কৌমুদিনী পর্ব-২

0
4020

#কৌমুদিনী
#জনরাঃথ্রিলার
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্বঃদুই

যামিনী তখন গভীর৷ আঁধারো তীব্র চাঁদ আজ কার উপর অভিমান করেছে কে জানে? আজ চাঁদ অন্তরিক্ষে নেই৷ না মেঘের আড়ালে লুকায়নি অম্বরে যে মেঘ নেই আজ৷ ভয়ংকর অন্ধকার চারপাশ মেঘ ছাড়াই৷ একে কি তবে অমাবস্যা বলে? অমাবস্যা আজ? তখন নিদ্রাচ্ছন্ন সবাই রাজ বাড়ি আজ যেন একটু বেশি ঘুটঘুটে আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে আছে৷
বাইরের মশাল গুলো নিভে নিভে আসছে তবুও প্রহরী গুলোর খবর নেই৷
অন্ধকার টা বড়ই অপ্রিয় ছিলো রাজকুমারী মিফতার তার আদেশে মশালের সাথে কৃত্রিম আলো জালানো হতো৷ পুরো মহল গভীর রাতেও আলোয় আলোকিত থাকতো৷
সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলেও লাইব্রেটায় বসে বই পড়ছে আহসান মীর৷ বই তার প্রিয় না হলেও এখন মন্দ লাগেনা৷ মধ্য রাতে এখন আর মেয়ের হাতের কড়া দুধের চা টা খাওয়া হয় না৷
মেয়ের বানানো চা টা স্বাদহীন হলেও তার কাছে মন্দ লাগতো না অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছিলো প্রায়৷ সে যখন রাত জেগে কাজ করতো বা মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যেতো কি করে যেন মেয়েটা বুঝে যেতো অতঃপর নিজের হাতে কড়া করে দুধ দিয়ে চা খাওয়াতো৷
প্রতিদিন একবার করে সে সবার আড়ালে সেই মিষ্টি যুক্ত চা টা খেতো৷ নয়তো মিষ্টি খাওয়ার তার জন্য নিষিদ্ধ ছিলো৷ মেয়ে তার পক্ষ বাদি ছিলো সর্বকাল৷ তার দুঃখ বেদনা রাগ গুলো মেয়েই আগে বুঝতো৷ মেয়েরা যে বাবার সব হয়৷
কিন্তু কখনো সে মেয়ের সামনে নরম ছিলেন না দাম্ভিক হয়েই রইতেন সর্ব সময়৷ কিন্তু মেয়ে যে তার প্রান ছিলো৷
মেয়ে গত হওয়ার পর এক রাত ও ঘুমাতে পারেন না৷ নেত্র যুগোল বন্ধই হতে চায় না আজ কাল৷ মিফতার পর তার বড্ড প্রিয় চন্দ্রিকা যাকে সে “চন্দ্র” বলে এ মেয়েটার কাছে কখনোই সে দাম্ভিক থাকতে পারে না মেয়েটা বেশ বেপরোয়া৷
ওর মা কে কতবার আড়ালে বলেছিলো মেয়েটাকে আমায় দিয়ে দিন আমার মিফতার সাথে থাকবে চন্দ্র৷ আমার মেয়ে হিসেবে৷ কিন্তু দেয়নি৷ মেয়েটা তার মায়ের সব৷ মেয়েটা অসাধারণ একটা রাজ্য সামলানোর ক্ষমতা বেশ রয়েছে মেয়েটার মাঝে৷ বুদ্ধি জ্ঞান তার অতুলনীয়৷
শ্রেয়াস ছোট থেকেই কম সময় ছিলো এ দেশে ছেলেটা কখনো রাজ্য রাজনীতি পছন্দ করেন না৷
মিফতা নেই তাই আজকাল চন্দ্রের দেখা মিলে না মহলটা অমাবস্যার মতো ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে থাকে৷ হঠাৎ এসব কথার মাঝেও ফারহানের বলা কথাটা মনে পরলো, আসলেই মেয়েটা স্ট্রোক করেছেতো এমনি এমনি?
হঠাৎ সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ের স্ট্রোক হয় কি করে? ছোট বেলা থেকেই মেয়েটা কম অসুস্থ হয় জ্বর ও আসতো না খুব একটা তাহলে?
সে বিরবির করে আওড়ালো,
“মেয়েকি খুন হলো? ময়না তদন্ত করা উচিত ছিলো?”
পরক্ষনে নিজের ভাবনায় নিজেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো নিজেকে৷ পরিক্ষা নীরিক্ষায় তো স্পষ্ট লেখা স্ট্রোক করে রক্ত নালী রক্ত ক্ষরন হয়েছে যদি কেউ খুন করতো অন্যভাবে করতো স্ট্রোক করানো যায় নাকি আবার? না এ খুন কি করে হবে? অন্য কিছু হলে ভেবে নিতো খুন করেছে বা শ্বাস রোধ করে মেরেছে৷ সেখানে তো আছেই স্ট্রোক করেছে৷ মেয়ের শেষ সময় ময়না তদন্ত করে শুধু শুধু কষ্ট দিতো নাকি?
এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরলো৷ কে জানে অবাদ্ধ ঘুম টা ধরা দিবে নাকি৷ তার নিদ্রার প্রয়োজন গভীর নিদ্রা৷ আদৌ কি মিফতা স্ট্রোক করেছে? নাকি এর মাঝে লুকিয়ে আছে অন্য রহস্য?


