কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ০৮ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

0
317

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

সৌন্দর্য,মেহেক আর রিফা পেছন ফিরে দেখে স্পর্শ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

” আমরা শপিংয়ে যাচ্ছি ভাইয়া।”

স্পর্শ একপলক মেহেকের দিকে তাকিয়ে তারপর বলে,

” ও তাহলে চলো আমি তোমাদের ড্রপ করে দিচ্ছি।”

” ঠিক আছে ভাইয়া চলো।”

রিফা স্পর্শের হাত ধরে তাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।

” দাভাই মেহু নিয়ে আসো তুমি।” যেতে যেতে বলে রিফা।

” চলো মেহুপাখি।” আলতো হেসে মেহেককে বলে সৌন্দর্য।

সৌন্দর্যের মুখে “মেহুপাখি” নামটা শুনে কেঁপে উঠে মেহেক।সে নীরবে সৌন্দর্যের সাথে নিচে নেমে আসে।

গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে স্পর্শ আর তার পাশে বসেছে সৌন্দর্য।পেছনে বসেছে মেহেক আর রিফা।গাড়ি চলতে শুরু করে।রিফা আর সৌন্দর্য মোবাইল টিপছে,স্পর্শ নিজের মতো গাড়ি চালাচ্ছে আর মেহেক বাইরের দৃশ্য দেখছে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎই কি মনে করে যেন মেহেক গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাই।লুকিং গ্লাসে তাকানোর পরেই মেহেকের চোখ পড়ে সৌন্দর্যের চোখের দিকে।সৌন্দর্য তার দিকেই তাকিয়ে আছে।এটা দেখে মেহেক তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারো বাইরে তাকাই।অন্যদিকে গাড়ি চালানোর ফাঁকে স্পর্শও একপলক মেহেককে দেখে নেয়।

কিছু সময় পর গাড়ি এসে থামে শপিংমলের সামনে।একে একে সৌন্দর্য,মেহেক আর রিফা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।

” ভাইয়া তুমিও আসো আমাদের সাথে।” স্পর্শকে বলে রিফা।

” না তোরা যা,আমার কিছু কাজ আছে।ভাইয়া তুমি ওদের খেয়াল রেখো কিন্তু।”

” তুই চিন্তা করিস না।আমি আছি তো।”

স্পর্শ আর কোন কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।রিফা আগে আগে হাঁটছে আর তার পেছন পেছন হাঁটছে মেহেক আর সৌন্দর্য।কিছুদূর হেঁটেই মেহেক হাঁপিয়ে যায়।সে এই দুই ভাই-বোনের সাথে হাঁটতে পারছেনা কারণ তারা দুজনই খুব তাড়াতাড়ি হাঁটছে।অনেকটা পথ হাঁটার পর রিফা একটা দোকানে ঢুকে।যেহেতু ওটা ফিমেইল শপ ছিল তাই সৌন্দর্য বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো।

রিফা একটা একটা করে জামা দেখছে কিন্তু কোনটাই তার পছন্দ হচ্ছেনা।

” মেহু একটা জামা চয়েজ করে দেতো।”

” আমি কি চয়েজ করবো?আমার চয়েজ ভালো নারে।”

” সেটা পরে দেখা যাবে আগে চয়েজ তো কর।”

অনেক ঘটাঘাটির পর একটা পারপেল কালারের ড্রেস পছন্দ করে মেহেক।

” ওয়াও মেহু তুই তো খুব সুন্দর ড্রেস পছন্দ করেছিস।আমি তো এটাই নেবো।”

রিফা ড্রেসটা প্যাক করতে চলে যায়।মেহেক ঘুরে ঘুরে শপটা দেখছে তখন হঠাৎ তার চোখ যায় শপের বাইরে।সৌন্দর্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।এটা কেন যেন মেহেকের পছন্দ হলোনা।সে দ্রুতটা দোকান থেকে বেরিয়ে আসে।কিন্তু মেহেকের পৌঁছানোর আগে মেয়েগুলো চলে যায়।মেহেক তাড়াতাড়ি এসে সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ায়।মেহেকে দেখে সৌন্দর্য আলতো হেসে তাকে জিজ্ঞেস করে,

” শপিং করা শেষ?”

” আপনার সাথে মেয়েগুলো কে ছিলো?”

” আরে ওরা।ওরা তো আমার ক্লাসমেট ছিলো।”

” তো এতো হেসে হেসে কি কথা বলছিলেন?” হালকা অভিমান নিয়ে প্রশ্ন করে মেহেক।

” আরে তেমন কিছু না।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এভাবে জিজ্ঞেস করছো কেন?”

” কিছুনা।”

” কিরে মেহু তুই এখানে।আর আমি তোকে দোকানের ভিতর খুঁজে বেড়াচ্ছি।”

মেহেক কিছু বললোনা।রিফা আবারো হাঁটতে শুরু করে।এবারো মেহেক আর সৌন্দর্য তার পেছন পেছন হাঁটছে।

” তুমি কি জেলাস মেহু রাণী?”

” হ্যাঁ?”

মেহেক চট করে পাশে ফিরে তাকাই।কিন্তু না সৌন্দর্য তো একমনে মোবাইল টিপছে।তাহলে কি সে ভুল শুনেছে?

” আমি কি ভুল শুনলাম?কিন্তু আমি তো স্পষ্ট শুনেছি যে উনি বললো আমি কি জেলাস?কিন্তু উনি তো মোবাইল টিপছে।ধুর হয়তো আমিই ভুল শুনেছি।আর আমি জেলাস হবো কেন?উনি কি আমার সম্পত্তি নাকি?ওনার সাথে যে কেউ কথা বলতে পারে,এতে এতো চিন্তার কি আছে?”

