কি_নেশায়_জড়ালে #পর্ব_৮

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে রূপা।
বাড়িতে যাওয়ার জন্য রিক্সার অপেক্ষা করছে।

আহনাফ বাইক নিয়ে আসলো সাজ্জাদ এর সাথে দেখা করতে।
রাস্তার পাশে বাইক রেখে টং দোকান থেকে এক কাপ চা নিলো। এদিক ওদিকে তাকিয়ে চা’য়ের কাপ মুখে দিলো। তখনি চোখ গেলো সাজ্জাদ এর গাড়ি বের হচ্ছে।
আহনাফ তারাহুরো করে চা’য়ের কাপ রেখে রাস্তার এই পাশে আসতে গিয়ে থেমে গেলো।
রূপা! হ্যাঁ রূপা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে।
মুহূর্তে আহনাফ এর মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ আহনাফ সাজ্জাদ এর গাড়ির কাছে না গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সাজ্জাদ চলে গেলে সে রূপাকে বাড়িতে পৌছে দিবে। এতে রূপা ওর প্রতি ইমপ্রেস হবে।

সাজ্জাদ যাওয়ার সময় রূপাকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি ওর সামনে দাঁড় করালো৷
রূপা ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত মুখে গাড়িটার দিকে তাকালো। হঠাৎ কোন গাধা সামনে এসে এভাবে গাড়ি থামালো!..?

সাজ্জাদ গাড়ির কাঁচ নামিয়ে রূপাকে বললো,’ দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়িতে উঠে আসো.. ‘
রূপা সাজ্জাদ কে দেখে আরও বিরক্ত হলো৷
রূপাঃ আমি চলে যেতে পারবো।
সাজ্জাদঃ এখন খুব কম রিক্সা পাবে। আর এখান থেকে তোমাদের বাড়ির রাস্তা একদম ভালো না। রাতে বখাটে ছেলেদের আসর বসে।

রূপা অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি আমার বাড়ি চিনেন..?? কিন্তু কিভাবে..?

সাজ্জাদ চোখে সানগ্লাস পড়ে রূপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এতো প্রশ্ন না করে গাড়িতে উঠে বসো।’
রূপাঃ আপনি কি আপনার কোম্পানির সবার জন্য এভাবে ভাবেন নাকি..? কার বাসায় যেতে সমস্যা হবে..? কার বাসায় যেতে নিলে বখাটে ছেলেদের আসর পড়ে..? সবাইকে লিফট দেন..?
সাজ্জাদ রূপার দিকে রেগে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কারো উপকার করতে আশা উচিত নয়। এটা চজ আবারও বুঝে গেলাম…’
রূপাঃ আমি ছোটো বাচ্চা নই চলে যেতে পারবো। আর এখন থেকে প্রতি দিন যেতে হবে। প্রথম থেকে অবাস করে নিতে হবে। প্রতি দিন তো আর আপনি পৌঁছে দিবেন না।

সাজ্জাদ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

রূপা ভাবতে লাগলো সত্যি ওদের বাসায় যেতে অনেক বখাটে ছেলেদের আসর পড়ে। ভয়ে ভয়ে রূপা হাঁটা ধরলো বুঝা যাচ্ছে গাড়ি পাওয়া যাবে না।

সাজ্জাদ চলে যেতেই আহনাফ ভাবতে লাগলো, ‘ সাজ্জাদ ভাই রূপার সাথে কি কথা বলেছে..? আর রূপা এতো রাতে এখানে কি করছে.? সাজ্জাদ ভাই এর সাথে কি রূপার কোনো সম্পর্ক আছে..? নিজের ভাবনায় নিজে বিরক্ত হয়ে বললো, এইসব কি ভাবছি আমি। সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে হয়তো আগে পরিচয় হয়ে ছিলো তাই কথা বলেছে।

আহনাফ রাস্তা পার হয়ে রূপার কাছে আসবে তখনি আবার সাজ্জাদ এর গাড়ি রূপার সামনে থামলো।
রূপা সাজ্জাদের গাড়ি দেখে না দেখার মতো এদিক ওদিকে তাকালো । এই সাজ্জাদ বেটা আজকে অনেক জ্বালিয়েছে প্রথম দিন এতো এতো গুলো কাজ করিয়েছে রূপা এই বেটার গাড়ি দিয়ে যাবে না।
রূপা পেছনে তাকাতে আহনাফ কে দেখে অবাক হলো।
রূপা এখন আহনাফ এর সাথে কোনো কথা বলতে চায় না। দেখাও করতে চায় না। এমনিতেই মন ভালো না দেখা হলে দেখা গেলো উল্টা উল্টা কিছু বলে দেবে৷ এর থেকে ভালো দেখা না হোক।
সাজ্জাদ কিছু বলার আগেই রূপা সাজ্জাদের গাড়িতে উঠে বসলো।
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ একটু আগে তো বললে যাবে না এখন নিজেই উঠে বসে পরলে।’
রূপা বোকার মতো হাসি দিয়ে বললো, ‘ আমি তো মজা করছিলাম।’
সাজ্জাদঃ তোমার সাথে অবশ্য আমার মজা করার সম্পর্ক না।
রূপাঃ আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমরা বেয়াই বেয়াইন।
সাজ্জাদ রূপার কথা শুনে হাসলো।
রূপাঃ আপনি সব সময় হাসতে পছন্দ করেন..?
সাজ্জাদঃ সব সময় না। সবার সামনে ও না। শুধু মাত্র প্রিয় মানুষের সামনে।
রূপাঃ আমি আপনাকে সব সময় কিছু বললে মুচকি হাসতে দেখি৷
সাজ্জাদ রূপার কথার উত্তরে কিছুই বললো না। গাড়ি স্টার্ট দিলো।
রূপা একবার আহনাফ এর দিকে তাকালো।

