গল্পঃ প্রেমমোহ লেকিকাঃ ফারজানা আফরোজ পর্বঃ ২৩ এবং শেষ

গল্পঃ প্রেমমোহ
লেকিকাঃ ফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ২৩ এবং শেষ

শুভ্রতা দিয়ার দিকে তাকাতেই দিয়া সম্মতি দিল। রেস্টুরেন্টের এক কোণায় গিয়ে বসলো তারা। শুভ্রতার বলার আগেই মহিলাটি বলে উঠলো,😐

–” আমি আকাশের স্ত্রী। কততম স্ত্রী তা বলতে পারছি না। আর এই মেয়েটিকে দেখছো ও আকাশের মেয়ে। জানি না আকাশের আর কতগুলো বউ আছে আর কতগুলো বাচ্চা আছে।”

মহিলাটির মুখটি মলিন হয়ে গেল। শুভ্রতার চোখে পানি চিকচিক করছে সে কিছুতেই এই মহিলার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। আর পারবেই বা কি করে যাকে এত সম্মান এবং ভালোবেসেছে তার নামে কু-কথা কিভাবে বিশ্বাস করবে।

–” মিথ্যা বলার একটা লিমিট আছে ম্যাম। আকাশ কখনো এমন কাজ করতে পারে না। আকাশের মত ভালো লোক কখনো হবে না।”

মহিলাটি হেসে আবারো বলল,

–” তুমি কি জানো আকাশ অ্যাকসিডেন্টে করেনি তাকে আমিই খুন করেছি। কেন খুন করেছি জানো? যেদিন আকাশ মারা গিয়েছে সেদিন নিশ্চয় তোমাকে বলেছিল ঘুরতে যাবে?”

শুভ্রতা ছলছল চোখে বলল,

–” হুম।”

–” সেদিন ও তোমাকে পাচার করার জন্য নিয়ে যেত। ভালো দামে বিক্রি করতো তোমাকে। আমাকেও তো বিক্রি করে দিয়েছিল ভাগ্যিস আমার বাবা বড় ব্যাবসায়ী তাই বেঁচে যাই আমি। সেদিন আকাশের মুখে শুনেছিলাম সে এর আগেও অনেক বিয়ে করেছে। মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার বাচ্চা পৃথিবীতে আসার তিনমাস পর তোমাকে বিয়ে করে আকাশ। সেদিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আকাশকে আর অন্য মেয়ের জীবন নষ্ট করতে দিবো না। আমি সব সময় আকাশের খুঁজ খবর রাখতাম। আকাশ জানতো না আমি তার সন্তানের মা। জানলে হয়তো ওর কিছু যায় আসত না। যেদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবার প্ল্যান করছিল সেদিন তোমাদের বাসায় আমার লোক গিয়েছিল টিভি ঠিক করার জন্য। ওই লোকেই বলল তখনই আমি আকাশকে ফোন দিয়ে বলি তার সাথে কথা আছে আমার। আকাশ কি ভেবেছে জানা নেই আমার, সে আমার কথা মতোই আসে আমার বলা ঠিকানাতে। তার খাবারে আমি বিশ এবং নেশা জাতীয় ওষুধ দিয়ে তাকে প্রচুর রাগানোর চেষ্টা করি। আমার সাথে রাগ করে সে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। একজন লোককে বলে গাড়িও নষ্ট করে দেই আমি। অতঃপর সমাপ্তি ঘটলো আকাশ নামের বেঈমানের। এখন তুমি ভাববে তাহলে পুলিশ কেন বলল এইটা অ্যাকসিডেন্টে। মার্ডার কেস তো বুঝায় যায়। হাহাহা। আকাশের মা বড্ড চালাক এক মহিলা। যে জানে পুলিশ কেস করলেই তার ছেলের মুখোশের আড়ালে করা খারাপ কাজকর্ম লোক জেনে যাবে। এতদিনের জমানো প্রচুর টাকা সব চলে যাবে পুলিশের হাতে। তাদের থাকতে হবে রাস্তায় কিংবা জেলে তাই উনি ছেলের পোস্টমর্টেম
করতে দেননি। আমিও বেঁচে যাই এই কারণে।”

