গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া অন্তিম_পর্ব

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি

.
.
🦋
সবাই চলে যেতে স্মরণ হুট করে প্রাণো চোখ দুটো পেছন থেকে কালো কাপড় দিয়ে বেধে দেয়৷ প্রাণো কিছু বলতে নিলে স্মরণ প্রাণোর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে বলে,” হুসসস কোন কথা নয়৷ সবাইকে তো সারপ্রাইজ দিলে এখন আমার তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার পালা৷” কথাটা বলে প্রাণোকে কোলে তুলে নেয় স্মরণ ৷ চোখ বাধা অবস্থায় প্রাণোকে নিয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে গেল স্মরণ৷

নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে স্মরণ পূনরায় প্রাণোকে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে লাগলো৷ প্রাণো চোখ বাধা অবস্থায় বার বার স্মরণকে প্রশ্ন করেও কোন উওর পায়নি প্রাণো৷ তাই বাধ্য হয়ে চুপ হয়ে যায় প্রাণো৷

নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারিদিক, স্মরণ প্রাণোকে কোলে থেকে নামিয়ে বলে, ” সুইটহার্ট তোমার সকল প্রশ্নের উওর এখন আমি দিবো ৷ তুমি তৈরি তো? ”

” প্লিজ স্মরণ এভাবে বলো না ৷ আমার কিন্তু এবার বেশ ভয় করছে৷”

“কিহ! ব্লাকরোজ যাকে কিনা বড় বড় নেতা মন্ত্রীরাও ভয় পেয়ে চলে যার নাম শুনলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বড় বড় মাফিয়ারা কেঁপে ওঠে ৷ সে নাকি আমার সামান্য কথায় ভয় পাচ্ছে ৷ বেস্ট জোকস অফ দ্য ইয়ার প্রাণ৷ হা হা হা ৷”

” তাই নাকি মিস্টার কিউট হাসবেন্ট! যাই হোক এখন আমি চোখের বাধন খুলছি আর কোন বারণ শুনছি না৷”

প্রাণো চোখের বাধন খুলতে নিলে স্মরণ নিজে গিয়ে প্রাণোর চোখের বাধন খুলতে খুলতে বলে, ” প্রাণ আমার কাউন্ট করা শেষ হলে তুমি চোখ মেলে তাকাবে ৷”

” ওকে ফাইন , এবার তো কাপড় টা চোখের উপর থেকে সরাও ৷”

” ফাইভ, ফোর , ত্রি , টু , ওয়ান ” স্মরণ প্রাণোর চোখের বাধন খুলে দিতে প্রাণো আকাশের দিকে তাকাতে স্তম্ভিত ৷ আকাশে জ্বল জ্বল করছে ‘HAPPY BIRTHDAY PRAN ‘

নানা রকমের তারা বাজি আকাশকে রঙিন আলোকিত করে রেখেছে৷ সাথে সাথে ছাঁদের পুরো লাইট এক সাথে জ্বলে উঠলো ৷ প্রাণো পুরো ছাঁদের ডেকোরেশন দেখে প্রাণো পুরো অবাক৷ তখনি স্মরণ পেছন থেকে প্রাণোকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো , ” HAPPY BIRTHDAY MY LOVE .”

মুখ থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছে না৷ প্রাণো হুট করে স্মরণের দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেলে , ”

প্রাণোকে হঠাৎ কাঁদতে দেখে স্মরণ ঘাবড়ে গিয়ে বলতে লাগলো,” প্রাণ প্রাণ কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন? আমি কি তোমাকে কোন ভাবে হার্ট করেছি? ”

প্রাণো কোন কথা না বলে কেঁদে যাচ্ছে ৷ স্মরণ আরো উদ্বিগ্ন হয়ে বলতে লাগলো, ” প্রাণ প্লিজ সে সামথিং ৷ আমি তোমাকে হার্ট করে থাকলে আ’ম রেইলি স্যরি”

