ে সেখানে মাথা রেখে কাঁত হয়ে শুয়ে পড়ে।আর রিয়াশ ছোট্ট ছোট্ট চোখ করে সানার দিকে তাকিয়ে।স্বপ্ন ছিল বউয়ের সাথে বসে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে। তাদের ভালোলাগা,ভালোবাসা সব অনুভূতি শেয়ার করবে।তারপর আরো কত কি!আর এই মেয়ে ফ্যামিলির দোহাই দিয়ে সব লাটে উঠিয়ে দিলো?তাহলে তার এতদিনের সব স্বপ্ন জলে মিশে গেল!?ভেবেই রিয়াশ গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে,

“সানা?এখনই ঘুমাবে?”

সানা প্রতিত্তর করলো না!রিয়াশ আবার ডাকলো,
“এই সানা?”

এবার সানা মাথা সোঁজা করে।প্রচন্ড রাগ গলায় বলে,
“প্রবলেম কী আপনার?একে ত জীবনটা তছনছ করলেন তারউপর শান্তিতে একটু ঘুমুতেও দিবেন না!”
“আজ তো আমাদের বাসর রাত!” টানা টানা গলায়!
“তো আমি কি করবো!?”
“ইয়ে মানে?…..
কিছুটা ইতস্ততা বোধ করেই এবার রিয়াশ প্রবল জোর খাটিয়ে নিজেকে শক্তপোক্ত করার চেষ্টা করে।মনের সাথে কন্ঠে ভারসাম্য রেখে বলে উঠে,
” বাসর রাতে কি করবি তা তুই জানিস না?আমার সাথে বাসর করবি বাসর!”

সানার চোখমুখে আকাশসম বিস্ময় ছুঁয়ে যায়।এ ছেলে কি বলছে তাকে!আছে কোনো লজ্জা সরম!?এবার প্রকাশিত কন্ঠে,
“নির্লজ্জ।ঠোঁটকাটা!”
“বউয়ের সামনে এত লজ্জা সরম থাকা চলে না!?তারউপর আজ আমাদের বাসর রাত!বাসরে প্রথম লজ্জা হলেও তা উড়িয়ে দিতে এই রিয়াশের..!”
“নির্লজ্জ!গেট আউট ফ্রম হেয়ার।গো টু বিলো অফ বেড!”
“যদি নিচে না যাই?”
এ’কথাটা বলেই রিয়াশ সানার দিকপ শ্লথ গতিতে এগুতে থাকে।সানা ভয় পেয়ে থমথমা গলায় বলে উঠে,
“এই কাছে আসবেন না কিন্তু…কাছে আসবেন না!নাহলে চিৎকার দিব!”

রিয়াশ খিলখিলিয়ে হেসে উঠে!আর সানাকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে তার পাশ কেঁটে চিৎ মেরে শুয়ে যেতে যেতে বলে,
“তুই চিৎকার কর!আমি ঘুমাই।গুড নাইট!”
বলেই রিয়াশ চোখ বন্ধ করে নেয়!সানা অবাক!রিয়াশ যে ওমন ভণিতা করে এভাবে শুয়ে যাবে তা বিশ্বাসই হয় নি!তবে সানার কেনজানি প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেল!কেন মন কারণ জানে না!হয়তো মনের অবচেতনে রিয়াশের জন্যে এখনো তার এক ফালি ভালোবাসাটা রয়েই গেল!সেও চেয়েছিলো রিয়াশ তার কাছে আসুক।তাকে ভালেবাসুক!সানা মুখে একটা লজ্জামাখা হাসি টেনে রিয়াশের পাশ দিয়ে শুয়ে পড়লো।শোয়ামাত্রই রিয়াশ উঠে পড়লো!আর তার তৃষ্ণার্ত মনের মুখটা সানার কানের কাছে গুঁজে ফিসফিস গলায় বলে উঠলো,

“তুমি আমাকে যতই দূরে রাখে না কেন সানা আমি কখনো তোমাকে দূরে যেতে দিব না!”
বলেই রিয়াশ সানার পেটের উপর আলতো হাত রাখলো!মুহূর্তে সানার ভেতরটায় বিদ্যুৎতের মতো ধক করে উঠলো।সানা হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামছে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলে।কিন্তু তাতে লাভ হলো না।এট্রাকশন টা আরো বেড়ে গেল!এক দেহে মিশে গেলে দুইজন মানব মানবী!শারিরীক সম্পর্কে পরিপূর্ণ হতে লাগলো তাদের ভালোবাসা!

চলবে…
(আমি একটু অসুস্থ! তাই দিতে পারতেছি না রেগুলার!তারপরও চেষ্টা করবো!আর দুঃখিত খুব ছোট্ট হয়ে গেল!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here