–” আপনার কথা বিশ্বাস কেন করবো আমি? হতে পারে আপনি মিথ্যা বলছেন। প্রমাণ ছাড়া আপনার কথা আমি একটুও বিশ্বাস করব না।”

–” প্রমাণ তো আমি সাথে নিয়ে ঘুরি না শুভ্রতা। তুমি চাইলে আমি প্রমাণ আনতে পারি। কবে মিট করবে আমার সাথে বলো সেদিন আমাদের বিয়ের কাগজপত্র, বিয়ের ছবি, ভিডিও সব নিয়ে আসবো।”

শুভ্রতা নেহাকে বলল কবে আসার জন্য। নেহাই হলো আকাশের সেই স্ত্রী । শুভ্রতা বাচ্চাটির দিকে তাকালো, হ্যাঁ আকাশের মত চোখ, ঠোঁট, জোড়া ভ্রু, যে কেউ দেখলে এক নজরে বিশ্বাস করবে মেয়েটি আকাশের কিন্তু শুভ্রতা বিশ্বাস করতে পারছে না। তার প্রমাণ চাই।

রাতে খাবার টেবিলে শুভ্রতাকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো স্পন্দন,

–” শুভ্রতা কোথায়? ডিনার করবে না?”

মিসেস সাবিনা বেগম মলিন সুরে স্পন্দনকে বলল নেহার ব্যাপারে। দিয়া সব বলেছে বাসায় এসে। স্পন্দন মায়ের মুখে কথাটা শোনে খুশি হবে নাকি দুঃখ পাবে বুঝতে পারছে না। হালকা খেয়ে সোজা শুভ্রতার রুমে চলে গেলো। জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্রতা। পিছন থেকে ডাকলো স্পন্দন,

–” শুভ্রতা?”

আচমকা শুভ্রতা স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। স্পন্দন শুভ্রতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শুভ্রতা এই শান্তিময় স্থান পাওয়ার জন্য ছটপট করছে। স্পন্দনের বুকে সে এখন শান্তি পায়। স্পন্দনকে তার এখন খুব কাছের একজন মনে হয় যার কাছে সব শেয়ার করলে মন হালকা হয়। স্পন্দন সব জানা সত্বেও জিজ্ঞাসা করলো,

–” কি হয়েছে? এনিথিং রঙ?”

কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে সব বলল শুভ্রতা। স্পন্দন খানিকটা চুপ থেকে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠলো,

–” তোমার সাথে আমিও যাবো। হ্যাঁ এইটা ঠিক আকাশকে আমি ঘৃনা করি কিন্তু মৃত ব্যাক্তির নামে মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে পারি না। জানি না আমি কে সত্যি আর কে মিথ্যা। তাই প্রমাণ আমিও দেখতে চাই।”

শুভ্রতা ছলছল চোখে স্পন্দনকে ধন্যবাদ জানালো।

___________________

রেস্টুরেন্টের একটি রুম বুক করেছে স্পন্দন। রুমের ভিতর বসে আছে নেহা, শুভ্রতা, স্পন্দন এবং নেহার মেয়ে। নেহা একে একে সব কাগজপত্র, বিয়ের ছবি, বিয়ের আগে তাদের একসাথে ঘুরে বেড়ানোর নানান রোমান্টিক ছবি, বিয়ের ভিডিও, বিয়ের পর শশুরবাড়িতে সংসার করা দুজনের ঘনিষ্ট কিছু ছবি। নারী পাচারের সাথে যুক্ত সকল ইনফরমেশন। স্পন্দন এইসব দেখে রেগে আগুন। তার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে আজ যদি আকাশ মারা না যেত তাহলে এতদিনে শুভ্রতা নামক মেয়েটি শেষ হয়ে যেত। ইচ্ছা করছে আকাশের লাশ খবর থেকে তোলে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। নিজের রাগটা নেহার উপরে প্রভাব করে বলল,

