গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ১২
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
আরফান আরফির রুমের সামনে দাড়িয়ে দরজায় টোকা দিতেই আরফি ভিতর থেকে বললো,
~এসে পরো।
আরফান রুমের ভিতর প্রবেশ করলো আরফি ভাইকে দেখে হাতে থাকা শাড়িটা বিছানার উপরে রেখে।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
~আরে ভাইয়া যে কিছু বলবে?
আরফান দরজার সামনে এসে নিজের সব কথা গুছিয়ে রেখেছিল কিন্তু আরফির কথা শুনে সব কথা ভুলে গেছে।আরফানের নীরবতা দেখে আরফি ভ্রুকুচকে বললো,
~কী হয়েছে ভাইয়া?তোমার কী শরীর খারাপ?
আরফান হালকা কেশে বললো,
~বাহিরে যেটা শোনলাম তা কী তোর মতামত ভিত্তিতে হচ্ছে?
আরফি মুচকি হেসে বললো,
~আমার মতামত ছাড়া কী এটা সম্ভব হতো?
আরফান বললো,
~জিনিস গুলো খুব দ্রুত হচ্ছে।
আরফি বললো,
~ভাইয়া তোমার কী আবরার সাহেবকে পছন্দ না?
আরফান হকচকিয়ে বললো,
~কী বলিস?উনি ছেলে হিসেবে উত্তম তোকে অনেক ভালো রাখবে।
আরফি বললো,
~তাহলে সমস্যা?
আরফান বললো,
~বাবা ছেড়ে চলে গেছে বেশিদিন হয়নি এখন তুইও যদি চলে যাস তাহলে কীভাবে চলবে?
এতটুকু বলতেই আরফানের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।আরফি ভাইয়ের মনের অবস্থা ভালো করেই টের পাচ্ছে তাই সে বললো,
~ভাই আমি তো সাতসমুদ্র দূরে যাচ্ছি না আর আমার যখন মন চাইবে এখানে এসে পরবো।
আরফি থেমে গেলো কারণ সামনে আবরার দাড়িয়ে আছে। আরফিকে এভাবে থেমে যেতে দেখে আরফান পিছন ফিরে আবরারকে দেখে বললো,
~আপনি এখানে?
আবরার বললো,
~আরফান তোমার চিন্তা একদম ঠিক। আমি তোমাকে ওয়াদা করছি আরফির যখন মন চাইবে তখনই এবাসায় আসতে পারবে।
আরফান বললো,
~আমার বোনের দায়িত্ব এখন থেকে আপনার।আমি চাইনা আপনার জন্য আমার বোনের চোখের পানি গড়িয়ে পরুক।কথাটা মাথায় থাকলে খুশি হবো
বলেই আরফান রুম থেকে চলে যায়।আবরার আরফির দিকে তাকিয়ে বলে,
~তোমার ভাই কী আমাকপ থ্রেট করে গেলো।
আরফি হেসে বললো,
~বাহিরে চলেন।
সবাই গোল হয়ে বসে সবকিছু ঠিকঠাক করলো আগামী মাসে বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো।সবকিছুর তোড়জোড় শুরু করে দিতে হবে বলে সবাই লিস্ট করতে শুরু করলো।জাবেদা বেগম আর সায়েদা খানম রান্নাঘরে কাজ করছে বাকিরা বিয়ের কথা বলছে।রুকাইয়া তো বলেই ফেললো তার চারটা শাড়ি চাই একমাত্র ননদীনির বিয়ে বলে কথা সবাই কথা বলছে আর আড্ডা দিতে ব্যস্ত।তখনই জাবেদা বেগম আর সায়েদা খানম এসে বললেন,
~খাবার তৈরি খেয়ে নেও সবাই।
সবাই হৈ হুল্লোড় করে খাবার শেষ করলো আরফি এতো হট্টগোলের মধ্যেও একজনকে অনেক মনে করছে তাই সে খাবারের পর রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশপাণে তাকিয়ে বাবার কথা চিন্তা করছে।আজ যদি বাবা থাকতো কীভাবে রিয়েক্ট করতো খুশি হতো নাকি রাগ করতো কে জানে?আবরার আরফির পাশে দাড়িয়ে বললো,
~কাউকে মনে পরছে?
