#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কিছুদিন পর,
” আপু তুই এসব কি শুরু করেছিস?আবার কেন?” বিরক্ত নিয়ে বলে মেহেক।
” চুপ কর।যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।এবার ছেলেদের সব জেনেশুনেই নিয়েছি।ছেলে তোর জিজুর পরিচিত।দেখি এদিকে তাকা তো লিপস্টিকটা দিয়ে দিয়।” সৃষ্টি মেহেককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে লিপস্টিক দিতে থাকে আর মেহেক বিরক্ত নিয়ে সৃষ্টির কাজ দেখছে।আসলে আজ আবারো মেহেককে ছেলেপক্ষ দেখতে আসছে।আসছে বললে ভুল হবে বরং এসে গিয়েছে।মেহেক ভার্সিটি থেকে এসে দেখে কয়েকজন অপরিচিত মানুষ ড্রয়ং রুমে বসে আছে।মেহেক সেদিকে অতোটা মনোযোগ না দিয়ে তাদের সালাম দিয়ে চলে আসে।মেহেকের পেছন পেছন সৃষ্টিও আসে আর তাকে তৈরি করতে থাকে।প্রথমে সৃষ্টি কিছু বলতে চাইনি তবে মেহেকের জোর করার পর সে বলে যে তাকে দেখতে এসে তারা।
রেডি হওয়া শেষ হলে মেহেককে সৃষ্টি নিচে নিয়ে আসে।মেহেক নিচে গিয়ে আবারো সবাইকে সালাম দেয়।
” আসো মা এদিকে আমার পাশে বসো।” মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা বলেন।মেহেক একবার সৃষ্টির দিকে তাকাই,সৃষ্টি চোখের ইশারায় তাকে বসতে বলে।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বসে পড়ে।
” এই হচ্ছে আমার ছেলে ধ্রুব।” মহিলাটা বলে।
মেহেক চোখ তুলে তার সামনে বসে থাকা ছেলেটা দিকে তাকাই।ছেলেটাকে দেখে মেহেকের তো চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।মাথা ঝপঝপে তেল দেওয়া,চোখে মোটা ফ্রেশের চশমা,ফুল হাত শার্ট ইন করা।ছেলেটা মেহেকের দিকে তাকিয়ে একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে।ছেলের কান্ড দেখে মেহেক চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” এসব কি?” চোখের ইশারায় সৃষ্টিকে বলে মেহেক।
সৃষ্টি চোখের পলক ফেলে মেহেককে চুপ করে বসতে বলে।সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে আর মেহেক মনে মনে ছেলেটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে।
” দেখি তো মেয়ে চুলগুলো একটু দেখাও তো।” আরেকটা মহিলা বলে।
হঠাৎ এরকম কিছুতে মেহেক অবাক হয়ে যায়।
” জ্বি?”
” আসলে ও আমার ননদ।ওকে একটু চুলটা দেখাও।”
মেহেক দাঁতে দাঁত চেপে মাথা থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে ফেলে।মহিলা এসে মেহেকের চুলগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে।
” হুম চলনসই আসে।তবে বেশি পাতলাম,আরেকটু ঘন হলে ভালো হতো।”
মহিলার কথা শুনে মেহেক আবার সৃষ্টির দিকে তাকাই।মহিলা আবার নিজের জায়গায় এসে বলে।
” দেখি এবার চশমাটা একটা খুলোতো।”
মেহেকের ইচ্ছে করছে দেয়ালে মাথা ঠুকতে।এবারো একবস্তা বিরক্তি নিয়ে মেহেক চশমাটা খুলে।
” মেয়ে তো চশমা ছাড়ায় বেশি ভালো লাগছে।তবে আমাদের চশমা ছাড়া বউই বেশি পছন্দ।”
একথা শুনে সৃষ্টি আর তার পরিবারের বাকি সবার মন খারাপ হয়ে যায় তবে মেহেকের তো খুশির শেষ নেয়।
” এ্যাঁ…..উনাদের নাকি চশমা ছাড়া বউ লাগবে কিন্তু নিজেদের ছেলে যে কানা চারচোখ তার কোন খবর নেই।নিজের বেলায় ঠিক আর অন্যদের বেলায় না,হু…।” মনে মনে বলে সবার অগোচরে ভেংচি কাটে মেহেক।
