গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 03
#লেখিকা_Sabirina_Khanam
আমিও আয়াশের কথায় বকা বনে গেলাম। আমি আয়াশের পাশ দিয়ে যেতে লাগলাম। সে সাথে সাথেই আমার হাত ধরে ফেলে। আয়াশ আমার হাতের পোড়া অংশ ধরায় আমি হাতে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলাম। তখন অনেক লোক জড় হয়ে গেল সেখানে। অনেকে অনেক কথা বলাবলি করতে লাগলো। একটা ছেলে এসে আয়াশকে ধাক্কা দিল আর বলল,,,,
মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করতে ইচ্ছে হয় তাইনা???
আয়াশ বলল,,, ভাই আপনি মুখ সামলে কথা বলুন।
,,, এই তোর মতো ছেলের সাথে আবার মুখ সামলে কথা কি রে??
,,, ভাই আপনাকে আবার বলছি আপনি মুখ সামলে ঠিকমতো কথা বলুন। আপনি হয়তো জানেন না আমি কে?
,,, তুই হলি এমন একটা ছেলে যার মেয়ে দেখলেই মন লুতুপুতু করে। তুই নিজের চোখ সামলে রাখ।
,,, আপনি আপনার ঘরের বউ এর হাত ধরলে আমরা কি বলতে আসি ভাই আপনার মেয়ে দেখলেই মন লুতুপুতু করে?
,,, সেটা আমার নিজের বউ, আর তুই কি করছিস?
,,, ইনিও আমার নিজের বউ।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে সব কথা শুনছিলাম। প্রথমে ভাবছিলাম আমার জন্যে লোকটা কত কটু কথা শুনছে। এখন যদি এরা আমাকে প্রশ্ন করে আমি আয়াশের বউ নাকি না আর আমি যদি তখন না করি তাহলে আয়াশকে এরা মারতেও পারে। আমি গভীরভাবে এসব চিন্তা করছিলাম। আর নিজেকে মনে মনে বকছিলাম যে মিহি তুই কেন এত জোরে আর্তনাদ করে উঠলি?
আমি এসব চিন্তা করছিলাম তখন আমায় এক লোক ডেকে বলল,,,
ইনি কি সত্যিই আপনার স্বামী হন?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,,, হুম।
আয়াশ অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি সেটা খেয়াল করলাম কিন্তু আমি সেটা আয়াশকে বুঝতে দেইনি।
এমন সময় লোকটা আমায় আর আয়াশকে বলে,,, আপনারা ঘরের সমস্যা ঘরে মিটান। বাহিরে এমন করলে যে কেউ ভুল বুঝতে পারে।
আয়াশ কিছু বলল না। আমি লোকটার কথায় সম্মতি জানালাম। লোকগুলো চলে গেলেন। তারা চলে যাবার পর আয়াশ আমায় বলল,,,
তুমি চাইলেই না করতে পারতে মিহি। তুমি না করলে এরা আমার সাথে ঝামেলা করতে পারতো আর আমি ঝামেলায় পড়ে যেতাম। আমার ক্যারিয়ারেও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারতো। তুমি না করলেনা কেন? সম্মতি জানালে কেন?
আমি বললাম,,, মনে আছে একদিন আপনি আমায় সাহায্য করে কতগুলো খারাপ ছেলেদের থেকে আমায় বাচিয়েছেন। সেদিন আপনি না থাকলে আজ আমি হয়তো এই দুনিয়াতেই থাকতাম না। আপনি আমার মান সম্মান বাচিয়েছেন। আপনাকে কি করে বিপদে ফেলি বলুন তো?