আরফি বললো,
~বাবাকে অনেক মিস করছি।
আবরার আরফির দুবাহুতে হাত রেখে বললো,
~জীবনের এমন অনেক মূহুর্ত এসেছে যেখানে আমার বাবাকে প্রয়োজন ছিল।তখন জানো আমি চুপটি করে মায়ের কোলে মাথা রেখে বলতাম মা চুলগুলো টেনে দেওতো।মা নিজের নরম হাত যখন মাথায় রাখতো তখন আপনাআপনি চিন্তা গুলো পানি হয়ে যেতো।
আরফি আবরারের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
~চেষ্টা করবো দুঃখ গুলোকে নিজের আঁচল থেকে দুরে সরাতে।
আরফির কথা শুনে আবরার মুচকি হাসলো।
সবাই চলে গেলো রাত ১১টার দিকে আবরার যাওয়ার সময় জানিয়ে গেলো শুক্রবার সবাইকে নিয়ে শপিংয়ে বের হতে চায়।কেউই এতে আপত্তি জানালো না।আরফিদের থেকে বিদায় নিয়ে তারা রওনা দিলো বাসার উদ্দেশ্যে।
__________________
দিনগুলো নিজ গতিতে চলতে লাগলো দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে আসলো।আরফি, আবরার বাসার সবাই শপিংয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।আরফান রুকাইয়ার প্রতি এখন বিরক্ত মেয়েটা তার একটুও কথা শুনে না দৌড়াদৌড়ি না করলে রুকাইয়ার শান্তি হয় না কিছু বললে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।আরফান শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে রুকাইয়াকে খুজতে লাগলো।রান্নাঘরের সামনে এসে দেখতে পেলো রুকাইয়া আচার গিলছে মহা খুশিতে এখানে আরফান কতোটা চিন্তিত।আরফান রুকাইয়ার পিছে দাড়িয়ে পরলো রুকাইয়া যেই পিছন ফিরবে তখনই আরফানের বুকের সাথে তার মাথা বারি খায়।রুকাইয়া মাথা তুলে দেখে আরফান দাড়িয়ে আছে রুকাইয়া ঢোক গিলে বললো,
~আপনি রান্নাঘরে কিছু লাগবে?
আরফান বুকে হাত গুজে বললো,
~রুকাইয়া এখন আচার খাওয়ার সময়? সকাল ১০টা নাস্তা না করে এসব হাবিজাবি খাওয়ার মানে কী?
আরফানের কথা শুনে সায়েদা খানম রুম থেকে বের হয়ে বললো,
~আরফান তুই রুকাইয়াকে বকছিস কেন?
আরফান বললো,
~নাস্তা খাওয়ার খবর নেই আচার খাওয়া শুরু।
সায়েদা খানম রুকাইয়ার মাথার হাত বুলিয়ে বললো,
~চলো আমি তোমাকে নাস্তা দিচ্ছি।
সায়েদা খানমের কথায় রুকাইয়া আরফানকে ভেংচি কেটে তার সাথে চলে গেলো।
১২টার দিকে সবাই একত্রিত হয়ে রওনা দিলো শপিংয়ে। অবনি, রাতুল, রুকাইয়া, আরফি সবাই কথায় ব্যস্ত আরফান আর আবরার চুপচাপ বসে আছে।জাবেদা বেগম আর সায়েদা খানম বাসায় রয়েছে তারা যাবেনা শপিং করতে।
আবরার আড়চোখে আরফিকে দেখছে কারণ সে আজ তার পাশের শীটে বসেনি বরং আরফানকে বসিয়ে দিয়েছে।আবরার গাড়ি ড্রাইভ করছে তখনই আরফান পিছন ঘুরে রুকাইয়াকে বললো,
~তোমার কী খিদে পেয়েছে?
