কৌমুদিনী পর্ব-৮

0
1987

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্বঃ আট

১৫
তখন ফের অন্তরিক্ষ মন ক্ষুণ্ণ করেছে৷ ধুসর রাঙা মেঘে নিমজ্জিত করেছে নিজেকে৷ কিছুক্ষণ পর পর ক্ষোভে ফেটে গর্জন দিয়ে ডেকে উঠছে অম্বরটা বারংবার৷ এই বুঝি তীব্র বর্ষন হবে৷ তীব্র বাতাসে বৃক্ষ গুলো আজ হেলে পরছে কেমন৷ ঝড় উঠলো নাকি?
গোধুলির শেষ প্রহর চলছে, রাত্রি নামার জন্য আঁধারো হয়েছে তবে মেঘ গুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আজ৷
পুকুরের উচু ইটের কাউচে বসে আছে চন্দ্রিকা৷ আকাশের মত তার মন আজ ক্ষুন্ন নয় বেশ ফুরফুরে৷ বৃষ্টি তার প্রিয়৷ শুধু প্রিয় নয় অনেক প্রিয়৷ কিন্তু হঠাৎই কিছু কথা স্বরন হয়ে মন গৃহে মেঘ জমলো৷ ওই আকাশের ন্যায় তীব্র মেঘ৷ মন টা আর ফুরফুরে রইলো না কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে কণ্ঠনালীতে জমা হলো৷ এই বুঝি কান্না গুলো উপচে পরবে৷ মিফতার কথা মনে পরলো আজ ফের৷ ঝড় দেখেই মেয়েটা খুশি হয়ে যেতো তার নাকি বৃষ্টি থেকে ঝড় প্রিয় ছিলো৷ বাতাসের ধ্বনি নাকি প্রিয় ছিলো তার৷ সে মেয়ের অদ্ভুত অদ্ভুত পছন্দের জিনিস গুলো চন্দ্রিকারো প্রিয় হয়ে গিয়েছিলো৷ মেয়েটা ক’দিন যাবত কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলতো৷ সেদিন তো এ ও বললো,
“আমি যখন থাকবোনা তখন এই বাতাসের ধ্বনি চোখ বন্ধ করে অনুভব করবে৷ তখন মনে হবে আমিও তোমার পাশে আছি চন্দ্রাবতী৷”
মেয়েটা ‘চন্দ্রাবতী’ বলতো ওকে তাই নামটা অন্যকারো মুখে শুনলে বুকটা কেঁপে উঠে চন্দ্রিকার৷
নেত্র বন্ধ করতেই হঠাৎ ঝলমল করে স্মৃতি চারণ হলো কিছু কথা৷

