#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কিছু কাগজ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে টিচার’স রুমে যাচ্ছিল অথৈ।তাড়াহুড়ো করার কারণে অসাবধানতায় কারো সাথে ধাক্কা লেগে তার হাতের সময় কাগজ পড়ে যায়।অথৈ এতে প্রচুর বিরক্ত হয়।সে বিরক্ত নিয়ে কাগজগুলো নিচে থেকে তুলতে শুরু করে।তখন তার সাথে অন্যকেউ তাকে কাগজ তুলতে সাহায্য করছিল।অথৈ কাগজ তোলা শেষ হলে মাথা তুলে দেখে তার সামনে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে।শান্তকে দেখে অথৈয়ের বিরক্তবোধের স্তর আরো বেরে যায়।সে শান্তের হাত থেকে কাগজগুলো নিয়ে চলে যেতে নিলে শান্তের কথা শুনে থেমে যায়।
” অথৈ।”
” আ…….এ আবার কেন ডাকছে?ধুর বিরক্তিকর।” মনে মনে বলে অথৈ।বিরক্তভাবটা ধমিয়ে রেখে অথৈ পেছনে ফিরে তাকাই।
” জ্বি বলুন।”
” কেমন আছো?”
” কেন?চোখে দেখতে পারছিস না?(মনে মনে) জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।”
” তুমি………”
” আচ্ছা ভাইয়া আমি এখন আসি।আমার কিছু কাজ আছে।”
অথৈ শান্তকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়।শান্ত নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে অথৈ এর যাওয়ারপানে তাকিয়ে আছে।
” তুমি আমাকে কবে বুঝবে অথুপরি?কবে আমার মনের কথা বুঝবে?আমার মনের কথা বুঝতে বেশি দেরি করোনা অথুপরি।নয়তো দেখা যাবে ততদিনে আমি মানুষটাই নেই।” মনে মনে কথাগুলো বলে শান্ত।সে বুঝতে পারে অথৈ তাকে দেখলে তেমন একটা খুশি হয়না তাই তো সে দূর থেকেই অথৈকে দেখে।সে চায়না তার প্রেয়সীর যেন কোন সমস্যা হয়।
________________________________________
ভার্সিটির পেছনে বড় গাছটার নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে সৌন্দর্য,শান্ত,আদিব,লিজা আর মহুয়া।স্পর্শ কিছু কাজে নিজের ক্লাসরুমেই আছে এখন।তারা ভার্সিটি সবসময় এই জায়গায় বসে আড্ডা দেয়।তবে আজ তাদের সাথে আছে মেহেকও।না মেহেক তাদের সাথে আড্ডা দিতে আসেনি সে এসে সৌন্দর্যের সাথে কথা বলতে।
” আরে সুন্দরী,কতদিন পর তোমার সাথে দেখা।কেমন আছো?” আদিব বলে।
” জ্বি ভাইয়া ভালো আছি।”
” হায়…..ভাইয়া বলে মনটা ভেঙে দিলে।”ঢং করে বলে আদিব।
” তো তোরে ভাইয়া না বলে কি সাইয়া বলবে?” রেগে আদিবকে বলে লিজা।
” আরে আরে পাখি তুমি রাগ করছো কেন?আমি তো সুন্দ….না মানে মেহেকের সাথে মজা করছিলাম।হেহে…..দেখো তুমি মজাও বোঝো না।”
” দাঁড়া আজ তোরে আমি একা পাই।তোর চুল যদি আমি আজ না জ্বালিয়েছি তবে আমার নামও লিজা না।শয়তান,হারামি আমার সাথে দাঁড়িয়ে তুই অন্য মেয়েকে লাইন মারিস।আবার সুন্দরীও বলিস।”
” আরে জান ওটাতো আমি বোন হিসেবে সুন্দরী বলেছি।বোনকে কি সুন্দরী বলা যায় না নাকি?”
” এই তোরা দুজন থামবি।সবসময় খালি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে যায়।মেহেক এখানে কেন এসেছে তা জানতে চাইবি না?” শান্ত বলে।
” আসলে আমি মিস্টার সৌন্দর্যের কাছে এসেছি।আপনি কি আমার সাথে একটু আসতে পারবেন?আসলে কিছু জরুরি কথা আছে।”
” আচ্ছা চলো।এই তোরা এখানেই থাকিস।”
মেহেক আর সৌন্দর্য গাছ তলা থেকে সেরে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
” বলো মেহুপাখি কি বলবে?”
” আসলে…..কিভাবে যে বলি।”
” কি বলবে বলো।এতো হেজিটেশন ফিল করোনা।বলে ফেলো।”
” আসলে আপনি কি আমাকে দুটো টিউশন খুঁজে দিতে পারবেন?”
” কেন?”
” আসলে আমি যা টাকা পয়সা নিয়ে এসেছিলাম তা প্রায় শেষ।যখন চট্টগ্রামে ছিলাম তখন তো টিউশন করেই নিজের খরচ চালাম।কিন্তু এখানে তো আমি তেমন কিছু চিনিনা তাই যদি আপনি একটু হেল্প করতেন।”
” তোমার টিউশনি করার কি দরকার?ভাবী…..”
” না আমি আপু থেকে বা দুলাভাই থেকে কোন টাকা নেবোনা।আর আপনি চিন্তা করবেন না আমার টিউশনি করার অভিজ্ঞতা আছে।কোন সমস্যা হবেনা।”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে টিউশন খুঁজে দেবো।”
এদিকে দূর থেকে সৌন্দর্য আর মেহেকের দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়া।লিজা থেকে মহুয়ার কাঁধে হাত রাখে।
” কিরে কি দেখছিস?”
