গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব-১৯ (কে ফিরে এলো?)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিক কেবিনের বাইরে থেকে কাজলকে দেখছে।রুদ্রিক নিজের চোখের জলটুকু মুছে ফেলে। রাগ হচ্ছে প্রচন্ড। যে এই কাজ করেছে তাকে রুদ্রিক হাতে পেলে একেবারে শেষ করে-ই’ ফেলবে। এতো সাহস কী করে হলো কাজলকে কষ্ট দেওয়ার।
“কাজল তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি। ডোন্ট ওয়ারি।”
কথাটি আপনমনে বলে উঠে রুদ্রিক।
রুদ্রিক শান্ত কন্ঠে ইথানকে ডেকে বলে উঠে,
“ইথান শুন! ”
রুদ্রিকের কন্ঠ শান্ত হলেও,বেশ ভয়ংকর লাগছিলো শুনতে।
ইথান রুদ্রিকের কাছে গিয়ে বলে,
“হ্যা রুদ্রিক বল।”
“আমার সাথে আয়। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক চলে যায়। ইথান ও পিছন পিছন চলে যায়।
সিথি শুধু কেবিনের দিকে তাঁকিয়ে আছে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। সাদি সিথির কাঁধে হাত রাখে। সিথি এতোক্ষনে বোধহয় ভরসার হাত খুঁজে পেলো।
রুদ্রিক দেয়ালে পাশে দাঁড়িয়ে নিজের কপাল স্লাইড করতে করতে বলছে,
“কাজল হঠাৎ করে কেনো ফার্স্ট ফ্লোরে গেলো? নিশ্চই এতে কারো হাত রয়েছে। কেউ ইচ্ছে করে ফার্স্ট ফ্লোরে কাজলকে আটকে রেখেছিলো। ”
ইথান মাথা নাড়িয়ে বলে,
“লাস্টবার কাজলকে বাগানের পিছনের সাইডে দেখা গিয়েছিলো। ”
রুদ্রিক ইথানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ইথান তুই এখুনি গিয়ে বাগানের পিছনের সাইডে সিসিটিভি ক্যামেরা চেক কর। তারপর সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
ইথান শুকনো ঢুক গিলে কেননা রুদ্রিককে দেখে-ই’ বুঝা যাচ্ছে সে ভয়ংকরভাবে রেগে আছে।
ইথান মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
______________
ইশানি শেখ নিচে নেম আসে। মাহির ইশানির হাতে কফির কাপ ধরিয়ে বলে,
“তোমাকে দেখে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে।”
ইশানি শেখ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,
“কেনো যেনো কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ। মনে হচ্ছে আমি বোধহয় নিজের বোনের সাথে-ই’ অন্যায় করেছি। আমার মনে হয় আমার বোনের মৃত্যুর পিছনে আমারও হাত রয়েছে।”
মাহিন ইশানিকে শান্তনা দিয়ে বলে উঠে,
“তোমার বোন আত্বহত্যা করেছিলো। তাও শুধুমাত্র তোমার ভাই ও ভাইয়ের বউয়ের জন্যে। দ্যাটস ইট। এখানে তোমার কিংবা আমার হাত ছিলো নাহ।”
_______
মাথায় হাত দিয়ে রুদ্রিক বসে আছে। সবাই অপেক্ষা করছে ডক্টর কখন আসবেন। তখনি ডক্টর বেড়িয়ে আসেন।ডক্টর বেড়োনের সাথে সাথে-ই’ রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে,ডক্টরের কাছে গিয়ে উত্তেজিত বলে উঠে,
“ডক্টর কাজল কেমন আছে? ”
ডক্টর রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“ডোন্ট বি হাইপার ইয়াং ম্যান। সি ইজ নাও ওকে।
মিস কাজলের জ্ঞান ফিরেছে। ”
ডক্টরের কথা শুনে রুদ্রিক কিছুটা শান্ত হয়।
সাদি, সিথি ও সকলে-ই’ চলে আসে।
——“কাজলের আর কোনো রিষ্ক নেই তো? ”
সাদির প্রশ্নে ডক্টর বললেন,
“আপাতত নেই। মনে হয় সুইমিংপুলের পানিটা বেশ গভীর ছিলো। তাই গভীর পানিতে ঠায় না পেয়ে, পেশেন্ট অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। পানিতে এতোক্ষন ভাসমান থাকার জন্যে হাত-পাও ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন সমস্যা নেই। সঠিক সময়ে স্যলাইন ও অক্সিজেন সরবাহের জন্যে, উনার এখন কোনো রিস্ক নেই। আমরা শুধু একটা দিন মিস কাজলকে অবজারভেশনে রাখবো। ”
সিথি ডক্টরের কাছে গিয়ে বলে উঠে,
“আমরা কী এখন কাজলের সাথে দেখা করতে পারবো?