এসব বলে নিজে বুঝ দিলো মেহেক।সে এবার কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রিফার সাথে হাঁটতে থাকলো।এদিকে মেহেক সামনে চলে গেলো ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মুচকি হাসে সৌন্দর্য,যা মেহেক খেয়াল করেনি।

ট্রাইয়েল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রিফার জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক আর সৌন্দর্য।তখন একটা মেয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়।

” আরে তুমি মেহেক না?”

মেহেক একবার ভালো করে মেয়েটাকে পরখ করে নেয়।

” জ্বি আমি মেহেক।কিন্তু….. ”

” আরে আমি স্নিগ্ধা।ভুলে গেলে।কলেজে তোমার সাথেই তো পড়েছি।”

কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর মেহেকের মনে পড়ে।

” আরে স্নিগ্ধা,মনে পড়েছে।কেমন আছো তুমি?”

” আমি তো বেশ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো।”

” আলহামদুলিল্লাহ,আমিও ভালো আছি।হুম বেশ অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা হলো।”

” তো উনি কে?তোমার ভাই নাকি?”

মেহেক একবার সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।ভাই শব্দটা শুনে সৌন্দর্যও ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে মেহেকের দিকে তাকাই।

” না উনি আমার ভাই না আমার বোনের দেবর উনি।”

” ও আচ্ছা।তো মেহেক মুগ্ধ কোথায়?তোমার সাথে আসেনি নাকি?”

মুগ্ধের কথা শুনে মেহেক বুক ধক করে উঠে।সে ভীত দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।

” তোমরা কথা বলো আমি একটা কল এটেন্ড করে আসছি।”

সৌন্দর্য সেখান থেকে চলে যায়।সৌন্দর্য চলে যেতেই মেহেক হাফ ছাড়ে।

” কিরে মেহেক বললে নাতো মুগ্ধের কথা।ও কোথায়?”

” মুগ্ধ এখানে নেই।উনি চট্টগ্রামে ওনার পরিবারের সাথে আছে।”

” ও আচ্ছা।তুমি কি এখন এখানে থাকো নাকি?”

” না বেড়াতে এসেছি।”

” ও আচ্ছা।আচ্ছা আমি যাই ভালো থেকো।তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।”

” আমারো তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।”

স্নিগ্ধা নামের মেয়েটা চলে যায়।তার কিছুক্ষণ পর রিফাও বেরিয়ে আসে।

” এতোক্ষণ লাগে তোর ড্রেস ট্রাই করতে?”

” আরে বইন রাগ করিস না।চল এখন।”

শপিং শেষ করে দোকান থেকে বেরিয়ে রিফা আর মেহেক সৌন্দর্যের কাছে এসে দাঁড়ায়।

” এতোক্ষণে বের হলেন তাহলে আপনারা।”

” এভাবে বলছো কেন?”

” তো কি করবো?১ ঘন্টা যাবৎ আমি তোদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

” আচ্ছা চলো চলো।”

মেহেক আর রিফা আগে আগে হাঁটছে আর সৌন্দর্য তাদের পেছন পেছন।

” বোনু শোন।”

রিফা আর মেহেক দাঁড়িয়ে পড়ে।

” এদিকে আয় তো।কথা আছে।”

রিফা এসে সৌন্দর্যের পাশে দাঁড়ায়।

” তুমি হাঁটো আমরা আছি তোমার পেছনে।” মেহেককে বলে সৌন্দর্য।

মেহেক একা একা হাঁটতে থাকে।কিছুসময় পর মেহেক পেছন ফিরে তাকাই কিন্তু পেছন ফিরতেই সে ঘাবড়ে যায়।কারণ তার পেছন না সৌন্দর্য আছে আর না রিফা।মেহেক এদিক-ওদিক তাকিয়ে দুজনকে খুঁজতে থাকে কিন্তু দুজনের একজন কেউ সে দেখতে পাইনা।হঠাৎ মেহেকের মনে পড়ে তার কাছে তো রিফার নম্বর আছে।মনে পড়তেই মেহেক চটজলদি রিফাকে ফোন দেয়।প্রথম বার রিং হয়ে কেটে যায় কিন্তু মেহেক আবারো ফোন দেয়।

” কিরে মেহু কি হয়েছে?”

” কি হয়েছে মানে?তোরা কোথায়?আমাকে একা রেখে কোথায় গেলি?”

” আরে আমরা আশেপাশেই আছি।”

” তাহলে আমাকে একা রেখে চলে গেলি কেন?আমাকেও সাথে নিয়ে যেতি।যদি আমি হারিয়ে যায়।”

” আরে বাবা হারিয়ে যাবিনা।শোন তুই এখন যেখানে আছিস ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।ওকে?এখন রাখ।”

মেহেককে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয় রিফা।কি আর করার মেহেক বেচারিও একা একা সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।

রিফা আর সৌন্দর্য গিয়েছে ১ ঘন্টার কাছাকাছি সময় হবে কিন্তু এখনো তাদের আসার কোন দেখা নেই।মেহেকের একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছেনা।সময় কাটানোর জন্য উপায় না পেয়ে মেহেক ফোনে এঞ্জেলা গেইম খেলতে থাকে।মেহেক নিজের মনের মতো গেইম খেলছে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে আচমকা তাকে জরিয়ে ধরে যার কারণে ঘাবড়ে গিয়ে মেহেকের হাত থেকে তার ফোন নিচে পড়ে যায়।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here