#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-২৬
শিলা ভীষণ খুশি হলেন। চাকরি করতে গিয়ে স্বপ্নীলের নাজেহাল অবস্থা তার চোখে পড়েছে বারবার। কিন্তু বারন করতে পারেন নি। করা যায়ও না অবশ্য। জোর করে হলেও ওর উপর আরেকজনের দায়িত্ব আছে। শ্রাবণ্য ভীষণ ভালো মেয়ে। শিলার মনে হয় শুধু ভালো শব্দ টা দিয়ে শ্রাবণ্যকে বিশেষায়িত করলে কম করা হবে। স্বপ্নীলের সঙ্গে মানিয়ে নেবার ব্যাপার টুকুও ওর দারুন।শিলা জানতেন না যে শ্রাবণ্যকে ওর বাবা বিয়ে দিয়েছেন জোর করে। শুধু শিলা না, এই ব্যাপার টা কেউ ই জানে না। বাড়ির সবাই এই কথাটা যখন জেনেছে সবাই ই মর্মাহত হয়েছে। শিলা মুনসুর সাহেব কে জিজ্ঞেস করেছিল, ভাই মেয়ের বিয়েতে মত আছে তো। মুনসুর জবাবে বলেছেন,
“আছে। মেয়ে ভীষণ রক্ষনশীল। ওর ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত ই সব। ”
শিলা মেনে নিয়েছে। এই যুগে এসব ব্যাপার যদিও খুব কম ই দেখা যায়। তবুও ব্যতিক্রম তো দুয়েকজন থাকেই। শ্রাবণ্যকে সেই ব্যতিক্রম দলের একজন ভেবেছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর আসল ঘটনা জানতে পেরেছিল। শিলা শ্রাবণ্য কে জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি কী চাও শ্রাবণ্য?”
শ্রাবণ্য কঠিন গলায় বলেছিল, আমার চাওয়া পাওয়ার আসলে কোনো দাম ই তো নেই।
“বাবা মায়ের কাছে না থাকলেও এখানে আছে। তুমি এখানে ঠিক সেরকম স্বাধীনতা পাবে, যেটা তুলি আর রঙ্গনা পেয়েছে। তবে আমি চাই স্বপ্নীল কে চিনতে জানতে তুমি সময় নাও। অন্তত ছয়মাস সময় নাও। স্বপ্নীল বুঝদার ছেলে। তুমি না চাইলে ও লিমিট ক্রস করবে না কখনো। আমি তোমাকে সময় দিলাম। ”
শ্রাবণ্য তখন বলেছিল,
“আমাকে আপনি গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়া অবধি সময় দিন। ”
শিলা রাজী হয়েছে। দুজনের এই কথোপকথন আর কেউ জানেনা। শিলা লক্ষ্য করেছে শ্রাবণ্য দিন দিন কিভাবে স্বপ্নীলের একজন এই বাড়ির একজন হয়ে উঠেছে। আন্টি থেকে আম্মু সম্বোধনে নামতেও বেশী সময় লাগে নি। স্বপ্নীলের পাশে আছে ছায়া হয়ে।
শিলা মনে মনে ভাবেন, স্বপ্নীলের এই সাফল্যের কৃতিত্ব শুধু শ্রাবণ্য’র ই।
***
কথা ছিলো মিশুক দুই তিন দিন থেকে চলে যাবে। কিন্তু সেখানে চারদিন হয়ে গেছে এখনো যাওয়ার নাম করছে না। ওদিকে আপু দুলাভাই এর সঙ্গে একা আছে। দুলাভাই কে নিয়ে এখন এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছে। বাসাটা হসপিটালের কাছে বলে সেখানে ওঠা। রঙ্গনা মিশুক কে বলল,
“তুমি ঢাকায় কবে যাবে?”
মিশুক মাত্র ঘরে এসেছে। রঙ্গনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে। চুলে ব্রাশ করছে। বিয়ের পর বোধহয় সাজগোজের ব্যাপারে একটু সচেতন হয়েছে। প্রায় ই সেজেগুজে থাকে।
মিশুক ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“আমার বাড়ি থেকে আমাকেই বের করার প্ল্যান করছ?”
“তোমার বাড়ি? এটা তো বাবার বাড়ি।”
মিশুকের ভালো লাগলো, রঙ্গনার মুখে বাবা শব্দটা শুনে। বাবা, মাও অবশ্য রঙ্গনা কে মাথায় করে রাখছে। রাখার মতোই অবশ্য।
মিশুক বলল,
“বাই দ্য ওয়ে, আমাদের কিন্তু ঢাকায় ফ্ল্যাট নিতে হবে? কোথায় নিলে ভালো হবে তোমার জন্য? ”
“কেন? রঙতুলিতে সমস্যা কী?”
“ব্যাপার টা ঘর জামাই টাইপ হয়ে যায় না?”
“তাতে কী? আমি এখন রঙতুলিতে থাকব। ”
মিশুক মাথা নেড়ে বলল,
“আচ্ছা। ”
“তবে মাঝেমধ্যে এখানে এসেও থাকতে পারি। এই বাড়িটাও ভালো লাগছে। ”
মিশুক হাসলো। বলল,
“আমারও শাশুড়ী পরিবারের সঙ্গে থাকতে আপত্তি নেই। তারাও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। ”
রঙ্গনা বাঁকা চোখে একবার মিশুক কে দেখলো।
বিছানায় দুজন দুইপাশে শুয়ে পড়লো। রঙ্গনা হঠাৎ বলল,
“আমার একটা কথা আছে। ”
মিশুক ওর দিকে না তাকিয়েই বলল,
“বলো। ”
“ব্যাপার টা আরও আগেই বলা উচিত ছিলো…
মিশুক থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এক মিনিট! বাই এনি চান্স তুমি কী বলতে চাইছ, আমাকে মেনে নিতে পারবে না। তোমার মনে শুধু ওই লোক টাই আছে। কী যেন নাম…
রঙ্গনা স্থির চোখে কিছু সময় দেখে বলল,
“হ্যাঁ। ”
“ইশ! ভীষণ সস্তা ডায়লগ। আর এসব আমাকে বলেও লাভ নেই। ”
“কেন?”
