#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-৩৪ ও ৩৫
রঙ্গনার এই ঘুরতে যাবার প্ল্যানে সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহন করলো। কোথায় যাবে সেটা কাউকে জানানো হলো না। ওটাকে সারপ্রাইজ প্ল্যান হিসেবে সিক্রেট রাখা হলো। একেকজন একেক রকম ভেবে নিলো। তৌহিদ ভাবলো কক্সবাজার হবে হয়তো। এখন যে আবহাওয়া তাতে কক্সবাজার বেটার প্লেস। তাছাড়া তুলির ভীষণ পছন্দের জায়গা। ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে তুলি আদুরে গলায় তৌহিদ কে বলেছিল,
“এই আমরা এখানে থাকতে পারি না, একটা বাসা ভাড়া করে!”
তৌহিদ হো হো করে হেসে উঠে বলেছিল, চাকরি বাকরি বাদ দিয়ে এখানে থেকে কী করব? বীচে ঝালমুড়ি বেঁচব নাকি ডাব বেঁচব!
তুলি বেচারি অভিমানে আর কিছু বললও না। ততদিনে অবশ্য ও টের পেয়ে গেছিল যে লোকটা বোরিং এর চেয়েও কঠিন কিছু।
এদিকে স্বপ্নীল ভেবেছে পাহাড় টাইপ কোথাও যাবে। অনলাইনে বেশ কিছু জুতাও দেখেশুনে কিনলো। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে শ্রাবণ্যকে সেই বিশেষ কথাটা বলবে! দারুন মোমেন্ট ক্রিয়েট হবে। একটা জাপানিজ ফিল্মে দেখেছিল।
অন্যরা অবশ্য এমন কিছু এক্সপেক্ট করে নি। তবুও তাদের ধারনায় ছিলো সুন্দর কোনো জায়গা হবে। কিন্তু সকলের ধারণা পাল্টে গেল নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে।
রঙ্গনা সবাইকে নিয়ে একটা গ্রামের দিকে গেল। মূল শহর থেকে বেশ দূরে। অনেকের ই মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থা যাচ্ছেতাই! তৌহিদ রেগে গিয়ে বলল,
“এই মাথাপাগলা মেয়েটার কথায় আসাই ভুল হয়েছে। ”
তুলি নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“তুমি ফিরে যাও। আমি খোঁজ নিয়ে আসি যে লোকাল ট্রেন ক’টায় যায়। ”
তৌহিদ হা করে তাকিয়ে রইলো। শক্ত কিছু কথা মুখ দিয়ে বের করবার আগেই তুলি অন্যদিকে গেল।
ওরা এখন যে বাজারে আছে সেই বাজারের নাম মথুরাপুর। এখান থেকেই গাড়িতে উঠবে। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি এসে যাবে। বাকীরা কেউই তেমন বিচলিত না। দুপুরের সময় দোকানপাট বন্ধ বলে বাজারে লোকজন কম। সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে। তৌহিদ একটু বেশি উত্তেজিত। তুলির কথায় সে রীতিমতো দু:খী। শাশুড়ীর কাছে এসে নালিশ করেছে। শিলা হাসিমুখে নালিশ শুনলো, কিছু বলল না। তৌহিদ এই ব্যাপারেও একটু দু:খ পেল অবশ্য। মায়ের উচিত ছিলো তুলিকে ডেকে একটু কঠিন গলায় কিছু কথা বলা। তুলিকে দেখা গেল রঙ্গনার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছে।
মিশুক কে দেখেও তৌহিদের মেজাজ খারাপ হলো। এই ব্যটা সবকিছুতে বউকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। অবশ্য দিবে না কেন নতুন বউ বলে কথা! তাই বলে বন, জঙ্গলে নিয়ে এলো সবাই কে সেটা নিয়েও কিছু বলবে না! স্ট্রেঞ্জ! অবশ্য ও নিজেও মনে হয় আগে থেকে জানতো। ও’কে তো একটুও অধৈর্য্য লাগছে না! রিন্টি, মন্টির সাথে খুব হাসছে৷
দেখা গেল তৌহিদের রাগ ঘুরেঘুরে সবার উপরেই পড়ছে। দাদী সুন্দর করে সেজেগুজে আসছে। একটা ম্যাজেন্টা রঙের জামদানী পরনে। এই শাড়িটা পরে রংঢং দেখতেও ওর বিরক্ত লাগছে। এই বুড়াবুড়ির তো আসার দরকার ই ছিলো না!
