গল্পঃ প্রেমমোহ লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ পর্বঃ ৬

গল্পঃ প্রেমমোহ
লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ৬

অর্ধেক আলো ফুটেছে সবে। শহর এলাকায় ভোরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ না থাকলেও কাকের কাকা ডাক ঠিকই থাকবে। সাদা থ্রি পিস পরে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে চোখের নোনা জল ফেলছে শুভ্রতা। আকাশের কথা তার বড্ড মনে পড়ছে। কিছুদিন আগেও যার ছায়া তলে সুখের আশা নিয়ে বাঁচতে স্বপ্ন করেছিল আজ সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন। দু’গাল বেয়ে অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে নিচে পড়তে লাগলো। শুভ্রতার আজ ভীষণভাবে জানতে ইচ্ছা করছে সেদিনের আকাশের বলা কথা অনুযায়ী সে কিরকম। কি জানাতে চেয়েছিল আকাশ তাকে? কিন্তু এখন সে আকাশের ব্যাপারে অজানা কথা কিছুতেই জানতে পারবে না। জানা অজানার পথে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা। এক জীবনে আর কষ্ট সে নিতে পারছে না। কিন্তু সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যত ঝড় আসুক ও ভেঙে পড়বে না। তাকে তো মজবুত হতেই হবে।

হাঁটতে বের হয়েছে স্পন্দন। ভোর সকালে এই বাড়িতে সেই সবার আগে উঠে। রাস্তার ধারে যেতেই তার চোখ তাদের বাসার ছাদে চলে গেলো। ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে চিনতে তার মোটেও ভুল হলো না। স্পন্দনের চোখে শুভ্রতার সৌন্দর্য প্রকাশ শুধু সাদা পোশাকেই প্রকাশ পায়। সাদা রংকে বলা হয় পূর্ণতা, শুদ্ধতা ও শান্তির প্রতীক হিসেবে সাদা রং এর ব্যবহার বিশ্বজনীন। স্পন্দনের মনে হয়, শুভ্রতার মুখের ভাবের সাথে সাদা রঙ ভীষণ মানান। স্পন্দন আবার কিছু একটা ভেবে চোখজোড়া বন্ধ করে আর তাকালো না ছাদের দিকে। সে চায় না কোনো মেয়ের মায়ায় পড়তে। মায়া জিনিসটা বড্ড কঠিন। যার প্রতি মায়া, ভালোবাসা জন্মাতে শুরু করে তখন সেই মানুষটা অবহেলা করলে তার থেকে কষ্টকর জীবন আর হয় না।😢

শুভ্রতার দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। বড্ড অস্বস্তিকর লাগছে তার। দ্রুত হাঁটা দিয়ে ছাদ থেকে নেমে দিয়ার রুমে ঢুকলো। দিয়ার রুম খুলাই থাকে । বিছানায় এলোপাথাড়ি ভাবে শুয়ে আছে দিয়া। ইয়া বড় টেডি জড়িয়ে ধরে। দিয়ার এমন কান্ড দেখে মৃদু হাসলো শুভ্রতা। দিয়ার বিছানায় বসে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো,

–” দিয়া পাখিটা এখনও ঘুমাচ্ছে? সকাল হয়ে গেছে তো।”

নো রেসপন্স। শুভ্রতা আর ডাকলো না সে রুমটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। মেয়েটা যে বড্ড পুতুল পাগলী শুভ্রতার বুঝতে সময় লাগলো না। দেওয়ালে লাগানো সব ছবিই পুতুল নিয়ে তোলা। রুমের ভিতর পুতুলে গিজগিজ করছে। স্টাডি টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হাসলো। সেখানেও বইয়ের থেকে পুতুল বেশি। হিসাব বিজ্ঞান বইটা দেখে চোখ তার চিকচিক করে উঠলো। কতদিন হলো সে ম্যাথ করতে পারছে না। তার পছন্দের সাবজেক্ট যদি বলা হয় কোনটা তাহলে সে নিঃসন্দেহ বলবে হিসাব বিজ্ঞান। ম্যাথ করার লোভ সামলাতে না পেরে বসে পরলো পড়ার টেবিলে। চেয়ার সরিয়ে বইটা বের করে একটা খাতা বের করলো। স্কেল দিয়ে ঘর বানিয়ে ম্যাথ করতে লাগলো সে। কিছু কিছু টপিক চেঞ্জ হওয়াতে সেগুলো জাবেদা করে সমাধান করতে লাগলো। এক ঘন্টা ধরে ম্যাথ করছে সে কিন্তু ম্যাথের নেশায় সময়ের কথা ভুলে গিয়েছে।

