#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-২৪)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
ভর দুপুরে অতিথি এলে চা নাশতার আয়োজন করাটা এক প্রকার বোকামি। ভারী খাবারই খাওয়ার নিয়ম তখন। মেহজা চা কফি না দিয়ে ঈশিতাকে সোজা ভাত খেতে ডাইনিং এ এনে বসিয়ে দেয়। ইরফানও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে বসে। ঈশিতার বিপরীতে দুই চেয়ার বাদ দিয়ে বসে। সবার পাতে ভাত বেড়ে দিলে ইরফান মেহজার হাত টেনে ধরে তার পাশেই বসিয়ে দেয়। মেহজাকে সে নিজে ভাত বেড়ে দেয়। ঈশিতার দিকে তাঁকিয়ে অমায়িক হেসে বলে,
“মিস! প্লিজ খাওয়া শুরু করুন। আমি আর কিছুক্ষণই আছি আমাকে অফিসে ফিরতে হবে। আপনি আমি থাকা পর্যন্ত দয়া করে আমাকে আপনার আথিতিয়েতার সুযোগটা দিন।”
ঈশিতা মলিন হেসে মেহজার দিকে তাঁকায়। ছোট বোনটার কপাল আছে বলতে হয়! আচ্ছা আজ যদি সে মেহজাদের ফ্ল্যাটে থাকত সে মেহজার জায়গায় থাকত তাহলে কী তার সাথেই ইরফানের বিয়ে হতো? উহু! হতো না। কারণ ঈশিতা হচ্ছে ঈশিতা আর মেহজা তো মেহজাই। সে যেখানেই থাকত না কেন ইরফানের নজর হয়তো তার দিকেই পড়ত। কারণ সৃষ্টিকর্তা নিজেই জোড়া আগে থেকেই ঠিক করে পাঠিয়ে দেয়। বয়সের ব্যবধান অধিক হলেও তার জোড়া হিসেবে মেহজাই তো ছিল! ঈশিতা ভাবনার সাগরে ডুবে আছে খাবার খাচ্ছেনা তা দেখে ইরফান মাংসের বাটিটা সামনে ঠেলে বলে,
“খাওয়া শুরু করুন মিস ঈশিতা। কোনো প্রকার লজ্জা শরম মাথায় আনবেন না। আমার বউ কিন্তু এত লজ্জা পায়না জানেন। অচেনা পাব্লিককেও সে ভালোই চোখ মারতে জানে।”
ইরফানের বলা শেষের টিপ্পনি কেটে কথাটা মেহজার একটুও হজম হলো না। সে আর কোন পাব্লিককে চোখ মেরেছে? ইরফানের এমন সব কথায় মেহজা প্রতিবারই খুব কষ্ট পায়। লোকটা এমন কেন? একটু ভালো হলে কী হতো? দূষিত পুরষ!
ঈশিতার কাছে না পাওয়া বস্তুটি অত্যন্ত ভালো আর মেহজার কাছে সে অত্যন্ত খারাপ! দূষিত পুরুষ। পৃথিবীটা এমনই হয়তো! আমরা না পাওয়া বস্তুটিকে সবসময় গুরুত্ব দেই আর যেটি পাই তাকে অবহেলা করি। এক্ষেত্রে মেহজা অবহেলা নয় রাগ করেছে বটে। তবে প্রকৃত সত্য তো সেটাই!
“অনা? আমি তোমাকে লাস্টবার বলছি ভেবে দেখ। আমি কিন্তু আর তোমার পিছু ছাড়ছিনা।”
“ছাড়তে বলেছে কে? ঝুলে থাকুন। আমি মুখ বুজে সহ্য করব না কিছু। আমি এক্ষুণি মেহজাকে জানিয়ে দিব। আর ইয়াজিদ ভাইয়ার সাহায্য নিয়ে আপনার মতো শয়তান রেপিস্টকে চরম শাস্তি দিব।”
কথাটা বলেই গাড়ি থেকে নেমে সোজা লিফটের দিকে হাটা ধরে অনা। অনাকে এখানে নিয়ে আসার সময় রাস্তায় আর কোনো কথা বলেনি সিনান। অনা শুধু কেঁদেছিল। তারপর কী বিড়বিড় করছিল সিনান তা পাত্তা দেয়নি। এখন গাড়ি থেকে নেমে সিনান অনাকে আরেকবার মজা করে বলে উপরোক্ত কথাটি। তবে অনার মুখ থেকে এমন জবাবে তার কোনো পতিক্রিয়া দেখা যায়না। সিনানের এই হাসিখুশি মুখ দেখে অনা নিজেই হতভম্ব হয়ে যায়। সিনান শিষ বাজাতে বাজাতে লিফটে উঠে পড়ে অনাকে পাশ কাটিয়ে। অনাও লিফট এর দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেখে তড়িৎ গতিতে তাতে উঠে পড়ে। সিনান আয়নায় এক ধ্যানে তাঁকিয়ে অনাকে দেখছেই। তার আশেপাশে যখন অনা থাকে কেন যেন তখন খুবই ভালো লাগে। অন্যরকম অনুভূতি হয়। অনা সিনানের অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকাকে উপেক্ষা করতে পারেনা। ধমকে বলে,
“শকুন নাকি? নোংরা লোক! এভাবে তাঁকিয়ে কী দেখছেন?”
