গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_২৮

গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_২৮
#লেখায়_ফারহানা_ছবি

.
.
🦋
রাত আটটায় প্রাণো ফোন অন করে দেখে স্মরণের অনেক গুলো মিসড কল ৷ প্রাণো স্মরণকে কল ব্যাক করতে যায় তখনি আর একটা নম্বর থেকে প্রাণোর ফোনে কল আসে ৷ প্রাণো কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো ,” কেমন আছো প্রাণো? উহু ভুল বললাম মিসেস প্রাণো রাইট৷”

” হু আর ইউ?”

” হা হা হা চিনতে পারছো না? ইস আমি কি না! তুমি আমাকে কি করে চিনবে? যাই হোক আমি আমার পরিচয় টা দিয়ে দিচ্ছি ৷ আমি মৌ একজন রিপোর্টার ৷”

প্রাণো মৌ নাম টা শুনে হেসে উঠে বলে,” শুধুই রিপোর্টার মিস মৌ? এটা তো বললেন না আপনি আমার হবু ভাবি?”

প্রাণোর কথাটা শুনে মৌ প্রচন্ড রকমের অবাক হয় ৷ প্রানো যে তার বিষয় সবটা জেনে গেছে সেটা বুঝতে মৌ’র আর বাকি নেই৷ প্রাণো মৌ’র কোন গলার আওয়াজ না পেয়ে প্রাণো হেসে উঠে আবার বলতে লাগলো,” কি হলো মাই কিউট হবু ভাবি ৷ আমার কথা শুনে তোমার সব হাওয়া ফুস! ইসস সো স্যাড হবু ভাবিজী৷”

মৌ এবার গলা খাকাড়ি দিয়ে ভিতু কন্ঠে বলে,” প্রাণো আমি কিন্তু সবটা জানি ৷ আমি সাদকে সবটা জানাবো আর সেটা করবো আজ এবং এখুনি৷”

” দেন ট্রাই ইট হবু ভাবিজী৷”

প্রাণো গা ছাড়া ভাব কথা শুনে মৌ খানিকটা কনফিউশনে পড়ে গেল৷ প্রাণো তো তাকে ভয় পাচ্ছে না উল্টো প্রাণোর কথা শুনে মৌ’র গলা শুকিয়ে আসছে ৷ তবুও মৌ রাগ রাগ কন্ঠ নিয়ে প্রাণোকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,” আ’ম নট কিডিং ইউ প্রাণো৷ আমি কিন্তু সত্যি সাদ কে সবটা জানাবো৷”

” তাহলে দেরি কিসের জন্য জানিয়ে দেও আমার ভাই আর তোমার সাদ কে ৷ আমিও অপেক্ষা করছি মাই সুইট ভাবিজী ” কথাটা বলে কাট করে কল কেটে RV কে কল করে প্রাণো…

“”হ্যালো RV এখুনি তোমাকে একটা কাজ করতে হবে৷”

” কি কাজ প্রাণো?”

” মৌ মানে ওই জার্নালিস্ট কে কিডন্যাপ করতে হবে তোমাকে , ”

RV কোন প্রশ্ন না করে বলে,” ওকে আমি এখুনি যাচ্ছি ৷”

” আর একটা কথা কাল আমি অফিসে নাও আসতে পারি তুমি বাকিটা সামলে নিও৷ ”

” তাই হবে৷”

প্রাণো কল কেটে দ্রুত বাড়িতে যাওয়ার জন্য পা চালায় ৷ অফিস থেকে কিছু দুরে এসে একটা রিকসা ভাড়া করে৷ প্রাণো রিকশা চালক কে দ্রুত চালাতে তারা দিয়ে সাদমানকে ফোন করে৷ দুবার রিং বাজতে সাদমান কল রিসিভ করে বাজখাই গলায় চেচিয়ে বলে উঠলো ,” তোর কি আমাকে মানুষ বলে মনে হয়না প্রাণো ? এভাবে না বলে হুট হাট বেড়িয়ে পড়িস কেন? বল কেন যাস?”

“দাভাই আমাকে বলতে দিবে নাকি তুমি এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে আমার মাথা ব্যাথার কারণ হবে?”

প্রাণোর কথা শুনে সাদমান কিছুটা শান্ত হয়ে ধির গলায় বলে উঠলো ,” কোথায় আছিস এখন?”