” কিছু না।”
” আমি জানি তুই কি ভাবছিস।মেহেকের সৌন্দর্যের এতোটা কাছে থাকা যে তোর ভালো লাগছেনা তা আমি বুঝতে পারছি।তুই কেন সৌন্দর্যকে নিজের মনের কথা বলছিস না?বলে দে ওকে।”
” না আমি এরকমই কি করবো না আর না তুই কিছু বলবি।আমি চাইনা সৌন্দর্য এই ব্যপারে কিছু জানুক।আমি ওর বন্ধু হিসেবে আছি আর ওর বন্ধু হিসেবেই থাকতে চাই।”
” ভেবে দেখ মহুয়া,সময় থাকতে বলে দে।নয়তো দেখা যাবে তুই ওকে হারিয়ে ফেলেছিস।”
মহুয়া কিছু বলেনা,সে একদৃষ্টিতে আবারো সৌন্দর্য আর মেহেকের দিকে তাকাই।লিজা একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।তার মহুয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে।যা জানি মেয়েটা নিজের ভালোবাসার কথা বলতে না পেরে কতটা কষ্ট পাচ্ছে।
সৌন্দর্যকে কথাটা বলতে পেরে মেহেকের অনেকটা রিলেক্স ফিল হচ্ছে।মেহেক খুশি মনে হেলেদুলে সিঁড়ি দিয়ে নিজের ক্লাসে যাচ্ছে।তবে মাঝ সিঁড়ি সে দেখতে পাই স্পর্শ উপর থেকে নামছে।স্পর্শকে দেখে মেহেক নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।মেহেক ভালো মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেও স্পর্শ ঠিকই দেখেছে প্রথমে মেহেক কিভাবে উঠছিল।স্পর্শ কিছু না বলে মেহেককে ক্রস করে নিচে নেমে যায়।তবে নিচে নামতে নামতেই স্পর্শ ঠোঁটে কয়েক সেকেন্ডের জন্য হাসি ফোঁটে উঠে।স্পর্শকে চলে যেতে দেখে মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
_________________________________________
নিজের রুমে বসে একদৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে রিফা।তখন মেহেক দৌড়ে রিফার কাছে আসে।
” রিফু….রিফু….রিফু…….”
” কি হয়েছে?এভাবে করছিস কেন?”
” জানিস কে এসেছে?”
” আমি কেমন করে জানবো?আমি কি দেখতে গিয়েছিলাম নাকি?”
” আরে ইভান ভাইয়া এসেছে।”
” উনি এখানে কেন এসেছেন?”
” আমি কি জানি?”
” শোন উনি যদি জানতে চায় আমি কোথায় তো তুই বলবি আমার মাথাব্যথা করছে তাই আমি ঘুমাচ্ছি এখন।”
” কিন্তু তুই তো দিব্বি আছিস।তাহলে মিথ্যা কথা বলবো কেন?”
” তোরে যেটা করতে বলছি তাই করবি।এখন যা ধুর হ।”
” এই তাড় ছেঁড়া মেয়েটার আবার কি হলো?”
মেহেক বিরবির করতে করতে চলে যায়।তবে কিছুসময় পর আবারো ফিরে আসে।
” রিফু… রিফু… রিফু….।”
” আবার কি হয়েছে?তোকে না বলেছি আমাকে ডিস্টার্ব না করতে।”
” ওরে ইভান ভাইতো চলে গেলো।তুই একবারো ওনার সাথে দেখা করছিনা কেন?”
” সেটা আমার ইচ্ছা।এখন যা তো এখান থেকে।”
” আচ্ছা চল না একটু ছাদে যায়।”
” এই এতো রাতে ছাদে কি?”
” চল না প্লিজ প্লিজ।”
” এতো রাতে ছাদের গেলে তোরে ভুতে ধরবে।”
” আরে ধরবেনা।চল তো।”
মেহেক রিফাকে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।ছাদের সিঁড়ি কাছে এসে মেহেক থেকে যায়।
” কি হলো দাঁড়িয়ে পড়ছি কেন?”
” রিফু তুই না আগে যা।আমি তোর পেছন পেছন আসছি।”
” কেন আমি কেন আগে যাবো?”
” ওই আসলে আমার না ভয় লাগছে।”
” কেন?তখন তো খুব করে বলছিলি ভুত ধরবে না।তো এখন কেন ভয় পাচ্ছিস?”
” আরে যা না প্লিজ।আমি আছি তো তোর পেছনে।”
রিফা ছাদের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।রিফা ভেতরে ঢুকতেই মেহেক বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
” মেহু…. এই মেহু…..দরজা বন্ধ করলি কেন?দরজা খোল।মেহু……”
” শ্যামলীনি।”
পেছন থেকে কারো ডাক শুনে রিফার বুক ঢক করে উঠে।কারণ এই নামে শুধু তাকে ইভানই ডাকে।রিফার পেছন ফিরে দেখে ইভান দাঁড়িয়ে আছে।রিফা ভাবছে ইভান এখানে কিভাবে এলো।
” মেহু না বললো ইভান চলে গিয়েছে।তার মানে মেহু আমাকে মিথ্যা কথা বলেছে আর ছাদে নিয়ে এসেছে।” (মনে মনে)
ইভান রিফার কাছে আসতে নিলে রিফা তাকে থামিয়ে দেয়।
” একদম আমার কাছে আসবেন না।দূরে থাকুন।আমার যা জানার তা আমি জেনে গিয়েছি।সো আমার কাছে আর কিছু এক্সপ্লেন করতে হবেনা।”
চলবে…….