রুকাইয়া বিরক্ত হয়ে বললো,
~কত খাবো আমি?মাত্রই তো খেয়ে বের হলাম
আরফান বললো,
~তুমি বাহিরের খাবার খাবে না ব্যাগে মা খাবার দিয়েছে তাই খাবে।
আরফানের কান্ড দেখে গাড়িতে উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসছে।
রুকাইয়া তা দেখে লজ্জা পেয়ে যায় আরফানও তা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে বসে পরে।আবরার বললো,
~আরফান ভাবি মনে হয় লজ্জা পেয়েছে।
আরফান বললো,
~শুরু থেকেই এরকম।
আড্ডা দিতে দিতে সবাই শপিং মলে চলে আসলো।সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলে আবরাী গাড়ি পার্ক করতে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর আবরার ফিরে আসলে সবাই ভিতরে ঢুকে পরে আরফি যখনই ভিতরে যেতে নিবে আবরার সবার অগোচরে তার হাত ধরে ফেললো।আবরারের এহেন কান্ডে আরফি অবাক হলো আবরারের পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,
~কী করছেন হাত ছাড়েন?কেউ দেখলে কী বলবে?
আবরার বললো,
~হবু বউয়ের হাত ধরেছি এতে কী হয়েছে?আর আমার সাথে কথা বলছো না কেন?সেই কখন থেকে তোমাকে দেখছি
আরফি বললো,
~মহাবিপদ তো সবাইকে রেখে আপনার সাথে কথা বলবো।লজ্জা শরম বেঁচে খেয়েছেন।
আবরার বললো,
~লজ্জা শরম বেঁচে কটকটি খেয়েছি।
তখনই অবনি বললো,
~তোমরা কী আসবেনা?
আরফি আর আবরার তার দিকে তাকালো আরফি নিজ হাত ছাড়িয়ে অবনির সাথে চলে গেলো।
_________________
সবাই শপিংয়ে ব্যস্ত যে যার মতো কেনাকাটা করছে আরফি শাড়ি দেখছে। রুকাইয়া তার সাহায্য করছে কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে হঠাৎ একটা শাড়ি হাতে নিয়ল আবরার উপস্থিত হলো।আরফির সামনে রেখে বললো,
~দেখে তো শাড়িটা কেমন লাগছে?
আরফি শাড়িটা দেখে বললো,
~ঠিকই আছে।
আরফির পাশে দাড়ানো রুকাইয়া বললো,
~আরফি শাড়িটা কিন্তু বেশ ভালো।আর তোমাকে মানাবেও ভীষন
আরফি মুচকি হেসে বললো,
~তাহলে এটাই নিয়ে নেই।
সারাদিন শপিংয়ে চলে গেলো অনেক কিছুই কেনা হয়ে গেছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলো বাকি জিনিস পরে নেওয়া যাবে এখন সবাই বাসায় চলে যাবে।তাই করা হলো গাড়ির পিছন শপিং ব্যাগ দিয়ে ভরা সবাই যার যার সীটে বসে আছে।সবাই অনেক ক্লান্ত রুকাইয়া আরফানের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আরফি আবরারের পাশের সীটে বসেছে আবরার গাড়ি ড্রাইভ করছে একহাত দিয়ে আরফির হাতটা শক্ত করে ধরলো।আরফি আবরারের দিকে তাকালো আবরার একধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে।অবনি আর রাতুলও চুপচাপ বসে আছে বাহিরে ঠান্ডা বাতাস বইছে আরফি গাড়ির জানালা খুলে দিলো ঠান্ডা বাতাস শরীরে লাগছে।আরফির তাতে ভালো লাগছে আবরার আরফির দিকে একবার তাকিয়ে সামনে তাকালো।আরফিদের বাড়ির সামনে এসে সবাই আরফান রুকাইয়া গাড়ি থেকে বের হলো।আরফি গাড়ি থেকে নেমে রুকাইয়ার পাশে দাড়ালো।রুকাইয়া আরফানকে বললো,
~ভিতরে চলেন।
আরফান বললো,
~আরফি যাবে না?
