কৌমুদিনী পর্ব-২৭

0
1586

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া_মেঘলা
#পর্ব ২৭

মেহনুবা তখন তমার সাথে কথা বলছিলো শ্রেয়াস কে দেখে দু জনেই ব্রু কুচকে তাকায় শ্রেয়াসের দিকে তার আগেই তাদের বিস্মিত করে দিয়ে শ্রেয়াস কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,
” মা আমি চন্দ্রাবতীকে বিয়ে করতে চাই৷”
শ্রেয়াসের কথা শুনে তমা, মেহনুবা দুজনই বিস্মিত হয়৷ মেহনুবা ভাবলো ভুল শুনেছে৷ সত্যি শুনলো নাকি ভুল তা জানার জন্য অবুঝের মত প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
” কি বললে? শুনতে পেলাম না৷ না মানে শুনেছি নাকি ভ্রম বুঝতে পারছি না৷ ”
শ্রেয়াস মায়ের কথায় বিরক্ত হয়, অদ্ভুত ঠিক শুনেও অবুঝের মত করছে, ও ভালো করেই যানে মেহনুবা শুনেছে এমন বাচ্চামো করার মানে বুঝছে না৷ সে বিরক্তের রেশ মুখশ্রী তে ফুটিয়ে বলে,
” আহ মা এমন করছো কেন? তুমি ঠিক শুনেছো৷ বিয়ের ব্যাবস্থা কর আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব৷ ”
বলে এখানে আর দাঁড়ায় না বড় বড় পা ফেলে কক্ষ থেকে প্রস্থান করে৷ ও মেয়েকে নিজের করেই ঠিক করতে হবে, নিজের কাছে না রাখলে পাখনা আরো বড় হবে৷ চৌকাঠে আসতেই আহসান মীরের সাথে দেখা হয়ে যায় তার চোখে মুখেও বিস্ময়ের রেশ৷ সে এখানে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছে৷ আহসান মীর নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না তার ছেলে চন্দ্রিকাকে বিয়ে করবে বলছে?
হঠাৎই কিছু মনে হয়ে বিস্ময়ের রেশ কাটলো অন্য চিন্তা ভর করলো মাথায়৷ ও মেয়ে যা রাজি হবে তো? চন্দ্রিকা কারো কথার ধার ধারে না শ্রেয়াস যা গম্ভীর প্রকৃতির তেল আর জলের মত দুটিতেই, মিশ খাবে তো? শ্রেয়াস যা ছেলে ওই মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তুল কালাম বাধাবে তখন কি করবে?
শ্রেয়াস প্রস্থান করতেই তমাও মেহনুবার কক্ষ ছেড়ে বের হলো৷

৫২
ধরণিতে যখন সাঁঝ বেলা নিজের রাজত্ব চালাচ্ছে, শ্রেয়াস তখন মহল ছেড়ে বের হলো সাথে প্রিয়ম ও আছে৷
বাইরে এখনো হাল্কা বৃষ্টি পরছে সিক্ত হয়ে আছে সব কিছু, শীতল হাওয়া বইছে৷ একটু আগেই আশরিফের ময়না তদন্তের রিপোর্ট এনেছে আয়াশ৷ আশরিফের গুলি লাগার সাথে সাথে মৃত্যু হয়নি গুলি লাগার দুই ঘন্টা পরে কেউ মাথায় আ’ঘাত করেছে তারপর ওই দিঘির পানিতে ফেলেছে৷

গুলি লাগার তিন ঘন্টা পর আশরিফের মৃত্যু হয়, আয়াশ যখন আহসান মীর এর সাথে কথা বলেছিলো তখন সবটা শুনেছে প্রিয়ম৷ প্রিয়মই এসে শ্রেয়াস কে বলেছে৷

মহল ছেড়ে বেড়িয়ে কালো চার চাকার গাড়িটায় উঠলো শ্রেয়াস৷ সাথে প্রিয়ম ও উঠলো তাদের গন্তব্য কোথায় প্রিয়ম নিজেও জানে না৷
শ্রেয়াস নিজের কোন কাজে বের হলে কখনোই দেহরক্ষী নেয় না আজ ও নেয়নি গাড়ি প্রিয়মই চালাবে৷