প্রাণো স্মরণের বুক থেকে মাথা তুলে স্মরণকে বলতে লাগলো, ” স্মরণ আমি ভাগ্যবতী তোমার মতো একজন স্বামী পেয়ে, তোমার ভালোবাসা এখনো আমাকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে বাচিঁয়ে রেখেছে৷ তুমি জানো না হয়তো আজ তোমার জন্য আমি মানুষিক ভাবে সুস্থ হয়ে তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি৷ ভালোবাসি প্রিয় , বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়, যতোটা না ভালোবাসলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা অব্দি তোমায় ভালোবাসা যায়৷ আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা তুমি স্মরণ৷ তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন ৷ তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না ৷ কারণ তুমি আমার ভালোবাসা৷ ভালোবাসি তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি প্রিয় ৷ ”

স্মরণ মনমুগ্ধ হয়ে প্রাণোর কথা গুলো শুনছিলো৷ প্রাণো যে তাকে এতো বেশি ভালোবাসে সেটা আজ পর্যন্ত স্মরণ বুঝতে না পেরেও আজ বুঝতে পেরেছে ৷ স্মরণ প্রাণোর গাল দুটো স্পর্শ করে বলতে লাগলো, ” ভালোবাসি প্রাণ ৷ বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়৷ তুমি আমার নেশা হয়ে গেছো প্রাণ ৷ যে নেশা কখনো ছেড়ে দেওয়া যায় না ৷ তুমি আমার নিকষ কালো অন্ধকার জীবনের একচিলতে আলো ৷ আমার জীবনের বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা তুমি, তুমি আমার গোধূলীর রঙিন ছোঁয়ার শেষ ভালোবাসা প্রিয় ৷ ”

স্মরণ প্রাণোর ঠোঁটে ঠোঁট জোড়া ছুইয়ে দিয়ে আবার বলে উঠলো , ” ভালোবাসি প্রাণ৷ ভালোবাসি ভালোবাসা ভালোবাসি অনন্ত কাল ধরে ভালোবাসবো৷

তুমি সেই স্বপ্নপরী যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।
তুমি সেই অনুভুতি যাকে আমার মন অনুভব করে।
তুমি সেই প্রেমিকা যার ভালোবাসার ছন্দ প্রেমিক আমি।

স্মরণ প্রাণোর কপালে কপাল ঠেকিয়ে দুজনে কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে স্মরণ কিছু বলতে যাবো তখনি চারিদিক দিয়ে হাতে তালি দিয়ে ওঠে, স্মরণ প্রাণো দুজনে চমকে গিয়ে দুজনে সরে দাড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে সাগর স্মিতা ঐশী আকাশ নিলয় সাফা RV কণা সিমি শান সাজিত প্রিয়া হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে৷

প্রাণো আরো অবাক হয় যখন সবাই এক সাথে বলে ওঠে “Happy Birthday Prano”

স্মরণ ব্রুযুগল কুচকে সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলো , ” তোরা এখন এখানে? তোদের তো এখন বাসর ঘরে বাসর করার কথা তো এখানে কি করছিস?”

সাগর দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো , ” দোস্ত আজ আমাগো ভাবির জন্মদিন সেখানে আমরা উপস্থিত না হয়ে পারি বল? আর না আসলে তো তোদের এই রোমান্টিক সিন মিস করে যেতাম দোস্ত৷ এটা কি করে হতে দিতে পারি আমরা বল?”

” সালা আমার রোমান্টিক মুহূর্তটার তেরটা বাজিয়ে দিয়ে এখন ফাজলামি করছিস৷ তোর বাসরের এবার আমি তেরটা বাজাবো সাগরের বাচ্চা৷”

স্মরণ সাগরের দিকে তেড়ে যেতে নিলে শান সাজিত RV স্মরণকে আটকে দিয়ে শাণ বলে, ” সালাবাবু এতো রাগ করো না ৷ আমরা তো তোমাদের আনন্দে আনন্দ করতে এসেছি ৷ আর তুমি এভাবে আমাদের ইনসাল্ট করলে?” মুখ ভার করে বললো শান৷

” দুলাভাই এই সব ড্রামা করে আমাকে ভুলাতে পারবেন না৷ এখন বলুন এখানে আশার আসল কারণ কি তোমাদের?”

