গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 11

গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 11

#Sabrina_Khanam

সূর্য এর আলো কেবিনের পর্দা ভেদ করে মিহির চোখে এসে লাগছে। মিহির শান্তির ঘুমে ব্যঘাত ঘটাতে যেন এই আলো উঠেপরে লেগেছে। মিহির ঘুম আর সূর্যের আলোর যেন যুদ্ধ বেধে গিয়েছে। শেষে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে জিতে গেলো আলো। অবশেষে ভাঙলো মিহির ঘুম। কিন্তু আলসেমির কারনে সে এখনো চোখ খুলছেনা। তবে মিহি অনুভব করছে কেউ একজন মিহির হাত ধরে রেখেছে একদম শক্ত করে। এমনভাবে ধরে রেখেছে যেন এখন ছেড়ে দিলেই মিহি হারিয়ে যাবে। মিহি আস্তে আস্তে চোখ খুললো আর দেখলো একজন তার হাত ধরে তার পাশে বসে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু সে চিনতে পারছেনা লোকটিকে। মিহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু না তার সকল চেষ্টা নাকাম হল। সে লোকটিকে ধাক্কা দিয়ে বলল,,,

আপনি কতক্ষন ধরে আমার হাত ধরে রেখেছেন। ছাড়ুন বলছি।

মিহির ধাক্কায় আয়াশ চোখ খুলে তাকালো। আর দেখলো মিহি তার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আয়াশ মিহির ঘুম ভেঙেছে আর জ্ঞান ফিরেছে, তার সাথে কথা বলছে এই খুশিতে লাফিয়ে উঠল। তবে আয়াশ এখনো মিহির হাত ছাড়েনি। সে তার নিজের অভিব্যক্তি দ্বারা খুশি উদযাপন করছে তবে মিহির হাত ধরে রেখেছে আগের মতো। মিহি বিরক্তিসূচক শব্দ মুখ থেকে বের করে বলল,,,

কি হল? আপনাকে তো কতবার বলছি আমার হাত ছাড়ুন। আপনি ছাড়ছেন না কেন? আর এমন করছেন কেন? আমি এখানে কি করছি?

আয়াশ বলল,,, উফ খালি মুখ থেকে পপকর্ন ঝড়ে তোমার তাইনা? একটু চুপ থাক। আমায় তোমাকে শান্তিতে দেখতে দাও। কতদিন পর তোমার সাথে কথা বলছি আমি!

,,, আমাদের আগেও কথা হয়েছিল বা দেখা হয়েছিল কি? আসলে আমার তো মনে পরছেনা।

,,, এতো চিন্তা তোমার করতে হবেনা। আমি ডক্টরকে ডেকে আনছি। তুমি একটু লক্ষী হয়ে থাকো তো।

মিহিকে কোনো উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে মিহির কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে আয়াশ দৌড়ে ডক্টরকে ডাকতে চলে গেলো।

ডক্টর এসে মিহিকে চেক করল। মিহি এখন অনেকটা সুস্থ। এভাবে একটা ভয়ঙ্কর একটা এক্সিডেন্ট থেকে এতো জলদি সুস্থ হয়ে ফিরে আসা একটা মিরাকেল এর চেয়ে কম না। ডক্টর বলল,,,
আপনারা আগামীকাল পেশেন্টকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন।

মিহি এতোক্ষণ চুপ করে সবার কার্যক্রম দেখছিল। মিহি দেখছিলো তাকে দেখে কতগুলো মানুষের উচ্ছাস আর আনন্দ। বিশেষ করে সেই মানুষটির যে তার হাত ধরে ছিল আর কপালে চুম্বন করে গেল। কিন্তু সে কাউকেই চিনে না। মিহির মাথাটা ধরে আসলো। সেটা আয়াশ আর মাহির চক্ষু এড়ালো না। আয়াশ মিহির কাছে যেতে নিলে মাহি মিহির কাছে গিয়ে বসে বলল,,,

কিরে মিহি? তোর কি খুব মাথা ব্যথা করছে?

মিহি নিজের মাথাটা আরও চেপে ধরল। মিহি মাহিকে চিনতে পারছেনা। মিহি নম্র স্বরে শুধু বলল,,,
হুম।

মাহি বলল,,, আমি মাথাটা টিপে দিচ্ছি আয়।

মিহি বলল,,, তুমি কেন আমার মাথা টিপে দিবে? আর তুমি কে?

