গোধূলী আকাশ লাজুক লাজুক পর্ব-৭

0
1869

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-7)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

রাত নেমেছে আকাশে। চাঁদের ছটায় ভরপুর চারিদিক। আলোরা আজ পণ করেছে অন্ধকারকে দিবেনা স্থান। যেখানে আলোরা থাকবে সেখানে অন্ধকার কি করে থাকবে? একদমই না! আলো যেন অন্ধকারকে শাষিয়ে বলছে “এই অন্ধকার! কান খুলে শুনে রাখ, আমি যেখানে থাকবো সেখানে আসার চেষ্টা ভুলেও করবিনা। এর ফলাফল ভালো হবে না কিন্তু।” সত্যিই কী এমনটা করে তারা! হয়তো করে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এমনটাই ভাবছিল মেহজা।

ইকরা সেই বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত রেডিই হচ্ছে। কিন্ত রেডি হয়ে উঠছেনা এখনও। মেহজা বেলকনি থেকে এসে এবার খুব রেগে গিয়ে অনেকগুলো বকা দিল ইকরাকে। ইকরা শুধু মাঝখানে একবারই বলেছিল “মেহজা! তুই কিন্তু আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করছিস” মেহজা তার মৃদু ধমকে ভয় তো পেল না উল্টো নিজে ইকরাকে একটা রাম ধমক দিয়ে বলল

“দুই মিনিট দিলাম। তার মধ্যেও যদি তৈরি না হও তাহলে আমি বাসায় চলে যাব। তখন শত বলেও আমাকে আর তোমার সেই স্পেশাল পার্টিতে তে নিতে পারবেনা।”

ইকরা যেন তাতেই দমে গেল। মেহজাকে বোন, বাবু সোনা, সুইটু আরো কত কী বলে সত্যি সত্যিই দেড় মিনিটের মাথায় রেডি হয়ে গেল। অবশ্য সে শুধু চুলটাই বাধছিল বাকি সব আগেই ঠিক করেছে। গুণগুণকে মাহিমা বেগমের কাছে দিয়ে তারা চলে গেল। গুণগুণ একটু একটু বুঝ হবার পর থেকেই দেখে আসছে মা তার সাথে সবসময় থাকেনা। তাই ইকরার এমন হুটহাট কোথাও যাওয়ায় সে কান্না কাটি করে না। সে শুধু জানে মা কাজে যাচ্ছে। এখন নো কান্নাকাটি।

লিফ্ট থেকে নেমে মেহজা সবেই গাড়ির কাছে যাচ্ছিল, তখন পেছন থেকে স্পষ্ট এবং অত্যন্ত শান্ত গলায় একটি পুরুষালী কন্ঠ তাকে বলে উঠে

“মেয়েরা শুধুই তাদের স্বামীদের জন্য সাজবে। অন্য কারো জন্য নয়।”

মেহজা পেছনে ফিরে দেখে ইরফান দাঁড়িয়ে। উফ! আশ্চর্য! লোকটি আজ কল্পনাতে এত কথা বলছে কেন? তাও বাস্তবের বেয়াদব ইরফানের মতোই গম্ভীর টাইপ। মেহজার ইচ্ছা করছে ব্যাটাকে কষে চড় মেরে বলতে

“এই! তুই আমার কল্পপ্রেমিক পুরষ ইয়াজিদ। তুই কি সেই সত্যিকারের বদ ইয়াজিদ নাকি? তোর কথা বার্তা এমন হয়ে যাচ্ছে কেন? আর যদি শুনি এসব কথা বলিস তো কল্পনা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিব।”

মেহজার ভাবনার মাঝেই অভদ্র ইরফান তার সামনে এসে কানের পেছনে চুল গুলো গুজে দিয়ে বলল

“চুল ছেড়ে বের হবে না তুমি। তোমার জন্য আমার সামনে ছাড়া আর অন্য কারোর সামনে চুল খোলা নিষিদ্ধ। চুল বেধে নেও।”

এবার আর মেহজা নিজেকে আটকাতে পারলো না ধমক দিয়ে ইরফানকে বলল

“এই চুপ কর। তোর কথা এমন রস কষহীন কেন?”

“তুই করে কথা বলছো কোন সাহসে মেহজা! আমি তোমার বয়সে বড় তার থেকে বড় কথা আমি তোমার স্বামী। আমার সাথে এইভাবে কেন কথা বলছো!”

“দূষিত পুরুষ! এক্ষুণি তোমাকে মজা বুঝাবো। একবার আমি কল্পনা থেকে বেরিয়ে যাই পরে দেখবে কেমন মজা!”