“কেন মানে? আমি তো জানি কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়।”
রঙ্গনা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো। মিশুক একটু এগুতে গেলে রঙ্গনা শাসিয়ে বলল,
“একদম না। আমার সীমানায় আসবে না। ”
মিশুক হেসে ফেলল। ও সীমানা অতিক্রম করার আগেই নিচে হৈচৈ এর শব্দ হলো। দুজনেই দ্রুত নিচে নেমে এলো।
নিচে ভয়াবহ এক কান্ড ঘটে গেছে। স্বপ্নীলের আরও আগে আসার কথা ছিলো। ব্যস্ততার অজুহাতে আসে নি, সারপ্রাইজ দিবে শ্রাবণ্য কে। আজ এসে ফোন করেছে শ্রাবণ্য কে। শ্রাবণ্য কয়েক সিড়ি নামতেই স্বপ্নীল দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। বেচারা এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো যে শ্রাবণ্যসহ পড়ে গেল। শব্দ পেয়ে বাড়ির সবাই ছুটে এসেছে। মিশুকের মা শ্রাবণ্য কে হাত ধরে ওঠাতে ওঠাতে বলল,
“আহারে! ব্যথা পাইছ?”
শ্রাবণ্য লজ্জায় তাকাতে পারলো না। স্বপ্নীল নিজেও নাকে ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু চোরের মতো এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। মিশুক রঙ্গনাকে ফিসফিস করে বলল,
“দেখো, স্বপ্নীল কয়েকদিন বউকে না দেখে অস্থির হয়ে গেছে! তোমার ভাই, দেখলে মনে হয় না।”
রঙ্গনা মিশুক কে কিলার টাইপ লুক দিয়ে স্বপ্নীল কে বলল,
“তুই এই কাজ টাও ঠিক করে করতে পারলি না! জড়িয়ে ধরার বদলে কী লাফিয়ে ওর গায়ে ওঠার চেষ্টা করেছিস। ”
স্বপ্নীল মাথা আরও নিচু করে ফেলেছে। মিশুক বলল,
“স্বপ্নীল কে এই ব্যাপারে আমি বুঝিয়ে বলব। তুমি যাও। ”
মন্টি, রিন্টিও উঠে এসেছে। ওরা শ্রাবণ্যর ঘরে ছিলো। ওরা বলল,
“মনি আমরা তোমার ঘরে ঘুমাই। মামা যদি রাতে আবার লাফিয়ে পড়ে। ”
রঙ্গনা দুজন কে কঠিন এক ধমক দিতে যাবে তখনই মিশুক হেসে ফেলল।
***
রাফাত প্লেটে আরও ভাত নিলো। সঙ্গে ঝোলে মাখা এক টুকরো রুই মাছের পেটি। খেতে খেতে বলল,
“আকাশী, তুমি চাইলে ভাতের হোটেল দিতে পারো। চমৎকার রান্না কিন্তু তোমার। ”
আকাশী স্মিত হাসলো। ও এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘরটা দেখছে। দুই রুমের ফ্ল্যাটে তেমন আসবাব নেই। কিছু বইপত্র, দেয়ালে হ্যাংগার ঝুলিয়ে জামাকাপড় রাখা। আর ছোট টেবিলে প্রয়োজনীয় জিনিস।
“আপনি এখানে একা থাকেন?”
“হ্যাঁ। ”
“ভয় লাগে না?”
“হ্যাঁ লাগে। রাতে দেখলাম ভীষণ মোটা একটা টিকটিকি লাফিয়ে গায়ে পড়লো। ভয়ে এক চিৎকার দিলাম। ”
আকাশী হেসে ফেলল। রাফাত বলল,
“তুমি রান্না কার থেকে শিখেছ?”
“কারোর থেকে না। করতে করতে শিখেছি। ”
রাফাত খাওয়া বন্ধ করে অবাক চোখে আকাশীকে দেখে বলল,
“স্ট্রেঞ্জ! এতো কঠিন বিষয় একা একা শিখেছ! তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট। ”
আকাশীর বুকে একটা ধাক্কার মতো লাগলো। শুভর সঙ্গে থাকার সময় প্রায় ই একটা কথা শুনতো, রান্না এ আর এমন কী! ভাব করছ যেন হিল্লিদিল্লি জয় করে ফেলছ! আকাশীর ভীষণ মন খারাপ হতো। ও রাঁধতে পারে না প্রথমে সেটা শুনেও শুভ বলেছিল, এতো সহজ জিনিস টাও পারো না। বাড়িতে মোমের পুতুল হয়ে ছিলে! আকাশী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মানুষে মানুষে কত তফাৎ!
চলবে….
(ভীষণ ব্যস্ততা যাচ্ছে তাই পর্ব ছোট হলো। অন্যধারার স্টলে পাওয়া যাবে কী করিলে বলো পাইবো তোমারে উপন্যাস টি৷ স্টল নং৪১-৪৪)