#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” কি জেনে গেছো তুমি?”
” এইযে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।”
” কিসব বলছো তুমি এসব?”
” আমি যা বলছি ঠিক বলছি।”
” রিফু আমার…… ”
” বলছিনা এগোবেন না।ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন।”
” আচ্ছা আমি আগাবোনা।তুমি প্লিজ বলো কেন তুমি আমাকে দুদিন ধরে এভাবে ইগনোর করছো?না ফোন ধরছো না মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছো।”
” কেন দেবো?কি কারণে দেবো?”
” কি কারণে মানে?তোমার কি হয়েছে বলো তো।”
” আমার কিছু হয়নি।তবে আপনি আমাকে এভাবে না ঠাকালেও পারতেন।”
” ঠাকালাম মানে?আর তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন?”
” জ্বি ঠকিয়েন।চিট করেছেন আমার সাথে।ভালোবাসেন না আপনি আমাকে।”
” কে তোমাকে এসব বলেছেন?” রেগে বলে ইভান।
” কেউ বলেনি।আমি সব নিজের চোখে দেখেছি।”
” কি দেখেছো?”
” এইযে আপনি আমার পিটপিছে অন্য মেয়ে সাথে ফটিনষ্টি করেন।”
” তোমার মাথা কি পাগল হয়ে গিয়েছে।কিসব বলছো তুমি?”
” হ্যাঁ আমি তো পাগল।আপনিই ভালো।”
” আচ্ছা তুমি কি দেখেছো?”
” শুনতে চান?তাহলে শুনুন।আমি দু’দিন আগে আপনার কলেজে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম আপনাকে সারপ্রাইজ দেবো কিন্তু আপনি তো তখন অন্য মেয়ের সাথে মজা করতে ব্যস্ত।”
” কিসব বলছো তুমি?”
” ঠিকই বলছি।আমি নিজের চোখে দেখেছি আপনি একটা মেয়ের সাথে ক্লোজলি বসে ছিলেন আর তার সাথে হেসেহেসে কথা বলছিলেন।আমি আপনাকে ফোনও করেছিলাম।কিন্তু আপনি এতোটাই ব্যস্ত ছিলেন যে আমার ফোন তোলার সময়ই আপনার ছিলনা।” কান্না করতে করতে বলে রিফা।
” কান্না বন্ধ করো শ্যামলীনি।”
কিন্তু রিফা তো কান্না করেই চলেছে।ইভান এবার রেগে চিৎকার করে বলে—-
” আই সে স্টপ ক্রইং।”
রিফা ইভানের কন্ঠ শুনে কেঁপে উঠে।প্রথমে রিফা কান্না বন্ধ করলেও কিছুক্ষণ পরে আবারো কান্না শুরু করে দেয়।ইভান রিফাকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
” কান্না বন্ধ করো।আর আমার কথা শোনো।”
কিন্তু রিফা তো কান্না বন্ধ করার নামই নিচ্ছে না।ইভান না পারতে রিফার মুখ চেপে ধরে।
” তুমি না শুনে না বুঝে আসল কথা না জেনে নিজে নিজে কাহিনী বানিয়ে নিলে কেন?ওদিন যাকে দেখেছিলে ও হচ্ছে নওশিন।আমার ক্লাসমেট।ওইদিন ও একটা টপিক বুঝতে ছিলনা তাই ওকে ওটা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।আর ফোন রিসিভ করতে পারিনি কারণ ফোনে চার্জ ছিলনা।আর তুমি বোকা মেয়ে নিজে নিজে কাহিনী বানিয়ে নিলে।”
রিফা ইভানের হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে নেয়।
” এভাবে কেউ ধরে নাকি?আরেকটু হলে তো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো।”
” তো কি আর করতাম?তুমিই তো চুপ করছিলেনা।তাই এই পদ্ধতি।”
” আচ্ছা মানলাম নওশিন তোমার ক্লাসমেইট।তাহলে ওর সাথে এতো ঢলাঢলি কিসের?”
