#গল্পের_নাম: ||গাঙচিল ||
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____০৯
বহু বছর পর নিজের মনের কথা শুনলো অহি।উঁচু হয়ে রোদ্দুরের বাম গালে চুমু খেল।রোদ্দুর যেন আকাশ থেকে পড়েছে।বিস্ফারিত চোখে বড় বড় করে অহির দিকে চেয়ে আছে।অহির চেপে রাখা হাত থেকে নিজের হাত খসে পড়েছে অনেক আগেই!
রোদ্দুরকে এই মুহুর্তে বড্ড ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে অহির কাছে।তাকে জ্বালাতে বেশ ভালো লাগছে।ভালো লাগছে তাকে লজ্জায় ফেলতে।সে রোদ্দুরের আরো একটু কাছে এগিয়ে গেল।কিছুক্ষণ রোদ্দুরের চোখের দিকে চেয়ে রইলো।তারপর পায়ের উপর ভর দিয়ে আরো একটু উঁচু হয়ে ফট করে রোদ্দুরের ডান গালে স্বশব্দে চুমু খেল।
রোদ্দুর দুই গালে হাত রেখে ঝড়ের বেগে পেছন দিকে সরে গেল।
অস্পষ্ট স্বরে বলল,
—“ও মাই গড!এ-এসব কি হচ্ছে?আ-আমি স্বপ্ন দেখছি!নিশ্চিত স্বপ্ন দেখছি।”
অহি মিষ্টি করে হাসলো।রোদ্দুরের নাকে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিল।রোদ্দুরের ঠোঁটে হাত ছুঁইয়ে সে এক ছুটে নিজের রুমে ঢুকে গেল।অহি চলে যেতেই রোদ্দুর ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।বুকের বা পাশে হাত চেপে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলল।পানি খেতে হবে!হ্যাঁ!পানি খেতে হবে।কিন্তু উঠার শক্তি নেই।একটু দূরে রাখা জগের দিকে সে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।
ডারউইনের বিবর্তন মতবাদকে প্রমাণ করার জন্যই হয়তো সে বিরতিহীন ভাবে মনে মনে বলতে শুরু করলো,
—“আয় পানি এদিকে আয়!প্লিজ আমার কাছে আয়!কাছে আয় না!প্লিজ!”
শফিকের চোখ ভার হয়ে গেছিল।পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে টেবিলের উপরই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল।হঠাৎ করেই অবচেতন মনের ধাক্কায় সে উঠে পড়লো।সামনে রাখা খোলা বইয়ের পেইজ উল্টে দেখলো কতটুকু বাকি আছে।দেড় পেইজের মতো পড়া বাকি।এটুকু ভোর রাতে শেষ করা যাবে।এখন আর পারবে না।শরীর ও মন কোনোটাই স্ট্যাবল না!কোনোটাই পড়াশোনা নিতে চাচ্ছে না।
সে বই বন্ধ করে বড় করে হাই তুলল।ছোট্ট লাইটটা বন্ধ করে বিছানাতে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
—“এসআই!সরে যান।আমি ঘুমাব।খবরদার,গায়ের উপর পা দিবেন না!কালকের মতো আজ রাতেও পা দিলে কিন্তু এক লাথি দিয়ে ফেলে দিবো।”
কোনো সাড়া আসলো না।শফিক নিজের বালিশে শুয়ে পড়লো।কি এক বিপদ হয়েছে।তার ছোটবেলা থেকে একা ঘুমিয়ে অভ্যাস।কেউ পাশে তার থেকে এক হাত দূরে ঘুমালে ঘুম হয় না।সেখানে এই এসআই গতরাতে তার ঘুমের দফারফা করে দিয়েছে।একটু পর পর পেটের উপর পা তুলে দিয়েছে।ঘুমানোর কোনো শ্রী নেই!শফিকের মুখের ভেতর হাত দেয়,নাকের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দেয়!দু বার তো ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।শফিকের তাতে দম যায় যায় অবস্থা।কি বিদঘুটে পরিস্থিতি!