প্রিয়ম কিছু একটা ভাবছে প্রিয়ম কে ভাবুক হয়ে থাকতে দেখে শ্রেয়াস প্রশ্ন ছুড়লো,
” এতো কি ভাবছো প্রিয়ম?”
শ্রেয়াসের কথায় ধ্যান ভাঙলো প্রিয়মের অতঃপর ঠিকঠাক হয়ে বসে মিনমিনিয়ে বলে,
” আমরা যা করছি ঠিক হচ্ছে জনাব?”
শ্রেয়াস হাসলো, ঠোঁট এলিয়ে বাঁকা হাসি৷ এমন কুটিল হাসি দেখে অন্তর আত্মা কেপে উঠলো প্রিয়মের আশিক নামক ছেলের কথা মনে হয়ে গেলো হঠাৎ৷ সে দেহরক্ষী টির মত অবস্থা করবে নাতো? হায় আল্লাহ নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মা’রলো নাকি?
শুকনো ঢোক গিললো প্রিয়ম৷ প্রিয়মের ভয়াতুর মুখশ্রী দেখে হো হো করে উচ্চ কন্ঠে হেসে দিলো শ্রেয়াস৷ প্রিয়মের ভয় বারলো আরো৷
হঠাৎই চুপ হয়ে গেলো শ্রেয়াস শান্ত কন্ঠে বললো,
” ভয় পাচ্ছো প্রিয়ম? ভয় পেয়ো না৷ আর কি যেন বললে? ঠিক হচ্ছে নাকি সে তো সময়ই বলবে৷ ”
বলে ফের হাসলো শ্রেয়াস৷ শ্রেয়াসের এহেন শান্ত সরে অবাক হলো প্রিয়ম৷ কি চলছে ওর মনে? ভয়ংকির কিছু?
হঠাৎ শ্রেয়াস ফের একই কন্ঠে বললো,
“তুমি তোমার মতামত আমার কাছে সর্বদাই নির্ভয়ে পোষণ করতে পারো প্রিয়ম৷ তুমি ওদের মত না আমি জানি৷ ”
শেষের কথাটা শ্রেয়াস শক্ত কন্ঠেই বললো৷ প্রতিবারের মত প্রিয়ম এভারো অভিভূত হলো৷ শ্রেয়াস তার কাছে সর্বদাই একটা চমৎকার চরিত্র সবার কাছে যতই কঠিন হোক ওর কাছে সর্বদাই নরম৷ প্রিয়ম হঠাৎ করেই শ্রেয়াস কে জড়িয়ে ধরলো৷

শ্রেয়াস হাসলো ক্ষানিকটা৷ শ্রেয়াসকে জড়িয়ে হঠাৎ যখন বাইরের দিকে দৃষ্টি গেলো, সামনে থেকেই কে যেন সরে গেলো৷
তাকে প্রিয়ম স্পষ্ট দেখেছে নারী মূর্তি৷ এতোক্ষণ খেয়াল করেনি তার মানে কেউ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো?

প্রিয়ম শ্রেয়াস কে ছেড়ে হঠাৎই গাড়ি থেকে নামলো শ্রেয়াস বুঝলো না কিছু৷ প্রিয়ম এগিয়ে যাওয়ার আগে সে দৌড় দিলো শরীরে তার কালো একটা ওরনা পেচানো মুখে কালো নিকাব কে হতে পারে এটা? চন্দ্রিকা? না চন্দ্রিকা আরো লম্বা চন্দ্রিকাকে প্রিয়ম ভালো করে চিনে চন্দ্রিকা থাকলে এভাবে পালাতো ও না৷ প্রিয়ম কিছু না ভেবেই হঠাৎ পকেট থেকে বন্দুক বের করে নিশানা করে গুলি ছুড়লো কিন্তু লাগলো না পাশ ঘেঁষে চলে গেলো৷ ফের গুলি ছুড়বে তখন আর পেলো না মেয়েটাকে৷
কে এটা?
শ্রেয়াস নামলো তখন গাড়ি থেকে অতঃপর প্রশ্ন ছুড়লেন,
” চন্দ্রিকা?”
“না জনাব সে নয়৷ ”
ভাবুক হয়ে উত্তর দিলো প্রিয়ম৷ শ্রেয়াস মৃদু বাঁকা হেসে বলে,
“আজকাল এ রাজ্যে চন্দ্রাবতীর বাতাস লেগেছে সবার গায়ে সাহস বেরেছে৷ ব্যাপার না আমরা তেমন কিছু আলোচনা করছিলাম ও না৷ কিন্তু মনে হলো আমাদের অনুসরণ করছিলো হয়তো৷ ”
প্রিয়ম কিছু বললো না৷ শ্রেয়াস গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে,
“চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ ”
প্রিয়ম গিয়ে উঠে বসলো হঠাৎই কি মনে করে যেন বললো,
” জনাব, মেয়েটা তমা মনে হচ্ছে৷ ”
শ্রেয়াস নাম টা চিনলো না তাই প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
” তমা? কে?”
প্রিয়ম চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে উত্তর দিলো,
“দাসী৷ রানী মেহনুবার খাস দাসী৷ মেয়েটা অদ্ভুত চন্দ্রিকা মেয়েটার মতই কেমন যেন তমা মোটেও সুবিধার নয়৷ ”
শ্রেয়াস ভাবুক হয়ে বলে,
” ভুল হচ্ছে তোমার কোন? মা যেহেতু মেয়েটাকে নিজের খাস দাসী করেছে সব দিক নজরদারি করেই করেছে৷ ”
প্রিয়ম উত্তর দিলো না৷ গুলিটা লেগে গেলেই বুঝতে পারতো সবটা৷ এসে একবার খোঁজ নিতে হবে এই মেয়ের নারি নক্ষত্র বের করতে হচ্ছে ভাবলো প্রিয়ম৷ মেয়েটাকে প্রথম থেকেই সুবিধার লাগলো না৷

