#গাংচিল
#১৯তম_পর্ব
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলে কল্পনায় ছেদ পড়ে সূবর্ণা বেগমের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে যান দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই মুখ থেকে একটা কথাই বেড়িয়ে আসে,
“মৌপ্রিয়া, তুমি? এসেছো?”
সূবর্ণা বেগম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দরজার ওপারে মৌপ্রিয়া দাঁড়িয়ে থাকবে এটা কল্পনার বাহিরে ছিলো। হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মৌপ্রিয়ার দিকে। পনেরো বছর পর মেয়েটাকে সামনাসামনি দেখছেন। এতোকাল শুধু ছবিতেই দেখে গেছেন তাকে। পনেরো বছরেও মেয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে পারেন নি তিনি। মেয়েও যে বড্ড বেশি অভিমানী। শেষবার ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসার সময় মেয়েকে কাছে ডেকে যখন বলেছিলো,
“আম্মু, তুমি আমার সাথে যাবে না?”
“না, আমি বাবার সাথেই থাকবো।“
দশ বছরের মেয়ের জড়তাহীন উত্তরের পর আর জোর করে নি তাকে সূবর্ণা। সে ভেবেছিলো হয়তো মৃত্যুর সময় ও মেয়ে তার মুখ দেখবে না। বড্ড ঘৃণা করে যে তাকে। অথচ আজ সেই অভিমানী মেয়ে নিজে তার বাসায় এসেছে। সূবর্ণাকে স্থির দেখে মৌপ্রিয়া বলে,
“আমার উপস্থিতিতে হয়তো ডিসটার্বড হয়েছো। বেশ চলে যাচ্ছি।“
বলেই ঘুরে দাঁড়ালে সূবর্ণা বেগম ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠে,
“না আমি মোটেই ডিসটার্ব হই নি, প্লিজ ভেতরে আয়। এক কাপ কফি খেয়ে যাবি”
“চা হবে?”
“হবে, ভেতরে এসে বয়।“
হেসে কথাটা বলেন সূবর্ণা বেগম। সূবর্না বেগম রান্নাঘরে চলে গেলে, বসার ঘরে বসে মৌপ্রিয়া। মনের ভেতরে কিছু একটা খুতখুত করছে। বেশ অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। এখানে আসার আগেও এতোতা অস্বস্তিবোধ হয় নি মৌপ্রিয়ার। কিন্তু বাসায় প্রবেশ করার পর থেকেই এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। পালিয়ে গেলে হয়তো ভালো হতো। সীমান্তকে কয়েকবার বলেছিলো যেনো সেও তার সাথে উপরে আসে। কিন্তু সীমান্ত তো সীমান্ত, সে মোটেও মা মেয়ের মাঝে আসতে চায় না। তাই তো একাই এই বাসায় আসতে হলো মৌপ্রিয়াকে। তার কাছে সবথেকে বেশি অস্বস্তির কারণ দেয়ালে ঝুলতে থাকা সূবর্ণা বেগমের পারিবারিক ছবিগুলো। কি সুন্দর একটা পরিবার! অথচ তাদের পরিবারটা খন্ড খন্ড হয়ে আছে। মৌপ্রিয়া উঠে একটা ছবির সামনে দাঁড়ালো। সূবর্ণা বেগমের কোলে ছোট একটা ছেলে, পুতুলের মতো বাচ্চাটার এক রাশ মমতা নিয়ে তাকিয়ে আছে সূবর্ণা বেগম। এরকম একটা ছবি তার সাথেও তার মার আছে। ছবিটাকে ফ্রেমে বদ্ধ করা ছিলো। সূবর্ণা বেগমের উপর রাগ দেখিয়ে ভেঙ্গে ফেলে মৌপ্রিয়া। দেয়ালের ছবিটা দেখে সেই ছবিটার কথা মনে পড়ছে মৌপ্রিয়ার। তখন ই কফি হাতে প্রবেশ ঘটে সূবর্ণার। মিহি কন্ঠে বলে,
“ওটা সৌভিক, আমার আর নিশাদের ছেলে। বাংলায় বলতে গেলে তোর সৎ ভাই।“
মৌপ্রিয়ার ভাবনায় ছেদ পড়ে। সে চোখটা মুছে নেয় সূবর্ণা বেগমের অগোচরে। তারপর ঠিক সূবর্ণা বেগমের উলটো পাশের সোফাটায় বসে। চা তে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে লাগলো কথাটা কিভাবে শুরু করা যায়। তখন সূবর্ণা বেগম বলে উঠেন,
“চা টা ভালো হয়েছে? আসলে নিশাদ চলে যাবার পর থেকে চা খাওয়া ছেড়েই দিয়েছি। তাই বলতে পারছি না কেমন হয়েছে।“
“খারাপ হয় নি, ভালোই হয়েছে।“
“তো এমুখো হলি কি মনে করে? তোর নির্বোধ বাবা পাঠিয়েছে?”
