কুসুম_কাঁটা #পর্ব-২৫

0
496

#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-২৫
টুকটাক রান্নাবান্না রাফাত জানে। ভাত, ডিম, ডাল, মাংস, ভাজি এসব। গত এক মাস ধরে এসব চলছে। মা বাবা একমাস পর ছাড়া পেয়েছেন জেল থেকে। সেই বাসায় অবশ্য ও থাকে না, তবুও সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। মামী জেল থেকে ছাড়া পায় নি। তার বিরুদ্ধে স্ট্রং প্রমাণ আছে। রাফাত নিজেও স্বাক্ষী দিয়েছে। কবে ছাড়া পাবে জানেনা। মা অসুস্থ হয়ে গেছেন। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল নাকি। রাফাত শিলাকে ফোন করে রিকোয়েস্ট করেছিল। শিলা শুনেছে।

রাফাত তিন মাসের ছুটিতে আছে। ম্যানেজমেন্ট থেকে ও’কে মেইল করেছে মেন্টাল হেলথের ট্রিটমেন্ট নিতে। সব মিলিয়ে লাইফ টা পুরোপুরি এলোমেলো। সোসাইটিতে বাবা মায়ের থাকাও মুশকিল। শিগগিরই তাদের ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্য কোথাও শিফট হবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাতে রাফাতের তেমন দু:খবোধ নেই। যে যেমন কর্ম করবে তেমন ই ফল পাবে। তবে ওর এখন অনেক ডিপ্রেসড লাগে। একা একা থাকে, বই পড়ে, সিরিজ দেখে, এক্সারসাইজ করে সময় কাটে, তবুও যেন কাটতে চায় না। মানুষ বলে সৃষ্টিকর্তা দু:সময় দেয় সুসময়ের জন্যই। ঠিক কী ভালো ওর জন্য অপেক্ষা করছে ও জানেনা। তবে এই দু:সময় কাটিয়ে ওঠা বেশ মুশকিল।

অপরিচিত নাম্বার টা দেখে রাফাত অবাক হলো। হাতে গোনা কয়েকজন এই নাম্বার জানে। রাফাত ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি গলায় একজন বলল,

“হ্যালো আপনি কী রাফাত ভাইয়া?”

“জি। আপনি কে?”

“আমাকে চিনবেন না।”

“আচ্ছা নাহয় না চিনলাম। কিন্তু আপনার নাম নেই?”

ওপাশ থেকে জবাব আসতে একটু সময় লাগলো। বলল,

“আমি আকাশী। শ্রাবণ্যর বোন।”

“আমি তো তোমাকে চিনি। তুমি ভালো মেহেদী দিতে পারো।”

আকাশী স্মিত হাসলো। ভদ্রলোক কথা বলছেন পরিচিত ভঙ্গিতে। পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হলে যেমন কথা বলে তেমন। আকাশী বলল,

“ভাইয়া আপনার কিছু জিনিস আমার কাছে আছে?”

“আমার? কী জিনিস? ”

“কিছু কাস্টমাইজড পাঞ্জাবী। ”

রাফাত মনে করার চেষ্টা করলো। ওর স্মৃতিশক্তি তেমন দূর্বল না। বলল,

“আমি অর্ডার করেছিলাম? শিওর?”

“উঁহু। আপু দিয়েছিল।”

“রঙ্গনা?”

“হ্যাঁ। ”

“তাহলে আমাকে কেন দিচ্ছো। ও’কে দাও। ওর হাজবেন্ড পরুক। আমি তো আর ওর হাজবেন্ড না। ”

“পাঞ্জাবী গুলো আপনার মাপের। আপু মিশুক ভাইয়ের জন্য নতুন ডিজাইনের অর্ডার করেছেন। ”

রাফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,

“আচ্ছা। আমি তোমার পেমেন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। পাঞ্জাবী লাগবে না। ”

আকাশী একটু থেমে প্রশ্ন করলো,

“কেন লাগবে না? আপনি আর কখনো বিয়ে করবেন না? তখন পরবেন, তখন নাহয় মিলিয়ে কাস্টমাইজড শাড়িও করে নিবেন।”

রাফাত হেসে ফেলল শব্দ করে। বলল,

“মেয়ে, তুমি তো পাক্কা বিজনেসওম্যান। আচ্ছা যাও, তোমার পাঞ্জাবী পাঠিও। আর যদি বিয়েটিয়ে করি তাহলে তোমার থেকেই শাড়ির ডিজাইন করিয়ে নেব।”

আকাশীও হেসে ফেলল। বলল,

“থ্যাংক ইউ।”

ফোন রাখার দুই মিনিট পর রাফাত আকাশীকে আবারও ফোন করলো। বলল,

“তুমি রুই মাছের কোনো প্রিপারেশন পারো? তাহলে পাঞ্জাবীর সাথে সেটাও পাঠিও। আমি ওটার পেমেন্টও পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

****
রঙ্গনা ভেবেছিল শ্বশুর বাড়িতে এসে খুব অস্বস্তিতে পড়বে। বিয়ে নিয়ে কেউ কেউ হয়তো উদ্ভট কথাবার্তা বলে ফেলবে। কিন্তু শ্বশুর শাশুড়ী ব্যাপার দারুন ভাবে সামলেছে। শাশুড়ী বললেন, রঙ্গনাকে মিশু আগেই পছন্দ করে রাখছিল। ও আরেকটা প্রোমোশনের অপেক্ষায় ছিলো। তারপর বিয়ে করে ফেলবে। জামাইর এমন অবস্থা হলো যে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। তখন মীরা বলল, মা তোমার জামাই যদি মরে যায় তাহলে আফসোস থাকবে। রঙ্গনা আর মিশুকের তাড়াতাড়ি বিয়ে দাও। আমরাও আর দেরি করিনি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। জামাই সুস্থ হইতেছে আর ঘরে নতুন বউ আসতেছে। মিশুকের বড় চাচী বললেন,