–” আপু কি করছো তুমি?”😊

চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠলো দিয়া। পড়ার টেবিলে তাকাতেই শুভ্রতাকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠলো। শুভ্রতার পিছনে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটি করলো।

শুভ্রতা দিয়াকে দেখে হালকা হেসে উত্তর দিল,

–” ম্যাথ করতে ইচ্ছা করছিল। সরি না বলে বই ঘাটাঘাটি করার জন্য।”

রাগী গলায় বলল দিয়া,

–” তুমি আমাকে মোটেও ভালোবাসো না। ভালোবাসলে কেউ তার বোনকে সরি বলে। শুনো আপু, তোমার যখন ইচ্ছা হবে তুমি আমার বই ঘাটাঘাটি করবে, ভাববে নিজের বোনের জিনিস ওকে।”

দিয়ার গাল দুটো টেনে হেসে বলল শুভ্রতা,

–” আচ্ছা বাবা। এখন থেকে তোমাকে আর সরি বলব না হ্যাপি তো আমার দিয়া পাখি?”

–” ভীষণ। আচ্ছা আপু তুমি কি পড়াশোনা করতে চাও? ম্যাথ করা দেখে মনে হচ্ছে তুমি পড়তে চাও। আমি আম্মুকে বলব?”

–” নাহ দিয়া সেসবের দরকার নেই। এমনিই তোমরা আমার জন্য অনেক কিছু করছ আমি চাই না আর কিছু করো।”

শুভ্রতাকে নিয়ে খাটের উপরে বসে মনোযোগ সহকারে বলল দিয়া,

–” দেখো আপু, তুমি যদি পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করো ফিউচারে কোনো না কোনো জব করতে পারবে তখন কিন্তু কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। তাছাড়া তোমার মনেও আপসোস থাকবে না অন্যের বাড়িতে থাকা নিয়ে। পড়াশোনা না করলে সারাজীবন এইভাবেই থাকতে হবে বুঝছো?”

দিয়ার কথা শুভ্রতার মাথায় ঢুকে গেলো। আসলেই তো দিয়া ঠিক বলছে। কিন্তু পড়াশোনার কথা কিভাবে বলবে ও। ভীষণ লজ্জা লাগছে তবে মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিল। এখন থেকে তার জন্য যত টাকা খরচ হবে সব খাতায় নোট করে রাখার জন্য। ভবিষতে জব করে সমস্ত টাকা সে ধীরে ধীরে শোধ করবে।

–” আমি আন্টির সাথে এই নিয়ে পরে কথা বলব দিয়া। আপাতত তুমি কিছু বলো না উনাকে।”

–” আচ্ছা আপু।”

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল শুভ্রতা। স্পন্দনের সাথে হঠাৎই দেখা হলো তার। স্পন্দনকে দেখে তার ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, আর টিশার্ট গায়ে স্পন্দনের। হাঁটুর পর থেকে সমস্ত অংশ দেখা যাচ্ছে। লোম ভর্তি পা। শুভ্রতা বিড়বিড় করে বলল,

–” যাদের গায়ে লোম বেশি থাকে তারা নাকি দয়ালু হয় তাদের নাকি মায়া বেশি কিন্তু এই লোকটার তো মায়া দয়া কিছু নেই। ”

–” কিছু বলছেন? জীনে ধরেছে নাকি যে বিড়বিড় করছেন। স্পষ্ট বুঝতে পারছি না।”