খানিকটা বিদ্রুপের স্বরেই সূবর্ণা বেগম বলেন। কথাটা একটু গায়ে লাগে মৌপ্রিয়ার। খানিকটা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,
“আমার বাবাকে নির্বোধ বলাটা থামাবে? আমার ভালো লাগে না যখন তুমি তাকে নির্বোধ বলো।“
“নির্বোধ মানুষকে নির্বোধ না বলে উপায় আছে?”
“কেনো সে নির্বোধ হতে যাবে কেনো? কলেজে বাবার কি প্রসিদ্ধি জানো তুমি?”
“তোর বাবার জ্ঞানটা ওই বই পুস্তক পর্যন্তই। তুই চিন্তা করে দেখ, নির্বোধ না হলে কি এতো বছর একটা মানুষকে ভালোবাসতে পারে? কম অপমান তো করি না।”
সূবর্ণা বেগমের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় মৌপ্রিয়া। সূবর্ণা বেগম কিঞ্চিত হেসে বলেন,
“জানিস তো আজ একা একা যখন বসে গান শুনছিলাম, পুরোনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসছিলো। তোর বাবার সাথে আমার বিয়ে, সংসার। সবকিছু। অতীত এমন একটা অধ্যায় তুই চাইলেও তা পেছনে ফেলতে পারবি না। তোর বাবাও আমার সেই অতীত। মানুষটা খুব অন্যরকম ছিলো। তার কাছে আমি কেবল ই একটা ছোট বাচ্চা ছিলাম যাকে আগলে রাখতে হতো“
“তাহলে তার ভালোবাসাকে কেনো পায়ে ঠেলে দিলে? কেনো তাকে নিঃস্ব করে দিলে?”
মৌপ্রিয়ার এমন প্রশ্নে কিছুটা থমকে যান সূবর্ণা। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়। তারপর বলে,
“তোর বাবা, বাবা হিসেবে খুব ভালো, প্রেমিক হিসেবেও খুব ভালো। কিন্তু স্বামী হিসেবে সে একেবারে ডাহা ফেল। এমনটা নয় তোর বাবা আমাকে ভালোবাসতো না, খুব ভালোবাসতো। কিন্তু সে বড্ড উদাসীন ছিলো জানিস তো। এই সাংসরিক ব্যাপারগুলো ঠিক সে বুঝতো না। মাঝে মাঝে এমন এমন কাজ করতো যেটা সহ্য করাটা দুষ্কর হয়ে যেতো। একবার মনে আছে তোর ধুম জ্বর হয়েছিলো, লোকটাকে ফোন করেছিলাম হাজার বার। তখন এখনের মতো মোবাইল, নেট ছিলো না। খুব কষ্টে টেলিফোনে লাইন পেতাম। আমাকে সে বলেছিলো সে রাতের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু কিসের কি, লোকের আসার কোনো নাম ই নেই। তুই তখন ছয়মাস। তোর দাদী গ্রামে। পুরো বাড়িতে আমি একা। বৃষ্টির রাত, কোলে জ্বরের বাচ্চা। কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম। লোকটা ফিরেছিলো কিন্তু পরদিন দুপুরে। একটা থিসিসের ঝামেলায় নাকি আটকে গেছিলো। এমন হাজারো ঘটনা ছিলো। একটা সময় ঝগড়া বাধতো। তুমুল পর্যায়ে চলে যেতো। আমার ইচ্ছে করতো তখন ই বেরিয়ে যাই। পনেরো বছরের সম্পর্কের ভাঙ্গন একদিনে হয় না। জানিস তো।“
“তাহলে এই বোকা লোকটাকে বিয়ে করেছিলে কেনো?”
