#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
এখন মেন’স শপে দাঁড়িয়ে টির্শাট চুজ করছে মেহেক আর তার পেছনে দাঁড়িয়ে বকবক করছে রিফা।মেহেক দুটো টিশার্ট চুজ করে রিফা দেখায়।
” এগুলো কেমন?”
” বরাবরের মতোই তোর চয়েজ খুব ভালো।দে আমি এগুলো প্যাক করে আনছি।”
টির্শাট দুটো নিয়ে রিফা দৌড়ে চলে যায় কাউন্টারে।রিফার এই বাচ্চাপনা দেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুচকি হাসে মেহেক।
ফ্ল্যাসবেক,
মাটিতে পড়ে থাকা জানের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে মেহেক।সে দ্রুত মাটি থেকে ফোনটা তুলে নেয় তারপর অগ্নিদৃষ্টি পেছনে ফিরে তাকাই।মেহেকের তাকানো দেখে রিফা জোরপূর্বক একটা হাসি দেয়।
” ওই এভাবে লাফালাফি করিস কেন?দেখ তোর জন্য আমার জানটা পড়ে গেলো।তোর জন্য আমার একমাত্র জানটা ব্যথা পেয়েছে।”
” জান?” কপাল কুচকে প্রশ্ন করে রিফা। ” তোর জান আবার কে?এখানে তো তুই আর আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা আমি।”
” আরে এটা কি দেখোস না নাকি?” ফোনটা রিফার চোখের সামনে নিয়ে।
” ও আচ্ছা তোর মোবাইল জান।আহারে কষ্ট পাসনা বান্ধপী।তোর একটা জান গেলে সমস্যা নেই আরো কত জান আসবে।এই তোর একটা জানের সাথে যদি ডির্বোস হয়ে যায় তো কোন সমস্যা নেই আমরা তোকে নতুন একটা জানের সাথে বিয়ে দেবো।তখন তুই তার সাথে জান জান খেলিস।”
” তুই কি আমার মজা নিচ্ছিস?”
” আরে আমি কেন মজা নেবো?আমি সিরিয়ালি বলছি।”
” আচ্ছা এবার বল কোথায় গিয়েছিল?এতোক্ষণ কেন লাগলো?”
” আরো দাভাইয়ের সাথে এই দোকানে গিয়েছিলাম।”
” তো আমাকে নিয়ে গেলিনা কেন?আমাকে নিয়ে গেলে কি হতো?”
” আরে ছাড় ওসব।এই নে ধর এটা?”
” কি এটা?”
” এটা তোর জন্য গিফ্ট।আমার আর দাভাইয়ের তরফ থেকে।এটা দাভাই সিলেক্টেড করেছে।তুই তো জানিস আমার পছন্দ তেমন একটা ভালো না।”
” এসবের…..”
” দরকার ছিল।এখন চল আমার সাথে।”
” আবার কোথায়?”
” দাভাই আর ভাইয়ার জন্য কিছু কিনবো।দাভাই আমাকে ড্রেস দিলো তো আমি দেবোনা।আর দাভাইকে দিলে ভাইয়াকেও দিতে হবে না হলে দেখা যাবে আমার মাথায় আর চুল থাকবেনা।”
ফ্ল্যাসবেক এন্ড….
” কিরে মেহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস?চল চল দাভাই ফোন দিতে দিতে পাগল করে দিচ্ছে।
রিফা মেহেককে টেনে শপ থেকে বাইরে নিয়ে আসে।
” কিরে আর কতো শপিং করবি?”