সারা রাত সে জেগে ছিল।ভোর রাতে সাপের মতো কুন্ডলী পাকিয়ে দুই ইঞ্চি জায়গা নিয়ে একদম কর্ণারে শুয়ে ছিল।সকালবেলা যখন অহি বুবুর ডাকে জেগে উঠলো দেখে সে ঠান্ডা ফ্লোরে শুয়ে আছে।নো ওয়ে!আজ রাতে এসব কিছু সে টলারেট করবে না।এমন কিছু করলে লাথি দিয়ে বুবুর রুমে পাঠিয়ে দিবে।
চোখ বন্ধ করে কি মনে হয়ে সে আবার চোখ খুলে পাশে তাকালো।অন্ধকারেও সে স্পষ্ট বুঝতে পারলো রোদ্দুর স্যার এখানে নেই।সে হাতড়ে দেখলো সত্যি সত্যি ফাঁকা।শফিকের কপাল কুঁচকে গেল।এত রাতে আবার কোথায় গেল?
বিছানা ছেড়ে উঠে লাইট জ্বালাল।রান্নাঘরের আলো জ্বলছে।সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়াল।ভেতরে চোখ পড়তে সে চমকে উঠলো।নিজের অজান্তে মুখে দিয়ে বেরিয়ে গেল,
—“ক-কে?”
রোদ্দুর হাঁটু ভাজ করে তার উপর মাথা রেখে বসেছিল এতক্ষণ।শফিকের ভয়ার্ত কন্ঠ কানে যেতে মাথা তুলে তাকালো।
রোদ্দুরকে এই অবস্থায় দেখে শফিক অবাক হলো।তাকে উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে।সে এগিয়ে গিয়ে রোদ্দুরের পাশে পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে পড়লো।নরম গলায় বললো,
—“এভাবে বসে আছেন কেন?আমায় তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন একদম!সাংঘাতিক মানুষ আপনি!মাইরি!”
রোদ্দুর লাল লাল চোখে কিছুক্ষণ শফিকের দিকে চেয়ে রইলো।তারপর হুট করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো শফিককে।শফিক ভয় পেয়ে রোদ্দুরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।না পেরে বলল,
—“কি করছেন কি?ছাড়ুন!আপনি পাগল হয়ে গেছেন?”
রোদ্দুর ছাড়লো না।উল্টো হাসিমুখে বলল,
—“শফিক আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।এত খুশি বোধ হয় কোনোদিন হইনি।নাচতে ইচ্ছে করছে!গাইতে ইচ্ছে করছে!ভুল করতে ইচ্ছে করছে।সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।যা তা করতে ইচ্ছে করছে।সর্বোপরি ইচ্ছে করছে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে ধরে ধরে একটা করে চুমু খাই!”
শফিকের মাথায় কিছুই ঢুকলো না।তাকে অবাকের শীর্ষে রেখে রোদ্দুর তাকে ছেড়ে দিল।সে সরে আসতে নিতে রোদ্দুর তার চিবুক ধরে গালে স্বশব্দে চুমু খেল।শফিক খরগোশের মতো শশব্যস্ত হয়ে ছিটকে সরে গেল।নিজের গাল বারংবার মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
—“রোদ্দুর ভাইয়া!আপনি পাগল হয়ে গেছেন।নিজের সেন্সে ফেরেন।আমি শফিক!আমি শফিক!এই দেখুন!আমি শফিক!”
রোদ্দুর মিষ্টি করে হেসে বলল,
—“জানি!”
—“জানেন?তাহলে আমাকে চুমু দিলেন কেন?”
শফিক গালে হাত রেখে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে রোদ্দুরের দিকে।তাকে আরেক দফা অবাক করতেই বোধ হয় রোদ্দুর এক টানে নিজের টিশার্ট খুলে ফেলল।
শফিক এবার কেঁদে দিয়েছে প্রায়।অস্পষ্ট স্বরে কোনোরকমে বলল,
—“আ-আপনি জামাকাপড় খুলছেন কেন ভাইয়া?সব খুলে ফেলছেন কেন?”
