কনসার্টে স্টেজ থেকে নেমে এসে আমায় প্রপোজ করলো রকস্টার আয়াশ। প্রত্যেক দর্শক তাকিয়ে আছে আমার আর আয়াশের দিকে। বিশেষত মেয়েরা। তাদের চোখ যেন তাদের অক্ষিকটর থেকে বের হয়ে যাবার উপক্রম। রিপোর্টারেরা ঘিরে ধরেছে আমাকে আর আয়াশকে। অবশ্য আয়াশের কোনো হেলদোল নাই। আমি ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আমার সাথে কন্সার্টে আসা আমার বন্ধু মাহি আমার দিকে একবার অবাক চোখে তাকায় তো একবার আয়াশের দিকে তাকায়। কিন্তু আয়াশ কেন এমন করল তা আমি বুঝে উঠতে পারলাম না। এদিকে আয়াশ নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আর আমি অসস্তিতে ভুগছি। আবার রিপোর্টারেরা আমায় বলছে ম্যাম প্লিজ এক্সেপ্ট করুন। রকস্টার আয়াশ আপনায় প্রপোজ করেছে প্লিজ এক্সেপ্ট করুন। পাশে থেকে হৈ-হুল্লোড় এর আওয়াজে যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার মস্তিস্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে যেন। আমি আমাএ বান্ধবী মাহির হাত ধরে ভিড় এড়িয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলাম। আমি বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করলাম এরপর। মাহি আমায় প্রশ্ন করল,,,
এটা কি হলরে মিহি?
আমি বললাম,,, জানিনা দোস্ত। শুধু এটা জানি আজ বাড়িতে গেলে আমার নিস্তার নাই।
,,, তুই জানিস এটা এখন ব্রেকিং নিউজ হিসেবে টিভিতে সমপ্রচার হবে।
,,, জানি আমি। তাই তো ভয় পাচ্ছি মাহি।
,,, হুম বুঝছি
,,, তুই তো জানিস আমার মামি আমার সাথে এজন্যে কি করতে পারে?
,,, হ্যা জানি বোন
,,, আমার তো বাসায় যেতেও ভয় করছে।
,,, আল্লাহর নাম নিয়ে বাসায় ঢুক, আল্লাহ রহম করার মালিক।
,,, হুম তবে আসি।
,,, সাবধানে যাবি।
,,,হুম তুইও সাবধানে যাবি।
,,, বাই।
,,,বাই।
আমি রওয়ানা দিলাম। বাসায় যেতে যেতে আমার পরিচয়টা আপনাদের কাছে দিয়ে দেই। আমি আরিয়ানা জাহান মিহি।অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি। আমি আমার মামা মামির সংসারে বড় হয়েছি। বাবা মা তো আমায় রেখে আরো ১৮ বছর আগে গত হয়েছেন। এতিম আমি। আমার পান থেকে চুন খসলেই সেটার জন্যে শাস্তি পেতে হয়। আর আজ যা হল তার জন্যে বাসায় আমার জন্যে কি অপেক্ষা করছে তা ভেবেই শিহরিত হয়ে উঠছি। আমার সাথে যে ছিল সে হল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মাহি। আমার সময়ের অসময়ের ছোটবেলার বন্ধু। আমার জীবনের সবকিছু আমি ওর সাথে শেয়ার করতে পারি। আর আজ আমায় যে প্রপোজ করল সে হল রকস্টার আয়াশ। আজ মাহির সাথে তার কন্সার্টে গিয়েছিলাম। হ্যা সে আমার অতি পছন্দের একজন গায়ক। সব মেয়েরা তার প্রতি দিওয়ানা। আমারো তার গান ভাল লাগে। কিন্তু আজ যে আমার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটবে তা আমি কল্পনাতেও আনিনি।দেখুন আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বলতে বাসায় এসে গেছি। এখন কথাবার্তা পরে হবে। আমি আগে বাসায় ঢুকি।
বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই আমার মামতো বোন রিসা নাক ছিটকে ভেতরে চলে গেল বসার ঘর হতে। আমি বুঝিনা মেয়েটা আমাকে দেখলেই কেন এমন করে। হয়ত আমি ওর কাছে ময়লা নোংরা কিছুর সমতুল্য তাই। আমি কোনদিকে না তাকিয়ে আর আমি আমার রুমে ঢুকে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আজ খুব ক্লান্ত লাগছে আমার। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। তার মধ্যেই হঠাৎ রেগেমেগে আমার ঘরে ঢুকল। তারপর আমার চুল মুঠি করে ধরে আমায় নিয়ে গেল রান্নাঘরে। রান্নাঘরে নিয়ে সোজা গরম খুন্তি দিয়ে আমার পিঠে আর হাতে দিলো ছেকা। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলাম।
মামি আমার মুখ আটকিয়ে ধরে বলল,,,,
চুপ কপালপুড়ি একদম চুপ। আমাদের খাস আবার আমাদের পড়স আবার আমাদের মান সম্মানেই হাত লাগাস?
