গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 10

গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 10
#লেখিকা_Sabirina_Khanam_ছদ্মনাম

মাহি সেখানে পৌছে হুট করে সবার সামনে আয়াশকে একটা চড় মেরে বসে। তারপর আয়াশের কলার চেপে ধরে বলে,,,

মিহি আপনার প্রস্তাবে সায় দেয়নি দেখে ওর এভাবে ক্ষতি করলেন আপনি? আপনার বুক কাপলো না? আপনি তো সবার সামনে বলেছিলেন যে ওকে ভালোবাসেন? এই আপনার ভালোবাসা?

আয়াশ নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে আছে মাহির দিকে। তার মুখ থেকে কোনো কথা বেরোচ্ছেনা। সে মনে করছে মাহি তো সত্যিই বলেছে। মাহির কথায় আয়াশের অপরাধবোধ আরোও গাঢ় হয়ে উঠেছে।

মাহি বলল,,, কি হল? কথা বলছেন না কেন?

আবির মাহির হাত ধরে আয়াশকে ছাড়াতে যায়। কিন্তু তার আগেই মাহি আয়াশকে ছেড়ে দিয়ে আবিরকে বলে,,,

আপনিও তো বলেছিলেন আমায় ভালোবাসেন। আমিও তো সাড়া দেইনি। এখন আপনারও তো আমার ক্ষতি করা উচিত তাইনা মিস্টার আবির?.

আবির বলল,,, আমি জানি মাহি তুমি মিহি ভাবির জন্যে মেন্টালি প্রেশারে আছো। তাই বলে তুমি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা অথবা আয়াশের প্রতি মিহি ভাবির ভালোবাসাকে অপমানে করতে পারোনা।

মাহি বলল,,, হ্যা আপনিও তো ওনার পক্ষে থাকবেন। আপনার বন্ধু না উনি। আপনারও তো তার মতোই হওয়া উচিত। ভালোবাসার কথা বলবেন প্রথমে আর সায় না দিলে তার কোনো ক্ষতি করে দিবেন। এটাই তো আপনাদের নিয়ম তাইনা?

আবির বলল,,, ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট মাহি। নাহলে আমি ভুলে যাবো যে তুমি আমার ভালোবাসা।

মাহি বলল,,, এইতো আপনার আসল রুপ ফুটে উঠেছে। তা মিস্টার আয়াশ আপনি এখনো আপনার অভিনয়ের চাদরটা গায়ে কেন জড়িয়ে রেখেছেন তা কি জানতে পারি?

আয়াশ বলল,,, মাহি তুমি আমার কথা শুন। আমি সত্যিই মিহিকে ভালোবাসি। আমি কোনো অভিনয় করছিনা।

মাহি কাদতে কাদতে চিৎকার করে বলল,,, হ্যাঁ হ্যাঁ ভালোবাসেন। ভালোবাসেন বলেই তো আজ আমার বান্ধবীর এই অবস্থা। ছোট থেকে ও ওর মামির আর মামাতো বোনের কাছে থেকে কম কষ্ট সহ্য করেনি। এখন আবার আপনি জুটেছেন ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্য? আরে আমি তো ভেবেছিলাম আপনি মিহিকে সত্যি ভালোবাসেন।

তখন একজন নার্স এসে বলল,,, আপনারা আপনাদের সমস্যা সব নিজেদের বাড়িতে গিয়ে মেটান। এখানে আপনাদের জন্যে শুধু আপনাদের পেশেন্টেরই না, সব পেশেন্টদেরই কষ্ট হচ্ছে। আশা করি আপনাদের এই কথা আমার বা আমাদের কারো পুনরায় এসে বলতে হবেনা।

এই কথা বলে নার্স চলে গেলেন। মাহি মাথা ধরে বসে পড়ল। আজান তখন এসে বলল,,,

আমি মা আর আরশিকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে এসেছি। আয়াশ তুই একটু রেস্ট নে। আর কতক্ষণ এভাবে থাকবি?

আয়াশ কোনো উত্তর দিল না। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। আবির এসে আজানকে বলল,,,
কেমন আছনে ভাইয়া?

আজান বলল,,, আরে আবির যে। কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর দেখলাম তোমায়।

আবির বলল,,, ভালোই ভাইয়া।

আজান বলল,,, ভালো থাকলেই ভালো।

তখন একজন নার্স এসে বলল,,, আপনাদের পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে।

আয়াশ আর মাহি এটা শুনেই উঠে দাড়ালো। আয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহি নার্সকে জিজ্ঞেস করল,,,
আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?

,,, না ম্যাম। আগে স্যার ওনার চেক আপ করবেন। তারপর স্যার বললে আপনারা ওনার সাথে দেখা করতে পারবেন। আমি স্যারকে ডেকে আনছি।

মাহি বলল,,, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করছি।

নার্স চলে গেলো। আর মাহি আবার বসে পড়ল। আজান মাহিকে জিজ্ঞেস করল,,,
তুমি কে?

মাহি বলল,,, আমি মাহি। মিহির বান্ধবী।

আজান বলল,,, ওহ আচ্ছা।

ডক্টর এসে মিহিকে চেক করল। তারপর বেড়িয়ে এলো। এবার আয়াশ ডক্টর এর পথ আটক জিজ্ঞেস করলো,,,

ডক্টর কেমন আছে আমার মিহি? ওর কিছু হয়নি তো?

মাহি আয়াশের কথা কেটে বলল,,, উফ মুখে ভালো কথা আসেনা তাইনা? ডক্টর মিহির সাথে কি আমরা এখন দেখা করতে পারি?

