কি_নেশায়_জড়ালে পর্ব ৪

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রুপা রুমের কোনটা কোথায় রাখবে বুঝতে পারছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কোথায় কোনটা মানাবে..? বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘ এই যে শুনছেন..?’
সাজ্জাদ রূপার কন্ঠ শুনে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো।
রূপা সাজ্জাদ কে দেখে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো, ‘ কোনটা কোথায় রাখবো একটু যদি দেখিয়ে দিতেন…?’
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে দিলো কোনটা কোথায় রাখতে হবে।
রূপা মিনমিন করে বললো,’ একটু হেল্প করুন না…’
সাজ্জাদ এর ফোন আসায় আর রূপার কথাটা সে শুনতে পেলো না। সাজ্জাদ ফোন রিসিভ করে ব্যালকনির দিকে পা বাড়াতেই রূপা গিয়ে সাজ্জাদ এর শার্ট আঁকড়ে ধরলো।
সাজ্জাদ হাঁটা থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে রূপার দিকে তাকালো।

রূপা ভয়ে ভয়ে হাত বাড়িয়ে মিনিকে দেখালো। মিনি বিছানার উপর বসে মুখ গুমরা করে রূপার দিকে তাকিয়ে আছে।

সাজ্জাদ মিনি কে কোলে নিয়ে বলে উঠলো, ‘ মিনি খারাপ মানুষদের একদম পছন্দ করে না। ‘
রূপা অবাক হয়ে বললো,’ আমি খারাপ মানুষ..!!??

সাজ্জাদ ঘা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তো আপনাকে বলেনি… ‘
রূপাঃ একদম খাইয়ে দিতে হবে না।
সাজ্জাদ রুপার রাগ দেখে হাসলো। মেয়েটাকে সব লুকেই ভালো লাগে। শ্যামবর্নের মুখটায় হালকা লালচে ভাব দেখা যাচ্ছে । হয়তো মনে মনে প্রচুর রেগে গেছে সাজ্জাদ এর উপর।

সাজ্জাদ কিছু বলতে গিয়েও বললো না, মিনিকে কোলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

রুম ঠিক আগের মতো গুছিয়ে একপাশে দাঁড়ালো রূপা।
সে তো ইচ্ছে করে রুম নষ্ট করেনি কিন্তু এই বেয়াদব ছেলে ওকে দিয়ে পুরো রুম গুছালো!! মনে মনে হাজারটা বকা দিয়ে রুমের দরজা খোলে বেরিয়ে গেলো রূপা। শালা বজ্জাত বেটা তোর জীবনে বিয়ে হইবো না। বিয়ে হলেও বাসর রাতে বউ পালায় যাইবো।

রূপা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে রুমে আসলো সাজ্জাদ ওর কোলে মিনি বসে আছে।

সাজ্জাদ ব্যালকনি থেকে এতোক্ষন রূপাকে দেখছিলো আর হাসছিলো। রূপাকে বিরবির করতে দেখেই সে বুঝেছে রূপা ওকে ইচ্ছে মতো বকেছে।

রূপা সোহার সাথে দেখা করে নিচে চলে আসলো। দুই মামা কে বললো ওর শরীর ভালো লাগছে না। বাসায় চলে যাবে।

রূপার বড় মামা বলে উঠলো, ‘ নাদিম তো চলে গেছে। ওর ফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করেছে তুমি নাহিদা কে নিয়ে যাও। ‘

কিন্তু নাহিদা এখন যেতে রাজি নয়। সে সোহার সাথে যাবে। এখনো তার ক্রাশ এর সাথে ওর দেখা হয়নি। সে তো ক্রাশ এর সাথে দেখা না করে কিছুতেই যাবে না।

রূপার মামার কথা শুনে আদি চৌধুরী বলে উঠলো, ‘ বেয়াই চিন্তা করবেন না আমার ছেলে না হয় ওকে দিয়ে আসবে। ‘
রূপা আদি চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তার কোনো প্রয়োজন নেই আঙ্কেল। আমি চলে যেতে পারবো। ‘
আদি চৌধুরী রূপার দিকে তাকিয়ে বললো,’ একা যাওয়া ঠিক হবে না। আমাদের গাড়ি আছে আমার ছেলে তোমাকে না হয় দিয়ে আসবে।’
রূপা আর উনার মুখের উপর কিছু বললো না। কিছু বললে খারাপ দেখায়।
আদি চৌধুরী সাজ্জাদ কে ডেকে নিলো।
রূপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, তাহলে এই ছেলেটাই কালকের সেই ছেলেটা ছিলো!! ইসস কি লজ্জা, আমি এই ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছি!! কাল তো একটু ধাক্কা দেওয়াতে বললো “শরীর ছোঁয়ার ধান্দা” আজ তো একদম জড়িয়ে ধরেছি আজ নিশ্চয়ই মনে মনে এর থেকে বড় কিছু ভেবে নিয়েছে আমাকে নিয়ে ।