শান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলতে লাগলো, ” আমাদের তরফ থেকে তোমাদের দু’জনের জন্য সারপ্রাইজ আছে৷ গাইজ (বাকিদের উদ্দেশ্য করে) এট্যাক..”

শানের ওডার্র পেতে কণা স্মিতা ঐশী সাফা সিমি প্রাণোকে ধরে নিচে নিয়ে যায় ৷ আর এদিকে সাগর নিলয় আকাশ RV শান স্মরণকে ধরে অন্য রুমে নিয়ে যায়৷

একঘন্টা পর স্মরণ ছাঁদে এসে প্রাণোকে দেখে স্মরণ মুখ হ্যাঁ হয়ে গেল৷ পার্পেল কালারের সিমপিল জরজেট শাড়ি তার সাথে হালকা গহনা, লম্বা চুল গুলো কার্লি করে ছেড়ে দেওয়া চুল গুলো বাতাসের তালে তালে দুলছে৷ দুহাত মুঠো ভর্তি চুড়ি , চোখে কাজল ঠোঁটে লিপস্টিক কানে ইয়ারিং ,

স্মরণ প্রাণোকে দেখে হার্টবিট যেন মিস হয়ে গেল৷ বুকে হাত দিয়ে প্রাণোর নীলাম্বরী আখিদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্রাণোর ঠোঁটের কোনে লজ্জা মাখা হাসিটা স্মরণের বুকে গিয়ে বিদছে৷ শান স্মরণকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো , ” কি সালাবাবু বউয়ের উপর দিয়ে বুঝি নজর সরছে না? ”

” হুম এ নজর কোন দিন সরবে না ৷ ওই নীল আখিদ্বয়ে আমি তো অনেক আগে খুন হয়ে গেছি ৷ আজ আবারো খুন হলাম ওই নীল আখিদ্বয়ে….”

স্মরণ প্রাণোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললো ৷ তখণি আকাশে তারা বাজি বেজে উঠলো ৷ সবার নজর আকাশে,,,

জ্বলন্ত মোম ফু দিয়ে নিভিয়ে কেক কেটে স্মরণকে খাইয়ে দিতে নিলে স্মরণ প্রাণোর হাত থেকে কেক নিয়ে প্রাণোর ঠোঁটে লাগিয়ে দিয়ে বলে এবার এই কেকটাই আমি খাবো৷

” স্মরণ! সবাই এখানে আছে কি বলতো তুমি?”

স্মরণ প্রাণোর কথা শুনে সবাই পাশ থেকে সাউন্ড দিয়ে উঠলো ,” ওয়াও কি রোমান্টিক সিন৷ ”

প্রাণো লজ্জা পেয়ে ছাঁদ দিয়ে নেমে যেতে নিলে সিমি আটকে দিয়ে বলে,” সারপ্রাইজ এখনো শেষ হয়নি প্রাণো ৷ গাইজ !”

সিমির নির্দেশ পেতে স্মরণ প্রাণোর চোখ দুটো কালো কাপড় দিয়ে আটকে দিয়ে বললো ৷

” সারপ্রাইজ এখনো বাকি আছে দোস্ত বি পেশেন্ট ৷”

প্রাণো স্মরণকে নিয়ে হোটেলের একটা রুমে নিয়ে গেল সবাই৷ রুমে নিয়ে গিয়ে ওদের চোখের বাধন না খুলে বলে উঠলো ,” সালা বাবু চোখের বাধন আমরা খুলছি না সেটা আপনারা নিজেরাই খুলে নিন৷ আর এখন আমাদের তরফ থেকে গুড নাইট ৷”

