#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ক্যান্টিনে বসে বই পড়ছে অথৈ।সে আজ তাড়াতাড়ি এসে রিফা আর মেহেকের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু দুজনের আসার কোন নামগন্ধই নেই।অথৈ বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে থাকে।তবে অথৈয়ের সিক্স সেন্স বলছে কেউ তাকে দেখছে,খুব সূক্ষ্মভাবে তাকে পড়ক করছে।অথৈ অনেক চালাকি করে আশেপাশে দুই-তিন বার চোখ বুলিয়ে নেই কিন্তু কাউকেই তার নজরে পড়েনা।অবশেষে বিরক্ত হয়ে সে সেই ব্যক্তিকে খোঁজা বন্ধ করে বই পড়তে থাকে।
এদিকে গাছের আড়াল থেকে অথৈকে দেখছিল শান্ত।সে অথৈয়ের চালাকি ঠিকই ধরে ফেলেছিল তাই তো লুকোতে সফল হয়ছে।অথৈয়ের বিরক্ত দেখে মিটিমিটি হাসে শান্ত।
” আহ্…..অবুঝ পরী কবে তুমি বুঝবে আমায়?কেন বোঝোনা বলো তো?তুমি কি জানোনা তোমার বিরহে কেউ কষ্ট পাচ্ছে?” নিজে নিজে বলে শান্ত।
এদিকে,
ক্যাম্পাসের মাঝামাঝি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক আর রিফা।একটা ছেলে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে মেহেকের সামনে,হাতে একটা ফুল।ছেলেটার ভাবগতি দেখে মেহেক আর রিফা দুজনেই বুঝতে পেরে যায় ছেলেটার উদ্দেশ্য।মেহেকের তো ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।রিফা কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে—
” কি চাই?এভাবে পথ আঁটকে রেখেছেন কেন?”
” আসলে আমার ওর(মেহেক) সাথে কিছু কথা আছে।”
” তো সেটা সোজাসুজিও তো বলা যায়।এভাবে সিংগ্রেট করার মানে কি?”
” আমি সিংগ্রেট করছিনা।আচ্ছা আমি সোজাসুজি বলছি ‘ আই লাভ ইউ এন্ড আই ওয়ান্ট ইউ।”
” এসব কি বাজে কথা বলছেন?” রেগে বলে রিফা।
” আমি বাজে কথা বলছিনা।আই এম সিরিয়েস।আই রিয়েলি লাভ ইউ।”
মেহেক কিছু বলছেনা,সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” আপনি প্লিজ এখন যান।”
” প্লিজ ট্রাস্ট মি,আই রিয়েলি লাভ ইউ।আমি তোমার খুব খেয়াল রাখবো,ট্রাস্ট মি।”
মেহেকের চোখে অলরেডি পানি জমে গিয়েছে।যেকোন সময় টুপ করে পড়বে।মেহেকের দৌড়ে সেখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।মেহেকের এই কান্ডে রিফা আর ছেলেটা দুজনেই অবাক।রিফা প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ছেলেটা দিকে তাকাই।
” আপনি প্লিজ এখন যান।দয়া করে আর কোন কিছু করবেন না।”
ছেলেটা মাথা নিচু করে চলে যায়।রিফা সেখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে যেতে থাকবে তখনই তার ফোন বেজে উঠে।রিফা তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে দেখে অথৈ ফোন দিয়েছে।সে তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করে।
” কিরে রিফু কোথায় তোরা?আমি কতক্ষণ ধরে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি।”
” অথু তুই ভার্সিটির ফার্স্ট ফ্লোরের ওয়াশরুমে আয়।” তাড়াহুড়ো করে বলে রিফা।
” কিন্তু ওখানে কেন?তোরা ক্যান্টিনে আয়।”
” তুই আয় তারপর বলছি।”
রিফা ফোন কেটে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে থাকে।রিফার কথা অথৈ কিছু বোঝেনা তাই সেও তাড়াহুড়ো করে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে,
ওয়াশরুমে এসে অজোরে কান্না করছে মেহেক।তার কান্না যেন কোন বাঁধই মানছেনা।
” কেন?কেন আমি যেটা থেকে পিছু ছাড়াতে চাইছি তা বারবার আমার কাছে চলে আসছে?কেন?আমি তো ওই শহর ছেড়ে চলে এসেছিলাম এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া জন্য তাহলে কেন সেটা এখানেও আমার পিছু পিছু চলে এসেছে?কেন আমি এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছিনা কেন?'”