দাদু একজন লোক পেয়েছেন৷ তার সঙ্গে গল্প জুড়েছেন। ব্রিটিশ আমলের গল্প শুরু করেছেন, সময় পেলে সম্ভবত সাতচল্লিশ এর দেশভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গনঅভুত্থান সবকিছু নিয়েই আলোচনা করবেন।
তৌহিদ ছাড়া আরেকজন মানুষ একদম ভেঙেচুরে মুষড়ে পড়েছে। সেটা হলো স্বপ্নীল। ওর মেজাজের প্রথম নমুনা দেখালো আকাশীর সঙ্গে। আকাশী শ্রাবণ্যর পাশে বসে ছিলো। ওখানে গিয়ে বলল,
“আকাশী তুমি ওখান থেকে ওঠো। আমি বসব। ”
আকাশী হেসে ফেলল। শ্রাবণ্য অপ্রস্তুত হলো। আকাশী বলল,
“আচ্ছা আপনি বসুন। ”
রেহানাও এসেছে। তারও খারাপ লাগছে। গ্রাম কী দেখার মতো কিছু! সেই তো কিছু গাছপালা, ফ্যা ফ্যা বাতাসের শব্দ! তবে রেহানার এখান থেকে ফিরে যাবার ইচ্ছে। সে বাহানা খুঁজতেছে। ফাঁক পেয়ে এখান থেকে কেটে পড়বে।
গাড়ি এলো কিছুক্ষনের মধ্যেই। গাড়ি বলতে অটো টাইপের, কিন্তু সাইজে বড়। তিনটা গাড়ি সবাইকে নিয়ে রওনা হলো পাথর বাড়ির উদ্দেশ্যে। এখানকার বিখ্যাত জায়গা পাথর বাড়ি। রঙ্গনা এর আগে একবার এসেছিল ঘুরতে, জায়গাটা এতো পছন্দ হয়েছিল!
***
সত্যি সত্যি ই পাথর বাড়ি সবার পছন্দ হলো। সামনে গাছপালায় ঘেরা, মাঝখানে বাড়ি। পেছনে বড় পুকুর। বাড়ির মালিক অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ফ্যামিলি সহ ছুটি কাটাতে আসবেন বলে বন জঙ্গলে অত্যন্ত যত্ন করে বাড়ি বানিয়েছিলেন। কিন্তু একবারও সুযোগ হয় নি। এখন ট্যুরিস্ট রাই আসে তাই।
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই নিজেকে গুছিয়ে নিলো। দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল হয়ে গেল। খাবার দাবারের আয়োজন সাদামাটা। পাবদা মাছ বাটা মশলায় পাতলা ঝোলে রান্না, চিংড়ি ভাপা, আলুভাজি, পাতলা ডাল। খাবারের আয়োজন দেখে নাক শিটকানো তৌহিদ প্লেট উঁচু করে ভাত নিলো দু’বার।
***
একদিন পরেই সবার এখানে ভালো লাগতে শুরু করলো। স্বপ্নীলেরও মন ভালো হয়ে গেল। এভাবে এতো ভালো করে গ্রামীণ সৌন্দর্য দেখা প্রথমবার। ওদের গ্রামে কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। নানুর বাড়িও শহরের দিকে ছিলো। তৌহিদ সবকিছু তে বিরক্ত ভাব প্রকাশ করলেও সবচেয়ে বেশি উপভোগ সে করছে। পুকুরে গোসল করছে, বড়শি দিয়ে মাছ ধরার আয়োজন করছে। গোটা সাতেক পুঁটি মাছ ধরে সেগুলো ভাজার আয়োজন করলো।
রঙ্গনা এখানে এসে একদম ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছে। মিশুক বলল,
“সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এসে শেষমেস তুমি নিজেই দেখি শুয়ে, ঘুমিয়ে কাটাচ্ছ? ব্যাপার কী বলো তো? ”
রঙ্গনা নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“কোনো ব্যাপার নেই। আমি এখানে এর আগেও এসেছি। আলাদা করে তাই কিছুই মুগ্ধ করছে না। ”
মিশুক বুঝলো রঙ্গনার মাথায় অন্য কোনো প্ল্যান চলছে। সবাইকে এক করে নিয়ে আসার পেছনে নিশ্চয়ই অন্য উদ্দেশ্য আছে। ওর বাবা, মা, আপু আজ আসবে। এরপর আর কেউ বাকী আছে কিনা কে জানে!