ডক্টর সৌজন্যতামূলক হেঁসে বললেন,
” অবশ্যই!কিন্তু একজন করে যেতে হবে। ”
কথাটি বলে-ই’ ডক্টর বেড়িয়ে পড়ে।
সাদি রুদ্রিকের কাছে গিয়ে বলে,
“রুদ্রিক তুই বরং আগে গিয়ে কাজলের সাথে দেখা করে আয়। ”
রুদ্রিক কিছু না বলে কেবিন ঢুকে পড়ে। কাজল বেডে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। হাতে সেলাইন।
রুদ্রিক দরজাটা ভিড়িয়ে কাজলের পাশে বসে। কাজলের হাত নিজের হাতের সাথে পুড়ে নেয়। তখনি কাজলের চোখ খুলে যায়।
আমাকে চোখ খুলতে দেখে ছোট সাহেব আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—-“আর ইউ ওকে? ”
আমি মাথা নাড়ায়।
ছোট সাহেবকে দেখে আমার বুক ধক করে উঠে। চোখ-মুখের যেনো নাজেহাল অবস্হা।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
আমি খানিক্টা নিচু গলায় বললাম,
“নিজের কী অবস্হা করেছেন আপনি? হুহ?
দেখে তো মনে হয়েছে কান্না করছেন। ”
উনি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্যে বললেন,
“আমার আবার কী হয়েছে। আচ্ছা তুই থাক। আমি বরং এখন আসি। তুই রেস্ট নে। ”
উনার কথার মাঝে-ই’ আমি বলে উঠি,
“স্বীকার করবেন নাহ তাইতো? আচ্ছা বুঝেছি
স্বীকার কেনো করবেন বলুন? সামান্য ড্রাইভারের মেয়ের জন্যে রাফসান শেখ রুদ্রিক কান্না করেছে। এইটা কী মেনে নেওয়ার মতো বিষয়? ”
কথাটি বলে আমি মজার সুরে বললেও,ছোট সাহেব আমার ঠোটে আঙুল দিয়ে বললেন,
(
“চুপ একদম চুপ। খুব বুঝে গিয়েছিস তাইনা?
জানিস আমার ঠিক কী পরিস্হিতি হয়েছিলো?