” শান ভাইয়া গুড দিচ্ছেন তো আদো এরা রাতে ঘুমাবে? নাকি !” নিলয়ের কথা শেষ হওয়ার আগে সাফা নিলয়ের বাহুতে থাপ্পড় মেরে বলে ওঠে , ” মুখে লাগাম দাও বেয়াদ্দপ পোলা ৷ আর চুপচাপ চলো ওদের এবার একা ছেড়ে দেও৷”

সাফার কথা শুনে RV বলে উঠলো ,” হু হু বুঝি বুঝি আজ তো আমাদের সাত জুটির বাসর স্মরণ আর প্রাণোর একার বাসর নয়৷”

” তাই বুঝি চলো তাহলে তোমাকে বাসর করাচ্ছি আমি৷” কণা RV হাত টেনে নিজেদের রুমে নিয়ে গেল৷

সাগর নিলয় আকাশ শান সাজিত তাদের সঙ্গিদের নিয়ে রুম লক করে বেড়িয়ে গেল৷ ওরা বেড়িয়ে যেতে স্মরণ প্রাণো চোখের বাধণ খুলে পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে৷

” প্রাণ এরা এইসব করলো কখন?”

” আই ডোন্ট নো ৷ বাট এতো সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছে যাস্ট মাইনব্লোইং ৷”

সাদা রঙের দেয়াল জুরে ছোট ছোট মরিচ বাতি আর তাজা ফুল দিয়ে সাজানো৷ রুমের চারিদিকে ছোট ছোট মোম জ্বলছে ফ্লোরে লাভ সেপের বেলুন ছড়িয়ে আছে ৷ আর বেড শিটে ফুল দিয়ে আরো সুন্দর করে সাজানো৷ পুরো রুম জুড়ে ফুলের ঘ্রানে মৌ মৌ করছে যেন নেশা ধরার মতো,

স্মরণের চোখ আটকে আছে প্রাণোর ঠোঁট জোড়ায়৷ আচমকা স্মরণ প্রাণোর কোমর জড়িয়ে ধরে প্রাণোর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় ৷ স্মরণের পাঞ্জাবি খামচে ধরে স্মরণের তালে তাল মেলাতে লাগলো৷

রাত যতো গভীর হতে লাগলো স্মরণ আর প্রাণো দুজনে দুজনার ভালোবাসায় মত্ত হয়ে গেল৷

!
!
!
!

দুবছর পর ……..

স্মরণ অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাড়িয়ে পাগলের মতো পাইচারি করছে ৷ ভিতরে প্রাণো ব্যাথায় চিৎকার করছে৷ স্মরণ কিছুতেই নিজেকে শান্ত করছে পারছে না৷ সাগর নিলয় আকাশ RV কিছুক্ষণ আগে ছুটে এসেছে প্রাণোকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে শুনে ৷ প্রিয়া তার এক বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে বসে আছে৷ নিশিতা বেগম সাহারা বেগম নিজেরা প্রাণোকে নিয়ে যতোটা না চিন্তা করছে তার চেয়ে বেশি চিন্তা করছে স্মরণকে দেখে ৷ স্মরণ কে দেখে মনে হচ্ছে ডেলিভারি পেইন প্রাণোর নয় স্মরণের হচ্ছে৷ প্রাণো ভিতরে চিৎকার করছে আর বাইরে স্মরণ কষ্ট পাচ্ছে ৷ এতোমধ্যে স্মরণ অপারেশন থিয়েটারের দরজায় কয়েকবার নক করে ভিতরে ঢোকার জন্য কিন্তু ডক্টর এলাউ করে নি৷ তাই প্রচন্ড রেগে আছে স্মরণ৷ মৌ সাদমান প্রাণোর খবর পেয়ে নিজেদের কাজ ফেলে হসপিটাল চলে আসে৷ সাদমান কে দেখে স্মরণ সাদমান কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে৷ সাহারা বেগম সাজিত প্রচন্ড অবাক হয় স্মরণকে এভাবে পাগলের মতো কাঁদতে দেখে৷ প্রাণোর প্রতি স্মরণের এমন ভালোবাসা দেখে নিশিতা বেগম এর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো ৷ নিশিতা বেগম দু’বছর আগের কথা ভাবতে লাগলো৷