মাহি বলল,,, বারে তুই আমায় ভুলে গেলি। সমস্যা নেই। আমি তোর ছোটবেলার বন্ধু মাহি। এখন তো তুই একটু অসুস্থ তাই তোর আমায় হয়তো চিনতে পারছিস না।

মিহি প্রশ্ন করল,,, অসুস্থ হলে কেউ কাউকে চিনতে পারেনা?

ডক্টর বলল,,, হ্যাঁ মা, মাঝে মাঝে এমন হয়। এটা নিয়ে চিন্তা করোনা। দেখবে তুমি জলদি সুস্থ হয়ে উঠবে।

মিহি আয়াশের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে প্রশ্ন করল,,, ওই লোকটি কে?

মাহি চাইছিলো না আয়াশের সাথে মিহির বেশি কথা হোক। তাই মাহি বলতে গেলো, উনি তোকে বাচিয়ে…

কিন্তু না মাহি সফল হলো না। আবির বুঝতে পেরেছিল মাহি মিহিকে আয়াশের থেকে দূরে রাখতে চাইছে। তাই আবির মাহির কথা কেটে বলল,,,

ও তোমার না আমার বন্ধু, আর তোমার বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। আরে তোমার হবু বর মিহি ভাবি। আর আমি তোমার হবু বরের একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড আবির।

মিহি অবাক হয়ে আয়াশকে দেখলো। তারপর লজ্জামাখা মুখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।

মাহির আবিরের এহেন কান্ড পছন্দ হল না। সে বিরক্তি নিয়ে আবিরের দিকে তাকালো। আবির মুখ দিয়ে মাহিকে কিস করার ইশারা করল। মাহি এদিকে সেদিক তাকিয়ে আবিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল।

আজান এতোক্ষণ সবার কথা আর কাজ পর্যবেক্ষন করছিল। আয়াশ তো মিহির দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আবির মাহির দিকে। মিহি চোখটা বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর মাহি ইতস্তত করছে। তার বুঝতে বাকি নেই যে আসলে এদের চারজনের মধ্যে কি ঘটে গিয়েছে। আজান বলল,,,
শুধু আয়াশ এখন মিহির কাছে থাকবে। আর সবাই আমার সাথে চলে এসো। আর মিহি আমি কিন্তু তোমার হবু ভাসুর। তাই বলে ভয় পেয়ো না কিন্তু। আর আবির এবং মাহি আমার সাথে চল।

মাহি বলল,,, আমি থাকি না ভাইয়া প্লিজ?

আজান বলল,,, না ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও। তুমি বাহিরে আসো, আবিরের সাথে থাকো। আর আমি ডক্টর এর সাথে কথা বলতে গেলাম।

মাহি বলল,,, কিন্তু ভাইয়া…

আবির বলল,,, কোনো কিন্তু না। মাহি চল আমার সাথে। আর আয়াশ তুই মিহি ভাবির সাথে বস।

আয়াশ কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আজানের দিকে তাকালো। আজান আয়াশকে বলল,,,
কানে শুনিস না নাকি? ফেরার সময় তোকেও কানের ডক্টর দেখাতে হবে বুঝছি। যা মিহির কাছে। আর চল তোমরা।

মাহি আবিরের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে চলে গেলো কেবিন থেকে। আবির মাহির পিছুপিছু বেরিয়ে গেল। আজানও সাথে সাথে চলে গেল। আয়াশ আর মিহি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আয়াশ মিহি আর মিহি আয়াশের দিকে তাকালো। হয়ে গেল তাদের দৃষ্টিমিলন। মিহি আয়াশের দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিল।

আবির আর মাহি পাশাপাশি হাটছে। মাহি গাল ফুলিয়ে হেটে যাচ্ছে। আবির চুপ করে তাকে আড়চোখে দেখছে আর হাটছে। আবিরই কথা বলা শুরু করল আর বলল,,,
এই তুমি এমন কেন হ্যাঁ?

মাহি আবিরের দিকে এক পলক তাকালো। তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। তারপর বলল,,,
কেমন আমি?