সাজ্জাদ এর নাম নেওয়া তে রূপা সাজ্জাদকে চিনেছে।

রূপা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুতেই সাজ্জাদ এর সাথে যাবে না। এই ছেলে এক তো গম্ভীর হয়ে কথা বলে, আবার নিজেকে শাহরুখ খান, সালমান খান ভাবতে শুরু করেছে। মেয়েরা একটু প্রয়োজনে টার্চ করলেই নাকি ছোঁয়ার ধান্দা!!

গাড়ির কাছে গিয়ে নিষেধ করে দিবো। এমনটা ভেবে চুপ করে আছে রূপা।

সাজ্জাদ রূপার মামাদের সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করলো।
রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কেমন আছেন..?’
রূপা জেনো একের পর এক অবাক হচ্ছে। একটু আগে ওকে দিয়ে পুরো রুম গুছিয়েছে একটু সাহায্য ও করেনি। দেখা হলো কথা হলো আর এখন এমন ভাব করে আছে জেনো এই প্রথম দেখা হলো ওদের।
রূপার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সাজ্জাদ ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমাকে ডেকে ছিলে। কিছুর প্রয়োজন..? ‘
আদি চৌধুরীঃ তোমার এখন এখানে কোনো কাজ নেই তুমি রূপা কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসো। ওর শরীর ভালো না।
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো,’ শরীর ভালো না হলে বিশ্রাম নিন। আর বেশি খারাপ হলে আরিফ ভাইয়া একজন ডক্টর..
রূপা সাজ্জাদ কে থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘ তার কোনো প্রয়োজন নেই আমার এখন বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন। ‘
সাজ্জাদ কিছু বলার আগে পেছন থেকে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ সেজো আব্বু আমি একটু বাহিরে যাবো। আমি না হয় উনাকে নামিয়ে দিয়ে আসছি।’
রূপা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে যার থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছে সেই তার আরও কাছে চলে আসছে।

সাজ্জাদ ভ্রু কুঁচকে আহনাফ এর দিকে তাকালো। কথাটা সাজ্জাদ এর একদম ভালো লাগেনি। কিন্তু সাজ্জাদ কিছু বললো না। কিছু বললে হয়তো আহনাফ সন্দেহ করবে। রূপা যার সাথে ইচ্ছে যাক তাতে সাজ্জাদ এর কি।

আহনাফ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ চলুন…’

রূপা রাগী দৃষ্টিতে সাজ্জাদ এর দিকে তাকালো । এই ছেলে কথা না পেচিয়ে রূপাকে দিয়ে আসতে রাজি হলে এমনটা হতো না। এতো এটিটিউড এই ছেলের।

আহনাফ গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

রূপা ব্যাগ থেকে কালকে সাজ্জাদ এর দেওয়া রুমালটা বের করে সাজ্জাদ এর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
সাজ্জাদ রুমালের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি কাউকে একবার কিছু দিলে তা আর ফেরত নেই না।’

রূপা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রুমালটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
সাজ্জাদ একবার রূপার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ভীষণ রাগ হচ্ছে এখন আহনাফ এর উপর আর সেই রাগের জন্যই রূপার সাথে এমন ব্যাবহার করা।
রূপা তো নিষেধ করতে পারতো! না ধেইধেই করে আহনাফ এর সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো।
রেগে সাজ্জাদ নিজের রুমে চলে গেলো। কিন্তু তার কেনো এমন জেলাস ফিল হচ্ছে..? কেনো রাগ হচ্ছে আহনাফ এর উপর..?