“তোমাকেই দেখছি।”
“আমি তো জানিই। কিন্তু আমাকে দেখবেন কেন? ঐ যে কর্ণারের সিসিটিভি ক্যামেরাটা আগে দেখুন। উল্টোপাল্টা কিছু করবেন তো ঐখানে রেকর্ড হবে।”
“ওহ তাই?”
“হ্যাঁ।” দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে অনা জবাব দেয়। তৎক্ষণাত সিনান অনার হাত ধরে টেনে এনে তাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর কপালে আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া দেয়। অনা রাগে ফুসে উঠে যেন। সিনানকে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে নেয় সে। মেহজাদের ফ্ল্যাটের সামনে লিফট থামলে সে সিঁড়ি বেয়ে আবার উপরে উঠে যায়। সিনান অবাক হয় খুব। অনা উপরে কেন যাচ্ছে? বাসা কোনটা ভুলে গেল নাকি! হুট করেই মনে হয় অনা ছাদে যেতে পারে। কিছু করে ফেলে যদি! সিনানও পেছন পেছন যায়। অনাকে একটি ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখে সে হতভম্ব হয়ে পড়ে। এটা যতদূর জানে ইয়াজিদদের বাসা। এখানে কেন এসেছে? বিচার দিতে! সিনানের হাসি পায়। মৃদু হেসে সে মেহজাদের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিজাম সেই কখন থেকে ফোন করেই চলেছে। ব্যাটার থামাথামি নেই।
——————————————–
মেহজা এখন তার বাসায় যাবে। অনাকে অপেক্ষা করতে বলে সে ইরফানের রুমে এসে তার কলার চেপে ধরে বলে,
“আপনি এসব কী বললেন ঈশু আপুকে? আমি পাব্লিককে চোখ মারি? কাকে মেরেছি বলুন! আপনাকে ছাড়া আর কাকে চোখ মেরেছি?”
ইরফান রেডি হচ্ছিল। হঠাৎ মেহজার আক্রমণে সে ভড়কে যায়। পরে মেহজার মুখে কারণ জেনে সে মুঁচকি হাসে। তারপর বলে,
“আমাকে মারতে পেরেছ যখন তখন অন্য কাউকে মারাটা স্বাভাবিক নয় কি?”
“আপনি জঘন্য।”
“জানি তো।”
ইরফানের এমন ছন্নছাড়া কথা মেহজার রাগ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। দ্রুত গতিতে পা ফেলে রুম ত্যাগ করে। ইরফান ভেবেছিল বলবে সে আজ আর আসবেনা। মেহজার সেদিকে কোনো আগ্রহই নেই। সে আছে নিজের রাগ অভিমান নিয়ে। ইরফানেরও মেহজার উপর সূক্ষ রাগ জন্ম নিল। এই জন্য সে এমন ইমম্যাচিউড মেয়ে বিয়ে করতে চায়নি। এখন তাকেই সারাজীবন ভুগে যেতে হবে। হয়তো আর কয়েক বছরে সে কিছুটা ম্যাচিউড হবে কিন্তু তাতে কী আর এখনকার সময়টা ফিরে আসবে? কখনোই না!
প্রথি অনা আসার পরে মেহজাদের বাসায় এসে উপস্থিত হয়। কলিংবেল বাজাতে যাবে তখন চোখ যায় অনা আর মেহজার দিকে। মেহজা শাড়ি বদলেছে। থ্রী পিছ পড়া হয়তো অনা সাথে করে নিয়ে গেছে। অনার দিকে তাঁকাতেই সে রেগেমেগে আগুন হয়ে যায়। সামনে গিয়ে অনার চুল টেনে বলে,
“বেয়াদব মেয়ে? কোথায় আর কার সাথে গিয়েছিলি তুই? আমি রাস্তায় নাজেহাল অবস্থায় কঠিন জ্যামে আর ভ্যাবসা গরমে কাহিল হয়ে গেছি। আর তুই বিন্দাস এসি গাড়িতে করে এসেছিস? আই থিঙ্ক তোর বয়ফ্রেন্ড ছিল তাইনা? ছিঃ অনা! আমাদের একবারও জানালিনা!”
মেহজা অবাক হয়ে দুজনকে দেখছে। অনার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাঁকাতেই সে কেঁদে দেয়। অনার আকস্মিক কান্নায় দুজনেই ভড়কে যায়। এখানে কাঁদার কী আছে? তারা কী তাকে মারবে!
#চলবে।
(রি চেইক করিনি তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
(আপনারা সবসময় পরীক্ষায় ফেইল করে যাবেন। আগের পোস্টটায় কিছু মন্তব্যে কষ্ট পেয়েছি খুব। আমি তো বলেছি যে আমি গলে যাই। আর আপনারা!)