#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১৫)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
বিকেলে ইমা চলে যায়। ইকরাকে মেহজা অনেক অনুরোধ করে থাকার জন্য পরে সে তার স্বামী তাহসিনকে কল করে বলে দরকারি জিনিসপত্র সহ গুণগুণকে নিয়ে আসতে। তাহসিন প্রথমে অমত করলেও পরে মেহজার কথা ফেলতে পারেনি। গুণগুণকে দিয়ে তাহসিন সন্ধ্যার আগেই ফিরে যায় তার অতি জরুরী কাজ আছে এখন এখানে থাকলে হবেনা তাই!
সন্ধ্যা ৬:৪০, মেহজা ইকরা নামায পরে কিচেনে গিয়ে চা বানাচ্ছে। মেহজা এবং ইকরা দুজনেই দুধ চা খোর! তারা নিজেদের মতো চা বানাচ্ছে আর গল্প করছে তখন ইরফান এসে বলে,
“কফি করবেনা?”
“কেন?”
“কেন আবার! আমি এই সময় স্ট্রং কফি খাই। জানো না?”
“না তো!”
“আচ্ছা না জানলে এখন একটা কফি বানিয়ে দাও তো ফটাফট!”
“খেতে হলে আপনিই একটা কফি বানিয়ে নেন ফটাফট!”
“তুমি আমার মজা উঁড়াচ্ছো?”
“উঁড়াচ্ছি নাকি! আপনার ম-জা!”
“মেহজা? হঠাৎ এমন ফালতুতামি করছ কেন?”
“করছি নাকি!”
“অসহ্য!”
ইকরা মুখ টিপে হাসছে। তার এদের কেমিস্ট্রি খুবই ভালো লাগছে। মেহজা এসব কেন করছে ইকরা ভালোই জানে। সবটা মিলিয়ে ইন্জয় খুব করছে সে।
ইরফান নিজেই কফি বানাতে লেগে গড়ে। কফি সে নিজেই রুমে বানিয়ে খেতে পারত কিন্তু সে মেহজার আশেপাশে থাকতেই নিচে এসেছে। দুপুর থেকেই সে রুমে যাচ্ছেনা। রুমে বললে ভুল হবে। সে তো ইরফানের আশেপাশেই ঘেষছে না। হুট করে কী এমন হলো তা সে বুঝতেই পারছেনা।
মেহজা দু কাপ চা করে ফেমিলি লিভিংটাতে গিয়ে বসে। পেছন পেছন ইকরাও যায়। ইরফান সেদিকে তাঁকিয়েই কফি কাপে ঢালতে থাকে। তারপর সে নিজেও রুমে চলে যায়। এমন ছ্যাঁচড়া স্বভাব তার নেই এবং ছিল না কোনো কালে। তবে এই মেহজার জন্য সে দিনদিন চরম লেভেলের বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে মুক্তির উপায় কী! কীভাবে পারবে মেহজা নামক মরিচিকা থেকে পালিয়ে বাঁচতে?
রাতে খাবার গরম করে সবাইকে খাবার পরিবেশন করে নিজেও খেয়ে ইকরার রুমে ছোটে মেহজা। আজ সে দূষিত পুরুষের কাছে যাবেইনা। ইরফান দু তিনবার নিচে এসে ঘুরে যায়। মেহজাকে না দেখে ইকরার রুমে যায়। ভেতর থেকে লক করা দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। তারপর দরজায় নক করেই ফেলে। দু’বার নক করতেই ভেতর থেকে ইকরা বলে,
“সমস্যা কী তোর ইয়াজ! এমন করছিস কেন? ঘুমাতেও দিবি না নাকি!”
“মেহজা আছে?”
“হ্যাঁ আছে। ও ঘুমাচ্ছে।”
“ঘুমাচ্ছে মানে?”
“ঘুমাচ্ছে মানে কী? রাত হলে মানুষ ঘুমাবে না নাকি তোর মতো হাশপাশ করবে?”