অঝোরে কান্না করতে থাকে মেহেক।ততক্ষণে রিফা আর অথৈ দু’জনেই সেখানে চলে এসেছে।
” মেহু,এই মেহু কি হয়েছে তোর?এভাবে ছুটে এলি যে।আর কান্না করছিস কেন?” মেহেক কাঁধে হাত দিয়ে বলে রিফা।
মেহেক কিছু না বলে রিফাকে জরিয়ে কান্না করতে থাকে।মেহেকের কান্না দেখে রিফা আর অথৈ দুজনেই বেশ চিন্তিত হয়ে যায়,তবে তারা এখন কিছু বলেনা।মেহেককে শান্ত হওয়া সময় দেয়।কিছুক্ষণ পর রিফাকে ছেড়ে দিয়ে মেহেক নিজেকে সামলে নেয়।মুখে পানি দিয়ে চলে যেতে নিলে অথৈ তাকে থামিয়ে দেয়।
” কিরে?কি হয়েছে তোর?এভাবে কান্না করছিলি কেন?”
” কিছুনা।” ভাঙা ভাঙা গলায় বলে মেহেক।
” কিছু না এটা মোটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।কিছু তো হয়েছে।এবার তাড়াতাড়ি বল কি হয়েছে।” রিফা বলে।
” আরে কিছু…..”
” আমাদের কসম তুই সত্যি সত্যি সব বলবি।” অথৈ বলে।
মেহেক হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।তারপর বলতে থাকে তার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল পদক্ষেপটা।অতিতের কথা বলতে বলতে মেহেক আবারো কান্না করে দেয়।মেহেকের কথা শুনে রিফা আর অথৈও ইমোশনাল হয়ে পড়ে।মেহেকের কথা শেষ হলে দু’জনেই তাকে জরিয়ে ধরে।
” শোন মেহু,মন খারাপ করিস না যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।” রিফা বলে।
” হুম,এখন কষ্ট পেয়ে কোন লাভ নেই।তোর সাথে খারাপ হয়নি বরং আল্লাহ তোকে খারাপ লোকের হাতে পড়া থেকে বাঁচিয়ে।” অথৈ বলে।
” ঠিক।সে তোর যোগ্য নয় তাই তোর সাথে তার মিল হয়নি।তোর জীবনে ওই চিটার থেকেও ভালো কেউ আসবে দেখেনিস।”
” তোর আপু জানে এসব?” গম্ভীর ভাবে বলে অথৈ।
” না আপুনি কেন আমি আজকের আগে এসব কাউকে বলিনি।আমার রিকুয়েষ্ট তোরা এসব কাউকে বলিসনা।আপুনিকে তো একদমই না।আপুনি এসব জানলে ভেঙে পড়বে আর নিজেকে দোষ দেবে।”
” এভাবে বলছিস কেন?আমরা কাউকে বলবোনা।আর ভাবীও জানতে পারবেনা।”
” তুই একদম চিল পাখি থাক।আর ওই মদনটার কথা ভুলে যায়।বেটা আসলেই মদন হীরা ছেড়ে কাঁচের পেছনে গিয়েছে।দেখবি একদিন ওই কাঁচ ভেঙেই সে ক্ষতবিক্ষত হবে।”
” আচ্ছা আর এই বিষয় নিয়ে কথা হবেনা।আর মেহু তুই শোন তোর তার কথা মনে পড়বে কারণ প্রথম ভালোবাসা কখনই ভোলা যাইনা।তবে তোকে শক্ত থাকতে হবে।তার কথা মনে পড়লে তুই ভেঙে পড়বি না বরং আরো শক্ত হয়ে দাঁড়াবি।এটাকে তোর ওইক পয়েন্ট নয় বরং স্ট্রং পয়েন্ট বানাতে হবে।”
” আই লাভ ইউ বান্ধবী।” মেহেক রিফার আর অথৈকে জরিয়ে ধরে বলে।
” এন্ড উই হেইট ইউ।” রিফা আর মেহেক একসাথে বলে।
___________________________________________
ভার্সিটি থেকে আজ রিফা আর মেহেক একসাথে ফিরে এসেছে।বাড়িতে দরজার কাছে এসে মেহেক খেয়াল করে কতগুলো বাড়তি জুতো দেখা যাচ্ছে।হঠাৎই তার মনে পড়ে সৃষ্টি তাকে বলেছে কাজ বাড়িতে কেউ আসবে।
” আচ্ছা রিফু তুই কি জানিস আজ কে আসবে?”
