গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_২৯
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
.
.
🦋
জুনাইদ কবির নিজের রুমে যেতে প্রাণো একটা প্লেটে চারটে পরোটা কষা মাংস নিয়ে উপরে চলে গেল৷ নিশিতা বেগম উপরে কেন এগুলো নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে প্রাণো বলে সে রুমে গিয়ে খেয়ে নিবে৷
প্রাণো রুমে ঢুকতেই স্মরণ দরজা আটকে প্রাণোকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে, ” হাউ ডেয়ার ইউ প্রাণ৷ বিয়ে করবে তুই তাই না?”
প্রাণো কোন ভাবে হাতের প্লেট টা টেবিলের উপর রেখে স্মরণের চোখে চোখ রেখে বলে,” হ্যাঁ বিয়ে করবো বলেছি কিন্ত কাকে করবো সেটা কি আব্বুকে বলেছি স্মরণ?”
” না বলোনি কিন্তু বিয়েতো করবে ?”
” হ্যাঁ করবো৷ কিন্তু তার আগে স্মরণ তুমি আমাকে বলো , তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো?”
” হুম করি৷”
” কিন্তু তোমার কথা আর কার্যে তো মনে হয় না তুমি আমাকে বিশ্বাস করো৷ তবে আমি এতোটুকুই বলবো বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর৷ একটু ভরশা রাখো আমার উপর ট্রাস্ট মি সব ঠিক করে দিবো৷ আর তোমাকে এভাবে লুকিয়ে চুড়িয়ে আসতে হবে না মাথা তুলে আসবে৷”
প্রাণোর কথা শুনে স্মরণের রাগ টা দমে গেল৷ প্রাণোকে অন্য কারোর সাথে ভূলেও কল্পনা করতে পারে না স্মরণ সেখানে বিয়ের কথা চলছে তাই স্মরণ তার রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারেনি৷ স্মরণ প্রাণোকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে ৷
প্রাণো স্মরণের রাগের কারণ বুঝতে পারে বিধায় স্মরণকে ভুল না বুঝে স্মরণকে নিজের সব প্লান টা বুঝিয়ে দেয়৷ সবটা শুনে স্মরণ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাণোর দিকে, প্রাণোকে দেখে যেমনটা ভেবে ছিলো স্মরণ প্রাণো যে তার থেকে অনেক বেশি ইন্টিলিজেন্ট এটা স্মরণের বুঝতে আর বাকি নেই৷
এদিকে প্রাণো স্মরণের মুখে পরোটা ছিড়ে মুখে তুলে দিতে দিতে মনে মনে বলতে লাগলো ,” আমাকে ক্ষমা করো স্মরণ সামনে যে তোমাকে আমার জন্য কষ্ট পেতে হবে ৷ তোমার প্রিয় মানুষ গুলো অচেনা হয়ে যাবে তোমার কাছে; হয়তো আবার অচেনা মানুষ তোমার জীবনে খুব ইম্পটেন্ট হয়ে দাড়াবে৷ ”
প্রাণো স্মরণকে খাইয়ে দিয়ে নিজে একটা পরোটা খেয়ে নিয়ে স্মরণকে রুমে লুকিয়ে থাকতে বলে প্রাণো প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ প্রাণো রান্না ঘরে প্লেট রেখে ড্রইংরুমে এসে দেখে সাজিত আর প্রিয়া দাড়িয়ে, প্রিয়া প্রাণোকে দেখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে৷
” আপু কেমন আছিস তুই ? কতোদিন পর তোকে দেখলাম৷”
প্রাণো প্রিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,” প্রিয়ু আমি ভালো আছি ৷ তুই কেমন আছিস আর তোর সংসার কেমন চলছে?”