” রিকশায় আছি আর বাসায় ফিরছি৷”

” পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকিস ৷বাবা ড্রইংরুমে বসে আছে৷ ”

” দাভাই সেসব নাহয় পরে দেখবো তার আগে তুই বল৷ ওনাকে কি তুই আমার বিয়ের কথাটা জানিয়েছিস?”

” হুম জানিয়েছি কেন?” সাদমানের কথা শুনে প্রাণোর ইচ্ছে করছে দশ তালা বিল্ডিং থেকে ঝাপ দিতে৷ রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে প্রাণোর৷

” দাভাই তোর কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিচ্ছু নেই? তুই জানিস তুই কি করেছিস? স্মরণ নামক বাঘকে বলে কি ভুল করেছিস?”

সাদমান তার বোনের কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলতে লাগলো,” আসলে প্রাণো তখন এতো কিছু ভেবে বলেনি৷ ”

” তা বলবে কেন দাভাই? তুমি কি ভেবে চিন্তে কিছু করো? এখন আমার কি হবে ভেবে দেখেছো? ওই বাঘ আমাকে সামনে পেলে চিবিয়ে খাবে না বরং গিলে খাবে৷ ” কেঁদে ফেলবে এমন অবস্থা প্রাণোর.. স্মরণকে বোঝানো মানে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের থেকে কিছু কম না সেটা প্রাণো খুব ভালো করেই জানে৷ কয়েকদিন আগের ঘটনা এখনো ভুলে যায়নি প্রাণো৷ কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ তবুও সাদমানকে কলে রেখে প্রাণো বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো অন্য দিকে মৌ লাগাতার সাদমানকে কল করে যাচ্ছে ঠিক ততোবার নম্বর বিজি বলছে৷ রাগে ফুসতে ফুসতে মৌ তার পার্স হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয় সাদমানকে সব জানিয়ে দিবে সে উদ্দেশ্য কিন্তু মৌ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পরই RV মৌ কে সেন্সলেস করে গাড়িতে তুলে নিয়ে নিয়ে যায়৷

Rv কাজ শেষ করে প্রাণোকে মেসেজ করে জানিয়ে দেয়৷ প্রাণো মেসেজ দেখে সাদমান কে বলে,” দাভাই আমি বাড়িতে আসছি পেছনের দরজা খুলে দেও ৷”

” হুম ওয়েট ”

প্রাণো ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির পেছনের গেটে এসে দাড়ানোর দুমিনিট পর সাদমান এসে গেট খুলে দেয়৷ প্রাণো লুকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়৷ প্রাণো ফ্রেস হয়ে রুমে এসে দেখে রুম পুরো অন্ধকার হয়ে আছে৷

” লাইটের আবার কি হলো? কিছুক্ষণ আগেতো জ্বলছিলো ৷ ধুর কি জ্বালা ফোনটা কই রাখলাম ৷ ” প্রাণো টেবিলের উপর হাত রাখতে ফোনটা পেয়ে যায়৷ দ্রুত ফ্লাশ জ্বালিয়ে সামনে আলো ফেলতে চমকে ওঠে লাল টকটকে দুটো চোখ দেখে…. প্রাণো খুব ভালো করে বুঝে গেছে এই রক্তবর্ণের চোখ দুটো কার , প্রাণোর গলা শুকিয়ে গেছে ৷ প্রাণো বুঝতে পারছে তার হয়তো আজ শেষ দিন থুক্কু রাত ৷ প্রাণো ভয়ে স্মরণের দিকে না এগিয়ে ওয়াশরুমে দৌড়ে ঢুকতে গেলে স্মরণ প্রাণোর হাত ধরে ফেলে বেডের উপর ফেলে দিয়ে প্রাণোর গলা চেপে ধরে স্মরণ….

” স্মরণ কি করছো ছাড়ো আমায়..”

” কেন তোর না বিয়ে করার খুব শখ? সে শখ আমি তোর মিটাবো আজ , প্রথমে তোকে শেষ করবো তারপর নিজেকে বুঝেছিস৷”