আহনাফ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে চোখ মুখ লাল আভা ফুটে উঠেছে।
রূপা হাসলো। এখন বুঝো ভালোবাসার মানুষের পাশে অন্য কাউকে দেখলে কেমনটা লাগে…
আমারও এর থেকে বেশি লেগে ছিলো যখন তোমার হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে ছিলো মৌ।

সাজ্জাদ পুরো রাস্তা রূপার সাথে কথা বলেনি রূপাও কিছু বলেনি।

গাড়ি থেকে নেমে রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ‘ স্যার বাসায় আসুন চা খেয়ে যান। ‘
সাজ্জাদ একদম না করলো না। গাড়ি থেকে নেমে রূপা সাথে যেতে রাজি হলো।
রূপা রাগে নিজের হাত নিজেই চেপে ধরেছে। মানবতা দেখাতে গিয়েছে এখন এই বেটা সত্যি চলে আসছে।
আরে ভাই এটা তো কথায় কথা বলেছি ভেতরে আসেন চা খেয়ে যান। তাই বলে তুই সত্যি চলে আসবি।
রূপা কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো রূপার আম্মু।
রূপার সাথে সাজ্জাদ কে দেখেই চিনে ফেললেন উনি।
সাজ্জাদ কে ভেতরে নিয়ে গিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
রূপা ওর আম্মুর এতো আদিখ্যেতা দেখে বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রূপার আব্বু সাজ্জাদের সাথে বসে অনেক ধরনের কথা বললো। এটাও জানলো রূপা এখন সাজ্জাদের অফিসে কাজ করছে।
সাজ্জাদের ব্যাবহার রূপার আব্বুর খুব পছন্দ হয়েছে।
রূপার আম্মু সাজ্জাদের জন্য খাবারের আয়োজন করলো।
রূপা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সাজ্জাদ বসে ওর আব্বুর সাথে কথা বলছে।
রূপার আম্মু ওকে দিয়ে আবার নাস্তা পাঠালেন।
রূপা নাস্তা নিয়ে সাজ্জাদের সামনে আসতেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ রূপা কোথায় ছিলে..? এখানে বসো না।’
রূপা চোখ বড় বড় করে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। এই ছেলের আবার কি হলো..? এই প্রথম সাজ্জাদ রূপাকে “তুমি” বলেছে। আবার এমন ভাবে কথা বলছে জেনো তারা কতো ক্লোজ।

রূপা জোর পূর্বক মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো, ‘ আসলে আমার একটু কাজ আছে। আপনি আব্বুর সাথে কথা বলুন।’
রূপার আম্মু রান্নাঘর থেকে এসে রূপাকে সাজ্জাদের পাশে বসিয়ে দিলো।
রূপা বিরক্ত মুখে ওর আম্মুর দিকে তাকালো।
রূপার আম্মুর এই বাজে স্বভাবটা রূপার একদম পছন্দ না। সকালে আহনাফ এর জন্য কেমন করলো এখন সাজ্জাদের পাশে ওকে বসিয়ে দিলো।

খাবার টেবিলে সাজিয়ে রূপার আম্মু সবাইকে ডেকে নিলো।

সাজ্জাদ খাবার টেবিলে এটা ওটা বার বার রূপার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। রূপা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর রাগে ফুঁসছে।

সাজ্জাদঃ এটা নাও রূপা তোমার ভালো লাগবে।
রূপা রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনি খান না। আমি তো একটা মানুষ এতো খাবার কিভাবে খাবো। প্লেটে আর জায়গায়ও নেই। আর কোথায় নিবো আমি..?
সাজ্জাদঃ এতো কম খাও বলেই দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছো.
রূপাঃ আপনি কি আমাকে কখনো মোটা দেখে ছিলেন..?

রূপার অবস্থা দেখে সাজ্জাদ খুবি মজা পাচ্ছে।

ওদের এইসব কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে রূপার আম্মু।
রূপার জন্য এই ছেলেই পারফেক্ট। কতো কেয়ার করে আমার রূপার। এইসব ভেবে একটা শান্তির হাসি দিয়ে সাজ্জাদের দিকে তাকালো রূপার আম্মু।

সাজ্জাদ যাওয়ার সময় রূপার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’ সাবধানে থেকো। ভালো থেকো।’
রূপা সাজ্জাদের মুখোমুখি হয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি এখান থেকে গেলেই আমি ভালো থাকবো। ‘

সাজ্জাদ যাওয়ার পর থেকে রূপার মা’য়ের মুখে সাজ্জাদের প্রসংশা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে রূপা দরজা বন্ধ করে ইয়ারফোন কানে দিয়ে বারান্দায় চলে এসেছে।

আহনাফ রূপার সাথে কথা বলার জন্য একে পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে।

রূপা অচেনা নাম্বার দেখে ইচ্ছে করেই কল রিসিভ করছে না।

আহনাফ সিদ্ধান্ত নিলো কাল সে সাজ্জাদের অফিসে যাবে। সরাসরি সাজ্জাদ কে রূপার কথা জিজ্ঞেস করবে। আর খুব তারাতারি রূপার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়েও যাবে।
আহনাফ এখন রিধির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হয়ে এসেছে। রিধির দাদাুর কাছে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছে ভদ্রমহিলার ও আহনাফ কে অনেক পছন্দ হয়েছে।
আহনাফ রূপাকে মানিয়েই বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিবে।
কাল থেকে সে রূপার পিছু ছাড়বে না যতক্ষন না রূপা ওর হচ্ছে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here