প্রাণোর বাবা জুনাইদ কবির হসপিটালে ভর্তির দশদিনের মাথায় মৃত্যু বরণ করে৷ জীবন মাহমুদ এর জুনাইদ কবিরকেও পুলিশ নিজ দায়িত্বে জীবন মাহমুদ এর পাশে কবর দেন৷ কয়েকমাস সবাই শক্টডের ভিতর থেকেও ধিরে ধিরে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে ৷ ফিরে আসে জীবনের আনন্দ মুহূর্ত গুলো ৷ নিশিতা বেগম চোখের কানির্শ গড়িয়ে পড়া পানি মুছে স্মরণকে দেখছে৷

মিহু তার হাসবেন্ট ঈশান কে নিয়ে হসপিটালে ছুটে এসে দেখে স্মরণ সাদমান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে৷ এটা দেখে ভয় পেয়ে যায় এটা ভেবে প্রাণোর কিছু হয়ে গেল না তো? কিন্তু মিহুর ভাবনা ভুল প্রমানিত করে দিয়ে হঠাৎ বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সবাই৷ সবার ঠোঁটের কোনে হাসি ৷ আধাঘন্টা পর নার্স তোয়ালে পেচিয়ে কোলে করে একটি শিশুকে নিয়ে বেড়িয়ে আসে৷

নার্সকে দেখে স্মরণ প্রথমে জ্বিজ্ঞাসা করলো, ” নার্স আমার প্রাণ কেমন আছে ও ঠিক আছে তো?” প্রচন্ড উদির্গ্ন হয়ে বলতে লাগলো৷

” মিস্টার স্মরণ প্লিজ শান্ত হোন ৷ আপনার ওয়াইফ একদম ঠিক আছে ৷ নরমালি ডেলিভারি হয়ে ৷ পেশেন্টকে কিছুক্ষণ পর কেভিনে দেওয়া হবে৷ এবার তো আপনি আপনার ছেলের দিকে একবার তাকান৷ ”

নার্সের কথা শুনে স্মরণ নার্সের কোলে থাকা শিশুটির দিকে তাকায়৷ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে স্মরণের দিকে আর আঙুল মুখে চুষছে৷ স্মরণ তার সদ্য জন্ম নেওয়া ছেলের কান্ড দেখে হেসে দিয়ে কোলে তুলে নেয়৷ তখন নার্স বলে উঠলো, ” আল্লাহ আপনার মতো এমন বউ পাগল বর প্রথম দেখলাম৷ এতোটা পাগলামি করতে কোন পেশেন্টের হাসবেন্ট কে দেখেনি আমি যাই হোক ম্যাম আপনার মতো একজন হাসবেন্ট পেয়ে ভিষণ লাকি৷”

” নো নার্স আমার প্রাণ লাকি কিনা জানি না কিন্তু আমি আমার জীবনে প্রাণকে পেয়ে ভিষণ লাকি৷ সি ইজ মাই লাইফ , মাই লাভ , প্রাণো আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন৷ ওকে ছাড়া একা বেঁচে থাকাটা আমি কল্পনাও করতে পারি না বিকজ আই লাভ হার৷ ”

” সত্যি মিস্টার স্মরণ আপনারা দুজনে লাকি দুজনকে পেয়ে৷ আর এই বাচ্চাটি লাকি আপনাদের বাবা মা হিসেবে পেয়ে৷ বেস্ট অফ লাক আগামি জীবনের জন্য…..”

স্মরণ তার ছোট্ট ছেলেটির কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বললো, ” তুই আমাদের ভালোবাসার চিন্হ প্রনয় আমাদের দুজনের প্রথম সন্তান ”

” দুলাভাই এবার আমাদের কাছেও দিন প্রনয়কে….”

