কলেজের স্যারকে ভালোবাসি শব্দটা নির্লজ্জের মতো বলতেই ফাইজার গালে সজোরে পর পর দুইটা থা’প্পড় পড়লো। তাও ভরা রাস্তার জনসম্মুখে।রাস্তার মানুষজন কেউ কেউ হাসচ্ছে,, আবার কেউ সার্কাস দেখার মতো উচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আর অপমানবোধে ফাইজার চোখ বেয়ে শীতল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ফাইজা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। ফাইজার সামনেই ফারদিন রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। রাগে ওর মাথা ফে’টে যাচ্ছে। ফাইজা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতেই ফারদিন চিৎকার করে বললো….
–এই মেয়ে, বয়স কত তোমার? টিচার কে রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে প্রোপজ করছো। কোনো ভদ্রতা শিখো নি? কি শিক্ষা দিয়েছে তোমার পরিবার? এন্সার মি?
ফাইজার কান্নার বেগ এইবার বেড়ে গেলো। ফারদিন পূর্নরায় চেঁচিয়ে বলে উঠলো….
—স্টপ ক্রায়িং এন্ড এন্সার মাই কুয়েশ্চন?
ফাইজার পাশে ওর ফ্রেন্ডরা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফাইজা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বললো…
—স্যারি স্যার। আসলে এটা একটা ডেয়ার ছিলো। আমাকে ভুল বুঝবেন না স্যার প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার প্লিজ…..
বলেই ফাইজা আবারো কান্না করে দিলো। ইতোমধ্যেই ফাইজার গাল দুটো লাল হয়ে আছে। গালে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। কান্না করার ফলে ঠোঁট দুটো আরো গোলাপি হয়ে উঠেছে। চোখের পানিতে পুরো মুখ ভিজে একাকার অবস্থা। ফারদিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফাইজাকে একবার দেখে নিলো। ৫ ফুট ২/৩ ইঞ্চি হবে হয়তো। গায়ের রঙ খুব বেশি ফর্সা না হলেও এই রঙটাকে ফর্সা বললেই চলে। পড়নে কলেজের সাদা ড্রেস আর চুল বেনুনী করে সামনে এনে রেখেছে। কপালে কাটা চুল গুলো ছড়িয়ে আছে। দেখতে বেশ মায়াবী লাগছে। ফারদিনকে চুপ থাকতে দেখে ফাইজা অশ্রুসিক্ত চোখে ফারদিনের দিকে তাকাতেই ফারদিন দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নিজেকে শান্ত করে চোখে মুখের রাগী ভাব এনে বলে উঠলো….
— টিচারের সাথে এই ধরনের ফান করাকে অভদ্রতা বলে। তোমাকে দেখে আমি যথেষ্ট ভদ্র মনে করেছিলাম। নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে পরিনতি বাজে হবে।
ফারদিনের কথা শেষ না হতেই ফাইজা ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠলো…
–স.স.সস্যারি স্যা..
পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ফারদিন ধমক দিয়ে বলে উঠলো…
–গেট আউট ফ্রম মাই আই’স…..
বলতেই ফাইজা টলমল জল ভর্তি চোখে একবার ফারদিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো। ফাইজা চলে যেতেই ফারদিন গাড়িতে গিয়ে বসে সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে মুখ চেপে ধরে একটা বড় করে নিশ্বাস ছাড়লো। হাত দুটো বেগতিক ভাবে কাপছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে চোখের উপরে ছড়িয়ে আছে। পানির বোতলটা বের করে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিলো। গাড়িতে এসি চলছে তাও ফারদিনের অস্বস্তি হচ্ছে। এই অস্বস্তির কারন ওর জানা নেই। এখন আরো বেশি রাগ লাগছে ওর। ফারদিন রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। এই মুহূর্তে ওর ভীষন রাগ লাগছে। এই রাগ, এই অস্বস্তির কারন কেনো জানা নেই ওর? ফারদিন চুল গুলো একবার খামচে ধরে আবার সিটে মাথা হেলিয়ে দিলো। পরক্ষনেই আবার মাথা উঠিয়ে ঘাড়ের দুই পাশে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করে গাড়ির স্ট্যায়ারিং এ ঘু’ষি মে/রে বললো…..