“ওকে ডেকে দে তো?”
“না পারব না। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে তো।”
“একটু ডাক না!”
“না।”
“চাবি দিয়ে লক খুলে আসব তাহলে।”
“ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে মেহজা। তুই এমন ক্লাসলেস বিহেইভ করছিস কেন?”
“আমি…
মেহজার পাতলা ঘুমটা ভেঙে যায় দুই ভাই বোনের চিৎকার চেঁচামেচি তে। বিরক্ত হয়ে উঠে দরজাটা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ইরফানের রুমে চলে যায়। ইরফানের কমনসেন্স না থাকলেও তার আছে। গুণগুণ ঘুমাচ্ছে উঠে পড়লে খুব কাঁদবে। আর ইকরাও খুব টায়ার্ড। তার নিজস্ব সমস্যার কারণে ওদের আরামের ঘুম হারাম করার কোনো মানে নেই।
রুমে ঢুকেই সে শুয়ে পড়ে এক কাত হয়ে। ইরফান এবার শান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ড্রয়ার থেকে ঔষুধ নিয়ে খায়। এতক্ষণ তার কিছুই ভালো লাগছিল না। ঔষুধটাও রাগ কে খায়নি সে। এখন তার শান্তি লাগছে। লাইট বন্ধ করে মেহজার পাশে শুতেই মেহজা লাফিয়ে উঠে বলে,
“আজ যদি আমাকে স্পর্শ করেন তো আপনার খবর আছে। আমি আপনার লাইফ পার্টনার হলেও বেড পার্টনার না। আপনি কেন বুঝেন না আমাদের সম্পর্ক টা বাকি দশজনের মতো নয়!”
“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। তুমি আমাকে কী মনে কর মেহজা? আমি শুধু তোমাকে আমার বেড পার্টনার করে রাখতে চাই? এতটা নিচ ভাবো আমাকে? আমি আজ পর্যন্ত তুমি ছাড়া অন্য নারীর দিকে সেই চোখে তাঁকায়নি।”
“অশ্লীল একটা! সেই চোখ মানে কোন চোখ? ছিঃ আপনি আমার দিকে ঐভাবে তাঁকান?”
রাগ সংবরণ করতে না পেরে ইরফান মেহজার দুই বাহু চেপে ধরে বলে,
“আমি অশ্লীল! আমি তোমাকে দেখে কখনও মাল বলেছি? বলিনি। তুমি আমাকে অসংখ্যবার মাল আর চিজ্ বলেছো। আমি সব শুনেছি। তোমার কীর্তি কলাপ আমি ভুলিনি মেহজা। আমার বডি স্ট্রাকচার দেখে তুমি বলেছো সিক্স প্যাক এবস্ এর বদলে এইট প্যাক আছে। উফফফ! জোস!’ তুমি আমাকে আসতে যেতে দেখা হতেই বলতে। তখন তো আমাকে শার্টলেস দেখনি। তাহলে কীভাবে জানতে আমার সিক্স নয় এইট প্যাক! দ্যাট মিনস্ তুমি আমাকে ঐ চোখে দেখেছো তাইনা! আর একটা কথা সত্যি করে বলবে তো মেহজা! আমার দৃষ্টিতে তুমি কি কখনও অস্বস্তিকর বোধ করেছো? খারাপ বোধ করেছিলে কখনও! স্পিক আপ!”
ইরফানের শেষের কথাটা চিৎকার করে বলাতে মেহজা কেঁপে উঠে। চোখের কোণে পানি চিকচিক করে। সত্যিই তো! লোকটির চাহনিতে তো সে কখনও ঐরকম কিছু অনুভব করেনি। বরং তার এক দেখার জন্য সে মরিয়া হয়ে যেত। ইরফান তার দিকে তাঁকালেই সারা শরীর কেঁপে উঠে। একটা ঝংকার তৈরী হয় তার মস্তিষ্কে। বুকের হৃদস্পন্দন ঢিপ ঢিপ করা শুরু করে। দম আটকে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে বরফের মতো জমে যায়। এই একণাত্র পুরুষ তার দিকে কখনও অশ্লীল তো দূরে থাক বাঁকা চোখেই চেয়ে দেখেনি। তাকে কীনা সে এভাবে বলতে পারল?