রোদ্দুর স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—“কই সব খুলছি?ব্রো রিলাক্স!প্রচুর গরম লাগছে।সেজন্য জাস্ট টিশার্ট খুললাম।আর কিছু খুলবো না।চলো!ঘুমিয়ে পড়ি ! ”
রোদ্দুর টিশার্টটা গলায় জড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।তাকে বড্ড বেশি খুশি লাগছে।সে এগিয়ে এসে শফিকের হাত ধরে বলল,
—“ব্রো,চলো!শুয়ে পড়ি গিয়ে!”
শফিক এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল।স্পষ্ট গলায় বললো,
—“আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না।আপনি আমাকে যেমন ভাবছেন,আমি তেমন নই!”
রোদ্দুর থেমে গেল।অবাক হয়ে আস্তে আস্তে বলল,
—“কি বলছো পাগলের মতো?তুমি কেমন নয়?”
—“আপনি পাগল!আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল!আপনার পরবর্তী প্রজন্মের সবাই পাগল!বুঝতে পেরেছেন?”
—“শফিক!আর ইউ অকে?কি বলছো এসব?”
—“আমি যা বলছি ঠিক বলছি!যেমন আছি একদম ঠিক আছি।আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাব না মানে ঘুমাব না!”
রোদ্দুর অবাক হয়ে অহির রুমের দরজার দিকে এক পলক তাকালো।পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ।সবাই গভীর ঘুমে।শুধু তারা দুজন জেগে।রোদ্দুর এক পা বাইরে রেখে বলল,
—“শফিক,ছেলেমানুষী করবে না।তুমি আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না তাহলে কোথায় ঘুমাবে?এ বাড়িতে কি এক্সট্রা রুম আছে আরো?না!নেই!”
—“আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।আপনার মতলব আমি সব বুঝতে পেরেছি।কস্মিনকালেও আমি আর আপনার সাথে ঘুমাব না।”
এটুকু বলে শফিক দরজার আড়ালে রাখা মাদুর এক টানে বের করলো।রান্নাঘরের ফাঁকা অংশতে বিছিয়ে সটান শুয়ে পড়লো তার উপর।রোদ্দুর অবাক হয়ে সব দেখছে।এর আবার হঠাৎ করে কি হলো?
রোদ্দুর কনফার্ম হতে বলল,
—“তার মানে তুমি এখানে ঘুমাবে?সারারাত এখানে থাকবে?সত্যি?”
শফিক নিজের হাত ভাঁজ করে মাথার নিচে দিল।রোদ্দুরের দিকে চেয়ে বলল,
—“অবশ্যই সত্যি।আলবাত সত্যি।তিন হাজার সত্যি।”
রোদ্দুর আর বিরক্ত করল না।গুনগুন করে দু বার গাইলো,
“মনের কিনারে চলে আয়….
এলোমেলো করে দে আমায়…”
শফিক ভয়ার্ত চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকালো। রোদ্দুরের সেদিকে খেয়াল নেই।সে মাথা নেড়ে আস্তে করে রান্নাঘরের দরজা ভিড়িয়ে অহির দরজার সামনে দাঁড়লো।কয়েক মিনিট চুপচাপ অহির রুমের দরজায় হাত বুলালো।তারপর দরজায় একটা চুমু দিয়ে হনহন করে শফিকের রুমে ঢুকলো।
১৫.
ভোরবেলা আযানের শব্দে ঘুম ভাঙলো রেখার।তবুও সে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো।দক্ষিণের কলপাড় থেকে কেমন যেন শব্দ আসছে কানে।শব্দটা নতুন নয়!প্রায়ই তার কানে আসে।মনে হয় কেউ একজন কলে চাপ দিয়ে পানি তুলছে।অথচ ভোরবেলা এ বাড়িতে কল চেপে পানি তোলার মানুষ নেই।
তবুও সন্দেহের জের ধরে তিনি কয়েক বার উঠে গিয়ে পরীক্ষা করেছেন।কাউকে দেখতে পাননি।এটা তার মনের ভুল হয়তো!তা না হলে কল চাপার শব্দ কেন শুধু তার কানেই আসবে?
দূরে কোথাও বেসুরো কন্ঠে কা কা করে যাচ্ছে। সকাল হতে না হতেই কাকের ডাক?এই আঁধার না কাটতেই কাক ডাকা শুরু করলো কেন?কাক কি মানুষের মতো নির্ঘুম রাত কাটায়?কাকের কি সন্তান হারানোর কষ্ট আছে?কে জানে!