শ্রেয়াস যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হঠাৎ তখন কিছুর শব্দে নিদ্রাটা ছুটে গেলো৷ নেত্র যুগোল বন্ধ অবস্থায়ই কুচকে এলো তাঁর ফের আওয়াজটা পেলো৷ কোনো পাখির ডাক৷ সে যানি পাখিটা তার বোনের৷
এবার নেত্র যুগোল অতি বিরক্ত নিয়েই খুললো৷ গভীর নিদ্রায় বিঘ্ন ঘটায় গা রাগে ‘রি রি’ করে উঠলো৷ ক্ষোভ নিয়ে উঠলো বিছানা ছেড়ে৷ ঘামে শরীর চুপচুপে হয়ে আছে কি অদ্ভুত ঘুমানোর পূর্বেতো এসি নামক শীতাতপ যন্ত্রটা চালু করেই ঘুমিয়েছিলো তাহলে ঘামলো কি করে?
পরক্ষনে যন্ত্রটির দিকে পরখ করে দেখে না যন্ত্রটি চালুই করেনি৷
রিমোট নিয়ে যন্ত্রটা চালু করলো৷ সেই ডাকটা ফের কানে এলো বিরক্ত নিয়ে অলিন্দের কর্নার ঘেঁষে আশে পাশে চোখ বুলালো৷ বাইরে আসতেই ব্রু টা কুচকে এলো কি আঁধার হয়ে আছে মহলটা৷ প্রহরী গুলো সব ঘুমালো নাকি?
চারোদিকে অন্ধকারের মাঝেও সামনের দো’তলা বাড়িটির ছাদে হঠাৎ নারী অবয়ব দেখে চমকালো কিছুটা৷
না ভয় পায়নি এতো রাতে কে ছাদে হবে? বাড়িটা জানামতে অনেক আগের সেনাধ্যক্ষের বাড়ি ওর দাদার আমলে এই বাড়িটা বানিয়ে দিয়েছিলো ওর দাদা জান সে সেনাধ্যক্ষ তাঁর খাস মানুষ ছিলো৷ তাই বাড়িটি শ্রেয়াসের দাদাজান বানিয়ে দিয়েছিলো৷ বাড়িটি মহল থেকে দশ বারো ফিট দূরে তাই স্পষ্টই দেখা যায়৷ তাঁর দাদার শাসনকালের পর আর সেনাপতির প্রয়োজন হয়নি দেশ স্বাধীন হলো সবাই স্বাধীন হলো৷ দেশ স্বাধীন হলেও অঞ্চলের মানুষ গুলো সর্বসময় ওদের শাসনকর্তা মানেন৷ এ অঞ্চলে এখনো আগের ন্যায় জমিদারি তাদের৷ দিন পাল্টেছে প্রযুক্তিতে উন্নতি এসেছে এখন সুপারিশ এর জন্য সেনাধ্যক্ষ প্রয়োজন হয় না৷