“তখন এসব কিছুই বুঝতাম না, বাবা এসে যখন আমার হাতে তোর বাবার ছবি ধরিয়ে দেন তখন ই আমি হ্যা বলে দেই। এখন ভুড়িয়াল হলেও তখন দেখতে উত্তম কুমার ফেল ছিলো তোর বাবা। হাহাহা। সুদর্শন চেহারায় মন হারিয়ে ফেলি। আমার জীবনে নিশাদ না আসলে হয়তো আজও আমি তোর বাবার স্ত্রী ই থাকতাম। কিন্তু নিশাদ আসার পর বুঝেছি ভালোবাসা চেহারার মাঝে নয়, অনুভূতিতে হয়। নিশাদ অনেক আলাদা তোর বাবা থেকে। স্বভাবে, কাজে। কিন্তু একটা আক্ষেপ তোর বাবার মতো ভালো সে আমাকে কোনোদিন ই বাসে নি। আজ যেমন তোর বাবা আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, সেই ভালোবাসাটা যদি সেদিন প্রকাশ করতো তাহলে হয়তো হয়তো আমি তাকে ছেড়ে যেতাম না। এককটা মজার কাহিনী বলি, আমি যখন বুঝতে পারলাম আমার মন নিশাদের দিকে দূর্বল হচ্ছে আমি প্রথম তোর বাবাএ কথাটা জানাই। যতই হোক আমার বন্ধু সে, আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো রাগ করবে, আমাকে বকবে, অথবা আমার সাথে নিশাদের সকল দেখাসাক্ষাত বন্ধ করে দিবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে সে উদাসীন থাকলো। কলেজ, ঘর, কলেজ। আমার সাথে অন্য পুরুষের মনের গিট বাধছে ব্যাপারটা যেনো তাকে কোনো ভাবেই আঘাত করতো না। আমি অবাক হতাম, আহত হতাম। তাই তো নিশাদের প্রতি আমার দূর্বলতাটা কমাবার চেষ্টা করি নি। তোর বাবার উদাসীনতাটা আমার মোটেই ভালো লাগতো না জানিস তো। তুই তখন অনেক ছোট ছিলি। এই কথাগুলো তোকে বোঝানো তখন অসম্ভব ছিলো। এখন বড় হয়েছিস তাই বলছি। অনেকে বলে ভালোবাসা জোর করে ধরে রাখার নয়, কথাটা ভুল। ভালোবাসাকে এতোও ছাড় দিতে নেই যে সে তোর প্রতি টানটাই হারিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে একটু শক্ত হাতে তাকে ধরতে হয়। তার জীবনে তোমার রাজত্ব আছে সেটা বোঝাতে হয়। নয়তো সেই ভালোবাসা তোকে ছেড়ে দিবে।“
সূবর্ণা বেগমের কন্ঠ কাঁপছে। হয়তো অতীতের স্বর্ণালী মূহুর্তগুলো চোখের সামনে ভাসছে। মৌপ্রিয়া কোনো কথা বললো না, চুপ করে চায়ে চুমুক দিতে লাগলো। চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ফলে পৃথিবীর সবথেকে অখাদ্য পদার্থে পরিণত হয়েছে। তবুও সে খাচ্ছে, মায়ের হাতের এই প্রথম চা। ফেলে দেওয়াটা উচিত হবে না_________________
দরজায় ক্রমাগত আঘাত পড়ায় তিয়াশা বিরক্ত হয়ে গেলো। ছোট বোন মাইশাটা মোটেই শান্তি দিচ্ছে না। এক নাগারে দরজা ধাক্কাচ্ছে। একটা সময় বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললো তিয়াশা। দরজা খুলতেই বিরক্তি নিয়ে বলে,
“কি হয়েছে দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেনো?”