” হুম” স্মরণ প্রনয়কে প্রিয়ার হাতে দিয়ে প্রাণোর কেভিনের দিকে চলে গেল৷

চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে প্রাণো৷ হঠাৎ ভেজা ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে স্মরণকে দেখে আঁতকে ওঠে প্রাণো৷

” স্মরণ কি কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন? আ,, আমার সন্তান আমার সন্তান কোথায়? ও ঠিক আছেতো?” উত্তিজিত হয়ে বলে প্রাণো…..

” না আমাদের প্রনয় একদম ঠিক আছে৷ ”

” তাহলে তুমি কাঁদছো কেন?”

” থ্যান্কিউ প্রাণ ৷ আমার জীবনে এতো বড় খুশি দিয়েছো তুমি, আমাকে বাবা হওয়ার স্বাধ উপলব্ধি তুমি করিয়েছো৷ তুমি আমাকে পৃথিবীর সব চাইতে সুখি মানুষ করেছো৷ আমি তোমার ঋন কখনো সোধ করতে পারবো না কারণ আমি সারা জীবনের জন্য ঋনি হয়ে গেলাম তোমার কাছে, এই ঋনের সোধ যে কখনো করা সম্ভব নয়৷ ভালোবাসি মাইলাভ বড্ড বেশি ভালোবাসি ৷ আমৃত্যু তোমায় ভালোবেসে যেতে চাই তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই৷”

” ইনশাআল্লাহ তাই হবে সাইন্টিস্ট মশাই”

প্রাণোর মুখে সাইন্টিস্ট নাম টা শুনে স্মরণ হকচকিয়ে ওঠে৷ স্মরণ এমন মুখ দেখে প্রাণো বলে ওঠে, ” কি ভেবে ছিলেন সাইন্টিস্ট মাশাই আপনার আসল পরিচয় আমি কখনো জানবো না? ভুলে গেলে আমি কে ? আমি ব্লাকরোজ যার চোখের আড়াল কিচ্ছু নয়৷ ” রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো প্রাণো….

কিছুক্ষণ পর প্রিয়া প্রণয়কে নিয়ে কেভিনে ঢুকে ৷ তারপর একে একে সবাই কেভিনে ঢুকে প্রাণোর সাথে দেখা করে বেড়িয়ে যায় কারণ কেভিনে এতো বেশি লোক এ্যালাউ নয় ৷ নিউ র্বন বেবির ইনফেকশন হতে পারে ৷

নিশিতা বেগম এবং সাহারা বেগম দুজনে নাতির মুখ দেখে প্রাণোকে স্বর্নের চেইন পড়িয়ে দেয়৷ প্রাণোর বারণ করলেও শুনে না৷ এদিকে সাদমান প্রচন্ড খুশি ৷ পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিতর করে নিজেদের এলাকায় মিষ্টি বিতরন করে৷

এক সপ্তাহ পর প্রাণো প্রনয় কে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে৷ বাড়ি ফিরতেই সবাই ধামাকা সারপ্রাইজ দিয়ে প্রাণো আর প্রনয় কে বরণ করে ঘরে তোলা হয়৷ নিজেদের রুমে এসে প্রাণো আরো হতবাক হয় এটা দেখে তাদের পুরো রুমের ভোল পাল্টে ফেলা হয়েছে ৷ বাচ্চাদের টয়েস দিয়ে সাজানো ৷ এক পাশে বেবি দোলনা দুলছে ৷ ওয়ালপেইন্ট চেন্জ করা হয়েছে৷ বেড পাল্টে আরো বড় বেড আনিয়েছে ৷

প্রাণো ঘুমন্ত প্রনয়কে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে স্মরণকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” থ্যান্কিউ মাই কিউট পোলার বাবা৷”

” এ্যা এটা কি হলো প্রাণ? আমি কবে তোমার কিউট বাবা ছিলাম! এখন কিউট পোলার বাবা হয়ে গেলাম বা কি করে? আমি তো তোমার কিউট হাসবেন্ট ”

” এই এই তুমি কি আমার বেবিকে হিংসে করছো?”