” এতো শেষ।চলো এবার কিছু খায়।প্রচুর খিদা লেগেছে।”
” হুম চল।তাড়াতাড়ি খাবি কিন্তু।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে অলরেডি।”
এরপর মেহেক,সৌন্দর্য আর রিফা একটা রেস্টুরেন্টে যায়।অল্পকিছু খাবার খেয়েই তারা বেরিয়ে আসে।যেহেতু গাড়ি স্পর্শ নিয়ে গিয়েছে তাই তারা ট্যাক্সি করে বাড়িতে ফেরত আসে।
এতোক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর সৌন্দর্য,রিফা আর মেহেক তিনজনই হাঁপিয়ে গিয়েছে।বাসায় এসে তিনজনেই সোফায় গা এলিয়ে দেয়।
” আমি জীবনেও তোর সাথে আর শপিংয়ে যাবোনা,কতো হাঁটাস তুই।আমার তো পা ব্যথা করছে।”
” কি গো দেবরজী এতো ক্লান্ত লাগছে কেন?ননদীনি বুঝি খুব পরিশ্রম করিয়েছে?” শবরের গ্লাস দিতে দিতে সৌন্দর্যকে কথাটা বলে মেহেকের বোন সৃষ্টি।
” আর বলোনা ভাবী,এই মেয়ে কতোটা যে দোকান ঘুরিয়েছে।হাঁটতে হাঁটতে আমার জান বের করে ফেলেছে।”
” ভাবী দাভাইয়ের কথা শুনোনা।তুমি মেহু থেকে জিজ্ঞেস করো আমি এরকম কিছু করিনি।কিরে মেহু বল।”
” আমি কিছু জানিনা।”
” আচ্ছা হয়েছে বুঝেছি আমি।এবার তোমরা সবাই যে যার রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও।অনেক হাঁটাহাঁটি করেছে এবার শরীরটাকে একটু আরাম করতে দাও।”
সৌন্দর্য আর রিফা চলে যাওয়া পর মেহেক তার বোনকে বলে—
” আপুনি শোন।”
” বল মৃদু।কিছু খাবি নাকি?”
” না।শোন না তুই রাতের খাবার শেষ হলে একটু আমার রুমে আসিস তো।তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
” কি কথা এখন বল।”
” না এখন না।এখন অনেক ক্লান্ত।রাতে খাবার পরে বলবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।যা একটু বিশ্রাম নে।”
মেহেক সোফা থেকে উঠে আস্তে ধীরে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।সে যখন মাঝ সিঁড়ি পৌঁছায় তখন তার দেখা হয় স্পর্শের সাথে।তার গায়ে জগিং সুট আর কানে হেডফোন।স্পর্শ মেহেকের দিকে না তাকিয়ে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে পড়ে।এদিকে মেহেক এখনো স্পর্শের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সে দ্বিধায় আসে,আসলে কি ঠিক দেখেছে নাকি ভুল।এই সময় স্পর্শের গায়ে জগিং সুট,ব্যপারটা সে ঠিক মেলাতে পারছেনা।
” এই সময় জগিং সুট পড়ে নাকি কেউ?উনি কি মর্নিং ওয়াকের বদলে ইভিনিং ওয়াক করতে বেরিয়েছেন নাকি?”
মেহেক দ্রুততার সাথে উল্টো পায়ে আবারো নিচে নেমে আসে।
” আপুনি,এই আপুনি।”
” বল।আবার নিচে নেমে এলি যে?”
” আচ্ছা তোর ছোট দেবর মানে আদু এই সময় জগিং সুট পড়ে কোথায় গেলো?”
” আরে ও এরকমি।মাঝে মধ্যেই সন্ধ্যা বেলা জগিং করতে বেরিয়ে যায়।আবার কোন কোন সময় তো রাত একটা দুটো তেও বেরিয়ে যায়।”
” সট্রেন্জ।ওনার মধ্যে কি মাঝে মধ্যে দৌড়ানোর ভুত ঢুকে নাকি?”