রূপা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আহনাফ এর দিকে না তাকিয়ে হাঁটা ধরলো।
আহনাফ রূপার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
রূপা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আহনাফ রূপার হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে চাইলো।
রূপা নিজের হাত আহনাফ এর হাত থেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে যায়।
আহনাফ অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ প্লিজ রূপা গাড়িতে উঠে বসো। তোমার সাথে আমার অনেক কথা বলার আছে৷ ‘

রূপা রেগে আহনাফ কে বলে উঠলো, ‘ একবার মন নিয়ে খেলে শান্তি হননি আপনি। আবার এখন কেনো পিছু নিয়েছেন। নাকি এখনো প্রতিশোধ নেওয়া বাকি..?’
আহনাফ রূপার কাছে যেতে চাইলে রূপা আরও দূরে সরে গেলো। আহনাফ এর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে উঠলো, ‘ আমার থেকে দূরে দূরে থাকবেন। আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই আর আশা করি আপনারও কোনো কথা থাকবে না। আমি ভুলে গেছি কোনো সময় আহনাফ নামের কোনো যুবক কে আমি চিনতাম। আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন।

আহনাফ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার মনে হয় আমাদের আলাদা বসে কথা বলা উচিত। হয়তো তাতে সব ঠিক হতে পারে।’
রূপা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আর কিছু ঠিক হওয়ার নেই। আপনি এক কাজ করুন অভিনয় করা শুরু করুন কিছু দিনেই টপে উঠে যাবেন। খুব নিখুঁত ভাবে অভিনয় করতে পারেন।’
আহনাফ আজ কিছু বলার মতো পাচ্ছে না । এতো দিন কতো কথা জমিয়ে রেখেছে রূপাকে বলবে বলে। কিন্তু আজ জেনো সব গলায় আঁটকে আছে। রূপা ওর সামনে ওর বুকের ধুকধুকানি ক্রমশ বেড়েই চলছে। কেমন মাথা ঝিম ঝিম করছে। রূপা কি একবার ও জিজ্ঞেস করবে না, আহনাফ তুমি কেমন আছো..? আহনাফ ভালো নেই। একদম ভালো নেই।

রূপা আহনাফ কে ফেলেই সামনের দিকে হেঁটে একটা অটো ধার করালো।
আহনাফ দৌড়ে গিয়ে রূপার আগে অটোতে বসে পড়লো।
রূপা রেগে বলে উঠলো, ‘ আঙ্কেল আপনি চলে যান। আমি অন্য গাড়িতে যাবো। ‘

আহনাফ রূপার হাত ধরে টান দিয়ে গাড়িতে তুলে বলে উঠলো, ‘ আঙ্কেল গাড়ি ছাড়ুন ‘
রূপাঃ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আহনাফ শুনেও শুনলো না রূপার কথা।
রূপা আহনাফ এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বাহিরে তাকালো। গাড়ি চলছে উল্টোদিকে।
রূপা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ গাড়ি উল্টো কেনো যাচ্ছে..? আমরা কোথায় যাচ্ছি..?? ‘

আহনাফ রূপার রাগ দেখে বলে উঠলো, ‘আগের থেকে বেশ রাগী হয়ে গেছো। আগে তো কেউ দশটা বললেও একটার প্রতিবাদ করতে না। কিন্তু তোমাকে রাগলে কতো কিউট আর মায়াবী লাগে জানো তুমি!? প্লিজ আমার সামনে এমন রাগীনী রুপে এসো না।

রূপা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ আগের রূপা আজ থেকে চর বছর আগে ম’রে গেছে। আপনি আজও আগের মতো রয়ে গেছেন। অভিনয়ে সেরা। ‘
আহনাফ রূপার কথা শুনে হাসলো।
~ অভিনয়ে সেরা হলেও ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো না। আমি সেই আগের আহনাফ রয়ে গেছি। একদম চেঞ্জ হইনি কারন আমার রূপা যে সেই আগের আহনাফ কে ভালোবাসে।
রূপাঃ প্লিজ এই মুখে আর ভালোবাসার শব্দটা বলে শব্দটাকে অপমান করবেন না।আর যাই হোক আপনার মুখে এই সব মানায় না।

সারা রাস্তা ওদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি।

গাড়ি থেকে নেমে রূপা বলে উঠলো, ‘ আমি চাই আমাদের আর কখনো দেখা না হোক। আমি চাই এটাই আমাদের শেষ দেখা যেনো হয়।’

আহনাফ তাও কিছু বললো না। তাকিয়ে রইলো রূপার যাওয়ার দিকে। রূপা চোখের আড়াল হয়ে যেতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আজ থেকে আমাদের জীবনে আবার নতুন করে সূর্যোদয় হবে। আমাদের মধ্যে খুব তারাতারি এই দূরত্ব আমি মিটিয়ে ফেলবো। আমি আমার আগের রূপাকে ফিরে পাওয়ার জন্য শেষ অবদ্ধি চেষ্টা করে যাবো। তুমি যতোই পালাতে চাও পালিয়ে নাও শেষে আমার খাঁচায় বন্ধি হতে হবে। দিন শেষে যেমন পাখিরা নিজের মালিকের খাঁচায় ফিরে আসে তুমি ও ফিরে আসবে।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here