মেয়েটি কে হতে পারে বোধগম্য হচ্ছে না৷ সর্বসময় দেশের বাইরে থাকায় তেমন খুব বেশি মানুষ কে চেনেন না শ্রেয়াস৷
মেয়েটি বেঞ্চিতে বসে আছে ওপাশ ফিরে পাশে একটা পাখির খাঁচা৷ হঠাৎ শ্রেয়াসের মস্তিষ্ক খুললো৷ এতো সেই মেয়েটি৷ চন্দ্রিকা৷ মেয়েটি এখানে কি করছে?
এতো রাতে মেয়েটি ছাদে কেন বসে আছে? এ মেয়ের সাহস যে আকাশ তুল্য তা সে তখনই বুঝেছে৷ তাই বলে রাত বিরাতে এখানে বসে থাকবে? শ্রেয়াস এবার হাক তুলে ডেকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো মেয়েটির পানে,
❝চন্দ্রিকা?
রাত বিরাতে আপনি ওখান কি করছেন?❞
ডাকের সাথে সাথেই মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো অতঃপর পাখির খাচাটা হাতে নিয়ে পায়ের নুপুরের রুনঝুন শব্দ তুলে নিচে নামার জন্য সামনে এগোলো৷ মেয়েটা যেন অপেক্ষায় ছিলো এমন প্রশ্নের৷ প্রশ্নটা করার সাথে সাথেই চলে গেলো এমনই মনে হলো শ্রেয়াসের কাছে৷ এবারো মেয়ের এহেন কান্ডে বিস্মিত না হয়ে পারলো না শ্রেয়াস৷ মেয়েটা এমন কেন? গ্রামের কেউ চোখ তুলে তাকাতেও সাহস পায় না আর এ মেয়ে কিনা এমন বেপরোয়া ব্যাবহার করছে? মেয়েটা কেমন অদ্ভুত ধাচের৷ নুপুরের শব্দটা এখনো কর্নে বারি খাচ্ছে শ্রেয়াস নামক রাজ পুরুষটির৷ উহু ভালো লাগছে তা নয় একটুও ভালো লাগলো না শ্রেয়াসের৷ পাখিটা যাওয়ার সময় এ দিকে তাকিয়ে তার বুলিতে হঠাৎ হঠাৎ বলে উঠছে, “চন্দ চন্দ্র” পাখির কন্ঠে শ্রেয়াস নামক পুরুষটিও দু-বার আওরালো “চন্দ্র চন্দ্র” পরক্ষনে নিজের উপর নিজে অতী মাত্রায় বিরক্ত হলো৷ বিরক্ত হলেও তীব্র স্বাদ জাগলো একটি৷ মেয়েটি কে দেখার স্বাদ৷
মেয়েটার মুখশ্রী খানা দেখার কৌতুহল রয়েই গেলো৷ এ কেমন নারী? মেয়েটি নিজেকে নিজে বুঝেতো?
ওই পাখিটির ডাকেই ঘুম ভেছিলো শ্রেয়সের৷ পরক্ষণেই হঠাৎ মনে পরলো এমন এক জোরা পাখি মিফতার কাছেও ছিলো৷ সে থেকে একটা তার খাস সঙ্গিনীকে দিয়েছে৷ সে সঙ্গিনী তাহলে চন্দ্রিকা নামক মেয়েটি৷ ভিডিও কলে কথা বলার সময় মিফতা অনেকবার দেখিয়েছে ওর পাখিটিকে৷ আচ্ছা মিফতার পাখিটা কি এমন কথা বলে?
শ্রেয়াস অলিন্দ ছেড়ে বেরিয়ে এসে কক্ষ ছেড়ে বের হলো৷ মিফতার কক্ষের অলিন্দে পাখিটা আছে এ পাখিটার ডাকেই নিদ্রা ভঙ্গ হয়েছিলো শ্রেয়াসের৷ এ পাখির ডাক তার চেনা৷
এসে পাখিটার খাচার সামনে দাড়ালো শ্রেয়াস৷ পাখিটা অচেনা মুখ দেখেই উচ্চ কন্ঠে “মিফতা মিফতা” বলে ডাক শুরু করলো৷
শ্রেয়াস খানিকটা বিরক্ত হলো৷ এতো ছোটা ছোটির কি আছে? খেয়ে ফেলবে নাকি একে?
শ্রেয়াস এবার ধাতস্থ হয়ে উচ্চ কন্ঠে বলে,
❝ পাখি শ্রেয়াস বল?❞
শ্রেয়াসের কথার যেন দামই দিলো না পাখিটি অবাদ্ধ হয়ে সেই বেপরোয়া মেয়েটির মত ছোটাছুটি করছেই৷ তার যেন শ্রেয়াসের কথা শুনলে পাপ হবে৷ শুনলো না পাখিটি বললো না৷ সে “মিফতা মিফতা” ডাকছে৷
শ্রেয়াস ফের বললো,
❝শ্রেয়াস বল৷ ”
পাখি এবারো শুনলো না শ্রেয়াস রাগ দেখিয়ে এবার কক্ষ থেকে বের হওয়ার জন্য পা বারালাও৷ চৌকাঠের ওপাশে পা দিবে ঠিক তখনই পাখিটি মিষ্ট কন্ঠে বললো,
❝চন্দ্র, চন্দ্র৷ ❞
নামটা চার দেয়ালে বারি খেলো৷
অবাক হলো শ্রেয়াস এ পাখিটাও ওই মেয়ের বলতে জানে? কক্ষের দুয়ার লাগাতে লাগাতে বিরবির কন্ঠে আওরালো,
❝ অমাবস্যাতে এবার চাঁদের নিমন্ত্রণ
আলো আঁধার কি করলো অলিঙ্গন?
তবে আমার রাজ্যে যে আজ
আমি ছাড়াও কৌমুদিনীর গুঞ্জন ❞

চলবে কি?

[আমি আপনাদের ঘটনা মূলক মন্তব্য চাইছি৷ বলবেন দয়া করে ভুল ত্রুট ধরিয়ে দিবেন অনুভূতি প্রকাশ করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here