–হোয়াই? আই কা’ন্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ? হোয়াট’স হ্যাপেনিং টু মি?
বলেই কিছুক্ষন ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই চোখ দুটো ভেসে উঠলো। ফারদিন তাড়াতাড়ি চোখ খুলে গাড়ি স্ট্যাট দিলো।
____________________________________________
ফাইজা বাসায় আসতেই ওর মা হাজার টা প্রশ্ন করেছে গালে দাগ দেখে কিন্তু, অপর পাশ থেকে মেয়ের কোনো উওর না পেয়ে বিরক্ত স্বরে বললো…
–নিশ্চয়ই পড়া না দেওয়ার জন্য মা’র খেয়েছিস। নতুন নতুন কলেজে পা রেখেছিস কোথায় পড়া দিয়ে স্যারদের কাছে ভালো হবি তা না করে মা’র খেয়ে বাসায় ফিরচ্ছিস। আজকেই তোর বাবাকে বলতে হবে তোর জন্য যেনো ভালো একটা টিউশন টিচার খোঁজে।
ফাইজা ওর মায়ের বকবকানিতে বিরক্ত হয়ে ব্যাগটা সোফায় ফেলে বড় বড় পা ফেলে রুমে চলে গেলো। পেছন থেকে নাদিয়া বেগম মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ব্যাগটা গুঁছিয়ে রেখে কিচেনে চলে গেলো।
বাবার ডাকে ফাইজা চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতেই মনে পড়লো। সেই কলেজ থেকে ফিরে রুমে এসে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানেনা। ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখলো ঘড়ির কাটা তিনটা ছুঁই ছুঁই। এখনো ড্রেসটা অব্দি খোলা হয়নি। ফাইজা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলতেই বাবা হাসনাতের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখটা দেখতেই ফাইজা মুচকি হেসে বলে উঠলো….
—আমি ঠিক আছি বাবা। তুমি টেবিলে বসো আমি পাঁচ মিনিটে খেতে আসচ্ছি।
মেয়ের থেকে অভয়বানী পেয়ে মেয়ের মাথায় আলতো হাতে হাত বুলিয়ে চলে গেলো হাসনাত। ফাইজা ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেই দেখলো দুই গাল এখনো খানিকটা লাল হয়ে আছে। কান্না করার ফলে চোখের কোনা লাল হয়ে ফুলে আছে। ফাইজা রাস্তার ঘটনাটা ভুলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো।
খাবার টেবিলে বসতেই হাসনাত শেখ খাবার মুখে দিতে দিতে বলে উঠলো…
–কি মামনি শুনলাম আজ তুমি পড়া দিতে পারো নি। এটা কি ঠিক?
ফাইজা ওর বাবার কথায় নিচের দিকে তাকিয়ে খাবারে মনোযোগী হলো। হাসনাত শেখ কিছুক্ষন বাদে আবার বলে উঠলো….
—আজ থেকে তোমার টিউশন টিচার আসবে বিকেলে। পড়ায় যেনো কোনো গাফিলতি না দেখি। মনে রেখো, তোমাকে ঘিরেই আমার স্বপ্ন।
ফাইজা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে চলেছে। টিচার শব্দটা শুনলেই ফাইজার সকালের কাহিনী আর ফারদিনের চেহারাটা চেসে উঠছে বার বার।
____________________________________________
ফারদিন বাসায় কলিং বেল বাজাতেই একটা বয়স্ক মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। মহিলাটার বয়স ষাটোর্ধ হলেও দেখে মনে হয় এখনো পঞ্চাশঘরে পা রাখেনি। ফারদিন কে দেখেই সায়মা খানম বুঝতে বাকি রইলো না ছেলেটা রেগে আছে। ফারদিন কিছু না বলে সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে সায়মা খানম শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো….