আমার চোখ থেকে অনবরত পানি ঝড়ছে। মুখ দিয়ে কিছু বলছিনা আমি।
মামি আবার বলল,,, কিরে উত্তর দে!
আমি বললাম,,, মামি আমি কি করব? আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা।
মামি বলল, ওহ তলে তলে বড়লোকদের সাথে পীড়িত করিস আবার বলিস কিছুই জানিস না?
এই বলে আবার আমার হাতে গরম খুন্তির ছেকা দিল মামি।
আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম,,,, আল্লাহ গো!!!
মামি আমার পিঠে কিল মেরে বলল, খবরদার একদম চিৎকার করবিনা। পাড়ার মানুষকে তোর এই চিৎকার শুনিয়ে কি তুই প্রমাণ করতে চাস? আমরা অনেক খারাপ আর তুই ভাল? কখোনো যদি আমাদের পরিবারের কাউকে নিয়ে আর কেউ কোনো কটু কথা বলে তাহলে তোকে রাস্তায় নামিয়ে তোর মান ইজ্জত শেষ করব আমি। যা এখন সর এখানে থেকে।
আমি চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজের রুমে চলে এলাম। বিছানায় শুয়ে কাদতে থাকলাম অনেক। কিছুক্ষণ পর মামি আবার এসে বলল,,,
যা নবাবজাদী, রান্নাঘরে অনেক থালাবাসন জমে আছে। যা গিয়ে সব পরিস্কার কর। আর তোর মামার সামনে এভাবে ভেলভেলিয়ে কাদতে যাতে না দেখি। যা!!
আমি রান্নাঘরে গিয়ে সবকিছু পরিস্কার করে দিলাম। তারপর রুমে এসে নিজের বই নিয়ে একটু বসলাম । সামনে আমার মিড টার্ম পরীক্ষা । তাই বই নিয়ে একটু পড়াশুনা না করলেই নয়। কিছুক্ষন পর মাহি আমায় ফোন করল। মাহি বলল,,,,
হ্যালো! কিরে মিহি সব ঠিক আছে তো?
,,, হুম
,,,তোর মামি কিছু করেনি তো?
,,, না না শুধু একটু বকছে আর কিছু না
,,,সত্যি?
,,, আরে হ্যা!
,,, ওকে তাহলে কাল কথা হবে দেখা হবে আল্লাহ হাফিজ
,,, হুম আল্লাহ হাফিজ।
অন্যদিকে,
নিজের রুমে বসে ফোনের গ্যালারি ঘাটাঘাটি করছে আয়াশ। সে আপনমনে দেখছে মিহির ছবি। তার ফোনের গ্যালারি জুড়ে শুধুই মিহির ছবি। সে আপনমনে মিহির ছবি দেখছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে মিহিকে নিয়ে।
তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।
এটাকি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে
চাইলে ভেঙে দেবে গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।
একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত।
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।
ভোর না হতে হতে তোমাকেই দেখার আশায়
শেষ ছবিটা দেখি বারে বারে আহা! দেখি,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।
একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত…
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।
আয়াশ আপনমনে মিহির কথা চিন্তা করে গান গাচ্ছিল। ঠিক তখন তার রুমে প্রবেশ করল তার মা, মিসেস আসমা চৌধুরী । সে রুমে ঢূকেই সোজা একটা প্রশ্নের তীর ছুড়লো আয়াশের দিকে। সে প্রশ্ন করলো আয়াশকে,,,
এমনটা কেন করলি আয়াশ তুই???
চলবে………
#গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 01
#লেখিকা_Sabirina_Khanam
(ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। রেসপন্স পেলে পরবর্তী পর্ব দিব।)