গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 06
#লেখিকা_Sabirina_Khanam
মিহি বেড়িয়ে পরলো। সে যখন সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন কেউ একজন তার ওড়না টেনে ধরল। মিহি ভয় পেয়ে গেলো। সে পিছনে ঘুরে দেখল ২টা ছোত হাত ওর ওড়না ধরে আছে। মিহি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। তারপর পিছিয়ে ছোট ছেলেটার কাছে এসে বলল,,,
কি হয়েছে পিচ্চি?.
মায়ান তার ভ্রু জোড়া কুচকে মিহির দিকে তাকালো।
তারপর বলল,,, আমি পিচ্চি না।
,,, তাহলে তুমি কি?
,,, আমি হলাম gentleman
,,,ওহ তাই?
,,,হুম। তুমি এখানে কি করো?
,,, আমি এখানে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
,,,তুমি এসেছো কেন?
,,,কেনো তুমি খুশি হওনি?
মায়ান তার মুখে হাত দিয়ে কতক্ষণ চিন্তা করলো কিছু একটা। তারপর মিহিকে ধরে বলল,,,
অনেক খুশি হয়েছি।
,,,আমিও খুব খুশি হয়েছি মায়ান।
,,,তুমি আমার নাম জানলে কি করে?
,,, ম্যাজিক করে। ( মিহি হাত একটু নাড়িয়ে বলল)
,,,আমিও তোমার নাম জানি।
,,,বলোতো কি আমার নাম?
,,,মিহি।
,,,এই তুমি কেমনে জানলে?
,,,কাকাই বলতে না করছে তো।
,,,কাকাই?
,,,হ্যাঁ কাকাই।
,,,কি না করছে?
,,,তোমার নাম বলতে। আর আমি তো বলতে পারলে বলতামই তাইনা?
,,,হ্যাঁ সেটাও ঠিক।
,,, জানো তুমি ছবির চেয়েও বেশি সুন্দর। ( মায়ান মিহির গাল হাত দিয়ে ছুয়ে বলল)
,,,আমার ছবি তুমি দেখেছিলে?
,,,হ্যাঁ রোজ দেখি কাকাই এর সাথে।
মিহি চিন্তা করতে থাকলো মায়ান কিভাবে ওর কাকাই এর সাথে রোজ মিহির ছবি দেখে। মায়ান আর ওর তো আজ প্রথম দেখা। তখন ওখানে মায়া উপস্থিত হলো. মায়া মায়ানকে পুরো বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছিলো। মায়ানকে পেয়ে মায়া স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর মায়ানকে বলে,,,
তোকে এতোবার ডাকলাম একটিবারও শুনলি না।
,,,আমি তো মিহির সাথে কথা বলছি।
,,,মিহি তোর চেয়ে বড় হয়।
,,,তাতে কি?
,,,তবেরে? তাতে কি?
মায়া মায়ানের দিকে তেড়ে আসলো। মায়ান মিহির পিছে লুকালো। মায়া বলল,,,
আজ মাকে ভুলে গেলি?
মায়ান বলল,,, কই ভুলিনি তো।
,,,তাহলে আজ মিহির প্রতি এতো ভালবাসা কেন?
,,,এতোদিন কাকাই এর সাথে ছবিতে দেখেছিলাম। আজ তো সত্যি সত্যি দেখছি তাই।
মিহি পুনরায় অবাক হল। সে মায়াকে প্রশ্ন করে ফেলল,,,
আপু মায়ান আমার ছবি দেখলো কিভাবে? আর ও খালি কাকাই করছে। কাকাই এর সাথে দেখেছে। বিষয়টি বুঝলাম না।
মায়া বুঝতে পারলো আসলে কি হয়েছে। সে তাই কথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বলল,,,
আসলে কি মায়ান তো বাচ্চা ছেলে। তুমি ত বুঝছো মিহি, এই ছোট বয়সে বাচ্চারা কতকিছু বানিয়ে বানিয়ে বলে।
মিহির ব্যাপারটা ভালো ঠেকলো না। সে তাও মায়ার কথায় সায় দিয়ে বলল,,, হুম।
,,,হুম।
,,,আচ্ছা আপু আমি আসি।
,,,সাবধানে যেও।
,,,হুম।
মিহি বেরিয়ে গেলো। মিহির খটকা লাগছিলো খুব। তবুও সে মনের কথা মনে রেখে বাসায় এসে পড়ল।
বাসায় এসে মিহি আর শান্তি পেলো না। শুরু হয়ে গেলো ওর মামির খটখট। বাসায় ঢোকামাত্রই মিহির মামি মিহিকে বলল,,,
কিরে নবাবের বেটি? আজ এতোখন কোথায় ছিলি?