মেহজা দুই বার চোখ বন্ধ করে আবার খুলে “একি এখনও যাচ্ছো না! দাঁড়াও!” বলেই আবারো চোখ বন্ধ করে না পাঁচবার দশবার করার পরেও যাচ্ছেনা। মেহজাকে অবাক করে দিয়ে ইরফান ওর কপালে একটা চুমু এঁকে বলে।

“আমি কল্পনাতে নই বাস্তবেই তোমার সামনে দাঁড়িয়ে মেহজা। তখনও ছিলাম এখনও আছি। ঘোরের মধ্যে থেকো না। ঘোর কাটিয়ে বেরিয়ে আসো।”

“কীভাবে সম্ভব এটা! আপনি তো নেই।”

“কে বলেছে আমি নেই? আমি তো আছি। কিন্তু এতদিন দূরে ছিলাম আজ আবার ফিরে এলাম।”

“আপনি সত্যি হতেই পারেন না। আপনাকে আমি এক দন্ডও দেখতে পারছিনা। আমার কাছে আসবেন না বলে দিলাম।”

কথাটা বলেই ইরফানের জবাবের আশা না করেই সেখান থেকে দৌঁড়ে পালালো মেহজা। পার্কিং এ গিয়ে দেখে ইকরা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেহজা দ্রুত পায়ে গাড়িতে উঠে বলে

“গাড়ি স্টার্ট দাও জলদি। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকলেও আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে। মরেই যাব আমি।”

“এসব কি বলছিস? মরবি কেন? হয়েছে কি!”

“বলবো আগে গাড়ি স্টার্ট দাও প্লিজ!”

মেহজা কেঁদেই দিল। ইকরা ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে। তারপর মেহজার দিকে তাঁকায়। মেহজা জানালার কাঁচ নামিয়ে দিল। তারপর ততক্ষণ পর্যন্ত বিল্ডিংটার দিকে পেছন ফিরে তাঁকিয়ে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দেখা যায়। চোখের আড়াল হলেই সে ঠিক করে বসে। ইকরাও পানি এগিয়ে দেয় মেহজার দিকে

“নে পানিটা খা।”
পানি খেয়ে মেহজা নিজে থেকেই বলতে থাকে

“উনি এসেছেন আপু।”

“কে?”

“ই ই ইয়া…..

“ইয়াজিদ!”

“হ্যাঁ”

“আরে ও তো কাল রাতেই এসেছে।”

“কি! কাল রাতে? তুমি আমাকে জানাওনি কেন?”

“কেন জানাবো? তুই কি ওর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিস! ওর খোঁজ খবর নিস! বরং তোকে ওর ব্যাপারে কিছু বললে তুই রেগে গিয়ে কত কান্ড করতি। সেগুলো কি আমরা কেউ ভুলে গিয়েছি?”

“এটা আমাকে জানানো উচিত ছিল।”

“আমার মনে হয়নি।”

“গাড়ি থামাও আমি নেমে যাব।”

“পেছনে কিন্তু ইয়াজ আছে।”

বলেই ইকরা হো হো করে হেসে উঠে। আর মেহজা চাপা আর্তনাদ করে। তার সাথে মোটেও ঠিক হচ্ছেনা। পার্টিতে গিয়ে মেহজা কিছুটা চাপ মুক্ত হয়। আশেপাশের পরিবেশ বেশ সুন্দর। সবাই হাসি খুশি হয়ে এদিক ওদিক ছুটছে। ইকরা কোল্ড ড্রিংক খাচ্ছে একটি চেয়ারে বসে। মেহজা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আলতো করে ওর হাতটা ধরে। তাতেই মেহজা ঘাবড়ে যায়। ইকরা তাকে শান্ত স্বরে বলে

“রিল্যাক্স! তুই ভয় পাচ্ছিস কেন? আমিই তো!”

“ভয় কেন পাবো?”

“সেটা তো তুই ভালো জানিস। মুখ গোমরা করে না থেকে ইন্জয় কর।”

“হুম। আপু সুইমিংপুলটা খুব ভালো লাগছে একটু যাই ওখানে?”

“জিজ্ঞেস করছিস কেন? যা! তোর ভালো লাগার জন্যই তো এখানে আসা।”

মেহজা একাকী এসে পুলের মধ্যে পা ভিজিয়ে বসে। ভালো লাগছেনা তার। মনটা বড্ড বিষণ্ণ লাগছে। একসময় ইরফানকে দেখলে সে লজ্জা শরম ভুলে তাকে বিরক্ত করত। আর আজ সে ইরফানের থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছে, তাকে ভয় পাচ্ছে। মেহজা তার পাশে হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেল পাশ ফিরে ইরফানকে দেখে ভয় পেয়েই সে উঠতে নেয় ওমনি পা পিছলে সে পানিতে পড়ে যায়। মেহজা সাতার জানেনা হয়তো তাই হাত পা নাড়াতে থাকে শুধু শুধু। ইরফানের তা বুঝতে আর বেগ পেতে হয়না। সেও এক লাফ দেয় তারপর নেমে দেখে পানি মাত্র তার বুক পর্যন্ত আর মেহজার গলা পর্যন্ত হবে হয়তো। কারণ এখানে দাঁড়িয়েই থাকা যায়। ওদের মতো লম্বা মানুষদের ডুবা অসম্ভব। ইরফানকে আরেক দফা অবাক করে মেহজা সাতার কেটে ওপারে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ইরফানকে উদ্দেশ্য করে বলে

“টিট ফর ট্যাট। অভদ্র পুরুষ কোথাকার! আর একবার আমার সামনে এলে মেরেই দিব।”

ইরফানের মুখটা মুহূর্তেই লাল হয়ে যায়। যার অর্থ আজ মেহজার খবর করে ছাড়বে সে।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here