স্পর্শের কথা ভাবতে ভাবতেই মেহেক রুমে চলে আসে।রিফার দেওয়া প্যাকেটটা বিছানায় রেখে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় মেহেক।তার এখন একটা শাওয়ারের প্রয়োজন।এতো সময় হাঁটাহাঁটি করে প্রচুর ঘেমে গেছে সে।এ অবস্থা শাওয়ার না নিয়ে থাকা মোটেও সম্ভব নয়।
পনেরো বিশ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে মেহেক।চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় সে।হঠাৎ নিচে চোখ পড়লে মেহেক দেখে স্পর্শ গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে।এতো তাড়াতাড়ি স্পর্শকে ফিরে আসতে দেখে মেহেক কপাল কুচকে উঠে।
” এতো তাড়াতাড়ি ওনার জগিং শেষ!দৌড়ানোর ভুত কি নেমে গেলো নাকি?কি জানি বাবা।মানুষটা যেমন আজব তার কাজগুলোও তেমন আজব।”
রাতে খাবার শেষ করে বোনের জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক।অবশেষে সবকাজ শেষ করে সৃষ্টি আসে মেহেকের কাছে।
” বল কি বলবি?”
” ও তুই এসেছিস।আচ্ছা যেটা বলছিলাম,তোকে বলেছিলাম না আমি এখন থেকে এখানে মানে ঢাকা শহরেই থাকবো।”
” হুম।বলেছিস তো।”
” তো আমি আমার পড়াশোনা এখানের কোন একটা ভার্সিটিতে করতে চাই।কিন্তু আমি তো তেমন কিছু জানিনা।তুই দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখবি একবার।”
” আচ্ছা ঠিক আছে,আমি তোর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে তোকে জানাচ্ছি।”
পরেরদিন সকালে,
মেহেকের কোন কাজ নেই এখন তাও সে সকাল সকাল উঠে পড়েছে।ফ্রেশ হয়ে সে নিচে চলে যায়।নিচে নেমে দেখে তার বোন রান্না করছে আর তার দুলাভাই আর বোনের শাশুড়ি কথা বলছে।
” আরে মেহেক,এসো বসো।ঘুম কেমন হলো তোমার?”
” এইতো দুলাভাই ভালো।”
” তোমার আপু কাল আমাকে তোমার পড়াশোনার কথা বলেছে।আমি চাইছি তুমি বোনু যে ভার্সিটিতে পড়ে তুমিও সেই ভার্সিটিতে ভর্তি হও।যেহেতু তুমি এখানে নতুন,তাই যদি আগে থেকে ভার্সিটিতে তোমার পরিচিত কেউ থাকে তাহলে তোমার জন্য সুবিধা হবে।তুমি কি বলো?”
” ঠিক আছে দুলাভাই,আপনি যা ভালো মনে করেন।”
” কি…..মেহু আমার ভার্সিটিতে পড়বে!ইয়াহু…….. ” নাচতে নাচতে কথাটা বলে রিফা।
” তাহলে ঠিক আছে ব্রেকফার্স্ট করে তুমি তৈরি হয়ে নাও।আজকেই ভার্সিটির কাজ শেষ করে ফেলবো।কারণ কয়েকদিন পর থেকেই তো নতুন ক্লাস শুরু হবে।”
” ঠিক আছে দুলাভাই।”
” মেহু…. মেহু…. আমার কি যে খুশি খুশি লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা।আমি আর তুই একি ভার্সিটি পড়বো।দাঁড়া আমি খবরটা ইভানকে দিয়ে আসি।”
” এটাও তোর বয়ফ্রেন্ডকে বলতে হবে?” হতাশ হয়ে বলে মেহেক।কারণ রিফা প্রত্যেকটা কথা ইভানকে বলে।
” ও মা বলতে হবেনা!ওটা আমার কলিজা না।আমি আমার কলিজাকে না বলে কেমন করে থাকবো?”
” আচ্ছা যা যা বল,সব বলে দে।কিছু বাদ রাখিস না।গার্লস টিপিক গুলোও বলে দে।”
” ছিঃ ছিঃ আমি গার্লস টিপিকগুলো কেন ওকে বলতে যাবো?”
” কেন?এটা কেন বাদ রাখবি?সব যখন বলিস তখন এটাও বল।”
” ধুর তোর সাথে কথায় আমি পেরে উঠবো না।আমি যায় আমার জানের সাথে কথা বলে আসি।”
চলবে…..
(দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত)