#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-৭
শ্রাবণ্য ডিপার্টমেন্টের সামনে আকাশী কে দেখে উল্টো পথে হাটা শুরু করলো। আকাশী পিছু পিছু ছুটলো। দৌড়ে গিয়ে শ্রাবণ্যর পথ আটকালো। ও কিছু বলার আগেই শ্রাবণ্য বলল,
“আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না। ”
আকাশী অনুনয় করে বলল,
“পাঁচ টা মিনিট সময় দে আমাকে বনু। পাঁচ মিনিটের বেশী লাগবে না।”
শ্রাবণ্য এদিক ওদিক তাকালো। এমনিতেই ওর বিয়ে নিয়ে অনেক লোক নতুন গসিপের টপিক পেয়ে গেছে। ও বলল,
“এখান থেকে চল। এখানে আর নাটক না হোক। ”
ওরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে খানিক দূরের রেস্টুরেন্টে বসলো। এখন সময় টা দুপুরের খাবার সময় নয়। আকাশী বলল,
“কিছু খা। তোর মুখ টা শুকনো লাগছে। সারাদিনে কিছু খাস নি?”
শ্রাবণ্য মেঘস্বরে বলল,
“ঢং করিস না আপু। তুই কেন আসছিস বল তো!”
আকাশীর খারাপ লাগলো না। ওর কারণে শ্রাবণ্যর জীবন টা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। বাবা ও’কে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন সেটা শ্রাবণ্যকে দেন নি। উল্টো সার্বক্ষণিক লোক ছিলো ওকে দেখার জন্য। শ্রাবণ্য সেটা প্রথম দিকে টের পায় নি। একদিন আফরিনের সঙ্গে নিউমার্কেট গেল, দশটা দোকান ঘুরে ওড়না, পায়েল, ক্লিপ কিনলো। সেদিন ই বাবা ফোন করে খোঁজ নিলেন। কথায় কথায় বললেন,
“তোমার কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। দোকানে দোকানে হাটা না। জামাকাপড় সহ বাদ বাকী সব জিনিস তোমার মা কিনে দিবেন।”
শ্রাবণ্যর উচিত ছিলো সেদিনের পর সতর্ক হওয়া। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নিজেকে নির্বোধ প্রমাণ করার কোনো দরকার ছিলো না।
আকাশী গভীর মমতা নিয়ে ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। নাকে সাদা পাথরের দুল টার কারনে চেহারার ধরন টা একটু অন্যরকম লাগলেও আর কিছু বদলায় নি। বলল,
“কেমন আছিস বনু?”
শ্রাবণ্য তাকিয়ে রইলো। আকাশী এই প্রশ্ন টা কেন করলো! ও কতটুকু খারাপ আছে সেটা জানার জন্য! নতুন পরিবেশ, নতুন কিছু মানুষ হলেও ও তো খারাপ নেই। তবুও বলল,
“আমার ভালো থাকার খবর কারোর রাখার দরকার নেই। সবাই নিজের মতো ভালো থাকুক। ”
আকাশী অতি সন্ত:র্পনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ও কতটুকু ভালো আছে সেটা তো কেবল ও জানে। শুভর ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে দুদিন। এর মধ্যে একবারও শুভ ফোন করে নি। আকাশী ফোন করে মিনা ভাবীর কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছে শুভর সব ঠিকঠাক ই চলছে। চা করে খাচ্ছে সকাল বিকাল। গতকাল রাতে বেহায়ার মতন মিনা ভাবীর কাছে ভাত খেতে চলল।
আকাশী নিজের কথা শ্রাবণ্য কে বলল না। ও নিজের চেয়ার টা এগিয়ে শ্রাবণ্যর কাছাকাছি বসে ও’কে জড়িয়ে ধরলো। শ্রাবণ্য বোনের এই আদরটুকু অস্বীকার করলো না, নিজে থেকে আকাশীকেও জড়িয়ে ধরলো না।
***
স্বপ্নীল একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের অফার পেয়েছে। ছয়মাসের ইন্টার্নিশিপ। এর আগেও কয়েকটা কোম্পানির অফার ছেড়েছে। ওর আবার এসবে ভয় হয়। এসব জায়গায় একটু বেশি স্মার্ট লোকজন থাকে। তাদের সামনে গুছিয়ে কথা বার্তা না বলতে পারলে আবার প্র্যাস্টিজ থাকবে না৷
রঙ্গনা শসা চিবুতে চিবুতে বলল,
“তোর কী প্ল্যান? মায়ের হাতে খেয়ে বউয়ের কোলে শুয়ে পড়ার?”