রুকাইয়া বললো,
~আপনি চলেন তো
বলেই আরফানের হাত ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে আসলো।আরফি আবরারকে বললো,
~আমি তাহলে আজ আসি।
আবরার গাড়ি থেকে নেমে আরফিকে বললো,
~বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফোন করবো প্লিজ ফোনটা ধরবে।গতকালও তুমি ফোন ধরোনি
আরফি মুচকি হেসে বললো,
~চেষ্টা করবো।
বলেই বাসায় চলে গেলো আবরার বললো,
~প্রিয়াঙ্গীনি এতোটা যত্ন করে আমাকে না পুরালেই পারতে।
আরফি ফ্রেশ হয়ে হলরুমের কাছাকাছি গিয়ে শুনতে পায় আরফান আর সায়েদা খানমের গলার স্বর তারা দুজনই বিয়ের কথা বলছে।আরফান বললো,
~মা ব্যাংকে যে টাকা গুলো আছে তা দিয়ে আরফির জন্য সোনার জিনিস হয়ে যাবে। আর জমানো কিছু আছে তা দিয়ে অনুষ্ঠান কিন্তু আরো তো খরচ আছে
সায়েদা খানম বললেন,
~তোর জমানো টাকা খরচ করার দরকার নেই সামনে রুকাইয়ার ডেলিভারি তখন প্রয়োজন পরবে।আমি মনে করছি তোর বাবা একটা জমি কিনেছিল গাজীপুরের সাইডে তুই যদি বলিস তাহলে সেটা বিক্রি করে বিয়ের সব খরচ হয়ে যেতে পারে।
মায়ের কথায় আরফান বললো,
~সেটাই ভালো হয়।আরফির বিয়েতে কোনোকিছুর কমতি আমি চাইনা।আবরার স্যাররা মানুষ অনেক ভালো তারা কোনো কিছু চাইনি কিন্তু আমার বোনকে আমি খালি হাতে যেতে দিতে চাইনা
সায়েদা খানম ছেলের কথায় ছলছল নয়নে তার দিকে তাকালো আর ভাবলো তার সেই ছোট ছেলেটি আজ কত বড় হয়ে গেছে।আরফির চোখেও আজ পানি তার ভাই যে তাকে এতো ভালোবাসে। আরফি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আরফানের পাশে বসে বললো,
~ভাইয়া খালি হাতে পাঠাচ্ছো না হাত ভরতি ভালোবাসা নিয়ে যাবো সেই বাসায়।কোনো জমি বিক্রি করতে হবে না যতটুকু করতে পারবে ততটুকু করো।
আরফান বললো,
~তুই বেশি বুঝিস না
সায়েদা খানম বললেন,
~আরফি পরেরটা পরে এখন যাও খেয়ে ঘুমাতে যাও।
___________
সকাল বেলা,
আরফির ফোন বেজেই চলছে আরফি সবার সাথে নাস্তা শেষ করে ঘরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো আবরারের ৪০+মিসকলড আরফি ফোন দিতেই আবরার ফোন রিসিভ করে বললো,
~যাক আমার ভাগ্য খুলেছে যে আপনি ফোন দিয়েছেন।
আরফি হালকা হেসে বললো,
~যেকোনো মানুষই ২০মিনিটে ৪০+মিসকলড দেখলে ফোন তো করবে।
আবরার বললো,
~আজ একটু দেখা করবে?
আরফি বললো,
~এই যে সাহেব বিয়ের আর মাত্র ১৫দিন বাকি।দেখা সাক্ষাৎ এখন আর করবো না।
আবরার বললো,
~আজই বিয়ে করে ফেলি কী বলো?
আরফি বললো,
~আস্তো পাগল।
বলেই ফোন রেখে দিলো আর আবরার তা বুঝতে পেরে বললো,
~১৫দিন পর আমার দহনে পোড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও প্রিয়াঙ্গীনি।
রুকাইয়া ঘরে বসে চুল চিরুনি করছে তখনই কলিংবেলের আওয়াজ শুনে সে রুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে সামনে তাকালো।সামনে থাকা ব্যক্তিদের দেখে রুকাইয়া অবাক হলো পাশাপাশি ভয়ও পেলো।তাহলে কী খুশির দিন গুলো আবার চলে গেলো এই বাসায় কী আরো এক নতুন ঝড় আসার আশংকা আছে।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)
আর আপনাদের কী মনে হয় রুকাইয়া কেন ভয় পেয়েছে কারা আগমন ঘটালো আরফিদের বাসায়?🤔🤔