রেখা ঘাড় ঘুড়িয়ে আবছা আলোয় স্বামীর পানে তাকালেন।মাথা ন্যাঁড়া করায় আলাদীনের দৈত্যের মতো লাগছে তাকে।বহু বছর পর রেখার আফসোস হলো।এমন একটা গর্দভ মানুষের জন্য সে নিজের পরিবার জলাঞ্জলি দিল?কিভাবে পারলো?মানুষের দিনে দিনে বুদ্ধি বাড়ে।সুতীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের হয়।এর তো উল্টো হচ্ছে।দিন দিন আরো বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। একটা কুঁচো চিংড়ির মাথায় যতটা বুদ্ধি আছে এর মাথায় তাও নেই!
রেখা উঠে পড়লো।মশারির ভেতর থেকে সাবধানে বের হলো।ঝুলন্ত সুইচ টিপে দিতেই সারা ঘর আলোয় ভরে উঠলো। জলিল চোখ মুখ কুঁচকে ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,
—“থাড়ু!লাইট বন্ধ করো গো!”
রেখার ইচ্ছে করছে জলিলের টাক মাথা ফাটাতে।সে মনে মনে বলল,
—“বজ্জাত।তুই থাড়ু,তোর বাপ থাড়ু,তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী থাড়ু!”
মেজাজ তিরিক্ষি হওয়া শুরু করলো তার।কিন্তু সে এই ভোরবেলা মেজাজ খারাপ করতে চাচ্ছে না।সেজন্য চুপচাপ দরজা খুলে বের হলো।
কলপাড়ে গিয়ে হাতে মুখে পানি দিল।শাড়ির আঁচলে মুছে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল।অন্ধকার এখনো ভালো মতো কাটেনি।
রান্নাঘরের দরজা খুলে পা রাখলো রেখা।রান্নাঘর পুরো অন্ধকার।দু পা এগিয়ে যেতে মানুষের মতো কিছু একটার সাথে বেঁধে ধাড়াম করে পড়ে গেল সে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে এক চিৎকার দিল।
—“ভূত!”
তার চিৎকারে সবার আগে শফিকের ঘুম ভাঙলো।চোখ কচলে মায়ের দিকে তাকালো।মায়ের ভয়ার্ত মুখ দেখে তার মায়া হলো।কিন্তু সে কিছু না বলে উল্টো শুয়ে পড়লো।তার মায়ের মনে ভূত নামক জিনিসটা নিয়ে প্রচুর বাড়াবাড়ি!
কয়েক সেকেন্ড লাগলো সবার পৌঁছাতে।ঘুম ঘুম চোখে জলিল, রোদ্দুর আর অহি বের হয়ে এসেছে।অহি এগিয়ে গিয়ে দ্রুত লাইট অন করলো।শফিককে মেঝেতে শুইয়ে দেখে আর মাকে তার পাশে মুখ ঢেকে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল অহির।রোদ্দুর এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“চাচি মা।ভূত কোথায়?ভূতের গোষ্ঠীর আজ দফারফা করবো।বাড়িতে ঢোকার সাহস পায় কি করে এগুলো?তাও আবার সরাসরি রান্নাঘরে!”
রেখা মুখ থেকে হাত সরিয়েছে।তার শরীর কাঁপছে ভয়ে।কয়েক সেকেন্ড চারপাশে তাকিয়ে সব বোঝার চেষ্টা করলো।শফিককে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সব বুঝে গেল।তাকে ভয় দেখানোর জন্য এক চড় মারলো তার মাথায়।শফিক বিরক্ত স্বরে বলল,
—“মা!বিরক্ত করবে না।অনেক রাতে ঘুমিয়েছি কিন্তু।”
রেখাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদ্দুর কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
—“চাচি মা!ভূত কোথায়?আশপাশে তো চোখে পড়ছে না?”
রেখা কপাল কুঁচকে রোদ্দুরের দিকে তাকালো। উল্টো করে টিশার্ট পড়েছে ছেলেটা।তাতেও সামনের গলা পেছনে।ছেলেটা এত বেকুব?তার মাথা ন্যাঁড়ার থেকেও বেকুব!সে শক্ত কন্ঠে বলল,
—“ভূত কি দেখা যায় যে চোখে পড়বে?”