ডক্টর বললেন,,, হুম তবে এখনো একটা কথা আছে।

আয়াশ বলল,,, কি?

ডক্টর বললেন,,, মিস্টার আয়াশ মিহি তার পুরোনো সব স্মৃতি ভুলে গেছে। মিহির এখন কিছু মনে নেই। এমনকি নিজের পরিচয়ও না।

আবির মাহি আয়াশ আর আজান একসাথে বলল,,, কি??

ডক্টর বললেন,,, আস্তে কথা বলুন। হ্যাঁ মিহির ব্রেন থেকে পুরোনো সব স্মৃতি মুছে গিয়েছে। আর হয়তো ওর স্মৃতি ফিরে আসতেও না পারে।

মাহি এটা শুনে ধপ করে বসে পড়ল। আর বিড়বিড় করে বলতে থাকল,,,
মিহির সব স্মৃতি মুছে গেছে? এর মানে ও আমাকেও ভুলে যাবে? আমাকে চিনতে পারবেনা মিহি।

আর ওইদিকে আয়াশ ডক্টর এর কথা শুনে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তার মিহি তার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে এটা সে বিশ্বাস করে পারছেনা। আয়াশের আজ যেন পুরো দুনিয়াটাই ঘুরে গিয়েছে।

আর আবির বুঝতে পারছেনা সে কাকে সামলাবে এখন? একদিকে তার প্রিয় বন্ধু আরেকদিকে তার ভালোবাসা। সে মাহির কাছে গিয়ে পাশে বসে বলল,,,

কেদোনা মাহি, সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিও। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে। দেখিও এতেও হয়তো মিহি ভাবির জন্যে ভালো কিছুই লেখা আছে। শুধু আল্লাহ এখন তাকে আর আমাদের ক্ষণিকের কিছু কষ্ট দিচ্ছেন।

মাহি কাদতে কাদতে আবিরকে জড়িয়ে ধরল। কাদতে কাদতে তার নিজেরই খেয়াল নেই যে সে কি করছে। মাহি আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

কেন আল্লাহ করল? আমার মিহি কত কষ্ট করেছে জীবনে। আজ ওর স্মৃতি হারিয়ে ফেললো ও। ও যে আর আমায় চিনতে পারবেনা আবির।

আবির মাহির এহেন কাজে চমক উঠলো। কিন্তু মাহিকে সান্ত্বনা দিতে দিতে সে মাহিকে নিজের বুকে আগলে নিল।

আজান আয়াশের কাধে হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিল। আয়াশ মিহির জন্যে নিরবে অশ্রু ফেলছে। আজান ডক্টরকে জিজ্ঞেস করল,,,
আমরা কি মিহির সাথে দেখা করতে পারি?

ডক্টর বললেন,,, এখন না। আপনারা আরো কিছুক্ষণ পর দেখা করে আসবেন। আমি পেশেন্টকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। পেশেন্ট এখন ৩-৪ ঘন্টা ঘুমাবে।

এটা বলে ডক্টর চলে যায়। আজান আয়াশকে বলে,,,

আয়াশ তুই চল কিছু খেয়ে নিবি।

আবিরও তাল মিলিয়ে বলল,,, হ্যা আয়াশ মাহি চল কিছু খেয়ে নিবে চল।

মাহি কোনো উত্তর দিলোনা। আয়াশ বলল,,,
ভাইয়া আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা। আমি খাবোনা। আবির যা তুই মাহিকে আর ভাইয়াকে নিয়ে খেয়ে আয়।

আবির বলল,,, তুইও যাবি আমাদের সাথে। মাহি উঠ।

মাহি বলল,,, আমি যাবো না। আমি খাবও না।

আবির বলল,,, মাহি জেদ করনা। চল আমার সাথে।

মাহি বলল,,, আপনি আমার উপর খবরদারী করার কে?

আবির বলল,,, থাকো সবাই বসে। হুহ।

_______________________________

রিয়ান অনেকক্ষন ধরে মিহিকে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু মিহি ফোন রিসিভ করছেনা। করবেই বা কিভাবে? সে তো হাসপাতালের বেড এ শুয়ে আছে। নিজের সব স্মৃতি হারিয়ে আছে। যা জানেনা রিয়ান। রিয়ান মিহির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। শেষে সে নিজের মাকে ফোন করল। মিহির মামী ফোন রিসিভ করল। রিয়ান বলল,,,

আসসালামু আলাইকুম আম্মু।

,,,ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস বাবা?

,,,আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা সবাই কেমন আছো?

,,,আলহামদুলিল্লাহ।

,,, মা তোমাকে কিছু বলার আছে।

,,,হ্যাঁ বল।

,,, আমি আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে ফিরছি।

,,,সত্যি বাবা?

,,,হ্যাঁ মা। সত্যি।

,,, আলহামদুলিল্লাহ তোমার লাখ লাখ শুকরিয়া আল্লাহ।

,,, আম্মু মিহি কোথায়?

মিহির মামি তার ছেলের এই প্রশ্নে কিছুটা নারাজ হলেন। আর বললেন,,,

আমি ওতো জানিনা। রাখি।

,,, রাখি।

চলবে…..

( ধন্যবাদ গল্পটাকে এতো ভালোবাসেছেন তার জন্যে। আমি একদিন পরপর গল্প দিব। আর ছোট পার্ট হওয়ার জন্যে দুঃখিত। আসলে আমি একটু অসুস্থ। কেউ রাগ কইরেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here