,,,সামনে আমি একটা জলজ্যান্ত মানুষ আছি তোমার পাশে, তাও একজন গায়ক তোমার পাশে আছে। আর তোমার কোনো হেলদোলই নাই।

,,,হেলদোল রেখে কি করব?

,,,মানে কি? আমার সাথে তো একটু কথা বলতে পারো

,,,আমি কথা বললেও কি আর না বললেও কি? আর আপনার সাথে আমি কথা বলবই বা কেন?

আবির মাহির হাত ধরে ওকে আটকালো। তারপর মাহির চোখের দিকে চোখ রেখে বলল,,,
মাহি ভালোবাসি তোমায়।

,,, কিন্তু আমি ভালোবাসিনা।

,,,আমায় কি ভালোবাসা যায়না?

,,,তা জানিনা। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক হওয়া উচিত না।

,,,কেন?

,,, সব কেন এর উত্তর যে দেওয়া যায় না মিস্টার।

আবির মাহির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বাধা দিলো। তারপর আঙুল সরিয়ে বলল,,,
আবির, শুধু আবির। এই মিস্টার ফিস্টার ভালো লাগেনা শুনতে।

,,,আপনার ভালো না লাগলেও আমার কিছু করার নাই।

,,,অনেক কিছু করার আছে, কিন্তু তুমি করতে চাও না।

,,,জানেনই তো করতে চাই না। তাহলে কেন আমার পিছু ছাড়েন না কেন?

,,,সারাজীবনে তোমার পিছু ছাড়বো না আমি মাহি। তোমাকে নিজের করেই ছাড়ব।

মাহি কোনো উত্তর দিলো না। আবিরের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সে আবার হাটা শুরু করল। আবিরও তাল মিলিয়ে হাটা শুরু করল। মাহি বলল,,,
মিহির জন্যে খুব চিন্তা হচ্ছে।

আবির বলল,,, চিন্তা করনা। আয়াশ আছে ওর পাশে।

অনেকক্ষণ ধরে মিহির দিকে আয়াশ তাকিয়ে আছে। দুইজনের মধ্যে নীরবতা বিদ্যমান। মিহির অনেক অসস্তি লাগছে। আসলে এভাবে কেউ একজনের দিকে তাকিয়ে থাকলে অসস্তি একটু লাগেই। মিহি নীরবতা ভেঙে বলল,,, একটু শুনুন।

,,,হুম।

,,,আমি একটু ঘুমাবো।

,,,তো ঘুমাও না।

,,,উফ এভাবে তাকিয়ে থাকলে কেউ কি ঘুমাতে পারে নাকি?

,,,তোমার এতো ঘুমাতে হবে কেন? কত ঘুমায় একটা মানুষ?

,,,আমার ঘুম পেলে আমি কি করব?

,,, ঘুমাবা না। কুম্ভকর্ণ একটা।

,,, আমি কুম্ভকর্ণ?

,,, হ্যাঁ তুমি কুম্ভকর্ণ।

,,, আপনি আপনার বন্ধুর কাছে যান না?

,,, আমাকে তাড়াতে চাইছো কেন?

,,, আমি কই তাড়াতে চাইছি?

,,, আচ্ছা বাদ দাও মিহি।

মিহিও চুপ করে গেলো। আয়াশ বলল,,,

মিহি?

,,, হুম।

,,, আমার বুকে একটু মাথা দিয়ে রাখো না প্লিজ।

মিহি অবাক হয়ে গেল আয়াশের এই কথায়। আয়াশ বলল,,, প্লিজ!

মিহি আর কিছু বলল না। আয়াশের বুকে মাথা দিয়ে চুপটি করে বসে রইল। আয়াশ মিহিকে নিজের মাঝে জড়িয়ে নিল। আসলে ভালোবাসা এমনই। যদিও মিহির আগের স্মৃতি নেই। তবুও আয়াশের প্রতি তার ভালোবাসা কাজ করে। আর সেই ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ পেয়েছে এখন তারা।

চলবে….

( আপনাদের সাপোর্ট কমে যাচ্ছে দিন দিন। আমার মুডও ভালো না। অনেক মন খারাপ। অনেক চিন্তায় আছি। আপনারা রেস্পন্স করলে আমার লেখার আগ্রহ বাড়ে। এভাবে এমনি লিখতেও মন চায় না। আপনারা এমন করলে আমি সত্যিই আর ২ পার্টে গল্প শেষ করে দিব। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here