সবাই আবারো নিজেদের মধ্যে কথা বলে আর ঠিক করে ছেলে-মেয়ে দুজন একান্তে কথা বলবে।এটা শুনে মেহেক চট করে দাঁড়িয়ে পড়ে কারণ সে এখান থেকে বের হওয়ারই অপেক্ষা করছিল।সে সোফার পেছন দিক দিয়ে ঘুরে বেরিয়ে আসে কিন্তু ছেলেটা এখনো মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।
” কি হলো ধ্রুব যা।” ছেলেটার ফুপি বলে।
” মা যাবো?” ছেলেটা বাচ্চা বাচ্চা ভাবে তার মাকে প্রশ্ন করে।ছেলেটার কথা শুনে মেহেক আর বাকি সবাই চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রয়।
” আসলে ছেলে আমার বড় ভালো,আমাকে খুব মানে।হ্যাঁ বাবা যাও তুমি।” জোরপূর্বক হেসে বলেন উনি।মহিলা পারমিশন দেওয়ার পর ছেলেটা গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসে।মেহেক বিরক্ত নিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে আর ছেলেটাও গুটিগুটি পায়ে তার পেছন পেছন আসতে থাকে।
দীর্ঘ পনেরো মিনিট হয়ে গেলো মেহেক আর ছেলেটা রুমে এসেছে তবে তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কোন কথা হয়নি।সময় যত যাচ্ছে মেহেকের বিরক্তির সীমা ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে।মেহেক আর চুপ করে থাকতে পারছেনা তাই সে বলেই দেয়,
” আপনি কি কিছু বলবেন?”
” কি বলবো?” লজ্জা লজ্জাভাব নিয়ে বলে ছেলেটা।ছেলেটা লজ্জা পাওয়া দেখে মেহেকের বিরক্তিতে কপাল কুচকে যায়।
” হু….কি বলবো।কেন?আমার মাথা বলবি।দেখো দেখো কিভাবে লজ্জা পাচ্ছেন উনি।মনে হচ্ছে উনি মেয়ে আর আমি ওখানে দেখতে এসেছি।হু…..” বিরবির করে বলে মেহেক।
” একটা কথা বলবো?” একদম নিচু স্বরে কথাটা বলে ছেলেটা।
” জ্বি বলুন।আমি শুনে ধন্য হয়।”
” আপনাকে না অনেক সুন্দর লাগছে।” আবারো লজ্জা লজ্জাভাব নিয়ে বলে।
” ও… আমি তো জানতামই না।বাট নট থ্যাংক্স ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট।”
” শুনেন আমি যে আপনাকে এটা বলেছি আমার মাকে বলবেন না।ঠিক আছে?”
” কেন বললে কি হয়েছে?”
” আমি যদি জানে আমি এসব বলেছি তাহলে আমাকে খুব বকা দেবে।” বাচ্চা বাচ্চা গলায় বলে ছেলেটা।
” ঢং….মাম্মাস বয়।হু….” বিরবির করে বলে মেহেক।মেহেকের কেন যেন মনে হচ্ছে আসলে ছেলেটা এরকম না।এতো বড় ধামরা ছেলে মোটেও এতো সহজ সরল হওয়ার নয়,তারউপর যে যদি জব করে।মেহেক আর একমুহূর্তও ছেলেটাকে সহ্য করতে পারছেনা।
” আচ্ছা চলুন এবার নিচে যায়।”
মেহেক ছেলেটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে নিচে চলে যায়।মেহেক চলে যেতে ছেলেটা একবার মেহেকের ঘরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে সেও নিচে চলে আসে।
খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষ হলে পাত্রপক্ষের সবাই চলে যেতে নেয়।তারা বলে তারা এদের বিয়ের ব্যাপারে ভেবে দেখবে।
” এক্সকিউজ মি।”
সবাই পেছনে ফিরে তাকাই।সবাই এভাবে একসাথে তাকানো দেখে স্পর্শ ঘাবড়ে যায়।সে বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে।সবার অগোচরে সৌন্দর্য স্পর্শকে কনুই দিয়ে ঘুতো দেয়।
” কি হলো আদু কিছু বলবে?”