” না তো।”
মেহেক আর কিছু না বলে বেল দেয়।কয়েক সেকেন্ড পর সৃষ্টি দরজা খুলে দেয়।
” আরে মৃদু তুই চলে এসেছিস।আয় আয় তাড়াতাড়ি ভেতরে আয়।”
সৃষ্টি মেহেকে তাড়াতাড়ি করে ভেতরে নিয়ে যায়।ভেতরে গিয়ে মেহেক যাদের দেখে তাদের দেখে তো সে আকাশ থেকে পড়েছে।
” মামা-মামী!তোমরা?”
” আরে আমার মেহেক বাচ্চা চলে এসেছিস।আয় আয় আমার পাশে বস।আজ কতদিন পর তোকে দেখেছি।” মেহেকের মামী বলে।
” কেমন আছিস মেহেক?” মেহেকের মামা বলে।
” হ্যাঁ মামা আমি ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।”
” তুই কত শুকিয়ে গিয়েছিস।খাবার খাসনা নাকি?সৃষ্টি ওকে বেশি বেশি খাবার খাওয়াবি।”
” ঠিক আছে মামী যতদিন আমার কাছে আছে আমি ওকে খাইয়ে বেলুনের মতো ফুলিয়ে দেবো।এরপর তোমার দায়িত্ব।” হাসতে হাসতে বলে সৃষ্টি।
” মামা-মামী তোমরা হঠাৎ এখানে?”
” কেন?আসতে পারিনা নাকি?” মেহেকের মামী বলে।
” আরে না না আমি তা কখন বললাম।আমি বলতে চেয়েছি হঠাৎ এলে।কোন কাজে এসেছো নাকি?”
” হুম কাজে তো এসেছি।আর কাজটা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবি।এবার ফ্রেশ হয়ে আয়,যা।সৃষ্টি ওকে নিয়ে যা।”
সৃষ্টি মেহেককে নিয়ে তার রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক দেখে সৃষ্টি শাড়ি নিয়ে বসে আছে।মেহেক বের হলেও সৃষ্টি তাকে শাড়ি পারাতে থাকে।
” কিরে আপুনি?শাড়ি পড়াচ্ছিস কেন?”
” কাজ আছে তাই।এবার চুপ করে থাকতো।”
মেহেক আর কিছু না বলে চুপ করে থাকে তবে তার মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।শাড়ি পড়ানো শেষ হলে সৃষ্টি মেহেককে সাজিয়ে গুজিয়ে দেয়।
” মাশাল্লাহ,কারো নজর যেন না লাগে।মৃদু তোর কোন পছন্দ নেই তো?”
” এসব কি জিজ্ঞেস করছিস আপুনি?”
” যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটাই বলনা।”
” না নেই।”
” শোন আমরা যেটা করছি তোর ভালোর জন্য আর সেফ থাকার জন্য করছি।আর আমরা কখনোই তোর উপর কিছু চাপিয়ে দেবোনা,এটা মনে রাখিস।” মেহেককে ঘোমটা দিতে দিতে বলে সৃষ্টি।
সৃষ্টির কথা শুনে মেহেকের ভয় হতে থাকে।সে বুঝতেই পারছেনা তার সাথে সামনে কি হতে চলেছে।
চলবে…..