–” আপনি এত কিছু জানেন তাহলে বিয়েটা আটকালেন না কেন? আমার জানামতে এই খবর আপনি জানতেন।”

নেহা বলল,

–” শুভ্রতার মামা মামীকে বলেছি আমি কিন্তু উনারা আমাকে বাসা থেকে অপমান করে বের করে দেয় তাই আর বলা হয়নি। সত্যি বলতে আকাশের ব্যাবহারে কেউ বুঝবে না ও খারাপ ছেলে। আমিও তো মরে যেতাম কিন্তু আমার মেয়েটার কারণে বেঁচে আছি। আমার মেয়েকে আমি এমনভাবে গড়ে তুলবো যেন কোনো খারাপ লোক তার আশে পাশে না আসতে পারে।”

শুভ্রতার মুখের শব্দ হারিয়ে গেলো। তারমানে আকাশ তাকে সেদিন এই ইঙ্গিত দিয়েছিল। হ্যাঁ তাই হবে। আকাশ বলেছিল, তার ব্যাপারে সবকিছু যদি জানতে পারি সেদিন কি তাকে ভালোবাসতে পারবো?

নেহা তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে। এত বড় ধোঁকা সে সহ্য করতে পারেনি। এইভাবেই চলে গেলো আরো কয়েকমাস। শুভ্রতা এখন আর সাদা পোশাক পরে না। যখন যে রঙ তার পড়তে ইচ্ছা করে সে ঐটাই পরে। শুভ্রতাকে খুশি রাখার জন্য স্পন্দন সবকিছু করতে রাজি। মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া, রাজার সাথে দেখা করানো এইসব যেন স্পন্দনের দায়িত্ব।

সাকিবের বাংলাদেশ আসার সময় হলো। শুভ্রতা তো বেশ খুশি। নীলু তো সাকিবের আসার কথা শোনে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে এমনকি হানিমুনে কোথায় যাবে, বিয়ে থেকে শুরু করে বৌভাতে কি ড্রেস পড়বে সবকিছু লিস্ট করে রেখেছে। নীলুর এই পাগলামি শুভ্রতার বেশ ভালো লাগছে। সেও সায় দিচ্ছে তাকে।

পুরো বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বেশি আয়োজন না থাকলেও সাজানো ছিল অসম্ভব সুন্দর। বিকালে স্পন্দন এবং শুভ্রতা বাসায় ফিরে নিজের বাড়ি নিজেরাই চিনতে পারছে না। স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলতে লাগল,

–” আব্বে, আমি যখন বিদেশ থেকে আসি কই আমার জন্য তো এইভাবে ঘর বাড়ি সাজানো হয় না আর বড় ছেলে একবার যেতেই তার জন্য এলাহী আয়োজন। এখন তো সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে আমি এই বাড়ির অদল বদল ছেলে।”

স্পন্দনের কথা শোনে হেসে উঠলো শুভ্রতা। স্পন্দনের হাতে চিমটি কেটে বলতে লাগলো,

–” হিংসুটে লোক একটা। কিন্তু সাকিব ভাইয়া কখন আসবে?”

–” ওর আসাতে তোমার কি হুম?”

–” আমার অনেক কিছুই। আপনার হেল্প কিন্তু লাগবে।”

–” কিসের হেল্প?”

–” ওইটা পরে বলব এখন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

–” শুভ্র এই শুভ্র যাহ বাবা চলে গেলো। এই মেয়েটা সব সময় কনফিউশনে রাখে আমাকে। বদ মেয়ে একটা।”

সাকিব রাতে বাসায় ফিরে অবাক হলো। মনে মনে খুব খুশি তারমানে কি নীলুর সাথে তার বিয়েটা ফাইনাল? এসেই বাবা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জের মতো বলতে লাগলো,

–” তারমানে বিয়েটা আমার ফাইনাল তাই তো?”