তবে সে মেহজার অনুমতি না নিয়ে তাকে স্পর্শ করেছে। সেটা কেন করেছে? এই সাধু পুরুষের কী একবারও মনে হয়নি সে মেহজাকে যখন ভালোইবাসেনা তখন তার কুমারিত্বে হাত দেওয়াটা অন্যায় হবে! আর বাকি সব পুরুষের মতো তো সে নয়। তাহলে কেন সে তাদের মতোই আচরণ করে? তার অধিকারটাই কী বড়? মেহজার ছোট্ট মনের সুপ্ত ভালোবাসা গুলো কী কিছুই নয়? মেহজার দিকে রক্তবর্ণ চোখে চেয়ে থাকা ইরফান জানে মেহজার মনে কী চলছে। সে কী এখনও বুঝেনি ইরফান তার প্রতি কতোটা দুর্বল? প্রথমবার রাগের বশে হলেও পরের বার তো সে মেহজাকে ভালো………
ইরফানের অভিমান হলো খুব। মেহজার প্রতি অভিমানের পাহাড় গড়ে তুলল মুহূর্তেই। বিছানা থেকে নেমে সোজা রুম থেকেই বেরিয়ে গেল। তার এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে প্রমাণ করতে সে প্রতিবার ব্যার্থ কেন হয়? কেন এত ব্যার্থতা! সেদিন বাবা-মা উপস্থিত সবাইকেই সত্যিটা বলাতে বিশ্বাস করাতে সে ব্যর্থ হয়েছিল আর আজ আবার ব্যার্থ হচ্ছে। মায়ের প্রতি ক্ষোভটাও তড়তড় করে বেড়েই চলেছে। যদিনা সে সেদিন বিয়েটা দিত তাহলে সেও মেহজার সাথে ঘনিষ্ঠ হতো না আর না তৈরী হতো কোনো গভীর সম্পর্ক।
————————————-
বালিশে মুখ গুজে কেঁদেই চলেছে মেহজা। ইরফান কেন সবসময় নিজের রাগ, জেদ আর গাম্ভীর্য বজায় রাখে! একটু নরম হয়ে মেহজাকে বুঝতে তো পারে! একটু ভালোও তো বাসতে পারে। কেন এমন হলো সে? এতটা সুন্দর, অমায়িক চেহারার পেছনে এমন কঠোর একটা মানুষ লুকায়িত আছে জানলে সে কখনও তাকে ভালোবাসতো না।
২ টার দিকে রুমে এসে ইরফান দেখে মেহজা হু হু করে কাঁদছে। ইরফান চমকে যায় মেহজা কী এতক্ষণ ধরে কেঁদেই চলেছে? কেন কাঁদছে সে! তার আবার এত কীসের কষ্ট? কষ্ট সব তো তার। সে তো একটু কেঁদে নিজের কষ্ট কমাতে পারছেনা।
ইরফান গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“দশ সেকেন্ডের মধ্যে যদি কান্না বন্ধ না হয় তাহলে সত্যি দশ তলা থেকে ফেলে দিব।”
এবার কান্নার বদলে মেহজার হিচকি শুরু হয়!
#চলবে।
বি;দ্র: গল্প কই গল্প কই বলে চিল্লান তো ঠিকই কিন্তু যখন গল্প দেই তখন নেক্সট ছাড়া আর কোনো মন্তব্যও করেন না। 😊
(আত্নীয় মারা গেছে তাই গ্রামে এসেছি। মন মানসিকতার সাথে নেটটাও ভালো না এখানের। তিনদিন দিতে না পারার জন্য দুঃখীত।)