সাজিত এক দৃষ্টিতে প্রাণোর দিকে তাকিয়ে আছে আর ভেবে যাচ্ছে আগের প্রাণোর সাথে এই প্রাণোর অমিল গুলো৷ সাজিতের চোখে কেন যেন প্রাণোকে আগের থেকে বেশি সুন্দর লাগছে৷ বিশেষ করে ভেজা চুল , কাজল কালো নীল আখি হলুদ সালোয়ার কামিজে যেন মনে হচ্ছে সদ্য আকাশ থেকে কোন হলদে পরী টুপ করে পৃথিবীতে এসে পড়েছে৷ সাজিত যখন তার ভাবনায় প্রাণোকে নিয়ে বিচলন করছে তখনি প্রাণো প্রিয়াকে ছেড়ে সাজিতের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,” তো মিস্টার সাজিত কেমন আছেন? ” প্রাণো গলা শুনে সাজিত তার ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো,
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো প্রাণো?”
” মিস্টার সাজিত আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার বউয়ের বড় বোন সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলুন৷ আপু বলে ডাকবেন আর আপনি বলবেন ভুলে যাবেন না আমি সম্পর্কে আপনার বড় ৷”
প্রাণোর কথা শুনে প্রিয়া ঠোঁট চেপে হাসছে আর সাজিত অবাক হয়ে প্রাণোর কথা শুনে গেল৷ প্রাণোর সৌন্দর্য বাড়ার সাথে সাথে যে প্রাণোর ব্যবহার পাল্টে যেতে পারে ৷ এটা জানতো না সাজিত৷ নম্র ভদ্র প্রাণোর মুখে কাট কাট কথা গুলো সাজিতের ঠিক হজম হলো না৷ সাজিত এবাড়ি আসতে চাইনি কিন্তু তার শশুড় ফোনে অত্যন্ত অনুরোধ করে তার বড় মেয়ে বিয়েতে আসার জন্য সাথে পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে৷ কিন্তু জীবন মাহমুদ সাহারা বেগম মিহু বিয়ের দিন যাবে বলে জানিয়ে দেয়৷ তাই সাজিত প্রিয়াকে নিয়ে শশুর বাড়ি চলে আসে৷
” প্রিয়ু জামাই কে নিয়ে রুমে যা আমি মাকে বলছি জামাইয়ের জামাই আদরের ব্যবস্থা করতে৷”
” ঠিক আছে আপু”
প্রিয়া সাজিতকে নিয়ে রুমে গিয়ে সাজিতকে রুমে রেখে আবার বেড়িয়ে আসে৷ আজ দুই মেয়ে তাদের মাকে জড়িয়ে ধরে আছে ৷ নিশিতা বেগম দুই মেয়েকে অনেক দিন পর এক সাথে পেয়ে ভিষন খুশি৷ নিজের হাতে নানা রকম রান্না করেন ৷ সাজিতকে সামনে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে নিশিতা বেগম৷ তখন হুট করে প্রিয়া প্রানোর হাত টেনে প্রাণোর রুমের দিকে নিয়ে যেতে দেখে প্রাণো বাধা দেয় প্রিয়াকে….
” প্রিয়ু কিছু বলার হলে এখানে বল আবার রুমে কেন যেতে হবে৷”
” উফফ আপু তুমি বুঝতে পারছো না ৷ এখানে ওই সব কথা বলা যাবে না দেওয়ালেরও কান আছে ৷ কোথা থেকে কে শুনে ফেলবে৷ দেখছো না বাড়িতে যে হাড়ে লোকজন বাড়ছে তোমার বিয়ে উপলক্ষে…” কথা গুলো বলতে বলতে প্রিয়া প্রাণোর রুমে ঢুকে স্টাচু হয়ে গেল কারণ সামনে তার ভাসুর স্মরণ দাড়িয়ে আছে৷ স্মরণ প্রিয়াকে দেখে ভ্রুযুগল কুচকে বলে,” প্রিয়া তুমি এখানে?”
” এই প্রশ্ন তো আমার আপনাকে করা উচিত ভাইয়া৷ আপনি আপুর রুমে কি করছেন?”
” আমি আমার বউয়ের রুমে থাকবো না তো কি পাশের বাসার ভাবির রুমে থাকবো প্রিয়া?”
” ম,, মানে এই আপু ভাইয়া কি বলছে? সব যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ৷ ”
প্রাণো প্রিয়ার হাত ধরে বেডে বসিয়ে বলে,” স্মরণ মানে তোর ভাসুর ঠিক বলেছে প্রিয়া ৷ আমরা অনেক কয়দিন আগে বিয়ে করেছি আর সেটা জানতো দাভাই আর আমাদের বন্ধু বান্ধবীরা…”
প্রিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে প্রাণো আর স্মরণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,” তোমরা কি পঁচা আপু দুলাভাই ৷ আমাকে একবারও জানালে না৷ আমি কি তোমাদের পর হু ৷ ” ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো প্রিয়া৷
প্রিয়ার কথা শুনে আর ঠোঁট উল্টে কান্না করতে দেখে দুজনে হতবাক ৷ প্রিয়া যে এভাবে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিবে তা দুজনের কেউ বুঝতে পারেনি৷ স্মরণ প্রাণো দুজনে প্রিয়ার দুপাশে বসে বলতে লাগলো, ” প্রিয়ু দেখ বনু কাঁদে না ৷ তখন তেমন কোন পরিস্থিতি ছিলো না তোকে জানানোর সত্যি বলছি৷ ”
” প্রিয়া দেখো তুমি একদিকে আমার ভাইয়ের বউ অন্য দিকে শালী ৷ এখন যদি তুমি আমাদের হেল্প না করে কান্না কাটি করো তাহলে কিন্তু বাড়ির সবাই এই রুমে চলে আসবে তখন কি হবে একবার ভাবো?”
স্মরণের কথা শুনে প্রিয়া কান্না থামিয়ে নাক টানতে টানতে বলতে লাগলো, “হয়েছে আর আমাকে বুঝাতে হবে না৷ বিয়েতো করেই ফেলেছো আর কি ?”
” চিন্তা নেই আবার বিয়ে করবো আর তোরা সবাই থাকবি ওকে”
” ঠিক আছে৷”
” চল এখন ঝটপট চোখ মুছে বাইরে যা একটু পর গায় হলুদ হবে রেডি হয়ে আয় আর আমিও রেডি হয়ে নি৷”
” আপু নিজে নিজে সাজবি পার্লার যাবি না?”
“নাহ! এতো হেভি মেকাপ আমার ভালো লাগে না হালকা সাজবো ৷ তুই জলদি যা রেডি হয়ে নে৷”
প্রিয়া বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে পেছনে ফিরে বলে উঠলো ,” দুলাভাই আপুকে আজ আপনি নিজের হাতে সাজিয়ে দিবেন৷ আমি রেডি হয়ে হলুদ নিয়ে আসছি ৷ আর শুনুন আমি বের হওয়ার সাথে সাথে দরজা লক করে দিন যাতে কেউ ভিতরে ঢুকতে না পারে ৷ আমি বাকি কাজিনদের মেনেজ করছি৷”
প্রিয়ার কথা শুনে স্মরণ মুচকি হেসে বলে উঠলো ,” থ্যান্কিউ শালী সাহেবা ৷”
” ম্যানশন নট৷ ”
প্রিয়া চলে যেতেই প্রাণো দরজা লক করে দিয়ে স্মরণ কে বলে,” আমি চেন্জ করে আসছি তুমি এখানে বসে ওয়েট করো৷”
” ওয়েট করার আর কি দরকার সুইটহার্ট ৷ আমার সামনে তো চেন্জ করতে পারো৷ এমনতো না যে আমি কিছু দেখেনি৷ সবটাই তো দেখে নিয়েছি জান৷”
প্রাণো লজ্জা পেয়ে স্মরণের বুকে কিল মেরে বলে ওঠে ,” যাহ অসভ্য নির্লজ্জ ছেলে, আমাকে শুধু লজ্জা দিতে জানে৷ ” প্রাণো কার্বাড থেকে হলুদ সবুজ মিশ্রের একটা লেহেঙ্গা বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷
ঘন্টাখানিক পর প্রিয়া হলুদের বাটি আর একটা শপিং ব্যাগ হাতে দরজায় এসে নক করে ৷ স্মরণ দরজা খুলে দেয়৷ প্রিয়া রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্রাণোর দিকে তাকাতে প্রিয়ার চোখ দুটো আটকে যায়৷ হলুদ সবুজ মিশ্রনের লেহেঙ্গা টা প্রাণোর পড়নে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ৷ প্রাণোর চুল গুলো খোপা করে গাজরা লাগানো ৷ আর শরীরে ফুলের গহনা৷ মুখে হালকা মেকাপ ৷ প্রিয়াকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্মরণ বলে উঠলো ,” কি শালী সাহেবা কেমন সাজিয়েছি তোমার বোনকে?”
” মারাত্মক সু্ন্দর দুলাভাই ৷ বিশ্বাস করেন আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে আপুকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম৷ আপুর নীল চোখ জোড়ার দিকে তাকালে মনে হয় আমি যেন অন্য কোন জগতে চলে গেছি৷ কি সুন্দর নীল চোখ জোড়া৷ আর সাথে ফুলে সাজ ৷ কি বলবো দুলাভাই আমি নিজেই ক্রাশ খাইছি আপুকে দেখে,”
প্রিয়ার কথা শুনে প্রাণো প্রিয়ার কান টেনে ধরে বলে , ” বড্ড পেকেছিস তুই মাকে বলতে হবে দারা ”
” আহা আপু তুমি কি বলছো আমি পাকবো না তো কে পাকবে ৷ ভুলে কেন যাচ্ছো আমার বিয়ে হয়ে গেছে৷ দুদিন পর দুই ডজন বাচ্চা কাচ্চার মা হবো আর এখন বলছো আমি পাকবো না?”
প্রিয়ার কথা শুনে প্রাণো স্মরণ দু’জনে অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ প্রাণো প্রিয়ার কান ছেড়ে দিয়ে বলে,” কি বললি দুই ডজন বাচ্চা হবে তোর? বোন তুই ঠিক আছিস তো?” প্রাণো প্রিয়ার কপাল গাল ছুঁয়ে দেখে বলছে৷ প্রিয়া এতে বিরক্ত হয়ে বলে,” উফফ আপু আমি ঠিক আছি তুই পাগলের মতো বিহেব না করে চুপ করে বস তো , আর এই যে দুলাভাই আমার কথা না গিলে নিজের বউকে নিজের নামে হলুদ লাগিয়ে দিন তারপর আপনার বউ কে নিয়ে নিচে যেতে হবে৷ অনেক কষ্ট করে ছাগলের বাহিনীদের নিচে আটকে রেখেছি রপমে আসার থেকে তাই যা করার তাড়াতাড়ি করেন ডু ইট ফাস্ট৷”
প্রিয়াকে এক নিশ্বাসে কথা বলে দম নিতে থাকে ততোক্ষনে প্রাণো এক গ্লাস পানি নিয়ে প্রিয়ার সামনে ধরে বলে, ” বইন পানিটা খেয়ে নে ৷ এতো কথা বলে তোর গলা শুকিয়ে গেছে নিশ্চয়ই !”
“মজা করছিস তুই দারা নিচে বাহিনীদের বলছি রুমে আসতে৷”
” এই না না এমন টা করে না আমার লক্ষী বোন৷ আর এই যে খাম্বার মতো দাড়িয়ে না থেকে দ্রুত হলুদ ছুইয়ে দেও৷ ”
” উফফ কি আনরোমান্টিক বর জুটেছে আমার যে সব কিছু বলে কয়ে দিতে হয় ধ্যাত৷”
কথাটা বলে গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো প্রাণো৷ স্মরণ প্রাণোর গাল ফুলাতে দেখে ঠোঁট চেপে হেসে প্রিয়াকে ইশারা করে অন্য দিকে তাকাতে ৷ প্রিয়া হেসে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকায়৷ স্মরণ হলুদের বাটি থেকে খানিকটা হলুদ হাতে নিয়ে প্রাণো দু’গালে ছুঁইয়ে দিয়ে ধিরে ধিরে নিজের গাল প্রাণোর গালে ছুঁইয়ে নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে নিয়ে প্রাণোর গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয়৷ স্মরণ এমন কান্ডে চোখ বড় বড় করে ফেলে প্রাণো ৷ ছোট বোন যে পাশে অন্য দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে সেটাও দেখতে পাচ্ছে প্রাণো কিন্তু এই মুহূর্তে স্মরণের সে সব দেখায় মনো যোগ নেই৷ কিছুক্ষণ পর প্রিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে খুক খুক করে কেশে বলে উঠলো , ” এই যে এখন রোমান্স টা একটু কম করুন বাকিটা না হয় বিয়ের পর করবেন৷ ”
প্রিয়ার কথা শুনে স্মরণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দরজা খুলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ প্রিয়া তার হাতের শপিং ব্যাগটা স্মরণের হাতে দিয়ে বলে,” দুলাভাই এতে একটা সুন্দর পান্জাবি আছে ঝটপট পড়ে নিচে আসুন৷ আর কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবেন আপনি এবাড়ির গেস্ট আর সাজিতের ভাই ৷ ”
” ওকে ”
বাড়ির গার্ডেনে ছোট একটা স্টেজ করে সেখানে প্রাণোকে বসিয়ে গায় হলুদ অনুষ্ঠান কার্যক্রম শুরু হয়৷ একে একে সবাই প্রাণোকে হলুদ লাগিয়ে দেয়৷ নিশিতা বেগম প্রাণোর গালে হলুদ ছোঁয়ার সময় কেঁদে ফেলে৷ তা দেখে প্রাণো ও নিজেকে ধরে রাখতে পারে না সেও কেঁদে ফেলে৷
সাজিত স্মরণকে দেখে চমকে ওঠে ৷ এখানে পাণোর বিয়ের অনুষ্ঠানে স্মরণকে একদমি আশা করেনি সাজিত৷ প্রাণোর যে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অন্যত্র এটা হয়তো স্মরণ মেনে নিতে পারছে না তাই ঝামেলা করতে এসেছে এই ধারনাই করলো সাজিত৷ কিন্তু সাজিতের ভাবনা ভুল প্রমানিত করে স্মরণ সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে৷ বিশেষ করে প্রাণোর বাবা জুনাইদ কবির এর সাথে , অল্প সময়ে জুনাইদ কবির স্মরণকে বেশ পছন্দ করে ফেলেন৷ স্মরণ এর বিজনেসে হার্ডওয়ার্ক সম্পর্কে বেশ শুনেছিলো স্মরণের বাবা জীবন মাহমুদ এর থেকে.. তবে স্মরণকে সরাসরি কখনো দেখেনি আজ দেখলো৷
স্মরণ আর সাদমান এক সাথে প্রাণোর দিকে আসতে দেখে প্রাণো প্রথমে ঘাবড়ে যায়৷ কিন্তু তার বাবা কে স্বাভাবিক থাকতে দেখে বুঝতে পারে হয়তো আত্মিয়তার পরিচয়ে স্মরণকে এখানে এলাউ করেছে৷
হলুদ পাঞ্জাবিতে স্মরণকে প্রচন্ড সুন্দর লাগছে৷ তার উপর স্মরণ দেখতে হ্যান্ডসাম ড্যাশিং মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলছে স্মরণকে…
প্রাণো চোখ ছোট ছোট করে স্মরণকে স্কান করছে৷ পড়নে হলুদ পাঞ্জাবি হাতা গোটানো বিধায় হাতে কালো লোম গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ৷ বাতাসে স্মরণের চুল দুলছে আর কপালে ছড়িয়ে যাচ্ছে৷ চোখে কালো চশমা হাতে ঘড়ি পায়ে নাগড়া ৷ আর ঠোঁটের কোনে মন ভুলানো হাসি ৷ হিরোর থেকে কোন অংশে কম লাগছে না স্মরণকে৷ কিন্তু স্মরণের এই সুন্দর লাগাটা প্রাণোর মটেও ভালো লাগছে না৷ মেয়ে গুলো যেভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে কখন সুন্দর ছেলে দেখেনি৷ প্রাণো কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না স্মরণকে কারণ সবাই এখানে আছে৷ তাই মনে মনে স্মরণকে বকতে লাগলো,” কি দরকার ছিলো এতো সাজার হু ৷ সালা উল্লুক কেচোর ডিম পাতিহাস মনে হচ্ছে ওনি কোন বিয়ে বাড়ি নয় ফ্যাশান শোতে পার্টিসিপেট করেছে৷ আর নির্লজ্জ মেয়ে গুলো ইচ্ছে করে চুল গুলো ছিড়ে দিয়ে বট গাছে ঝুলিয়ে দিতে ৷ কত্তো বড় সাহস আমার ওনার দিকে নজর দেয়৷ ” ভিতরে ভিতরে ফুসতে লাগলো প্রাণো..
হঠাৎ স্মরণ এসে প্রথমে প্রাণোকে হলুদ লাগিয়ে চোখ মেরে সরে পরে৷ তারপর সাদমান এসে পুরো হলুদ প্রাণোর মুখে মাখিয়ে দেয় যা দেখে উপস্থিত সকলে হেসে ফেলে৷ প্রাণো রেগে গিয়ে সাদমানের পেছনে দৌড় লাগায়৷ সাদমান আগে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷ যাতে প্রাণো ভিতরে ঢুকতে না পারে ৷ অগ্যতা প্রাণো সাদমানকে হলুদ লাগাতে না পেরে নিজের রুমে গিয়ে আবার শাওয়ার নেয়৷
জুনাইদ কবির স্মরণকে গেস্ট রুমে থাকতে বলে৷ স্মরণ প্রথমে প্রাণোর রুমে আসতে গিয়ে থেমে যায়৷ কারণ বাড়িতে প্রচুর লোক কে কখন দেখে ফেলবে আর তা নিয়ে ইশু করবে ৷ তাই স্মরণ গেস্ট রুমে থেকে গেল৷
রাতে ডিনার করে প্রাণো ভিতর থেকে দরজা লক করে সিমি কে ফোন করে৷
” হ্যালো সিমি আপু তুমি তৈরি তো? ”
” হ্যাঁ প্রাণো আমি তৈরি , তুমি চিন্তা করো না আগামিকাল তোমার বিয়েটা শান এর সাথে হচ্ছে না ৷ ”
” আপু আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো তুমি বোরকা পরে ঠিক সময়ে আমাদের বাড়ির পেছন থেকে ঢুকবে কারণ সামনের গেটে শানের লোকজন থাকতে পারে৷”
” থাকতে পারে নয় প্রাণো থাকবে আর আমি শিওর৷ তুমি যদি পালিয়ে যাও তাই শান লোক লাগাবে যাতে তুমি পালিয়ে যেতে না পারো৷”
” হা হা হা দেখা যাক কাল কি হয় ৷”
” হুম তুমি নিশ্চিন্তে থাকো ৷ কাল ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে ৷”
” হতে তো হবেই সিমি আপু ৷ ” কথাটা বলে রহস্যময় হাসি দিলো প্রাণো৷
” তাহলে রাখছি কিছু প্রিপারেশন নেওয়া বাকি আছে সে গুলো নিয়ে নি৷”
” ওকে গুড নাইট৷”
” গুড নাইট ”
প্রাণো ফোন রেখে বিছানার শুয়ে পড়লো ৷ অন্য দিকে সাজিতের চোখে ঘুম নেই সকালের প্রাণোর সেই সিগ্ধ রুপটাই বার বার চোখের সামনে ভেষে উঠছে ৷ কিছুতেই ভুলতে পারছে না সাজিত৷ পাশ ফিরে ঘুমন্ত প্রিয়ার মুখের দিকে তাকাতে সাজিতের বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো, প্রিয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলো, “আমি বারংবার কেন ভুল করছি প্রিয়ু বলতে পারো? কেন প্রাণোকে ভুলতে পারছি না? জানি প্রাণো আমার ভালোবাসা নয় কিন্তু তারপরও ওর উপর কেমন মুগ্ধতা কাজ করে৷ যতো দেখি ততোই মুগ্ধ হই ৷ আমি চাই এই মুগ্ধতা আমি তোমায় দেখি হই৷ তোমাকে ভালোবেসে মুগ্ধ হতে চাই প্রিয়ু৷ ভালোবাসতে চাই তোমায় ৷ ” সাজিত প্রিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
স্মরণ মধ্য রাতে প্রাণোর রুমে ঢুকতে গেলে বুঝতে পারে দরজা ভেতর থেকে লক করা৷ স্মরণ দরজায় নক করতেও পারছে না যদি কেউ শুনে ফেলে? স্মরণ প্রাণোকে ফোন করলেও প্রাণো কল রিসিভ করেনি কারণ প্রাণোর ফোন সাইলেন্ট ছিলো৷ স্মরণ একতরফা রেগেই গেস্ট রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো৷
পুরো বাড়িতে হৈ-হুল্লোর পড়ে গেছে বাড়ির বড় মেয়ের আজ বিয়ে৷ জুনাইদ কবির নিনে দাড়িয়ে থেকে সব কিছুর তদারকি করছে৷ সাদমান গেস্টদের সামলাচ্ছে৷ সাজিত ও সাদমানের সাথে কাজ করছে৷ কিন্তু সকাল থেকে স্মরণকে কোথাও দেখতে পাওয়া যায়নি ৷
বিউটিশিয়ানরা এসে প্রাণোকে সাজাতে লাগলো লাল খয়েড়ি বেনারসী শাড়ি তারউপর ভারি গহনা ৷ ব্রাইডাল মেকাপ করা ৷ বিউটিশিয়ান মেয়ে গুলো প্রাণোকে সাজিয়ে দিয়ে প্রাণোর দিকে তাকিয়ে বলে,” ম্যাম ট্রাস্ট মি আজ আপনার বর আপনাকে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে৷”
মেয়েটার কথা শুনে প্রাণো চট করে বলে ফেললো ,” মানে কি ? তারমানে আমাকে এই সাজে খুব বাজে দেখতে লাগছে?”
” ম্যাম আপনি ভুল বুঝছেন আসলে আমি বলতে চাইছি আপনাকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে ৷ আপনার বর আপনাকে দেখে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকবে৷”
” ওহ তাই বলুন৷ ” বলতে বলতে প্রাণোর ফোনটা বেজে ওঠে ৷ প্রাণো ফোন হাতে নিয়ে দেখে সিমির কল…কল রিসিভ না করে বিউটিশিয়ানদের বলে,” আপনারা এখন আসুন আমার সাজ তো কম্পিলিট৷”
” ইয়েস ম্যাম”
মেয়ে গুলো চলে যাওয়ার বিশ মিনিট পর বাইরে বর এসেছে বর এসেছে চেচাঁমেচি শুনে প্রাণো আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে নিজে বলে উঠলো ,” এখন বিয়ের জন্য প্রস্তত প্রাণো ৷ ” কথাটা বলে রহস্যময় হাসি দিলো প্রাণো…….
.
.
.
#চলবে………..
[বিয়ের দাওয়াত রইল সবার চলে আসবেন তবে গিফ্ট নিয়ে নাহলে কিন্তু প্রিয়া কাউকে ঢুকতে দিবে না ৷ আর হ্যাঁ আগের বিয়েতে কেউ দাওয়াত পায়নি এবার কিন্তু সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে৷ গিফ্ট নিয়ে সকল কে আশা চাই😍]