মিশুক কে গভীর মনোযোগী দেখে রঙ্গনা বলল,
“তুমি কী ভাবছ? আমার মাথায় অন্য প্ল্যান আছে? আরে না, এমনিই সবাইকে ঘুরাতে ইচ্ছে করলো। পিকনিক, পিকনিক ভাইব দরকার ছিলো। পশ কোনো জায়গায় এমন ভাব পাওয়া যেত না। ”
মিশুক হাসলো। তবে রঙ্গনার কথা সত্যি। গাছপালা, মাটির গন্ধে যে স্নিগ্ধতা আছে সেটা পাহাড়, সমুদ্রে গেলে পাওয়া যেত না।
রেহানার একদিন যেতেই শিলাকে বলল,
“আমাকে ফিরতে হবে, বাড়িতে হাজার টা ঝামেলা। তার উপর শিউলির শরীরও ভালো না। ”
শিলা মাথা নেড়ে হাসিমুখে সায় দিলেন। এতদূরের পথ একা যেতে অস্বস্তি হচ্ছিলো বলে আকাশীকে নিয়ে যেতে চাইলেন। আকাশী স্বাভাবিক গলায় বলল,
“আমিও এখানে বেড়াতে এসেছি মা। আমি যাব না। ”
রেহানা রাগ দেখাতে পারলেন না। অগত্যা একাই রওনা হয়ে গেল যাবার জন্য।
***
রাতে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন হলো। সেই সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা। রঙ্গনা হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই?”
সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে বসেছিল। রঙ্গনার বলার ধরনে ওর দিকে তাকালো। দাদু বললেন,
“কোনো খারাপ সংবাদ হলে চুপচাপ বসে পড়। এখন না।”
তৌহিদ বলল,
“ওয়াও রঙ্গনা, তোমাকে কেমন লিডার লিডার লাগছে। হাতে একটা মাইক থাকলে ভালো হতো। ”
রঙ্গনা বলল,
“পরের বছর এই সময় টায় বুবু আমাদের সঙ্গে থাকবে না। রিন্টি, মন্টিও না। এই সময় টা আমাদের খুব ই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই বুবু যেটুকু সময় আমাদের সঙ্গে আছে আনন্দে থাকুক। ”
সবাই সায় দিলো। রিন্টি মাঝখানে বলল,
“আমরা কিন্তু যাব না। আমরা মনির সঙ্গে থাকব। প্লেনে চড়ার ইচ্ছা আমাদের আর নাই। তাছাড়া আমার দাঁত নেই, এই অবস্থায় আমি প্লেনে উঠব না। ”
শিলা রিন্টির গাল টিপে দিলো মিষ্টি হেসে।
রঙ্গনা বলল,
“আজ আমরা সবাই একটা করে সত্যি স্বীকার করব। যার যেটা মনে আছে, কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না। ”
বাকীরা কেউই প্রথমে বুঝতে পারছিল না। রঙ্গনা ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলল। ইন্টেরেস্টিং খেলা ভেবে কেউ কেউ রাজী হলো। প্রথমে শুরু হলো শিলাকে দিয়ে। লটারিতে প্রথম নাম টা তার উঠলো। শিলা একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে বলল,
“আমি নিজের ব্যাপারে একটা সত্যি কথা বলতে চাই। আমি আসলে প্রচন্ডরকম ভীতু মানুষ। সবাই ভাবে একটা ভারী চাকরি করছি, একহাতে সংসার চালাচ্ছি আমি ভীষণ সাহসী। আসলে তা নয়। চাকরি আমি করছি ঠিকই, ওখানেও অনেক মানুষ আছে বলে টিকে আছি। তেমনি সংসারেও, বাবা, মা না থাকলে আমার আসলে কিছুই হতো না। ”
সবাই খুবই উচ্ছ্বসিত হলো। ঠিকঠাক গোপন কথা বলে মনে না হলেও মন খুলে প্রশংসার ধরন পছন্দ হলো। শিলা আবারও বললেন,
“আমি আরও একটা কথা বলতে চাই। কথাটা আমার সন্তানদের নিয়ে। তুলনামূলক ভাবে আমি স্বপ্নীল কে বেশী ভালোবেসেছি। এর জন্য যেন আমার মেয়েরা আমাকে ক্ষমার চোখে দেখে। ”
এবারও সবাই মুগ্ধ হলো। রঙ্গনা বলল,
“মা আমরা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। সবসময়ই। ”
এইবারে খেলার ধরন টা সবাই বুঝলো। পরের বার নাম উঠলো মিমি আপুর। তিনি তার কলেজের এক ক্রাশের ঘটনা বলল। ব্যাপারটায় সবাই খুব মজা পেল।
পরেরবার নাম উঠলো তৌহিদের। এতক্ষন বেচারা অপেক্ষায় ছিলো। বাকীরা সবাই বসে কথা বললেও সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার আসলে তুলিকে বলার কিছু নাই। তুলি তো সব ই জানে, আমি ও’কে কতোটা ভালোবাসি। আমি বলতে চাই রঙ্গনাকে। ”
মিশুক জিজ্ঞাসু চোখে রঙ্গনার দিকে একবার তাকালো। রঙ্গনা স্বাভাবিক ই আছে। বলল,
“বলে ফেলুন। আপনি যাই বলেন আমি আজ ম্যুড অফ করব না।”
তৌহিদ বেশ খুশি খুশি গলায় বলল,
“আমার আগেই মনে হয়েছিল রঙ্গনার বিয়েতে ঝামেলা হবে। আর ও পঁচা শামুকে পা কাটবে। ”
ভরা মজলিশে হঠাৎই যেন পারমাণবিক বো*মা বিস্ফোরণ ঘটলো। সবার আগে মিমি আপু জিজ্ঞেস করলো,
“এটা আপনার কেমন ধরনের কথা? আপনি কী মূর্খ নাকি গবেট?”