,,, আজ যে আমিই তোমায় ডিস্টার্ব করছিলাম মিহি।
,,, তবুও আমি আপনার ঝামেলা হতে দেয়নি আপনার হ ঋন কিছুটা হলেও পরিশোধ করার জন্য।
এটা বলে আমি সেখানে থেকে চলে আসতে নিলাম। তখন আয়াশ পিছন থেকে বলল,,,
আজ এই কাজটা যদি আমায় তুমি ভালোবেসে করতে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।
আয়াশের এই কথায় আমি থমকে দাঁড়ালাম। কথাটা যেন বুকে তীরের মতো বাধলো। তবুও কোনো উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম ভার্সিটিতে। আয়াশ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে। আয়াশ তাকিয়ে ছিলো আমার চলে যাওয়ার দিকে।
ভার্সিটিতে……
আমি ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে ছিলাম। মাহি এসে আমার পাশে বসল। কতক্ষন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল মাহি। তারপর আমার কাধে হাত রাখলো। মাহির হঠাৎ স্পর্শ আমার উপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। কারন আমি আগেই বুঝেছিলাম মাহি এসে আমার পাশে বসেছে। আমি বললাম,,,
জানি তুই বলবি আমায় কেন এমন দেখাচ্ছে তাইতো??
মাহি বলল,,, জানিস যেহেতু তাহলে বলে ফেল।
,,, আজ আয়াশ আমার পথ আটকিয়েছিলো।
,,, ওহ এটাতো নরমাল ব্যাপার। তারপর বল।
,,, আয়াশ আমার সাথে কথা বলছিল। আমি চলে যেতে নিলে আয়াশ আমার হাত ধরে ফেলে। আমার হাতের৷ পোড়া অংশে স্পর্শ লাগার কারনে আমি ব্যথায় একটু জোরে চিৎকার করে উঠি আর…
মাহি আমাকে থামিয়ে বলল,,, হাত কিভাবে পুড়েছে?
ইসস নিজের কথায় নিজে ফেসে গেলাম। এখন এই মেয়ে আমাকে বকবে যে আমি কাল ওকে জানায়নি কেন? উফ আমার মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই। নিজেকে নিজে বকতে থাকলাম আমি।
মাহি বলল,,, বিড়বিড়িয়ে নিজেকে বলে কোনো লাভ নেই। হাত দেখান আমায় ম্যাডাম।
আমি বললাম,,, রান্না করতে গিয়ে পুড়ে গেছে। তেমন কিছুই না এটা।
,,,আমি তোকে হাত দেখাতে বলেছি।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো ওকে হাত দেখালাম। ও দেখে জোরে বলল,,, ওই কালকে কি হয়েছিলো বাসায়?
,,, আমি বললাম না একটু ঝামেলা হয়েছে শুধু আর কিছুই না।
,,, আর তোর রান্না করতে গিয়ে হাতের এতো অংশে ধাপে ধাপে পুড়েছে?
আমি আর না করলাম না। মাহিকে বললাম,,,
নিজের দোষের শাস্তি পেয়েছি শুধু।
,,, কাল ওটা তোর দোষ ছিলো মিহি?
,,, আমি কাল কন্সার্টে না গেলে ওসব হতোই না। মামিও প্রতিবেশীদের মুখের এতো কথা শুনতো না।
,,, ওহ তাহলে তো দোষ আমার, আমিই তোকে নিয়ে গিয়েছিলাম।
,,, তোর দোষ কিভাবে? তুই তো আর জানতি না এমন হবে।
,,, তাহলে তোরও দোষ নেই।
,,, বাদ দে।
,,, হু বাদ ই দিলাম।
ক্লাস শেষে চলে গেলাম টিউশন পড়াতে। আমার ভাগ্য হয়তো আজ খুব বেশি খারাপ। তাই আজ যে মেয়েকে পড়াই তারা আমাকে সামনে মাস থেকে পড়াতে আসতে নিষেধ করে দিলো। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাকি ২ টা টিউশন পড়িয়ে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় পৌছে নিজের রুমে গেলাম। ব্যাগটা রেখে আমি যেই শাওয়ার এ যাবো তখন রিসা এসে আমায় বলল,,,
মিহি আমাকে জলদি এক কাপ চা বানায় দাও তো। আমার মাথা খুব ব্যথা করছে।
এটা বলে রিসা আমার রুম থেকে চলে গেলো। আমার উত্তরও শুনল না মেয়েটা। আরকি আমিও ওর জন্যে চা বানিয়ে ওর রুমে ওকে দিয়ে আসলাম। চা বানাতে আর কি এমন সময় লাগে? আমি রিসাকে চা দিয়ে চলে আসতে যাবো তখন আমায় রিসা বলে উঠলো,,,
মিহি আমার আজ বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। আজ রাতে বিরিয়ানি বানিয়ো তো।
আমি বললাম,,, আমি ফ্রেশ হয়ে বানিয়ে দিব।
,,, হুম এবার যাও।
আমি চলে আসলাম। গোসল সেরে নামায পরে একটু পড়তে বসলাম। খানিকক্ষণ পড়ে রান্নাঘরে চলে এলাম বিরিয়ানি বানানোর উদ্দেশ্যে।
রাতে রান্না করে মাহিকে কল দিলাম। মাহি রিসিভ করতেই বলল,,,
হ্যা মিহি বল।
,,, মাহি আমার একটা সাহায্য করতে পারবি?