—আজকেও তোমার বাবা এসে তোমার খোঁজ করে গেছে। কত দিন আর বাবা ছেলের এই যুদ্ধ চলবে?
রাগের শরীরে ফারদিন বাবা নামক শব্দটা শুনে আরো দ্বিগুন রেগে গেলো। সিড়ির পাশে ভাজ’টা ঝড়ের গতীতে ছুড়ে মে’রে সায়মা খানমের সামনে ছুটে এসে চিৎকার করে বলে উঠলো…..
—পৃথিবীতে আমি দুইটা শব্দ সব থেকে বেশি ঘৃনা করি। “বাবা” এন্ড “মেয়ে” এই দুইটা শব্দ আমি সবথেকে বেশি ঘৃনা করি। আই হোপ ইউ নো দ্যাট ।
বলতেই সায়মা খানম ফারদিনের কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা বানীতে পূর্নরায় শান্ত কন্ঠে বললো….
—ক্লাম ডাউন নানুভাই। প্লিজ, ক্লাম ডাউন। লিস্টেন টু মি, বাবা একটা মধুর শব্দ। বাবা নামক ব্যাক্তিটা শ্রদ্ধার ব্যাক্তি। প্রত্যেক সন্তানের বটবৃক্ষ তার বাবা। বাবা না থাকলে পৃথিবীটা কতটা অসহায় যার বাবা নেই সেই বুঝবে। তাই একজন নিকৃষ্ট বাবার জন্য তুমি পুরো বাবা জাতীকে অসম্মান করতে পারো না। এন্ড পৃথিবীতে ভালো_খারাপ উভয় মানুষ বসবাস করে। সব ছেলেরা যেমন খারাপ হয়না, তেমনি সব মেয়েরাও খারাপ হয়না। তাই তুমি একজন নারীর জন্য সব নারীর দিকে আঙ্গুল তুলতে পারোনা সেই রাইট’স তোমার নেই। আমিও নারী, আমিও মা, আমিও মেয়ে, আমিও বউ। এখন তুমি আমাকেও বলবে আমি খারাপ, চরিত্রহীন। আমাকে ও এখন ঘৃনা করবে?
সায়মা খানমের কথা গুলো শুনে ফারদিন রাগে পুরো সামনে থাকা সোফায় লা/থি মে’রে বললো…..
–প্লিজ দীদা। আমাকে আর এইসব বুঝাতে এসো না। তুমি সব জেনেও কেনো বলছো এইসব?হ্যা,আমি মানছি সব মেয়েরা খারাপ না কিন্তু আমি কি করবো? আমি সব মেয়ের মাঝে ঐ ঘৃনিত একজনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আমার লাইফে তুমি ব্যাতিত অন্য নারী থাকবে ন…….
পুরো কথা শেষ না করেই হঠাৎ থেমে গেলো ফারদিন। কিছু একটা ভেবে চোখ বন্ধ করতেই তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে সোজা সিড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার পেছন ফিরে শান্ত কন্ঠে বললো…..
—নেক্সট টাইম আমার সামনে বাবা নামক শব্দটা উচ্চারণ করবেনা দীদা। গট ইট……
#চলবে
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#সূচনা_পর্ব
[আসসালামু আলাইকুম। অনেক দিন পর নতুন গল্পে। এতদিন অসুস্থ থাকায় গল্প থেকে দূরে ছিলাম। অনেক দিন পর লিখেছি তাই অগোছালো ক্ষমা করবেন। কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন। এই গল্পটা রোমান্টিকতার সাথে কিছু রহস্য থাকবে। চলবে কি? আপনারাই বলুন]