–” কিছু বলেনি আমি।”

–” আমার জন্য চা নিয়ে আসুন ফাস্ট।”

–” আপনি না বারণ করলেন আপনার রুমে না যাওয়ার জন্য। তাছাড়া আপনার ওই কালো কুকুরটাকে আমি ভীষণ ভয় পাই।”

–” আপনার মাথার নাট বল্টু কি স্লো? কতবার বলেছি ওর নাম টমি বারবার কুকুর কেন বলছেন। আপনাকে যদি আমি মহিলা বলি কেমন লাগবে বলুন তো? এই মহিলা এই করুন সেই করুন। খারাপ লাগবে না? তেমন টমিকে কুকুর ডাকলে তার খারাপ লাগে। ওর সামনে কুকুর ডাকলেই আপনাকে এসে কামড় দিবে তখন কিন্তু আমি বাঁচাতে পারবো না।”

মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলল শুভ্রতা,

–” সরি আমি আর বলব না। আমি চা নিয়ে আসছি প্লিজ টমিকে বলবেন না ওকে যে আমি কুকুর বলেছি।”

স্পন্দন শুভ্রতার কথা শোনে লুকিয়ে হাসলো। কিন্তু শুভ্রতার সামনে মুখটা গম্ভীর করে বলল,

–” হুম বলব না। চা নিয়ে আসুন তাড়াতাড়ি।”

শুভ্রতা খুশি হয়ে পথ বাড়াবে আচমকা পরের সিঁড়িতে পা না দিয়ে অন্য সিঁড়িতে পা দিতে গিয়ে পরে যেতে নিলো। স্পন্দন এক হাতে শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরলো। কোমড়ে স্পন্দনের স্পর্শ পেয়ে শুভ্রতা চোখ বুজে ফেললো। তার ইচ্ছা করছে কান্না করতে। আকাশের কথা মনে হতেই মনে মনে বলল,

–” আকাশ আমি চাই না তুমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করুক। আমি কক্ষনো মেনে নিতে পারবো না। তুমি পৃথিবীতে না থাকলেও তোমার ভালোবাসা সবসময় আমার কাছে আছে। তোমার ভালোবাসাই আমার বেঁচে থাকার অস্তিত্ব।”

গাল বেয়ে টপটপ পানি ঝড়ছে। স্পন্দন শুভ্রতার মুখের দিকে তাকিয়ে হকচকিয়ে উঠলো। সে না চাইতেও শুভ্রতার মায়ায় জড়িয়ে পড়ছে।

–” সরি আমি আপনাকে টাচ্ করতে চাইনি। আপনি পরে যেতে নিচ্ছিলেন তাই আপনাকে ধরলাম প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।”

শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে স্পন্দন চলে গেলো। শুভ্রতা দৌড়ে সিঁড়ি থেকে নেমে রান্না করে ঘরে চলে গেল। কান্না করছে আর চা বানাচ্ছে সে। গরম চা ট্রে তে নিয়ে আবারো উপরে উঠলো। রুমের কাছে এসে দরজায় কড়া নেড়ে বলল,

–” আপনার চা।”

স্পন্দন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আবারো দরজা বন্ধ করে দিল। নূন্যতম একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ছিল তার কিন্তু দিল না। স্পন্দনের রুম থেকে আসার সময় সাকিব ওর রুম থেকে ডাক দিয়ে বলল,

–” শুভ্রতা। তুমি কিন্তু মোটেও ভালো কাজ করছ না। জানো আমি কতটা রেগে গেছি। তোমাকে তো এইজন্য শাস্তি পেতেই হবে।”

ভয় পেয়ে শুভ্রতা আমতা আমতা করে বলল,

–” ম মানে আম আমি কি কি করেছি ভাইয়া?”

চলবে,..?

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার আব্বু অসুস্থ মন ভালো নেই। লিখতে চাইছিলাম না কিন্তু আপনারা অপেক্ষা করবেন তাই দিয়েছি। সবাই আমার আব্বুর জন্য দুআ করবেন। রি-চেইক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here