বিয়ে ঠিক হওয়ার দিনের কথা৷ সে দিন মিফতা এখানেই বসে ভারাক্রান্ত মনে বলেছিলো,
“আমি চলে গেলে আমার অভাব অনুভব করবে না চন্দ্রাবতী?”
সে দিন চন্দ্রিকা মজার ছলে বলেছিলো,
“একদমি না৷”
সে দিন মেয়েটা কেঁদেই দিয়েছিলো প্রায়৷ উগ্র কন্ঠে বলেছিলো,
“আমি আর ফিরবোই না৷ একে বারে চলে যাবো৷”
সে দিন মিফতার উগ্র রুপে হেসেছিলো চন্দ্রিকা৷ কিন্তু কে জানতো মেয়েটার মুখের কথাই সত্যি হয়ে যাবে?মেয়েটি যে সত্যি ওকে ছেড়ে একেবারে চলে গেলো? পাষাণ মেয়েটা ফিরলো না আর?
জায়গাটা মিফতা আর চন্দ্রিকা দুজনেরই প্রিয় তাই মাঝে মাঝেই সময় পেলে এখানে এসে বসে থাকে চন্দ্রিকা৷
অম্বরটা সেই থেকে গর্জন করছে বর্ষণ হবে বলেও হচ্ছে না৷ নেত্র যুগোল বন্ধ করে প্রিয় সই মিফতাকে অনুভব করছে চন্দ্রিকা৷ অবাদ্ধ আঁখি জোরা ফের ভিজে এলো আজ বাতাসে মিফতার গন্ধ নেই৷ চেয়েও ছুতে পারছে না দেখতে পারছে না চোখ যে তৃষ্ণার্থ হয়ে আছে৷ বুক ভারি হয়ে আসছে চন্দ্রিকা নামক মেয়েটির,
“রাজকুমারী মিফতাকে দেখতে ইচ্ছে করছে চন্দ্র?”
হঠাৎ কারো কন্ঠে চোখ খুললো চন্দ্রিকা৷ ঠিক ঠাক হয়ে বসলো ভেজা চোখ খানা মুছলো৷ পিছনে ফিরে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান কে দেখে অবাক হলো কিছুটা৷ ফারহান সন্তপর্ণে চন্দ্রিকার পাশ ঘেঁষে বসলো৷ তাতে চন্দ্রিকা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো ক্ষানিকটা দূরে সরে বসলো৷ তখনই ফারহান অদ্ভুত এক প্রশ্ন ছুড়লো চন্দ্রিকার পানে,
“নিজেকে যতটা শক্ত প্রমান করছিস আদৌকি তুই ততটা শক্ত চন্দ্র?”
ফারহানের কথায় থতমত খেলো চন্দ্র৷ চুপ রইলো সে এবারো প্রতিউত্তর করলো না৷
ফারহান ফের বললো,
“রাজকুমারী তোর প্রিয় ছিলো তাই না?”
“রাজকুমারী তো আপনারো প্রিয় ফারহান ভাই৷ ”
বলে ফারহানের পানে তাকালো চন্দ্রিকা৷ হঠাৎ চন্দ্রিকার ভারি কন্ঠে চমকে তাকালো ফারহান৷ বিব্রত বোধ করলো এড়াতে চাইলো কথাটা৷ ফারহান উঠে যাওয়ার জন্য কয়েক কদম এগোতেই চন্দ্রিকা ফের প্রশ্ন ছুড়লেন,
“ভালোবাসেন রাজকুমারী মিফতাকে?”
“যদি বলি তোকে বাসি?”
ফারহানের এহেন অকপট উত্তরে ভরকালো চন্দ্রিকা৷ অবাক হলো কিছুটা যে ওকে সহ্যই করতে পারে না সে আজ এমন কথা বলছে? অদ্ভুত নয় কি?
চন্দ্রিকার জানামতে মিফতাকে ভালোবাসে ফারহান৷ ফারহান কখনোই চন্দ্রিকাকে পছন্দ করতো না মিফতাকে কতবার সামনাসামনি নিষেধ করেছিলো চন্দ্রিকার সাথে মিশতে না করেছিলো৷
ফারহান চন্দ্রিকার সাথে কথা বলতো না কখনো একবার মিফতা লন্ডনের বাস গৃহে গিয়েছিলো সে বার প্রায় অনেকদিন কাটার পর ফারহান জিগ্যেস করেছিলো,
“রাজকুমারী কোথায় চন্দ্র৷”
অনেক বছর পর সে দিন ফারহান কথা বলেছিলো চন্দ্রিকার সাথে সে দিন ও বেশ অবাক হয়েছিলো৷ এর পর থেকে মাঝে মাঝে কথা বলতো কেবল মিফতার ব্যাপারে৷
কিন্তু আজ কিনা ফারহান এ কথা বলছে? বিশ্বাস হলো না চন্দ্রিকার৷ মিফতার জন্য ব্যাকুলতা দেখেছে ফারহানের চোখে ভালোবাসা দেখেছে৷
“পাগল হলেন আপনি? কি বলছেন এসব?”
থমথমে গলায় বলেই ফেললো চন্দ্রিকা৷ ফারহান কিছু বললো না অদ্ভুত হাসলো৷
চন্দ্রিকা ফের বললো,
“হাসছেন যে?”
ফারহান চন্দ্রিকার সামনে এসে দু বাহু জরিয়ে জরানো কন্ঠে বললো,
“তোর জ্যোছনার আলোতে আমায় আলোকিত করবি চন্দ্র? আমি নিবিড় আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছি তোর আলোতে আলোকিত কর আমায়৷ তোকে আমার প্রয়োজন চন্দ্র তোকে আমার প্রয়োজন৷ ”
চন্দ্রিকা ছিটকে ফারহান কে সরিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
“পাগল হয়েছেন আপনি৷ আপনাকে নিশিতে পেয়েছে ফারহান ভাই৷
আপনি তো আমায় পছন্দ করতেন না তাহলে এসব কেন বলছেন?”
“কারণ তুই রাজকুমারী মিফতার প্রা’ণ প্রিয়৷”
বলে এক মিনিট ও দাঁড়ালো না হনহন করে হেটে চলে গেলো৷ বুঝলো না ফারহানের কথা কি বললো ফারহান? মিফতার প্রিয় বলে মানে?
ঠিক তখনই একটা কালো গাড়ি এসে থামলো সেখানে৷ ঝড় থেমেছে হালকা বাতাস বইছে তখন৷ প্রিয়ম অবাক হলো৷ আজ কাল রৌজাফ শ্রেয়াস কে সে ভিন্ন রুপে দেখছে যেন৷ মেঘ গুলো এখনো গর্জন করে উঠছে৷ গাড়িটা চন্দ্রিকাকে দেখেই থামিয়েছে৷ এই মেয়ে এখন এখানে এখানে কি করছে?
গাড়ি থেকে নামলো শ্রেয়াস দৃঢ় হেটে এলো চন্দ্রিকার পানে৷ প্রিয়ম গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালেও শ্রেয়াসের সাথে চন্দ্রিকার পানে যাওয়ার অনুমতি পেলো না৷ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইলো৷