প্রাণো স্মরণের হাত গলা থেকে সরাতে না পেরে স্মরণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে প্রাণো স্মরণের উপর উঠে স্মরণের ঠোঁট দুটো চেপে ধরে ৷ মিনিট পাঁচেক সময় এভাবে কেটে যায়৷ স্মরণ আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যায়৷ প্রাণো যখন বুঝতে পারে স্মরণ শান্ত হয়ে গেছে তখন প্রাণো স্মরণের ঠোটঁ জোড়া ছেড়ে দিয়ে স্মরণের পাশে শুয়ে পড়ে প্রাণো বলতে লাগলো,” তুমি ভাবলে কি করে স্মরণ আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো? তুমি আমার ভালোবাসা এতোটাই ঠুনকো মনে করো? তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছি ৷ নিজের সবটা উজার করে দিয়ে ভালোবেসেছি তারপরও আমায় তুমি চিনলে না! বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে তুমি ভেবে নিলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবো? ”

প্রাণোর চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে৷ ফোনের ফ্লাশের আলোতে প্রাণোর চোখের পানি স্মরণের আড়াল হয়নি৷ প্রাণো কষ্ট পেয়েছে এটা ভেবেই স্মরণের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো৷ স্মরণ তৎক্ষনাৎ প্রাণোকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে..” আই এম স্যরি প্রাণ৷ বিশ্বাস করো তোমাকে হাড়িয়ে ফেলার ভয়ে কতোটা যে হিংস্র হয়ে উঠছি নিজেও বুঝতে পারেনি৷ তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি৷ তুমি বিহিন আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না প্রাণ৷ সারাদিন তোমায় ফোনে না পেয়ে আমার যে কতোটা টেনশন হচ্ছিলো সেটা আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না প্রাণ৷ প্রত্যেকটা সেকেন্ডে মনে হচ্ছিলো আমার শ্বাস আটকে আসছে৷ নিজের রাগ জেদ কন্ট্রোল করতে পারি নি৷ তার উপর যখন শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন মনে হচ্ছিলো পুরো দুনিয়া জ্বলিয়ে দিতে৷ ”

স্মরণের বুকে মাথা রেখে কেঁদে যাচ্ছে প্রাণো৷ মানুষটা যে তাকে এতোটা ভালোবাসে ভাবতেই প্রাণোর কান্না পায় তবে এটা দুঃখের কান্না নয় সুখের কান্না৷

স্মরণ তার ঠোঁট জোড়া প্রাণোর কপালে ছুঁইয়ে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে৷ যেন বাধন একটু আলগা হলেই তার প্রাণ হাড়িয়ে যাবে৷

বেশ কিছুক্ষন পর প্রাণো স্মরণের বুক থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেয়৷ লাইটের আলোতে স্মরণকে দেখে প্রাণোর প্রচন্ড অনুশোচনা হয় এটা ভেবে তার গোপন কাজের কথাটা স্মরণের থেকে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে ৷ স্মরণ যদি কখনো জানতে পারে এমন রিস্কি ভয়ংকর কাজ লুকিয়ে করে আর এতে তার প্রাণ সংশয় আছে এমন কাজ সে কখনোই করতে দিবে না আর প্রাণো এই কাজ ছাড়তে পারবে না৷

প্রাণো স্মরণের উস্ক সুস্ক এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ব্রাস করে দিয়ে বলে,” তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি খাবার নিয়ে আসছি৷ তোমায় দেখে মনে হচ্ছে তুমি সারাদিন কিছু খাওনি৷ আজ আমি নিজের হাতে তোমাকে খাইয়ে দিবো৷”

” আর আমি এখন তোমাকে খাবো৷” স্মরণের লাগামহীন কথা শুনে প্রাণো স্মরণকে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে, ” ব্যাটার লজ্জাসরম বলতে কিচ্ছু নাই মাঝে মাঝে এমন লজ্জায় ফেলে ইচ্ছে করে হালকা করে গলাটা টিপে দি হু” ভেংচি কেটে প্রাণো পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়৷

____________

আকাশে আজ অর্ধ চন্দ্র জ্বল জ্বল করছে ৷ প্রিয়ার রাতে না খেয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়িয়ে আছে৷ গতকাল থেকে সাজিত কেমন যেন পাল্টে গেল ৷ ঠিক যেন পুরনো সাজিত৷ প্রিয়া না চাইতেও আবার একটু একটু করে সাজিতের উপর দূর্বল হয়ে পড়ছি৷ কিন্তু সাজিত কি আদো তার ভালোবাসার যোগ্য কিনা? এটাই প্রিয়া ভেবে যাচ্ছে ৷ হঠাৎ কোমড়ে কারো হাতে স্পর্শ পেয়ে প্রিয়ার বুঝতে বাকি নেই হাত জোড়ার মালিক কে?