” আরে ও আমার ছোট বোনের মতো।ছোট বোন হিসেবে ওর সাথে মজা করছিলাম।আর তুমি কিভাব ভাবলে আমি তোমাকে ধোঁকা দেবো?তোমাকে ছেড়ে অন্যকাউকে ভালোবাসবো?”
এদিকে,
ছাদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে মেহেক।ইভানই তাকে বলেছে তারা না আসা পর্যন্ত যেন এখানে দাঁড়িয়ে থাকে।হঠাৎ মেহেক কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই।মেহেক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দেখে স্পর্শ উপরে আসছে।স্পর্শকে দেখে মেহেক ভয় পেয়ে যায়।স্পর্শ এইসময় মেহেককে এখানে আশা করেনি তাই সে অবাক দৃষ্টিতে মেহেকের দিকে তাকিয়ে রয়।
” এতো রাতে এখানে কি করছো?” গম্ভীর ভাবে বলে স্পর্শ।
এই প্রথম স্পর্শ নিজে থেকে মেহেকের সাথে কথা বলেছে।স্পর্শের কথা শুনে মেহেক বুঝতে পারছেনা কি বলবে সে।
” ওই আসলে…..আসলে রুমে ভালো লাগছিলো নাতো তাই ভাবলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”
মেহেকের কথা স্পর্শের বিশ্বাস হলো বলে মনে হলোনা।মেহেক মনেপ্রাণে চাইছে যেন স্পর্শ তার কথা বিশ্বাস করে।
” ও…..বেশি সময় থেকোনা।”
স্পর্শ আর কিছু না বলে উল্টো পায়ে নিচে নেমে পড়ে।স্পর্শকে যেতে দেখে মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেই।
” যাক বাবা এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
ছাদে,
রিফার ইভানকে জরিয়ে ধরে।
” আমাকে ছেড়ে কখনো যেওনা,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।বেঁচে থাকলেও জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো।”
” কিসব বলছো তুমি?বিশ্বাস রাখো কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।”
” সরি তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।”
” এবারের জন্য তো সরি একসেপ্ট করলাম কিন্তু পরের বার করবোনা।এরপর থেকে নিজে নিজে কাহিনী বানিয়ে নিওনা।আমাকে আগে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পেরেছো?”
” হুম।”
ছাদের সিঁড়িতে,
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মেহেকের পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে।তাই সে সিঁড়িতে বসে বসে মোবাইলে ড্রামা দেখছে।
” ধুর,এদের প্রেম কি শেষ হয়নি নাকি?কতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।ধুর।”
” তুমি এখানে কি করছো মেহুরাণী?”
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বরে ঘাবড়ে যায় মেহেক।সে ভয় পেয়ে হুট করে উঠে দাঁড়ায়।মেহেক সামনে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য কথাটা বলেছে।
” আরে আস্তে আস্তে।”
” আরে…..ধুর এ আবার এখানে কেন এলো?আরে কি জ্বালায় পড়লাম।” (মনে মনে)
” তুমি এখানে কি করছো মেহেক?”