মিশুক থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আপু ওনাকে কথা শেষ করতে দাও। ”
এরপর তৌহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি বলুন। ‘
তৌহিদের কোনো ভাবান্তর হলো না। বরং কথাটা বলে উনি ভীষণ খুশি যেন। ঠোঁট উল্টে বলল,
“আমার মনে এটাই ছিলো। হতে পারে কথাটা তিতা টাইপ… বাট আই এম নট সরি ফর দ্যাট। ”
মিমি আপু তেড়ে উঠলেন রীতিমতো। রঙ্গনা থামিয়ে দিয়ে বলল,
“থাক বাদ দাও। এটা তো খেলাই। ”
দাদু ভীষণ রেগে গেছেন। তিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তৌহিদের দিকে। দাদী ফিসফিস করে শিলাকে বললেন,
“কতো বড় একটা মন্দ কথা বলল শ*য়তান টা। কিছু বলো তুমি। ”
“আপাতত থাক মা। ও সম্ভবত চাইছে ইস্যু ক্রিয়েট করতে। ও এখানে এসেই ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। ”
রঙ্গনা এতক্ষণে মুখ খুলল। বলল,
“আমি ওনার কথায় কিছু মনে করিনি। কারণ আজ আমার ম্যুড অনেক ভালো। ”
স্বপ্নীল ক্ষেপে উঠেছিল। শ্রাবণ্য ওর হাত খামচে ধরে বলল,
“তোমার রাগ সামলে রাখো। যখন তোমার পালা আসবে তখন ওনাকে একটা খারাপ কথা শুনিয়ে দিলেই তো হবে!”
আকাশী বসেছিল তুলির পাশে। তুলি নিশ্চুপ, তবুও অপরাধবোধের ছায়া ফুটে উঠেছে। আকাশী চোখ নামিয়ে নিলো, এই সিচুয়েশন টা ও বুঝতে পারলো।
পরিস্থিতি হাল্কা হলো। পরের নামটা উঠলো আকাশীর। আকাশী বোকার মতো কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
“আমার আসলে ওভাবে বলার কিছু নেই। ”
রঙ্গনা বলল, সেটা শুনছি না। বলো বলো।
মিশুক বলল, তুমি একটা দারুণ হাসির কিছু বলো। আমরা অনেকক্ষন হাসি।
আকাশী অপ্রস্তুত গলায় বলল,
“কী বলব খুঁজে পাচ্ছি না। ”
রঙ্গনা বলল,
” আচ্ছা তাহলে তুমি বাদ। তুমি আজ ডিনারে একটা পরোটা কম পাবে। ”
সবাই হাসলো। শিলা বললেন,
“তোমাদের খেলার নিয়মবহির্ভুত হবে কিনা জানিনা, তবে আমি আকাশীকে নিয়ে একটা কথা বলতে চাই। এই মেয়েটা ভীষণ ভালো। ওর এই অদম্য জেদ সবসময় অটুট থাকুক। ”
রঙ্গনা বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে ওর পরোটা কাটা হবে না। এবার তুমি বসো। ”
পরের নামটা রঙ্গনার। সবাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত। এবার বুঝি আরেকবার বি*স্ফোরন ঘটবে। রঙ্গনা নিজেও ভীষণ উত্তেজিত। বলল,
“আমি দুটো কথা বলব। প্রথম টা দাদুকে, দাদু তোমার পছন্দ আসলের টপ লেভেলের। আমার আর স্বপ্ন দুজনের ক্ষেত্রেই। ”
দাদুই সবার আগে হো হো করে হাসলেন।
“আর দ্বিতীয় কথাটা অন্য একজন কে। ”
মিশুক রঙ্গনার দিকে হাসিমুখে তাকালো। সবাই জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে রঙ্গনার দিকে। রঙ্গনা লাজুক গলায় বলল,
“একজন কে দেখে মনে হয়েছিল প্রথম দর্শনে, বিয়েটা তার সঙ্গে হলে খারাপ হবে না। বোধহয় সেই কারণেই বিয়েটা তার সঙ্গে হয়েছে। ”