“মার শরীরটা ভালো লাগছে না নাকি, একটু প্রেসারটা মাপো তো।“
কথাটা শুনতেই দৌড়ে সেখানে গেলো তিয়াশা। রহিমা বেগম মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছেন। উনার লো প্রেসারের সমস্যা আছে, ক্ষণে ক্ষণে প্রেসার কমে যায় তার। তিয়াশা তাড়াতাড়ি প্রেসার মাপতেই দেখলো প্রেসার সত্যি সত্যি ই কমে গিয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি মাইশাকে বললো,
“স্যালাইন বানিয়ে আন, আমার রুমে আছে।“
“লাগবে না, আমি ঠিক আছি”
রহিমা বেগম বাধ সাধলেন, তাই বাধ্য হয়েই তিয়াশা একটু ঝাঝিয়ে উঠলো,
“সমস্যা কি মা? এতো যন্ত্রণা কেনো করছো কেনো? প্রেসার লো অথচ এখনো তেজ দেখাচ্ছো?”
“আমি মরে গেলেই তো আর ঝামেলা নেই, তাই না? তখন তো বিয়ে করতে রাজি হবে?”
“মা, ড্রামা কম করো। উঠো স্যালাইন খাবা”
“হ্যা, আমি তো ড্রামাই করি। তোর কাছে তো সব ড্রামা। আর যখন তুই করিস, তখন কিছু না?”
“মা?”
“তিয়া, ছেলেটা সত্যি ভালো। খুব ভালো পরিবার। একবার দেখা কর। তোর যদি ভালো না লাগে আমি জোর করে তো তোর বিয়ে দিবো না। একবার দেখা কর মা। ছেলেটা এটাও বলেছে বিয়ের পর তোকে কখনোই জোর করবে না। আমাকে আর মাইশাকেও সে নিজের মা এবং বোনের মতো দেখবে। মারে, আমি কি তোর ক্ষতি চাবো? একটু দেখা কর।“
মায়ের করুন মুখটা আর সহ্য হলো না তিয়াশার, এতোটা অনুরোধ সে কখনোই করে না। তার এই অনুরোধ ফেরানোর সাধায় তিয়াশার নেই। তাই ধীর গলায় বললো,
“বেশ, দেখা করবো। এবার স্যালাইনটা খাও।“
তিয়াশার কথাটা শূনতেই তাকে জড়িয়ে ধরেন রহিমা। মেয়েকে অজস্র চুমু দিয়ে আদর করেন। মায়ের মুখের হাসি দেখে মলিন হাসি হাসে সে। কিন্তু এই হাসির পেছনে চাপা রক্তক্ষরণটা কেউ দেখতে পাচ্ছে না। হয়তো কখনো পাবেও না______
★★★
গোধুলীর সময়, নীল আকাশের কমলা রঙ্গের ছাপ দেখা যাচ্ছে। রক্তিম সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়েছে। কিছু সময় বাদেই অস্ত যাবে। তখন নীল আকাশে কালো আধারে ছেয়ে যাবে। টঙ্গের চা খেতে খেতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে সীমান্ত। আকাশের রঙ্গবদল দেখতে খুব ভালো লাগছে তার। তখনই লোহার গেট ঠেলে বের হয় মৌপ্রিয়া। মৌপ্রিয়াকে দেখেই কাঁপ রেখে এগিয়ে যায় সে। মৌপ্রিয়ার কাছে যেতেই থমকে যায় সে। চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। হয়তো মায়ের সাথে মান অভিমানের পালা চলছিলো। সীমান্ত কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। মৌপ্রিয়ার পাশে পাশে শুধু হাটতে লাগলো। পিচঢালা পথে হাটছে দুই মানব মানবী। কমলা রোদ আছড়ে পড়ছে তাদের গায়ে।
হাটতে হাটতে হঠাৎ জুতোটা ছিড়ে গেলো মৌপ্রিয়ার। খানিকটা বিরক্ত ই হলো সে। সীমান্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এখন মুচি পাবো কোথায়?”