” আসলে ভাবী আমরা কি একবার ওর মানে ধ্রুব সাথে কথা বলতে পারি?”
” কেন?আমার ভাইপোর সাথে তোমাদের কি কথা?”
” হ্যাঁ আদু কি কথা বলবে তোমরা?”
” আসলে কিছু জরুরি কথা ছিল।” সৌন্দর্য বলে।
” আচ্ছা যাও কথা বলে এসো তোমরা,আমরা অপেক্ষা করছি।” ছেলেটার মা বলে।স্পর্শ আর সৌন্দর্য এটা শোনারই অপেক্ষায় ছিল।তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিয়।তারপর দুজন ধ্রুবকে দু’দিক দিয়ে ধরে ছাদে নিয়ে আসে আর ভেতরে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” তা বাবাজি তোমার নাম কি?” স্পর্শ প্রশ্ন করে।
” ধ্রু…ব….।”
” ও….আচ্ছা।তা বাচ্চা তুমি কি জানো ধ্রুব নামের অর্থ কি?”
” হুম জানি।”
” তা কি বলোতো?”
” অপ..রিবর্ত…নশী..ল..।”
” বাহ্ ভেরি গুড বয়।তোমাকে এর অর্থ কে বলেছে বাবু?”
” আমার মা বলেছে।”
” ও আচ্ছা তাহলে মাম্মাস বয়।”
” এই শোন তুই বাড়ি গিয়ে বলবি তুই এই বিয়ে করবিনা।বলবি তো মেয়ে পছন্দ হয়নি।” সৌন্দর্য বলে।
” কিন্তু আমার তো পছন্দ হয়েছে।কি সুন্দর উনি।”
অন্য ছেলের মুখে মেহেকের প্রশংসার শুনে সৌন্দর্য তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।
” স্পর্শ ওকে তুই বোঝা।আমার মাথা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে।” দাঁতে দাঁত চেপে বলে সৌন্দর্য।
” শোন ভাই তোর যদি তোর প্রাণটা প্রিয় হয় তাহলে এই বিয়ে করিস না।যদি করিস তাহলে তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।”
” যদি বেশি চালাকি করিস না তাহলে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।বুঝেছিস?”
” হুম।” মাথা নাড়িয়ে বলে ধ্রুব।
স্পর্শ আর সৌন্দর্য ধ্রুবকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।সৌন্দর্য আর স্পর্শের কথা শুনে বিশেষ করে সৌন্দর্যের রাগী রাগী কথা শুনে ধ্রুব ততক্ষণাত তার মায়ের কানে কানে বলে দেয় সে এই বিয়ে করবেনা কিন্তু না বলার কারণটা বলেনি।তবে মহিলা এখনই সরাসরি কিছু বলেনা,উনি পরে জানাবেন বলে চলে যায়।
রাতে,
স্পর্শ ল্যাপটাপে কিছু করছে এদিকে তার ফোন বারবার বেজেই চলেছে কিন্তু স্পর্শ তা রিসিভ করছেনা।অবশেষে বিরক্ত হয়ে স্পর্শ ফোনটাই অফ করে দেয়।আসলে নাইরা স্পর্শকে ফোন করেছিল কিন্তু স্পর্শের কোন ইচ্ছেই নেই তার সাথে কথা বলার।
কিছুদিন পর,
এরমধ্যেই ধ্রুবের মা ফোন করে বলে দিয়েছেন যে ওনাদের ছেলের নাকি মেয়ে পছন্দ হয়নি,তাই বিয়ে হচ্ছেনা।এই কথা শুনে সৃষ্টি আর তার বর স্বচ্ছর মন খারাপ হয়ে গেলেও মেহেক,সৌন্দর্য আর স্পর্শ ভিষণ খুশি হয় তবে তাদের খুশি হওয়ার কারণ আলাদা আলাদা।
নিজের রুমে বসে টিভি দেখছে মেহেক।হঠাৎ কোথা থেকে রিফা দৌড়ে দৌড়ে মেহেক রুমে আসে।
” বইন আমাকে বাঁচা,না হলে আমি মরে যাবো।”
চলবে……..