মিসেস সাবিনা বেগম মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,

–” তা আর বলতে। ফোন করে কত ইঙ্গিত দিয়েছিস বিয়ের ব্যাপারে আমরা কি বুঝি না। আবার এইটাও বলেছিস যেদিন তুই বাড়ি ফিরবি সেদিন যেন ভালো সারপ্রাইজ তোর জন্য রেডি করে রাখি। তাই আমি আর তোর বাবা আজকে তোর জন্য সারপ্রাইজ রেডি করে রাখছি। দুদিন পর তোর আর শুভ্রতার বিয়ে। এইবার খুশি তো?”

শুভ্রতা, স্পন্দন এবং সাকিব যেন আকাশ ভেঙে পরলো। স্পন্দন তো রেগে বোম। সাকিব তখন ঝটপট করে বলল,

–” এ কি বলছো আম্মু? শুভ্রতা আমার ছোট বোনের মত। তাছাড়া আমি একজনকে ভালোবাসি তোমাকে বলেছি তার কথা।”

সাবিনা বেগম এবং উনার হাজবেন্ড একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কড়া ভাষায় বলে উঠলেন মিসেস সাবিনা বেগম,

–” সে অন্য ধর্মের। তুমি জানো এই বিয়ে কিছুতেই সম্ভব নয়। যদি ওই মেয়ে ধর্ম ত্যাগ করে তাহলে বিয়েতে আমরা রাজি। আর না হলে নয়।”

সাকিব এবং শুভ্রতা ভালোভাবেই জানে নীলু কিছুতেই ধর্ম ত্যাগ করবে না। তাই সাকিব রাগের বশে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। স্পন্দনের বাবা মা তো অবাক। তারা ভাবেনি এমনকিছু হবে। মিসেস সাবিনা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললেন,

–” আগামীকাল আত্মীয়-স্বজন আসবে। সাকিব এইটা কি করলো? এখন কি হবে? আমাদের নামে কেউ এতদিন বদনাম করতে পারেনি কিন্তু এই ছেলের কারণে আজ আমাদের নাম বদনাম হবে। লোকে কি বলবে আমাদের?”

স্পন্দনের বাবা স্ত্রীর কথা শোনে কপাল কুচকালেন। লজ্জায় তার পুরো শরীর ঘামছে। আবেগময়ী চোখ নিয়ে স্পন্দনের দিকে তাকাতেই স্পন্দন হেসে বলল,

–” শুভ্রতাকে আমি বিয়ে করবো তোমাদের চিন্তা করতে হবে না।”

কথাটা শোনে মিসেস সাবিনা বেগম এবং উনার হাজবেন্ড খুশি হলেন। তারা সকালেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলবেন বলে ঠিক করেছেন। স্পন্দনের মন আকাশের রঙ তাই রিক্স তারা নিতে চান না। শুভ্রতা নিরব দর্শকের মত সব শুনছে হ্যাঁ কিংবা না সে বলেনি। চুপচাপ বড়দের কথা শোনে নিজের রুমে চলে গেলো সে। তবে স্পন্দন তাকে বিয়ে করবে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। মনে ভালো লাগা কাজ করছে তার। হতে পারে আকাশের মিথ্যা মোহ থেকে স্পন্দনের প্রেমমোহ তার মনে বেশি প্রভাব ফেলেছে। দশদিনের মোহকে ত্যাগ করার জন্য স্পন্দনের প্রেমমোহ খুব জরুরী তার।

_______________________

বাসর রাতে চুপচাপ বসে আছে শুভ্রতা। তড়িগড়ি করেই বিয়ে দেওয়া হয় তাদের। সাকিব বিয়েতে আসেনি। তার কোনো খুঁজ খবর নেই। কিছু আত্মীয়-স্বজন এসেছে তারা বিয়ের কাজ শেষ করেই চলে গেছে। সকালে গায়ে হলুদ, বিকালে মেহেন্দি, আর সন্ধায় বিয়ের কাজ শেষ।

স্পন্দন রুমে এসে শুভ্রতার সামনে বসলো। কাবিনের টাকা সে আগেই পরিশোধ করে দিয়েছে।

–” এই তুমি জানো তোমাকে দেখতে পেত্নী লাগছে?”