সাজিতের হাত জোড়া ছাড়িয়ে নিতে গেলে সাজিত আরো শক্ত করে চেপে ধরে কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে,” জানেমন একা একাই জ্যােৎন্মা বিলাস করছো আমাকে ছাড়াই এটা তো হতে পারে না জানেমন৷”

” এটা কি কোন নতুন নাটক আপনার?”

” না জানেমন এটা আমার কোন নাটক নয়৷ যেটা আগে তোমার সাথে করেছি সেটা ভুল ছিলো ৷ আমি তার জন্য অনুতপ্ত ৷ বিশ্বাস করো আমি সত্যি পুরনো সব কিছু ভুলে নতুন করে তোমার সাথে শুরু করতে চাই৷”

প্রিয়া সাজিতের থেকে নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,” মিস্টার আসফিক মাহমুদ সাজিত আমাকে কি আগের প্রিয়া ভেবে থাকলে বলবো ভুল করেছেন৷ কারণ এই প্রিয়া আর আগের মতো নেই ৷ যার মনটাকে আপনি দুমরে মুচরে পায়ের নিচে পিসে মেরে ফেলেছেন৷ এই যে প্রিয়াকে দেখছেন এই প্রিয়া হলো যে নিজের এটা একটা পাথরের তৈরি আর আমাকে তৈরি করেছে জানেন? আপনি হ্যাঁ, আপনি আমাকে এভাবে তৈরি হতে বাধ্য করেছেন৷ ”

” আমি যদি এর জনজন্য দায়ি থাকি তাহলে আমি না হয় এই পাথরে ভালোবাসা সৃষ্টি করবো৷ ”

” বাহ! সিনেমার ডাইলগ তো বেশ শেখেছেন ৷”

” তুমি যেটা মনে করো জানেমন তবে আজ তোমাকে কথা দিচ্ছি ৷ জীবনে কখনো তোমাকে আমার জন্য কষ্ট পেতে দিবো না আর আমার থেকে তোমায় দূরে যেতে দিবো৷ তুমি ঠিক যতোটা ভালোবাসতে তার হাজার গুন বেশি ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবো তোমায়৷ ”

” হাহ! সব নাটক ৷”

” সব নাটক নাকি বাস্তব তা তুমি আজ থেকে বুঝতে পারবে জানেমন ৷ ”
সাজিত প্রিয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে সোজা ডাইনিংয়ে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়৷ সাহারা বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে ডাইনিংয়ে আসতে নিলে ছেলে আর ছেলের বউ এর কান্ড দেখে লজ্জা পেয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷

প্রিয়া তার সামনে এক নতুন সাজিতকে দেখে হতবিহ্বল হতে তাকিয়ে আছে৷ সাজিতের সে দিকে কোন হেলদোল নেই বললেই চলে সে ভাত মাখিয়ে প্রিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে সাথে নিজেও খেয়ে নিচ্ছে৷ খাওয়া শেষ হওয়ার পর সাজিত যত্ন সহকারে প্রাণোর মুখ মুছিয়ে দিয়ে আবার কোলে তুলে নিলে রুমে এসে প্রিয়াকে বেডে বসিয়ে বলে,” এখানে চুপটি করে বসো আমি আসছি এখুনি..” প্রিয়ার কিছু বলার অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল সাজিত৷ প্রিয়া এখনো হতবিহ্বল হয়ে সাজিতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷

______________

পরেরদিন সকালবেলা প্রাণোর ঘুম ভাঙতেই নিজেকে স্মরণের বাহুডোরে আবিষ্কার করে৷ গতকালের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় প্রাণোর মুখ লাল হয়ে গেছে৷ গতকাল রাতে চুপি চুপি খাবার এসে স্মরণকে খাইয়ে নিজে খাওয়ার পর প্রাণো স্মরণকে যেতে বললে স্মরণ সরাসরি জানিয়ে দেয় সে যাবে না আজ রাত সে এখানেই থাকবে৷ প্রাণো বাধ্য হয়ে হার মেনে নেয়৷ তারপর শুরু হয় স্মরণের দুষ্টুমি৷ সে রাতে আবারও তারা একে অন্যের ভালোবাসার সমুদ্রে ডুবে যায়৷

প্রাণো স্মরণের বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করতে গেলে স্মরণ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রাণোকে৷ প্রাণো পড়লো বিপাকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল নয়টা বেজে গেছে হয়তো এখুনি মা এসে দরজায় নক করবে৷