“এখানে কি করছেন চন্দ্রাবতী?”
চন্দ্রিকা ফারহানের কথা ভাবছিলো তখন হঠাৎ শ্রেয়াসে কন্ঠে পিছন ফিরল৷ শ্রেয়াস কে দেখে বিরক্ত না হলেও এ নামটা শুনে বিরক্ত হলো অতঃপর বললো,
“চন্দ্রিকা আমি৷ চন্দ্রিকা বলুন৷”
শ্রেয়াস বাকা হেসে বলে,
“আমার ইচ্ছা৷”
চন্দ্রিকা চোখ রাঙালো শ্রেয়াসকে৷ তা দেখে শ্রেয়াস ফের হেসে বলে,
“বাহ আমার রাজ্যে দাঁড়িয়ে আমাকেই চোখ রাঙাচ্ছেন? আপনার সাহস সম্পর্কে তারিফ না করলেই নয়৷ তা সন্ধ্যে বেলা পুকুর পার কি করছেন মেয়ে? ”
শ্রেয়াসের প্রতিউত্তরে চন্দ্রিকা বললো,
“আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নই৷আর রাজ্য আপনার কি করে? এ রাজ্য সবার৷ ”
বলে স্থান ত্যাগ করতে পা বাড়াতেই হাত চেপে ধরলো শ্রেয়াস৷ গাড়ির সামনে থেকে প্রিয়মও দেখলো অবাক হলো দুজনেই৷
চন্দ্রিকার পিঠ ঠেকলো শ্রেয়াসের বক্ষে অতঃপর কর্ণদ্বয়ের পানে মিনমিনিয়ে বললো,
“আমাকেই বলতে হবে চন্দ্রাবতী৷ আর রাজ্য সবার হলেও রাজত্ব আমার সাথে আপনিও৷”

১৬

মধ্যরাত তখন৷ সবাই নিদ্রায় আচ্ছন্ন হঠাৎ শরীরে চুপচুপে ভিজে কিছু অনুভব হতেই ধরফরিয়ে উঠলো শ্রেয়াস৷ উঠেই নিজের অবস্থান দেখলো আগে কাউচে শুয়ে আছে হঠাৎ নিজের দিকে লক্ষ করতেই ধক করে উঠলো বুকটা৷ তখনই হাত জোড়ায় তীব্র ব্যা’থা অনুভব করলো৷ হাতের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হলো শ্রেয়াস৷
হাত জোড়া র’ক্তে ভেজা দুই হাতের কবজির গোরায় আ’ঘা’তের চিহ্ন৷
ক্ষ’ত’টা নতুন এখনো র’ক্ত পরছে কি করে হলো? ও তো রাতে এখানে বই পরার জন্য বসলো তারপর ঘুমালোই কখন এসব হলোই কখন? ও তো কা’টে’নি৷ কা’ট’লো কি করে? আর টেরই বা পেলো না কি করে?
ঝাপসা চোখে সময়নিরূপন যন্ত্রটির পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো৷
কিন্তু সময় দেখতে পেলো না বাইরে এখনো আঁধার কি করে কি হলো? মাথায় কিছুই আসছে না৷ নেত্রপল্লব আর ফেলতে পারলো না নিশ্বাস আটকে এলো নি’স্তে’জ হয়ে সেখানে পরে রইলো৷

চলবে,

(আমি অনেক অসুস্থ তিন দিনে এইটুকু লিখেছি৷ নেক্সট পর্ব তাড়াতাড়ি পোস্ট করার চেষ্টা করবো৷ গল্পটা হয়তো খাপ ছাড়া হয়ে গেছে? ভুল ত্রুটি বুঝে নিবেন দয়া করে৷ রিচেক হয়নি৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here