” জ্বি না কিন্তু আমি তোমার কিউট জামাই ওকে ৷”

” নো ইউ আর নট মাই কিউট জামাই ৷ ইউ আর মাই কিউট পোলার বাবা ওকে৷ ”

স্মরণ প্রাণোকে জড়িয়ে কিস করতে যাবে তখনি প্রনয় কেঁদে ওঠে৷ স্মরণ ভুতুম পেচার মতো মুখ করে প্রনয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ” চলে এসেছে আমার রোমান্সের তেরটা বাজাতে আমার বাবাজান ৷ হায়রে স্মরণ আজ থেকে তোর কপাল থেকে একমাত্র বউয়ের ভালোবাসা ভ্যানিস হয়ে গেল এই ছোট্ট প্রনয়ের আগমনে……”

প্রাণো স্মরণের কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে দোলনা থেকে প্রনয়কে কোলে তুলে নেয় তখনি প্রনয়ের কান্না থেমে যায় তা দেখে স্মরণ বিড় বিড় করে বলে ওঠে,” কি ফাজিল ছেলেরে বাবা যখনি ওর মায়ের কাছেযেতে নিলাম কান্না শুরু হয়ে গেল৷ আর প্রাণ কোলে নিতে কান্না গায়েব! এই ছেলে আমার আর আমার বউয়ের মাঝে রোমান্সের দেয়াল হয় খোদা একটু দেখো….”

প্রাণো স্মরণ এর কথা গুলো স্পস্ট শুনতে পেয়ে দাঁত কেলাতে স্মরণ রেগে প্রাণোর দিকে এগোতে যায় তখনি প্রনয় কেঁদে ওঠে তা দেখে প্রাণো ব্রু নাচিয়ে স্মরণকে বলে, ” কি মাই কিউট পোলার বাবা কি হলো তেড়ে আসবা না? বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো প্রাণো… আর এদিকে স্মরণ বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল৷ তখনি হুট করে প্রাণো স্মরণের গালে চুমু দিয়ে বলে আমার কিউট পোলার বাবা না আসতে পারুক ৷ আমার কিউট পোলার বাবার বউ তো আসতে পারবে তাই না?”

প্রনয় কি বুঝলো জানি না সেও স্মরণ আর প্রাণোর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো৷ স্মরণ প্রাণো আর প্রনয়কে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ায়, তখন স্মরণ কাউচে বসে প্রনয় প্রাণোর কোলে থাকা অবস্থায় ওকে কোলে নিয়ে বলে, ” তুমি আমার জীবনে ওই #গোধুলীর_রঙিন_ছোঁয়ার মতো রাঙিয়ে দিয়েছো৷ অন্ধাকার জীবনে আলোর ছোটা হয়ে তুমি এলে ৷ জীবনে সমস্থ সুখ দিয়েছো তুমি আমায় ৷ ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়েছো তুমি আমাকে, মাইলাভ ভালোবাসি ভিষণ ভালোবাসি এক আকাশ পরিমান ভালোবাসি , এক গভির সমুদ্র সমান ভালোবাসি ৷ যে ভালোবাসার কোন গভীরতা হয় না আর না হয় পরিমাপ৷ ভালোবাসি ভালোবাসা ভালোবাসবো ৷ ” প্রাণোর কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো স্মরণ৷

পরম তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে স্মরণের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বিড় বিড় করে প্রাণো বলে ওঠে, ” ভালোবাসি প্রিয়তম ভিষণ ভালোবাসি৷ ”

#সমাপ্ত…….

আসসালামু আলাইকুম রিডার্স ৷ কেমন আছেন সবাই? আজ #গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া গল্প টা শেষ করলাম ৷ কাঁচা হাতে লেখা ভুলট্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আর যারা শুরু থেকে গল্পটি পড়েছেন তারা অবশ্যই যেটা ভালো বা খারাপ মন্তব্য করবেন ৷ আর হ্যাঁ খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে আবারও হাজির হবো ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here