৫৩

রজনি তখন সবে প্রগাঢ় হচ্ছে৷ সময়নিরূপন যন্ত্রের কাটা দশের ঘরে৷ মেহনুবা আর আহসান মীর দু-জনেই এলো চন্দ্রিকার বাড়ি সাথে হরেক রকমের জিনিসপত্র মিষ্টি৷ মারজিয়া, চন্দ্রিকার মা আর ফারহান তখন ভোজন করছে খাবার কক্ষে বসে৷ চন্দ্রিকা নেই মেহনুবা জানে চন্দ্রিকা নিজের ঘরে আছে এসময়৷

আহসান মীর আর রানী মেহনুবা কারণ ছাড়া এখানে আসে না আবার আজ সাথে এতো জিনিসপত্র৷ তাদের হঠাৎ আগমনে অবাক হলো সবাই, ফারহান সবে খাবার ছেড়ে উঠছিলো তাদের দেখে উঠে হাত ধুয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসে ফারহান উষ্ঠ কোণে হাসির রেশ ঝুলিয়ে বলে,
” নবাব আর রানীমা যে? কোন দরকার ছিলো আমায় ডেকে পাঠাতেন?”
ফারহানের কথায় হাসলো মেহনুবা চন্দ্রিকার মা আর মারজিয়া ও এগিয়ে এলো তারা কি রেখে কি করবে তার জন্য ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরলো৷
মেহনুবা নিজেই গিয়ে বৈঠক খানায় নরম কাউচে বসে বলে,
” ব্যাস্ত হবে না কেউ৷ আর ফারহান আমি আমার মেয়েকে রানী করে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছি আমাদের তো আসতেই হতো৷ ”
মেহনুবার কথার মানে কেউ না বুঝলেও চন্দ্রিকার মা বুঝেছে তার, উষ্ঠ কোণে হাসির রেশ ফুটলো৷
আহসান মীর আজ ফুরফুরে মেজাজে তার ওষ্ঠ কোণ থেকে হাসি সরছেই না৷
চন্দ্রিকার মা খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে বলে,
” আমি চন্দ্রিকা কে নিয়ে আসছি৷ ”

ফারহান কিছু বুঝতে পারছে না তাই ভাবুক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন,
” বুঝলাম না আপনার কথা৷ ”
এবার আহসান মীর মুখ খুললেন স্বাভাবিক কন্ঠেই উত্তর দিলেন,
” চন্দ্রিকাকে আমার শ্রেয়াসের জন্য নিতে চাই আমরা৷ ”
আসহান মীরের কথা কর্ণপাত হতেই থমথমে হয়ে গেলো ফারহান মুখশ্রী রক্তিম আকার ধারণ করলো৷ তার চন্দ্রকে শ্রেয়াস নিয়ে যাবে? চন্দ্রিকা তো তার৷ ফারহান কিছু বলবে এর আগেই মারজিয়া এসে খপ করে হাত চেপে ধরলো ছেলের, সে জানে ফারহান কিছু বললেই কেলেংকারী হয়ে যাবে৷
মারজিয়া ফারহান কে এক কোণে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“বাবা শান্ত হ এখন কিছু বললে কেলেংকারী হয়ে যাবে৷”
ফারহান রক্তিম নেত্রে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাতে কেঁপে উঠলো মারজিয়া৷ ফারহান ফের রেগে গিয়ে কিছু বলবে চন্দ্রিকা নেমে এলো৷
চন্দ্রিকা কে দেখে মেহনুবা উঠে এগিয়ে এলো এর আগেই সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে চন্দ্রিকা মেহনুবার সামনে এসে বলে,
” আমি এ বিয়ে করতে চাই না আম্মা৷ ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here