,,, মামি আমি পড়াতে গেছিলাম।
,,,সত্যিই পড়াতে গেছিলি নাকি?
,,,হ্যাঁ মামি সত্যিই পড়াতে গেছিলাম।
,,,ওহ, তোকে তো আর বিশ্বাস করা যায়না বাপু।
,,,কেন আমাকে বিশ্বাস করতে পারবেনা?
,,,তোর নামে পাড়ায় যা কথা হয় আমি আর কি বলতে পারি বল?
,,,মামি তুমি তো আমায় ছোট থেকেই দেখছো?
,,,হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো জোর গলায় আমিও মাঝে মাঝে বলি তোর চরিত্র ভালো না।
,,,মামি?
,,,ওই আবার আমার সাথে এভাবে কথা বলিস কেন? খবরদার বলছি খবরদার। যা গিয়ে কাজগুলো পড়ে আছে ওগুলো কর।
মিহি আর কিছু বলল না। সে চুপচাপ চলে গেল। হাত মুখ ধুয়ে ঘরের কাজগুলো সেরে নিলো। তারপর গোসল করে নামাজ পরে নিল।
………………………………………
রাত্রিবেলায়,
আরশি আয়াশের রুমে গেল। গিয়ে দেখে আয়াশ ফোন এ কিছু একটা করছে। আরশি আয়াশের ফোনে উকি মারলো। আর দেখল তার ভাই আয়াশ মিহির ছবি দেখছে। আরশি আয়াশকে বলল,,,
ভাই এবার একটু ছোটো ভাবির ছবি দেখা কমা। গুনাহ হয় তো।
আয়াশ ভ্রু কুচকে আরশির দিকে তাকালো। সে তার পাশে ফোনটা রেখে বলল,,,
আমার বউ এর দিকে আমি তাকাই তাতে কার কি?
,,,ওই ভাবি কি এখনো তোর বউ হইছে নাকি?
,,, হতে কতক্ষণ?
,,, এসব বাদ। চল আম্মু তোকে ডাকছে।
,,,কোথায় মা?
,,,আম্মু নিজের রুমেই বসে আছে। আমায় বলল তোকে ডেকে দিতে।
,,,আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
,,,হুম আয়।
,,,হুম।
আরশি চলে গেল। আয়াশ ও তার মায়ার রুমের দিকে পা বাড়ালো।
আয়াশ তার মায়ের রুমে গিয়ে দেখল তার মা আর বড় ভাবি মায়া সেখানে বসে আছে। আয়াশ রুমের দরজায় নক করে বলল,,,
আসব মা?
মিসেস আসমা বললেন,,, এসো।
আয়াশ রুমে ঢুকল। তারপর সে তার মুখের হাসি বজায় রেখে বলল,,, তোমাদের কি হয়েছে?
মায়া বলল,, তুমি তোমার বউকে একশবার দেখো সমস্যা নাই। কিন্তু আমার ছেলেকে ওর দিওয়ানা বানায়ো না।
আয়াশ বলল,,, বুঝিনি ভাবি।
মায়া বলল,,, তুমি তোমার বউ এর ছবি দেখো ভাল কথা, তাহলে তোমার বউ এর ওড়না আমার ছেলে টানে কেন?