স্বপ্নীলের মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে রঙ্গনার উপর কঠিন রাগ করতে। কিন্তু সেটা পারে না। কারণ ওর কঠিন রাগ হচ্ছে খানিকক্ষণ ঘো ঘো শব্দ করে নিজের চুল টানা, এটা ওটা ছুড়ে ফেলা। আর শেষকালে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলা। তবুও আজ স্বপ্নীল রঙ্গনা কে কঠিন গলায় বলল,
“তুমি আমাকে আজেবাজে কথা বলবে না ছোটপা। ”
রঙ্গনা সেটার জবাব না দিয়ে বলল,
“শোন, এভাবে ঘরে বসে থাকলে কিছুই হবে না। যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস নাচতে নাচতে সেই মেয়েটা তোকে দুই আনার দামও দিবে না। ”
স্বপ্নীল সেকথার জবাব দিলো না। ওর পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে। পরীক্ষার সময় এমন হতো।
রঙ্গনা স্বপ্নীল কে দেখলো। এই ছেলেটা সারাজীবন শুধু পড়াশোনা করেই গেল। মা, বুবুর অতি আদরে ছেলেটা বাইরে সহজ হলো না। ছেলে মানুষ হবে বেপরোয়া, সারা দুনিয়া চষে বেড়াবে। তা না করে ঘরে বসে থাকে। আড্ডা পর্যন্ত দেয় না। পঁচিশ বছর হলো আজ অবধি মনে হয় সিগারেটও খায় নি। একটা প্রেমে পড়লো, তাও আবার বেঠিক মানুষের।
রঙ্গনার স্বপ্নীলের জন্য মায়া হয়। তুলির মতোই মায়া হয়। তবে ওর সেটা দেখাতে ইচ্ছে করে না। ওর সবসময় ই স্বপ্নীল কে বকাবকি করতে ইচ্ছে করে।
***
মিশুক আজকে খেতে এলো নিচে। দাদু ও’কে বলেছে সবার সঙ্গে বসে খেতে। মিশুক প্রথমে বলেছিল দরকার নেই। ওখানেই ঠিক আছে। একা খেতে খারাপ লাগে না। কিন্তু শিলার এই স্নেহ টুকু ফেরাতে পারলো না।
খাবার টেবিলে তুলি শ্রাবণ্যর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। বলল,
“ও শ্রাবণ্য, আমার ভাইয়ের বউ। স্বপ্নীলের সঙ্গে তো আপনার আলাপ আছে। ”
মিশুক হেসে বলল,
“হ্যাঁ। স্বপ্নীল তো ভীষণ ভালো ছেলে। ”
তুলি এবার রঙ্গনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ও আমার ছোট বোন। স্বপ্নীলের বড়। ”
কথাটা বলে ঠোঁট চেপে হাসি আড়াল করলো। মিশুক তুলির দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলল,
“ওনার সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। ”
রঙ্গনা ফিরেও তাকালো না মিশুকের দিকে। ও ওর মতো খেতে লাগলো।
তুলি মনে মনে ভাবলো, দাদুর প্ল্যান এবারও ফেল করবে। এরা দুজন দুজন কে জীবনেও পছন্দ করবে না।
***
বিছানায় ওরা ঘুমায় উল্টোভাবে। শ্রাবণ্য যেদিকে পা দিয়ে ঘুমায় স্বপ্নীল সেদিকে মাথা দেয়। ঘুমে অবশ্য দুজনের কারোরই সমস্যা নেই। তবে স্বপ্নীলের শুরুর দিকে ঘাড় ব্যথা হতো। এখন সেটা সয়ে গেছে।
শ্রাবণ্য খাবার পর দুই ঘন্টা পড়ে। স্বপ্নীল সেই সময়ে ল্যাপটপে সিরিজ দেখে। চোখ যখন ক্লান্ত হয়, তখন ঘুমাতে যায়৷
স্বপ্নীল ঘরে ঢুকে বলল,
“তোমার জন্য বই এনেছি। তুমি বই খুঁজছিলে না সেদিন। ”
শ্রাবণ্য বইটা হাতে নিলো। ওর ভীষণ পছন্দের উপন্যাস সাতকাহন। হোস্টেলে একজনের থেকে ধার করে পড়েছিল। নীলক্ষেতে যেগুলো পেয়েছিল ওগুলোর ছাপা অক্ষর স্পষ্ট না। শ্রাবণ্য বইটা হাতে নিয়ে বলল,
“থ্যাংক ইউ। একবার পড়া বই, অথচ আবারও পড়তে ইচ্ছে করছে।”
“তোমার না পরীক্ষা। পরীক্ষার পর পড়বে।”
শ্রাবণ্য হাসলো। স্বপ্নীল বলল,
“আরেকটা জিনিস এনেছি তোমার জন্য। ”
“কী?”
স্বপ্লীল একটা প্যাকেট দিলো। দুটো স্টোনের হিজাব পিন। একটা গোলাপি রঙের, শ্রাবণ্যর ওই রঙের হিজাব আছে। ও মুগ্ধ গলায় বলল,
“খুব সুন্দর। থ্যাংক ইউ।”
স্বপ্নীল খুশি হলো। খুশি হলে ও চোখ নামিয়ে নিয়ে ঠোঁট চেপে হাসে। শ্রাবণ্য সেদিন হিজাব পিন হারিয়ে ফেলেছিল। এজন্য আজ ও সামনে পেয়ে কিনেছে। দুজনের জন্যই এটা সুন্দর এক অনুভূতি। তবে কেউ কারও প্রেমে পড়ে নি বলে অনুভূতিটুকুর মূল্য বুঝলো না। যদি ওরা একে অপরের প্রেমে পড়ে তবে এই মুহুর্ত টা’কে দুজনেই মনে রাখবে।
চলবে….
(খুব শিগগিরই কী করিলে বলো পাইবো তোমারে এর প্রি অর্ডারে আসবে।)