” আসলে হয়েছে কি রুমে ভালো লাগছিলোনা তাই এসেছিলাম।”
” তো সিঁড়ি বসে আছো কেন?ছাদের ভেতরে যাও।চলো আমিও যায় তোমার সাথে।আমারো ভালো লাগছিলেনা রুমে।চলো দুজনে মিলে চন্দ্রবিলাস করি।”
” না না আমি আর যাবোনা।আসলো আমার না পড়া বাকি আছে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি যাও আর আমি একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”
” এই না….ছাদে যাওয়া যাবেনা।”
” কেন?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে সৌন্দর্য।
” (এখন কি বলি-মনে মনে) আসলে এতো রাতে ছাদে যাওয়া ভালোনা আর ছেলেদের তো একদমিই না।কারণ ছেলেরা বেশি সুন্দর হলে রাতে তাদের পেত্নি ধরে।আর আপনি তো খুব সুন্দর এবং হীরার মতো।না জানি কোন পেত্নির আপনাকে ভালো লেগে যায়।দেখা যাবে পরে পেত্নি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।তখন কি করবেন?তাই এখন ছাদে যাওয়া যাবেনা।
মেহেকের এই আজগুবি কথা শুনে সৌন্দর্যের মাথা ঘুরে যায়।হঠাৎ কি মনে কর যেন সৌন্দর্য চট করে মেহেকের দিকে তাকাই।
” এই তুমি কি বলেছো একটু আগে।”
” বলেছি ছাদে যাওয়া যাবেনা।”
” না তার আগে কি বলেছে?আমি সুন্দর হীরার টুকরা।তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমি হ্যান্ডসাম।রাইট?” অনেক আগ্রহ নিয়ে বলে সৌন্দর্য।
সৌন্দর্যের কথার মেহেক বুঝতে পারে সে কি বলতে কি বলে ফেলে।
” আচ্ছা সেসব কথা বাদ দিন এখন রুমে যান।”
” তুমি যাবেনা?”
” (আমি গেলে পাহাড়া দিব কে?— মনে মনে)হুম যাবো তবে আগে আপনি যান আমি আসছি।
” আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো।বেশিক্ষণ থেকোনা নয়তো ভুত তোমার প্রেমে পড়ে যাবো।”
কথাটা বলে হাসতে হাসতে চলে যায় সৌন্দর্য।সৌন্দর্য যেতে মেহেক হাফ ছেড়ে বাঁচে।
” ধুর আমি আর এখানে থাকবোনা।এমনিতেই রাত হয়ে গিয়েছে তারপর বারবার কেউ না কেউ আসছে।এবারের মতো তো বেঁচে গেলাম না জানি কখন ধরা পড়ে যায়।”
মেহেক ছাদের দরজা খুলে উঁকি মেরে ভেতরে দিকে।
” রিফু এই রিফু।” আস্তে আস্তে রিফাকে ডাকে মেহেক।
” কি হলো?শুনতে পাচ্ছেনা নাকি?রিফু এই রিফু…ওই রিফু কি বাচ্চি।” হালকা জোরে বলে মেহেক।
দোলনায় ইভানের কাঁধে মাথা দিয়ে চন্দ্রবিলাস করছে রিফা আর ইভান।হঠাৎ রিফা শুনতে পাই মেহেকের কথা।রিফা থাকা তুলতে গেলে ইভান তুলতে দেয়না।
” কি করছো?ছাড়ো।”
” মাথা সরাচ্ছো কেন?”
” দেখছোনা মেহু ডাকছে।আর অনেক্ষণ তো হলো এবার যেতে হবে।কেউ দেখে ফেললে তো ঝামেলায় পরে যাবো।”
” আরেকটু থাকোনা প্লিজ।”
” না যেতে হবো তো।”
” প্লিজ আর কিছু সময়।”
” আচ্ছা জাস্ট ২ মিনিট।”
রিফা আবারো ইভানের কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস করতে থাকে।
এদিকে মেহেক রিফার বা ইভানের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে বিরক্ত হয়।
” এরা কি মহাকাশে প্রেম করতে চলে গেলো নাকি?ধুর ছাই যা ইচ্ছা করুক আমার কি?ধরা পড়লে এদের দোষ,হু……।এই রিফু আমি চলে যাচ্ছি।ছাদের দরজা কিন্তু খোলা।এতো বেশি প্রেম করিস না,স্বাস্হ্যের জন্য ভালো হবেনা।তাড়াতাড়ি চলে আসিস,আমি গেলাম।”
মেহেক কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে যদি তারা আসে বা কিছু বলে।কিন্তু না যখন কেউ কিছু বলেনি বা আসেনি তখন মেহেক নিচে চলে আসে।
চলবে…….