#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
এখন রিক্সায় বসে আছে স্পর্শ আর মেহেক।দুজনের মাঝেই অনেকটা দুরত্ব।বাইরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে,যাকে বলা চলে তুমুল বৃষ্টি।রিক্সার সামনে প্লাস্টিকের একটা পর্দা দেওয়া আছে যাতে ভেতরে বসে থাকা মানুষটা ভিজে না যায়।কিন্তু বৃষ্টি এই পর্দা উপেক্ষা করে সহজে ভেতরে প্রবেশ করছে।বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ছে মেহেকের চশমায়।কিন্তু সে না পারছে চশমাটা খুলতে আর না পারছে পড়ে থাকতে।চশমা না খুললে তা ভিজে যাবে আর চশমা খুললে মেহেক কিছুই দেখতে পাবেনা।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক সিদ্ধান্ত নেয় না সে চশমা পড়েই থাকবে।হঠাৎ মেহেকের চোখ যায় স্পর্শের উওর।স্পর্শ বাইরে তাকিয়ে রাস্তাঘাট দেখছে।হঠাৎ মেহেকের মনে পড়ে যায় মুগ্ধের কথা।এরকমই একটা বৃষ্টির দিনে সে আর মুগ্ধ রিক্সা চড়ে ঘুড়তে বেরিয়েছিল।
ফ্ল্যাসবেক….
” মেহেক এটা কোন ধরনের বাচ্চাপনা?আজ না ঘুরলে হয়না নাকি?”
” না আমি আজ তোমার সাথে রিক্সা করে ঘুরবো।”
” কিন্তু আজই কেন?দেখো বাইরে কতো বৃষ্টি।”
” সেই জন্যই তো আমি তোমার সাথে ঘুরতে যেতে চাইছি।”
” কিন্তু তুমি যে বলছিলে তোমার বৃষ্টি পছন্দ না।”
” আমি কবে বলেছিলাম?আমি বলেছিলাম আমার বৃষ্টি তেমন একটা ভালো লাগেনা তবে এটা বলিনি আমি বৃষ্টি পছন্দ করিনা।আজ আমার প্রচুর ইচ্ছে করছে তোমার সাথে এই বৃষ্টি ভেজা শহরটা ঘুরে দেখতে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।আমার মেহুরাণী যখন বলেছে তখন আমি আজ অবশ্যই তার সাথে ঘুরবো।তুমি বসো আমি রিক্সা নিয়ে আসছি।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রিক্সা খুঁজতে চলে যায় মেহেক।আজ কেন যেন মেহেকের মুগ্ধের সাথে ঘুরার ইচ্ছে হলো তাই সে তার ইচ্ছেকে আর দমিয়ে রাখেনি।আজ মেহেক একটা হালকা নীল রঙের শাড়ি পড়েছে আর মেহেকের জোর করায় মুগ্ধ নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে।কিছুক্ষন পর মুগ্ধ একটা রিক্সা নিয়ে আসে।মেহেক রিক্সায় উঠে পড়ে।পুরোটা রাস্তা মেহেক আর মুগ্ধ একে অপরের হাত ধরে ছিল।এখন এসব ভাবে দীর্ঘশ্বাস নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা মেহেক।
ফ্ল্যাসবেক এন্ড…..