প্রাণো ভাবতে ভাবতে তার মা সত্যি এসে দরজা নক করতে থাকে৷ নিশিতা বেগম এর চিৎকার চেঁচামেচিতে স্মরণ বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে তাকায়৷ প্রাণো স্মরণের কানে ফিস ফিস করে বলে উঠলো ,” এই চুপ কোন কথা বলবে না ৷ আম্মু দরজার বাইরে ৷ আমি কিছু একটা বলে ম্যানেজ করছি ৷” প্রাণোর কথা শুনে স্মরণ দমে গেল কিছু বললো না৷ প্রাণো একটু জোড়ে বলে উঠলো ,” আম্মু এই তো উঠছি তুমি যাও আমি এখুনি আসছি৷”

” তাড়াতাড়ি আসবি তোর বাবা নিচে ডাইনিংয়ে বসে আছে ৷ তোর সাথে জরুরী কথা আছে নাকি৷” দরজার বাইরে থেকে কথা টা বলে চলে গেলেন প্রাণোর মা ৷

প্রাণো দ্রুত উঠতে নিলে স্মরণ প্রাণোকে আটকে দিয়ে বলে উঠলো ,” কোথায় যাচ্ছেন রানীসাহেবা আমার মরনিং কিস না দিয়ে?”

” প্লিজ আর জ্বালিয়েও না স্মরণ ৷ শুনলে তো বাবা আমার জন্য অপেক্ষা করছে৷”

” তাতে আমার কি? শশুর মশাইকে অপেক্ষা করতে দেও কিন্তু আমাকে অপেক্ষা করিও না জান তাহলে কিন্তু আজ সারা দিনেও তুমি এই রুম থেকে বের হতে পারবে না৷”

” এই বের হতে পারবে না থেকে মনে পড়লো ৷ গতকাল রাতে আমার রুমে কি করে এলে?”

” কেন তোমার ভাই আমার বন্ধু + সালা থাকতে কি করে আসতে পারি ভাবো?”

” ওয়াট! দাভাই তোমাকে সাহায্য করেছে এ রুমে ঢুকতে?”

” ইয়েস মাই ডিয়ার ওয়াইফ৷ এখন ঝটপট একটা কিসি দেও তো”

প্রাণো মুচকি হেসে স্মরণের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বললো ” এখন তো ছাড়ো দিয়েছি তোমার মরনিং কিস৷”

” ছিঃ এটাকে মরনিং কিস বলে? ”

” তাহলে কাকে মরনিং কিস বলে হু?”

” এটাকে বলে মরনিং কিস” কথাটা বলেই স্মরণ প্রাণোর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো৷

___________

” আব্বু আমায় ডেকেছো?” (প্রাণো)

জুনাইদ কবির নিউজ পেপার রেখে প্রাণোর দিকে তাকিয়ে বলে ,” এতো সকালে গোছল কেন করেছো? আজ বাদে কাল তোমার বিয়ে যদি ঠান্ডা লেগে যায়?”

” রাতে ভিষণ গরম লাগছিলো আর এসিটাও ঠিক মতো কাজ করছিলো না তাই গোছল করেছি ৷ আর এইটুকুতে আমার ঠান্ডা লাগবে না৷”

” গতকাল কোথায় ছিলে সারাদিন?”

” বাইরে ছিলাম৷”

” শোন প্রাণো আমি তোমায় কিছু বলছি না তার মানে এই না আমি তোমাকে কিছু বলবো না৷ কিছুক্ষন পর তোমার হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে তৈরি থেকো আর আমি আশা করবো কোন ঝামেলা ছাড়াই বিয়েটা তুমি করে নিবে৷”

” জ্বি আব্বু বিয়েটা হবে তুমি টেনশন করো না৷”

” ঠিক আছে নাস্তা করে নেও ৷ আমি রুমে যাচ্ছি ৷”

জুনাইদ কবির নিজের রুমে যেতে প্রাণো একটা প্লেটে চারটে পরোটা কষা মাংস নিয়ে উপরে চলে গেল৷ নিশিতা বেগম উপরে কেন এগুলো নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে প্রাণো বলে সে রুমে গিয়ে খেয়ে নিবে৷

প্রাণো রুমে ঢুকতেই স্মরণ দরজা আটকে প্রাণোকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে…
.
.
.
#চলবে…….
[ নাইস ,নেক্সট , স্টিকার কমেন্ট না করে গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লাগছে সেটা জানাবেন৷]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here