“আলহামদুলিল্লাহ, মেয়ে খুব লক্ষী।”

শাশুড়ী গর্ব করে বললেন,

“ও তো জামাই কে রক্তও দিছে। ”

রঙ্গনা অবাক হলো শাশুড়ীর আন্তরিকতায়। ভদ্রমহিলা ওর জন্য মিথ্যে কথা বলেছে! মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, পরিস্থিতি যাই হোক, সময় যতই খারাপ হোক এই মহিলাকে ও চিরদিন মাথায় করে রাখবে।

রঙ্গনা জানেনা যে শাশুড়ীর বলা কথাগুলো অন্য একজনের মাথা থেকে এসেছে।

***
স্বপ্নীল আশায় ছিলো ও’কে অফিস থেকে না করে দিবে। অবশ্য সেরকম ধারণা সবার ছিলো। ওর পারফর্ম্যান্স খারাপ না, কিন্তু সেটা আন্ডাররেটেড। দুই একজন ছাড়া কেউ জানেই না যে গাধার খাটুনি খাটে ও আর ক্রেডিট নেয় অন্যরা। পাশের ডেস্কের দিতি আপা স্বপ্নীল কে বলছে, কর্পোরেট জবে এমনই হবে স্বপ্নীল। যতক্ষন না তুমি শক্ত হবে ততক্ষন এমন ফেস করতে হবে। এসব জায়গায় চলাফেরা, কথাবার্তায় খুব চতুর হতে হয়।

স্বপ্নীল ধরেই নিয়েছে ও এসব জায়গায় উপযুক্ত না। এতো জটিলতা, চতুরতা ও’কে দিয়ে হবে না। একটা মিথ্যে বলতে গেলেও তোতলাতে হয়। কপালে ঘাম জমে।

লাস্ট অফিস মিটিং এ স্বপ্নীল জানতে পারলো ইন্টার্ন দের মধ্যে থেকে যে চারজন কে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ও একজন। শাফি ভাইয়ের টিম থেকে ও একমাত্র লোক যাকে পার্মানেন্ট করা হয়েছে। স্বপ্নীল খবর টা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। স্তব্ধ হলো শাফি ভাইও। তৃষার সঙ্গে তার মাখামাখি ভালোই চলছে। ব্যাপার টা মনে হচ্ছে প্রেম প্রেম পর্যায়ে গেছে। সে এক্সপেক্ট করেছিল, তৃষা পার্মানেন্ট হবে। অবশ্য সেভাবেই গুটি সাজিয়েছিল। তৃষাকে সব কাজের ক্রেডিট দিয়ে ম্যানেজমেন্টের কাছে হাইলাইট করার চেষ্টা করেছিল।

কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার ভাই নরম স্বভাবের। ভীষণ ফ্রেন্ডলিও। অফিসে ফর্মাল ড্রেসে আসে না, টিশার্ট, ট্রাউজার পরে আসেন। কিন্তু তার নজর তীক্ষ্ণ। সে শাফি ভাইকে বললেন,

“শাফি তোমার টিমের ৭০% কাজের ডেটা আগে স্বপ্নীলের ল্যাপটপে তারপর তৃষার ল্যাপটপে যেত। এটার কারণ অবশ্যই নেক্সট উইকে মেইল করে জানাবে। ম্যানেজমেন্ট তোমাকে অন্যচোখে দেখছে কিন্তু। ”

শাফি ভাইয়ের মুখ ছোট হয়ে গেল। সব অকল্পনীয় ব্যাপার শাফি ভাই আর স্বপ্নীলের সাথে ঘটছে।

দিতি আপা, রেবা আপা, হায়াত ভাই, রোজ আপু সবাই স্বপ্নীল কে ওয়েলকাম ট্রিট দিলো। শাহরিয়ার ভাই ও’কে এক বক্স চকলেট আর রজনীগন্ধার বুকে দিয়ে বলল,

“ওয়েলকাম ম্যান, তুমি সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট একজন মানুষ। আশা করি এই অফিসে তোমার পথচলা এখন থেকে স্মুথ হবে। ”

স্বপ্নীলের চোখে পানি এসে গেল। এতো বড় খুশির খবর সবার আগে দাদুকে দিতে ইচ্ছে করলো। দাদু সবসময় ও’কে গাধা বলেন। এইবার ও নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে।

স্বপ্নীল শ্রাবণ্যকে ফোন করলো। খুশির খবর টা দিতে গিয়ে বিশ্রী ভাবে কেঁদেও ফেলল। ভালোলাগায় ভীষণরকম মন আদ্র হলো শ্রাবণ্যরও। কিন্তু ও তো শক্ত। স্বপ্নীল কে সেটা বুঝতে দিবে না। বলল,

“কনগ্রাচুলেশন। কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন আর চাকরি করবেন না। তাহলে? ”

স্বপ্নীল চোখ মুছে বলল, করব।

শ্রাবণ্য হেসে বলল, আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ট্রিট দিতে হবে।

ওই সন্ধ্যায় স্বপ্নীল উপলব্ধি করলো ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্ন আসলে শ্রাবণ্য। যাকে ও কখনো আগে দেখে নি। আল্লাহ সারপ্রাইজ হিসেবে লুকিয়ে রেখেছে।

চলবে….

(বইমেলায় অন্যধারার ৪১-৪৪ নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে কী করিলে বলো পাইবো তোমারে উপন্যাস টি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here