” এভাবে কি দেখছো?দেখো আমি তোমার নায়ক নয় বুঝতে পেরেছো।তাই ভাইয়ের চোখে দেখো,ভাইয়ের চোখে।”
স্পর্শের কথায় মেহেক তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।সে তাড়াতাড়ি স্পর্শের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
” আমি আপনাকে ভাইয়ের চোখেই দেখি।আমার কোন ইচ্ছে নেই আপনাকে অন্যচোখে দেখার।”
স্পর্শ আর কিছু না বলে বাইরে তাকিয়ে থাকে।কিছুটা সময় পর তারা বাড়ির সামনে এসে পড়ে।মেহেক টাকা দিবে তার আগেই স্পর্শ টাকা দিয়ে ছাতাটা রেখে দৌড়ে ভেতরে চলে যায়।মেহেকও আর কিছুনা বলে ছাতাটা নিয়ে ভেতরে চলে আসে।মেহেক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে দেখে দরজা আগে থেকেই খোলা আছে আর তার বোন সৃষ্টি টাওয়াল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেহেককে দেখে সৃষ্টি তাড়াহুড়ো করে তার কাছে আসে।
” এইনে মেহু তাড়াতাড়ি মাথাটা মুছেনে।নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।দে দে ব্যাগটা আমাকে দে।”
সৃষ্টি মেহেক থেকে ব্যাগটা নিয়ে নেয় আর যত্ন করে তার শরীরের পানিগুলো মুছে দেয়।বোনের এতো কেয়ার দেখে মেহেক কান্না করে দেয়।বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বিয়ের আগে সৃষ্টি মেহেকের এভাবেই খেয়াল রাখতো।এতোদিন পর বোনের ছোট ছোট কেয়ারগুলো দেখে মেহেক ইমোশনাল হয়ে পড়ে।
” যা তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে নে।আমি তোর জন্য গরম দুধ নিয়ে আসছি।”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে আসে।ড্রেস চেঞ্জ করে এসে দেখে সৃষ্টি দুধের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেহেক আসলেই সৃষ্টি যত্ন করে নিজ হাতে মেহেককে দুধটা খাইয়ে দে।
অন্যদিকে,
ফোনে ভিডিও কলে কথা বলছে রিফা আর ইভান।
” দেখেছো বাইরে কি সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে।” ইভান বলে।
” হুম দেখেছি।”
” শুধু হুম দেখেছি।এই ওয়েদারে তো আমার রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল আসছে।কাশ….আমার কাছে এখন একটা বউ থাকতো।”
” তো বউ থাকলে কি করতে?”
” বউ থাকলে তার সাথে এই রোমান্টিক ওয়েদারে রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলতাম।”
” আর?”
” আর তার কোলে মাথা রেখে আমাদের ফিউচার প্লেনিং করতাম।”
” আর?”
” আর তার সাথে ওই রোমান্টিক ওয়েদারে রোমান্স করতাম।” লজ্জা পেয়ে বলে ইভান।
” তাহলে থাক তুই তোর বউ নিয়ে।আমার সাথে কথা বলছিস কেন?”
” আরে আরে বাবু রাগ করছো কেন?”
” রাগ করছো কেন মানে?তুই আমার সাথে প্রেম করে অন্যকারো সাথে রোমান্স করবি?অন্যকাউকে বউ বানাবি।যা তুই তোর বউরে খোঁজ আর তার সাথে রোমান্স কর।”
” আরে বাবু শোনো তো আমার কথা।”
” কি শুনবো হ্যাঁ কি শুনার বাকি রেখেছিস তুই?যা দূরে গিয়ে মর।”
” আরে বাবু আমার বউটাতো তুমিই।বিয়ের পর তো তুমিই আমার বউ হবে।তখন তো আমি তোমার সাথেই রোমান্স করবো।”
” কি!” অবাক হয় বলে রিফা।
” হ্যাঁ জান তুমিই তো আমার বউ হবে।আচ্ছা যাও বিয়ের পর আমি তোমার সাথে কোন রোমান্স করবো না,কোন রোমান্টিক কথা বলবেনা।বিয়ের পর আমরা একদম ভাইবোনের মতো থাকবো।”
” কি!এই কিসব বলছো তুমি?তোমাকে আমি কি বিয়ে ভাইবোন হয়ে থাকার জন্য করবো নাকি?”
” তাহলে তুমিই তো রাগ করলে।”
” আরে আমি তো ভেবেছিলাম তুমি অন্যকারো কথা বলছো।”
” তার মানে তুমি তোমার সাথে আমাকে রোমান্স করতে দিবে?রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলবে আমার সাথে।”
” ছিঃ কিসব বলছো তুমি?”