,,, তুই বল কি করতে হবে?
,,, আমায় ১টা টিউশনির ব্যবস্থা করে দিবি?
,,, আচ্ছা আমি দেখব বিষয়টা। তোকে একটা কথা বলি।
,,, বল।
,,, তুই অনলাইনে এ টিউশনি খুজে দেখ। ভালো কিছু পেলে মেসেজ দিবি। এতে তুই জলদি টিউশনও খুজে পাবি।
,,, আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি ফোন রাখলাম। এরপর মাহির কথামতো অনলাইনে টিউশনি খোঁজ করা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর একটা পোস্ট দেখলাম। পোস্ট টা আজান চৌধুরির। সে তাই ছেলের জন্য হোম টিউটর খুজছেন। সপ্তাহে ৩দিন পড়ালে মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা। আমি অবাক এতো টাকা এজন্য। আমি তার সাথে যোগাযোগ করলাম। সে কাল বিকেলে তার স্ত্রী এর সাথে আমায় দেখা করতে বলল। আমি রাজি হলাম।
ভোরবেলা আমি ফজরের নামাজ আদায় করে মাহীকে কল দেওয়ার জন্য ডাটা অন করলাম। তখন দেখলাম রিয়ান ভাইয়ার মেসেজ। সে হলো আমার মামাতো ভাই, রিসার আপন ভাই। কানাডার একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। সে আমায় মেসেজ দিয়েছে, ঘুম হলে আমাকে কল দিস মিহি। আর সাথে ১২টা মিসড কল। আমি সাথে সাথে কল ব্যাক করলাম। রিয়ান ভাইয়া যেন আমার কলের ওয়েট করছিল। সে সাথে সাথে রিসিভ করে বলল,,,
কিরে মিহি কেমন আছিস?
,,, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছ ভাইয়া?
,,, আলহামদুলিল্লাহ। কি করিস?
,,, এইতো নামায পড়লাম। এখন রান্না করতে যাবো।
,,, তুই রান্না পারিস নাকি?
,,, কেনো আমি কি রান্না করতে জানিনা তোমার মনে হয়?
,,, না তা না। সাবধানে রান্না করবি। তোর হাত যাতে আবার না পুড়ে।
,,, হুম হুম।
,,, আমাকে মনে পড়েনা তোর?
,,, আমার ভাইকে কিভাবে ভুলবো বলো?
,,, ওহ আচ্ছা। রাখি এখন।
,,, হুম বাই।
,,, ভাল থাকিস, বাই।
আমি ফোন রেখে দিলাম। আর ওইদিকে রিয়ান মিহির ছবি বের করে জড়িয়ে ধরল নিজের বুকে। আর বলতে থাকল,,, কবে বুঝবি মিহি যে আমি তোকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি তোকে। খুব ভালোবাসি।
চলবে….
(ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। রেসপন্স পেলে পরবর্তী পর্ব দিব। গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি।)