মিসেস আসমা একটু কাশলেন আর ওইদিকে আয়াশ মায়ার কথা বুঝতে পারলনা। মায়ার কথা যেন ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।
মিসেস আসমা বলল,,, তুই তো জানিস আমরা মায়ানের জন্য হোম টিউটর খুজছিলাম।
আয়াশ কথাটা একদম ভুলে গিয়েছিল। এখন যদি ও বলে না মা আমি ভুলে গেছি তাহলে এখন ওকে ওর মায়ের কাছে বকা শুনতে হতে পারে। তাই আয়াশ মিথ্যে বলল।
আয়াশ বলল,,, হ্যা মা মনে আছে।
মিসেস আসমা বললেন,,, যাক তাহলে ভালো। তাহলে মায়ানের টিউটর এর নাম শুনবিনা?
আয়াশ বলল,,, এই জন্য ডাকছ তোমরা আমাকে?
মিসেস আসমা বলল,,, হ্যাঁ।
আয়াশ বলল,,, মা আমার এতে কোনো ইন্টারেস্ট নাই।
মায়া বলল,,, যদি মিহির নাম বলি তাও ইন্টারেস্ট থাকবেনা দেবরজি?
আয়াশ হকচকিয়ে গেল মায়ার কথা শুনে। আয়াশ বলল,,, কি বলতে চাইছ ভাবি?
মায়া বলল,, যা তুমি শুনলে। আমার ছেলের টিউটর এর নাম আরিয়া ইশরাত মিহি।
আয়াশ বলল,,, মিহি মায়ানকে পড়াবে?
মায়া বলল,,, আরে হ্যাঁ।
আয়াশ জিজ্ঞেস করল,,, মিহি কখন আসবে কাল?
মায়া বলল,,, তোমাকে জানাবনা।
আয়াশ বলল,,,মা তুমি তো বল?
মিসেস আসমা বললেন,,, মিহি যখন পড়াতে আসবে আমি চাইনা তুমি বাসায় থাকো। মায়ান মিহিকে খুব পছন্দ করেছে। মিহি যদি তোমাকে দেখে পড়াতে না আসে?
আয়াশ বলল,,, বুঝতে পারছি।
মিসেস আসমা বললেন,,, ভালো।
মিহি রাতে বেল্কনিতে দাঁড়িয়ে আজ সারাদিন ও কি কি করল, কি কি ওর সাথে ঘটলো তা চিন্তা করছিলো।
ওর মনে আয়াশের ছবি ভেসে উঠলো। মুহুর্তে ওর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। মিহি নিজেকে নিজে বলতে লাগলো,,,,
আমিও যে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি আয়াশ। কিন্তু আমি জানি তুমি কখনো আমার না। হয়তো তোমাত আমার প্রতি মোহ কাজ করছে যেটা মুহুর্তের মধ্যেই কেটে যাবে। কিন্তু আমার ভালবাসা থাকবে অনন্তকাল। তুমি আমার না আমি জানি, এই সমাজ আমাকে তোমার হতেও দিবেনা। কিন্তু তোমায় আমি ভালোবেসে যাব চিরকাল।
তখন কে যেন পিছন থেকে বলে উঠলো,,,
ভালোবাসো তো বলতে কেন এতো ভয়? যা হয় হোকনা, ভালবাসাকে করে নাও জয়।
চলবে……..
(কে ছিলো মিহির পিছনে? জানাবেন আমায়। আগের part এ অনেকেই সঠিক উত্তর দিয়েছেন। হ্যাঁ মায়ানই ধরেছিল মিহির ওরনা। আমি সবাইকে পুরস্কার দিব। কিন্তু এতোজনকে এতো জলদি পুরস্কার দেওয়া সম্ভব না। তাই পরবর্তী যে মাসে একটাও রবিবার নাই, সে মাসে আপ্নারা পুরস্কার পেয়ে যাবেন। আর কাল গল্প দিতে পারিনি কারন আমার শরীর ভালো না। সবাই আমার জন্যে দুয়া করবেন। টাটা।)