” আরে এতে ছিঃ কি আছে?বিয়ের পর এগুলোতে কোন ছিঃ নেই।আচ্ছা বলো তো আমাদের কয়টা বাচ্চা হবে?”
” কয়টা হবে?”
” আমাদের দুইটা বাচ্চা হবে।তাও টুইন।ছেলের নাম আমি তোমার সাথে মিল রেখে রাখবো আর মেয়ের নাম আমার সাথে।”
” আল্লাহ এখনো বিয়ে হয়নি আর এই বান্দা তো বাচ্চা পর্যন্ত চলে গিয়েছে।”
” আরে আমি তো এটাও ঠিক করে রেখেছি যে আমাদের বাচ্চারা কোন স্কুলে পড়বে।”
” ও আল্লাহ তুমি এতো ফার্স্ট।”
” আমি তো আরো অনেক কিছু ভেবে রেখেছি।শুনবে?”
” না বাবা থাক।দরকার নেই।”
” আচ্ছা তুমি শাড়ি পড়তে জানো?”
” হ্যাঁ জানি তো।আমি খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়তে পারি।”
” ও আচ্ছা।” মন খারাপ করে বলে ইভান।
” কিন্তু তুমি মুড অফ করে ফেললে কেন?”
” কেন তুমি শাড়ি পড়তে শিখলে বলো তো?”
” কারণ শাড়ি পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে তাই।”
” ধুর তুমি খুব আনরোমেন্টিক।কই ভাবলাম আমার বউটা শাড়ি পড়তে জানবেনা।বিয়ের পর আমি থাকে যত্ন করে শাড়ি পড়িয়ে দেবো।কিন্তু তুমি তো আমার স্বপ্নটাকে স্বপ্নই রেখে দিলে।”
” ওলে বাবারে….আমার জানটা তার বউকে শাড়ি পড়াতে চাই।আচ্ছা সমস্যা নেই শাড়ি পড়তে জানলে কি হয়েছে?তাও তুমিই পড়িয়ে দেবো।”
” সত্যি?আ…..কাশ তুমি এখন আমার কাছে থাকতে।জানো আমার না এখনই বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।”
” ওমা তাই?”
” হুম।এই বৃষ্টির দিনে একটা বউ না থাকলে কি হয়?অন্য সময়ে বউয়ের প্রয়োজন হোক আর না হোক এই বৃষ্টির দিনে একটা বউয়ের খুব দরকার।”
” জানো ইভান আমার কি মনে হচ্ছে?”
” কি?”
” তুমি না নিশ্চয় আজ মাথায় বারি খেয়েছো।মনে করে দেখো তো আমি ঠিক বলছি কিনা।”
” হ্যাঁ ওই আসলে ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সময় খেয়েছি।” কপালে হাত দিয়ে মালিশ করতে করতে বলে ইভান। ” কিন্তু তুমি কি করে জানলে?”
” এইতো দেখেছো আমি ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম।তাই তো বলি তুমি আজ এতো আজগুবি কথা বলছো কেন?বারি খেয়ে তোমার মাথা পগলায় গিয়েছে।”
” তুমি আমাকে ইনডিরেকলি পাগল বলছো?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে ইভান।
” আরে না না ইনডিরকলি কেন বলবো?আমি তো সরাসরিই বলছি বারি খেয়ে তোমার মাথার সেটিং নড়ে গিয়েছে।”
” যাও তোমার সাথে কোন কথা নেই।তুমি আমার এই বৃষ্টির দিনের কষ্টটা বুঝবেনা।বাই আর আজ আমাকে ফোন দেবেনা।”
” ঠিক আছে দেবোনা।আমিও দেখি তুমি কতদিন আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারো।”
রিফার কথা শুনে ইভান কট করে ফোনটা কেটে দেয়।আর ইভানের বাচ্চাদের মতো রাগ দেখে রিফা হাসতে থাকে।
চলবে….