মিশুক নিজেও লজ্জা পেল। শ্রাবণ্য বলল,
“ভাইয়া, আমাদের সবাইকে ট্রিট দিতে হবে। ”
মিশুকের সত্যিই ভীষণ লজ্জা লাগছিল। বড়রাও আছেন। তৌহিদের কপাল কুঁচকে আছে। ও আসলে মিশুক কে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী কেন ভাবছে সেটা অন্যরা বুঝতে পারলো না।
***
তুলি মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য উঠে গিয়েছিল। ফিরে যখন আসলো তখন হাতে একটা কাগজ টাইপ ছিলো। ওর নাম ওঠার আগেই হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি আমার কথা টা বলতে চাই। ”
ওর মুখ থমথমে। সবাই তাকিয়ে আছে জিজ্ঞাসু চোখে। শান্ত, মিষ্টি তুলিকে তেমন রাগতে দেখা যায় না। আজ কী ও রেগে আছে! নাকি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল। ”
তুলি বলল,
“ব্যাপার টা হয়তো সবার কাছে ধাক্কার মতো মনে হবে। তবে আমার মনে হলো এটাই উপযুক্ত সময় আমার মনে যা চলছে সেগুলো বলার জন্য। ”
তৌহিদ বলল,
“তোমাকে এমন কেন লাগছে? কী এমন বলতে চাও?”
“একটু বেশী সিরিয়াস লাগছে বোধহয়! কারণ আমি আজ বেশী ই সিরিয়াস। ”
দাদু কোমল গলায় ডাকলেন।
“তুলি!”
তুলি নরম গলায় বলল,
“সরি দাদু, এই সিদ্ধান্ত টা আমি ভেবেচিন্তে নিয়েছি। তোমাদের কারো মতামত নেই নি, নেয়া উচিত ছিলো বোধহয়। ”
উপস্থিত সকলে তাকিয়ে আছে। বুক ঢিপঢিপ করছে তৌহিদেরও। কী বলতে চায় তুলি।
তুলি বড় করে নি:শ্বাস ফেলে বলল,
“আমি রিন্টি, মন্টির বাবার সঙ্গে কানাডা যেতে চাই না। ”
তৌহিদ আর্তচিৎকার করে উঠে বলল,
“হোয়াট! ফাই*জলামি পাইছ!….
তুলি গম্ভীর গলায় বলল,
“লেট মি ফিনিশ, আমি শুধু কানাডা যেতে চাই না সেটা ছাড়াও আরও কিছু কথা আছে। ”
“আর কী বলবা তুমি! তুমি যা বলবা তাই হবে? কত্তো ঝামেলার পর সব ম্যানেজ হইছে.. আর এখন এসব বলতেছ! ”
শিলা ধমকের সুরে বলল,
“ও’কে কথা বলতে দাও। ও বলুক আগে, তারপর তোমার কথাও শুনব।”
তুলি বলল,
“গত কয়েক বছরে দেশের বাইরে যাবার যে জটিলতা গুলো ছিলো সেগুলো আমার ই তৈরী। দাদু জানতেন সেকথা। মায়েরও বুঝে ফেলবার কথা। আমি চাই নি মেয়েদের নিয়ে তোমার কাছে যেতে। তুমি খারাপ মানুষ বোধহয় না। তবে ভীষণ ডমিনেটিং। আমি আসলে এই কয় বছরে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর না… আমি বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছি। শুধু বিবাহ বিচ্ছেদ ই। বাকী সব ঠিক থাকবে। মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ, ওদের ব্যাপারে মিউচুয়ালি সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার সব ঠিক থাকবে। শুধু আমি মুক্তি চাই। আমি সত্যিই ক্লান্ত। ”
তৌহিদ অপলক তাকিয়ে আছে। মুখটা রঙহীন। প্রবল ব্যথায় যেমন মুখ হয় তেমন। তুলি পেপার টা এগিয়ে দিলো। আগে থেকেই তৈরী হয়ে এসেছে।
চলবে
(আরেকটু সময় দিন। আজ শেষ হলো না দু:খিত।)