“জুতো জোড়া আমাকে দাও?”
“আপনি এটা দিয়ে কি করবেন?”
“দাও তো”
মৌপ্রিয়া জুতো জোড়া খুলে সীমান্তের হাতে দিলো। তখন সীমান্ত এমন একটা কাজ করলো যা মৌপ্রিয়াকে হতভম্ব করে দিলো। সীমান্ত তার জুতোর সাথে নিজের চটি জোড়াও খুলে ছুড়ে ফেলেদিলো ডাস্টবিনে। মৌপ্রিয়া অবাক কন্ঠে বললো,
“এ কি করলেন?”
“গোধুলীর সময় কখনো পিচঢালা পথে হেটেছো। আজ হেটে দেখো। হাজারো মানুষ প্রতি নিয়ত এই পথে নগ্ন ঘুমায়। তাদের সেই অনুভূতিটা ফিল করতে পারবে।“
“এভাবে হাটতে লোকে কি ভাববে? সেজে গুজে খালি পায়ে হাটছে।“
“লোকে কি ভাববে সেটা আমরা ভাবলে লোকে কি ভাববে। এতো ভেবো না, এই পিচঢালা পথে হাটার মাঝেও এক অন্য অনুভূতি আছে। এই অনুভূতিটা লেখার সময় কাজে দিবে।“
সীমান্তের কথা শুনে হেসে উঠে মৌপ্রিয়া। তারপর বলে,
“ভালো উপদেশ দেন তো আপনি।“
“ব্যার্থ মানুষেরা উপদেশ দিতে খুব পছন্দ করে, কেন জানে কাকতালীয়ভাবে তাদের উপদেশগুলো খেটেও যায়”
“আপনি আর ব্যর্থ?”
“কে বলেছে তোমায় সফলতার মাপকাঠি ওই পাতলা ফিনফিনে বেগুনী কাগজটা। সফলতা বা ব্যার্থতার মাপকাঠি কোনো কাগজ নয় বরং আত্মতৃপ্তি। সবসময় তোমার ওই কাগজ সেই তৃপ্তিটা দিতে পারেনা। চলো হাটি”
মৌপ্রিয়া আজ কথা না বলে হাটতে লাগলো। হাটতে হাটতে হুট করেই ঝলমলে আকাশে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। তীব্র বৃষ্টিতে সবাই ছুটতে শুধু করলো। রোদের মাঝে এমন বৃষ্টি যেনো অনাপেক্ষিক। সীমান্ত ও মৌপ্রিয়ার হাত ধরে একটা ছাউনি তে গিয়ে দাঁড়ালো। বৃষ্টি থেকে মৌপ্রিয়াকে বাঁচাতে নিজে পিঠ করে দাঁড়ালো। সীমান্তের এতোটা কাছে এসে যাওয়ায় দম আটকে যাবার যোগাড় মৌপ্রিয়ার। হৃদস্পন্দন যেনো হুট করেই বেড়ে গেলো। চোখের সামনে শুধু সীমান্তের মুখটাই ভাসছে। সময়টা থেমে গেলে হয়তো মন্দ হতো না। হঠাৎ মনের অনুভূতিগুলো একত্রে জড়ো হলো। এক ভয়ংকর কাজ করার উৎসাহ জাগাতে লাগলো। পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে আলতো হাতে স্পর্শ করলো সীমান্তের গাল। মৌপ্রিয়ার এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেলো সীমান্ত। তার চোখের দিকে তাকাতেই ভয়ংকর কাজটা ইশারা পেলো সে। ধীর গলায় বললো,
“আমরা রাস্তায় মৌপ্রিয়া, লোকে দেখলে কি ভাববে?”
“লোকে কি ভাববে সেটা আমরা ভাবলে লোকে কি ভাববে।“
বলেই ঠোঁটজোড়ায় নিজের দখল করে নিলো মৌপ্রিয়া। সীমান্ত তখন……………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি