গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_২০

গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব_২০
#লেখায়_ফারহানা_ছবি

.
.
🦋
স্মরণ মিহুর রুম থেকে বের হতে জীবন মাহমুদ স্মরণের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে ,” স্মরণ এখুনি আমার রুমে এসো তোমার সাথে ইম্পট্যার্ন্ট কথা আছে৷”

স্মরণ কোন কথা না বলে জীবন মাহমুদ এর পেছন পেছন তার রুমে চলে গেল৷ স্মরণ রুমে ঢুকতে জীবন মাহমুদ দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয় ৷

” বলো কি বলবে?”

” আমার বিজনেসে তোমাকে জয়েন করতে হবে স্মরণ৷”

” স্যরি এটা পসিবেল না৷ আমি আমার বিজনেস নিয়ে বিজি আছি ৷ তোমার বিজনেসে জয়েন করার আমার কোন ইচ্ছে নেই ড্যাড৷”

স্মরণের মুখে ড্যাড ডাক টা শুনে কপাল কুচকে বলে,” ড্যাড বলছো কেন? বাবা বলতে পারো না ? যেমন টা সাজিত মিহু বলে৷”

স্বরণ তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে,” সাজিত বা মিহু কোন টাই আমি নই ড্যাড তাই বাবা ডাক শোনার আশা ছেড়ে দেও৷ ড্যাড ডাকটা শুনতে যদি তোমার আপত্তি থাকে বলে দেও তাহলে তোমাকে মিস্টার মাহমুদ বলে ডাকবো৷”

জীবন মাহমুদ ভিতরে ভিতরে ভিষণ রেগে গেলেও বাইরে থেকে শান্ত থাকার চেষ্টা করলো৷

” স্মরণ আমি তোমাকে রিকুয়েস্ট করছি প্লিজ আমার বিজনেসে জয়েন করো৷ বিজনেসে কোটি কোটি টাকা লস হচ্ছে৷ দেখো আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি এখন আমার বিজনেস কে দেখবে বলো ৷ আমার ছেলে মেয়েরাই তো দেখবে বল? ”

” ওকে আমি ভেবে দেখবো৷”

” স্বরণ কাল একটা মিটিং আছে ৷ বিদেশ থেকে যারা ডিল কোটি টাকার ডিল করতে এসেছে ৷ আমি চাই তুমি ওদের প্রেজেনটেশন দেখাবে৷ ডিল টা তুমি নিবে৷”

স্মরণ দশ সেকেন্ড ভেবে বলে,” ওকে কাল মিটিংটা আমি এটেন্ড করবো ৷ তুমি অল ডিটেইলস আমাকে ইমেল করে পাটিয়ে দেও ৷ আমি দেখে নিচ্ছি৷”

স্মরণ কথাটা বলে দরজা খুলে বেড়িয়ে যেতে জীবন মাহমুদ এর মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে৷

________

” এই যে মাই ডেভিল হাসবেন্ট এখানে বোনের পাশে বসে থাকবেন নাকি ঘুমাতে যাবেন?”

” না আমি মিহুর পাশে বসে থাকবো৷”

” তাহলে তুমি রুমে যাবে না বলছো?”

সাজিত রেগে গিয়ে বলে উঠলো ,” তোমার প্রব্লেম টা কি প্রিয়া? দেখছো তো মিহু ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে পায়ে কতোটা লেগেছে৷”

” অন্যের জন্য গর্ত খুড়লে সে গর্তে যে নিজেকে পড়তে হয় ডেভিল হাসবেন্ট ৷”

” মানে কি বলতে চাইছো তুমি?”

” কি ননোদিনী ক্লিয়ার করে বলি তোমার ভাইকে?”

প্রিয়ার কথা শুনে মিহুর মুখটা শুকিয়ে গেল৷

” ভাইয়া তুই নিজের রুমে যা আমি ঠিক আছি ৷”

“না আমি তোকে একা রেখে কোথাও যাবো না৷”

” ভাইয়া পায়ে ব্যাথা কমেছে খানিকটা আর ঘুমের ঔষধ খেয়েছি তো ঘুম পাচ্ছে ৷ এখানে শুধু শুধু বসে থাকার থেকে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ৷”

” ননোদিনী বলে দিলো এখন রুমে যেতে নিশ্চয়ই তোমার কোন আপত্তি নেই ডেভিল হাসবেন্ট ?”

সাজিত প্রিয়ার দিকে বিরক্তি কর চাহনি দিয়ে বসা থেকে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ সাজিত চলে যেতে প্রিয়া মিহুর ব্যাথা পায়ে চাপ দিয়ে ধরে ৷ ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে মিহু বলে ওঠে ,” আহা! প্রিয়া কি করছো ব্যাথা লাগছে তো; ছাড়ো প্লিজ ৷” চোখে পানি টলমল করছে মিহুর.. তা দেখে প্রিয়া পা ছেড়ে দিয়ে মিহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,” আজ তোমাকে ছেড়ে দিলাম ননোদিনী তবে নেক্সট টাইম আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না৷ যানো তো ইট মারলে পাটকিল খেতে হয়৷ আমি কিন্তু ইটের পরিবর্তে পাথর ছুড়ে মারবো যাস্ট মাইন্ড ইট৷”

প্রিয়া মিহুকে শাশিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ মিহু প্রিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দাঁত কটমট করে বলতে লাগলো , ” এর প্রতিশোধ আমি নিবো প্রিয়া ৷ তোমাকে আমি ছাড়বো না৷”

__________

পরেরদিন প্রাণো নাস্তা করে ঝটপট বেড়িয়ে পড়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য ৷ সাদমান প্রাণোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়৷ প্রাণো দুটো ক্লাস করে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যায়৷ স্মিতা সাফা ঐশী কেউ আজ ভার্সিটিতে আসেনি বিধায় কোন কৌফত ছাড়াই প্রাণো দ্রুত রিকশায় ওঠে৷ কিছু দুর যেতে প্রাণোর কেন যেন মনে হলো কেউ তাকে ফলো করছে৷ প্রাণো আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না তবুও মনের ভিতর কেমন খচ খচ করছে প্রাণোর ৷ প্রাণো মাঝপথে রিকশা থেকে নেমে পড়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে কফির অর্ডার করে চারিদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো৷ কোন সন্ধেহজনক কিছু চোখে পড়ে কিনা! প্রাণো বিশ মিনিট বসে থেকে চোখে সন্ধেহ জনক কিছু না পেয়ে ধিরে সুস্থে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে দেখে RV গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ প্রাণো ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসতে সাথে সাথে RV গাড়ি স্টাট দেয়৷ ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে থাকে RV ৷ প্রাণো রেস্টুরেন্ট ঢুকে RV কে মেসেজ করে জানিয়ে দেয় তাকে পিক করতে৷ RV মেসেজ দেখতে পেয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে পড়ে৷

” প্রাণো আজ প্রথম বার তুমি আমাকে এভাবে ডাকলে শুধু কি তোমায় পিক করতে?”

“RV আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমাকে ফলো করছে তাই রিক্স নিতে চাইনি৷ তুমি গাড়ি নাম্বার ফিরে পাল্টে ফেলবে৷ ”

” অবশ্যই প্রাণো কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে কে তোমাকে ফলো করবে?”

” আই ডোন্ট নো RV ৷তবে আমার মনে হচ্ছে আমার অগোচরে কিছু একটা ঘটছে যেটা আমি জানি না৷”

” অফিসে চলো ওখানে বাকি কথা হবে ৷ যে এই কাজ করে থাকুক না কেন এই RV তাকে ছাড়বে না৷ তুমি চিন্তা করো না ৷”

” হুম..”

কিছুক্ষণ এর মধ্যে প্রাণোরা পৌছে গেল তাদের সিক্রেট অফিসে৷ প্রাণো ভিতরে ঢুকে নিজের কেভিনে ঢুকতে দেখে কমিশনার বসে আছে সাথে আর একটি মেয়ে ৷ কমিশনার প্রাণো কে দেখে বলে উঠলো ,” কেমন আছো প্রাণো মামুনি?”

প্রাণো নাম টা শুনে কমিশনার এর পাশে বসা মেয়েটি চোখ তুলে প্রাণোর দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পরে৷

প্রাণো হাসি মুখে কমিশনার কে বলে,” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আঙ্কেল৷ আপনি কেমন আছেন?”

” আলহামদুলিল্লাহ ৷ মামুনি তোমাকে যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম এই যে সে মেয়ে সারমিন সুলতানা সিমি ৷ ”

প্রাণো সিমির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়৷

” হ্যালো মিস সিমি”

” হাই ” হাত মিলিয়ে বললো সিমি…

“সিমি মামুনি এই হলো প্রাণো ৷ এই গ্যাং এর হেড বলো বা কুইন সবটাই প্রাণো ৷ বড় বড় অপারেশন গুলো প্রাণোই করে থাকে৷ প্রাণো বুদ্ধি এতো তীক্ষ্ম যে তুমি নিজেই হতবাক হয়ে যাবে৷ ”

” আঙ্কেল আপনি কিন্তু বাড়িয়ে বলছেন ৷ আপু স্যরি আপু বলছি আপনি আমার বড় হবেন তাই আপু বলছি প্লিজ মাইন্ড করবেন না৷”

” মাইন্ড করবো যদি তুমি আপনি বলো আর আপু বলে না ডাকো তাহলে…”

সিমির কথা শুনে প্রাণো বেশ খুশি হলো৷ এদিকে প্রাণোকে দেখে সিমির হুশ উড়ে গেলো৷ সহজ সরল দেখানো মেয়েটির যে এমন ভয়ানক রুপ থাকতে পারে এটা সিমি মটেও আশা করেনি৷ স্মরণ এর থেকে প্রাণো আরো বেশি ডেন্জারাস তা সিমির বুঝতে দু’সেকেন্ড লাগলো না৷ সিমি মনে মনে ঠিক করে নিলো স্বরণ কে নয় সবটা প্রাণোকে বলে ওর সাহায্য নিয়ে জীবন মাহমুদ কে শেষ করে দিবে৷ আর সাথে শান নামক উটকো উৎপাত কে শান্ত করতে এই প্রাণো পারবে৷

সিমি কে কিছু একটা ভাবতে দেখে কমিশনার বলে উঠলো ,”সিমি মামুনি কি ভাবছো তখন থেকে..?”

” হুম না আঙ্কেল কিছু না৷ ম্যাম (প্রাণো) আমি কি আজ থেকে কাজ করবো?”

” প্রথমতঃ আমাকে ম্যাম নয় নাম ধরে ডাকবে ৷ আর আজ থেকে তোমার ট্রেনিং শুরু হবে ৷ তোমাকে রিভলবার চালানোতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে৷ ”

” ঠিক আছে আমি তৈরি ট্রেনিং এর জন্য..”

” বেশ , প্রাণো মামুনি আমার কাজ শেষ তাহলে আজ আমি উঠি৷”

” আঙ্কেল আপনার সাথে আমার জরুলি কথা আছে৷ ”

” ওহ তাহলে বলো ?” তখনি সিমি বলে উঠলো ,” আঙ্কেল আমি বাইরে অপেক্ষা করছি তাহলে?”

” না আপু তোমাকে বাইরে অপেক্ষা করতে হবে না ৷” প্রাণো ল্যান্ডলাইনে কাউকে কল করে আসতে বলে৷

” প্রাণো ডেকেছিস?”

” কণা ও হচ্ছে সিমি ৷ আর আপু ও কণা আজ থেকে তুমি কণার কাছে ট্রেনিং নিবে৷ কণা তোকে কি করতে হবে বুঝতে পেরেছিস তো?”

” একদম আজ থেকে সিমির ট্রেনিং এর দায়িত্ব আমার এন্ড আমি তা নিষ্ঠা দিয়ে পালন করবো৷ ”

“ভাষণ না ছেড়ে সিমি আপুকে তোর সাথে নিয়ে যা আর আজ থেকে ট্রেনিং শুরু কর৷”

“ওকে ম্যাম ৷ তুমি আমার সাথে এসো”

” জ্বি , আঙ্কেল আসছি তাহলে!”

” বেস্ট অফ লাক ৷”

” থ্যান্কিউ ”

সিমি কণার সাথে কেভিন থেকে বেড়িয়ে যেতে প্রাণো কমিশনার কে বলতে লাগলো,” আঙ্কেল আমি কিছু সর্ট লিস্ট করেছি দেখুন ৷ এই লিস্ট অনুযায়ী আমরা এট্যাক করবো৷”

কমিশনার লিস্ট টা দেখে চোখ বড় হয়ে গেল৷

” প্রাণো এনারাতো….” বাকিটা বলতে না প্রাণো বলে উঠলো ,” এনারা প্রত্যেকে বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যান তাই তো?”

” হ্যাঁ, এদের কে এতোটা সহজ ভেবো না প্রাণো এদের খারাপ কর্মকান্ডের সাথে বড় বড় নেতা মন্ত্রীরাও জড়িত আছে৷ ”

” আমি জানি সেটা , আর জানি বলে এরাই হবে আমার পরবর্তী শিকার৷ ছোট ছোট মাছ ধরে কোন লাভ নেই আমাদের বোয়াল মাছ ধরতে হবে ৷ এদের কে ধরতে পারলে বাকিদের ঠিকানা পাওয়া কোন বেপার হবে না৷”

” তবুও অনেক রিক্স হয়ে যায় না প্রাণো ? তোমার লাইফ রিক্স আছে ৷”

” আঙ্কেল জীবনের কথা ভাবলে ওতো ছোট বয়স থেকে এই কাজে জড়াতাম না৷ ”

” ঠিক আছে তুমি যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো তবে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে৷ আর শোন আমি কিছু বুলেট প্রুফ জেকেট পাঠিয়ে দিবো ৷ প্রত্যেকে যেন বুলেট প্রুফ জেকেট পরে অপারেশনে যাবে ওকে”

” ওকে আঙ্কেল তবে জ্যাকেটে যেন কোন মার্ক না থাকে একদম ক্লিন থাকে যেন৷”

” ওকে , তাহলে আজ উঠি অনেক কাজ জমে আছে৷”

” ওকে আঙ্কেল৷”

কমিশনার চলে যেতে প্রাণো নিজের মতো প্লান কষে নিলো কখন কোথায় কোথায় আগে এট্যাক করবে৷

___________

সকাল থেকে স্মরণ এর মেজাজ প্রচন্ড খারাপ৷ সকাল থেকে প্রাণোর না কোন কল না কোন মেসেজ এসেছে৷ প্রাণোর কণ্ঠ না শুনতে পেরে স্মরণের মন ছটপট করছে৷ কোন কাজই ভালো লাগছে না৷ তবুও গতকাল যে স্পেশাল ভাবে প্রাণোর সাথে টাইম স্পেন্ড করা ৷ নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়া ৷ সব চেয়ে বড় কথা নিজের জীবন সাথী হিসেবে তার প্রাণকে পেয়েছে৷ স্মরণ হাজার মন খারাপের মধ্যে দিয়ে জীবন মাহমুদ এর অফিসে এসে মিটিং এটেন্ড করে প্রেজেনটেশন প্রজেক্টরে দেখিয়ে বিদেশী ক্লাইন্ড এর সাথে পাচঁ কোটি টাকার ডিল সাইন করে স্মরণ ৷ স্মরণ সবটা তার বাবার পিএ কে বুঝিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায় পড়ে প্রাণোর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে…..
.
.
.
#চলবে……….
[রিয়েক্টের অবস্তা দেখে গল্প দিতে ইচ্ছে করে না ৷ এরকম চলতে থাকলে গল্প আর দিবো না রিডার্স ৷]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here