—“সে কি!চাচি মা,আপনি না মাত্র ভূত বলে চিল্লালেন?আপনি দেখলেন কি করে?তবে কি আপনার সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে?”
অহি চোখ গরম করে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর সে চোখের আগুনে ঝলসে গেল যেন।সবার আড়ালে বুকে হাত রাখলো।
অহি শফিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“শফি উঠে বস।তুই এখানে শুয়ে কেন?”
শফিক অনিচ্ছা নিয়ে উঠে মাদুরে বসলো।রাতে বালিশ ছাড়া ঘুমানোর ফলে ঘাঁড় ব্যথা হয়ে গেছে।নাড়ানো যাচ্ছে না।তবুও সে মাথা কয়েকবার ডানে বামে ঘুরিয়ে বলল,
—“রোদ্দুর ভাইয়ার জন্য বুবু।”
সবাই অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর ভীত চোখে চেয়ে বলল,
—“কি সাংঘাতিক!এই শফিকটা নিশ্চিত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।ভাই শফিক!আমি কি কোনো ভাবে তোমাকে হার্ট করেছি?এভাবে ফাঁসাচ্ছো কেন?”
শফিক এক পলক রোদ্দুরের দিকে তাকালো।তারপর বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,
—“আরে রোদ্দুর ভাইয়ার ঘুমানোর কোনো শ্রী নেই।ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরে।গায়ের উপর পা তুলে দেয়।বিরক্ত লাগে!বুকের উপর হাত দেয়।”
অহি বিস্ফারিত চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলল,
—“এইডা একটা ডাহা মিছা কথা।”
শফিক বলল,
—“আমি কোন স্বার্থে মিথ্যে বলতে যাব এসআই?আপনার ঘুম জঘন্য, জঘন্য এবং জঘন্য।”
অহি উঠে দাঁড়ালো।বাইরের দিকে পা রাখতে রোদ্দুর তোতলানো স্বরে বলল,
—“অজান্তা,তুমি একদম শফিকের কথা শুনবে না।ভয় পাওয়ার কিছু নেই!আমি ঘুমের ঘোরে নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করতে পারি।তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তো?তাহলে তুমি একদিন আমার সাথে ঘুমিয়েই দেখো না!”
রোদ্দুর বলার পরেই জিভ কাটলো।ছি!হবু শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে কি বলে দিল?তার জিভ লাগামছাড়া কবে থেকে হলো?সে সবার সামনেই ঠাস করে নিজের গালে চড় দিল।সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে অহেতুক হাসার চেষ্টা করলো।কিন্তু কারো মুখো ভঙ্গির কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত হলো না।সে নিতান্ত অনিচ্ছায় রান্নাঘর থেকে বের হলো।
রোদ্দুর চলে যেতেই জলিল গলা খাঁকারী দিল।এতক্ষণ অনেক কীর্তন শুনেছে।আর শুনবে না।সে ধমকের সুরে শফিককে বলল,
—“শফিক!”
—“বলো বাবা!”
—“তুমি এই ভাবে বাবা জীবনকে অপমান করতে পারো না।সে ঘুমের মধ্যে হাত উঠাক,পা উঠাক,প্রয়োজনে নাক,কান,গলা, ফুসফুস সব উঠাক তোমার উপর!তুমি এভাবে বলবে কেন?এতে তার সম্মানহানি হয়!”
শফিক বিরক্ত হয়ে বলল,
—“বাবাজীবন তোমার, আমার না বাবা!আমার এসবে টলারেন্স ক্ষমতা একদম নেই বললেই চলে।আজ থেকে তুমি বরং তোমার বাবা জীবনকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ো!”
অহির কান ঝালাপালা হয়ে গেল।এই ছেলে কবে মানুষ হবে?নাকি কোনোদিন হবে না?হাঁদারাম!গাধা কোথাকার!
(চলবে)
কাল ইনশাআল্লাহ দু পর্ব দেয়ার চেষ্টা করবো।🤎