শুভ্রতার অস্বস্তিবোধ কাটানোর জন্য বলল স্পন্দন। শুভ্রতা ক্ষেপে গিয়ে বলল,

–” এই পেত্নীকেই তো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছিলেন। একটু আগে ডায়রিটা পড়েছি মিস্টার জল্লাদ।”

–” চুন্নি মেয়ে একটা। বাই দা ওয়ে কিভাবে খুঁজে পেলে?”

–” টমি দিয়েছে। সে তো এখন আমার সব কথা শোনে।”

–” একেই বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ। বিয়ে হতে না হতেই তোমার দলে চলে গিয়েছে।”

শুভ্রতা হাসলো সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো স্পন্দন। হঠাৎ শুভ্রতার মন খারাপ হয়ে গেল। কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলল,

–” সাকিব ভাইয়া কোথায়? উনার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আজ আসেনি বাসায়।”

হতাশ কণ্ঠে বলল স্পন্দন,

–” আমিও অনেক চেষ্টা করেছি খোঁজার কিন্তু পাইনি। সমস্যা নেই ভাইয়া ঠিকই আসবে। আমি খুঁজে আনবো ভাইয়াকে।”

–” হুম। তো মিস্টার জল্লাদ আসেন আমরা আজ সারারাত জেগে কার্টুন দেখি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল, বিয়ের প্রথম রাত কার্টুন, হরর মুভি এবং কমেডি মুভি দেখার। ”

–” যা হুকুম মহারানী। আগে আসুন নতুন জীবনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ভালো থাকার দোয়া চাই। আজ উনার জন্যই আমরা একে অন্যেকে পেয়েছি।”

–” হুম।”

নামাজ শেষে স্পন্দন শুভ্রতার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলল,

–” তোমার চোখ চেয়েছি বলে, এমন ডুবল আমার চোখ
অমন অথৈ জ্বলে রোজ, আমার ডুব সাঁতারটা হোক।
শোনো কাজল চোখের মেয়ে, আমি তোমার হব ঠিক
তুমি ভীষণ অকূল পাথার, আমি একরোখা নাবিক।
শোনো, জ্বল ছল ছল কাজল চোখের কন্যা সর্বনাশী,
আমি তোমায় ভালোবাসি।”

এইভাবে চলতে চলতে আরো এক সপ্তাহ চলে গেলো। কিন্তু সাকিবের কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না। এইদিকে নীলুর অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না। না খেয়ে মেয়েটা একদম শুকিয়ে গিয়েছে। হঠাৎ একদিন খবর এলো সাকিব অ্যাকসিডেন্টে করেছে, পুলিশ লাশ এনে দাড় করালো বাসার সামনে। কান্নার রোল পড়ে গেলো চারদিক। নীলু তো বিশ্বাসই করতে পারছে না। সাকিবের মৃত্যুর কথা শোনে সেও সুইসাইড করে বসে কিন্তু ভাগ্যবশত সে বেঁচে যায় কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো না। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সে। সাকিব এবং নীলুর ভালোবাসার কোনো নাম হয়নি। সব সম্পর্কের নাম হবে এমনটা নয় কিছু কিছু সম্পর্ক নাম ছাড়াও থেকে যায়। সাকিব এবং নীলুর সম্পর্কও তেমন রয়ে গেলো। একজন চলে গেলো না ফেরার দেশে আরেকজন পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও না বেঁচে থাকার মতো রয়ে গেলো।

সমাপ্ত

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। শেষের অংশটা ভালো হয়নি জানি আমি। আগামীকাল ঈদ খুবই ব্যাস্ত তাই সাজাতে পারেনি। সবাই বলেছে ধর্ম নিয়ে লিখে কোনো ধর্মকে যেন অপমান না করি কিংবা ধর্ম ত্যাগ করার ব্যাপারটাও থাকে সেটাও যেন না করি তাই বাধ্য হয়ে নীলু এবং সাকিবের ভালোবাসার পরিণীতি এমন হলো। তাছাড়া এখন আর লেখালেখি করবো না। কখন ফিরবো তাও জানি না। যদি ফিরে আসি আপনাদের জন্য ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবো ধন্যবাদ। ঈদ মোবারক ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here