এক মুহুর্তের জন্যে মনে হয়েছিলো আমি বোধহয় তোকে হারিয়ে ফেলবো।
অন্তর কেঁপে উঠেছিলো জানিস? বুঝিস কিছু? ”
কথাটি বলতে গিয়েও উনার এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো আমার হাতে।
উনি থামলেন উনার যেনো গলা ধরে আসছে। তবুও তিনি বললেন,
“তুই আমার কাছে খুব বিশেষ কেউ। হ্যা তুই আমার কাছে খুব স্পেশাল। আমি আর কিচ্ছু জানিনা, কিন্তু তোকে হারানোর বড্ড ভয় করে। ”
“জানিনা কেনো কিন্তু ভয় করে। কথাটা অদ্ভুদ হলেও সত্যি এই রাফসান শেখ রুদ্রিক তোকে হারানোর ভয় পায়। মনে হয় এখুনি তুই কোথাও পালিয়ে যাবি।”
উনার কথা শুনে আমি হাঁসলাম। যাকে বলে প্রাপ্তির হাঁসি। অবশেষে ছোট সাহেব নিজের অনুভুতি বুঝতে শুরু করেছেন।
আমি উনার হাতজোড়া নিজের হাতের সাথে শক্ত করে ধরে বললাম,
“জানেন ছোট সাহেব। মানুষের জীবন বড্ড অদ্ভুদ।
একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে কখন কী করে যেনো খুব আপন হয়ে উঠে। যাকে আপনার ভাষায় খুব স্পেশাল কেউ। এই ‘কেউ ‘ হুট করে-ই’ আমাদের জীবনে অনেকটা অংশজুড়ে থেকে যায়। আমাদের অজান্তে।”
ছোটসাহেব খুব মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনলেন। তখনি সিথি ভিতরে এসে বলে,
“কাজল তোর বাবা-মা সবাই এসেছে। তোর সাথে দেখা করতে চাইছে। ”
কথাটা বলে-ই’ সিথি একপলক আমার দিকে তাঁকিয়ে চলে যায়।
বাবা-মার কথা শুনে ছোট সাহেব বলে উঠেন,
“আংকেল আন্টি চলে এসেছে। আমি বরং যাই তুই রেস্ট নে। ”
উনি কথাটি বলে চলে যেতে নিলে আমি আরো শক্ত করে উনার হাতজোড়া ধরে ফেলি।
ছোটসাহেব আমার দিকে তাঁকিয়ে খানিক্টা হাঁসলেন।
হয়তো তিনিও বুঝতে পেরেছেন আমি উনাকে যেতে দিতে চাইছেনা।
—–“আমি চলে আসবো খুব তাড়াতাড়ি। টেক রেস্ট ওকে? ”
কথাটি বলে উনি আমার হাতে আলতো করে চুমু খেলেন। আমি কেঁপে উঠলাম।
উনি আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলেন।
রুদ্রিক বেড়োনোর সাথে সাথে-ই’ কাজলের বাবা-মা কেবিনে প্রবেশ করলো। কাজলের মা তো কেঁদেই দিলেন মেয়েকে দেখে। কাজল তার বাবা-মাকে বুঝানোর চেস্টা করছে।
রুদ্রিক হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে, ইথানকে কল করে বলে উঠে,
“যা করতে বলেছিলাম করেছিস? ”
ওইপাশ থেকে ইথান এমনকিছু বলে যা শুনে রুদ্রিকের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে যায়। রুদ্রিক বাঁকা হেঁসে বলে,
“এইবার যা করার আমি করবো।”
কথাটি বলে রুদ্রিক বেড়িয়ে যাবে তখনি কারো সাথে রুদ্রিকের ধাক্কা লাগে।”
রুদ্রিক সামনে তাঁকিয়ে দেখে। সুঠাম দেহি ফরমাল ড্রেসে একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার চিকন ফ্রেমের চশমা। লোকটি বলে উঠে,
“আম সরি। ”
রুদ্রিক বলে উঠে,
“ইটস ওকে। ”
তখনি পিছন থেকে একজন মেয়ে এসে বলে উঠে,
“তনয় ভাইয়া তিনতলায় কেবিনটায় কাজল আছে। ”
তনয় মাথা নাড়িয়ে বলে,
“ওকে লেট’স গো নিতিয়া। ”
কথাটি বলে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রুদ্রিকের কাছে দুজনকেউ অপরিচিত লাগলো। তবুও সেদিকে রুদ্রিকের মাথা ঘামালো নাহ। হয়তো কাজলের কেউ পরিচিত।
(লেখিকাঃ রিমি)
এদিকে,
মা কান্না করতে করতে বললেন,
” ছোট সাহেবের থেকে যখন তোর এই অবস্হার খবর পেলাম। মারে আমার তো ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠেছিলো।”
মা শুধু কান্না করে-ই’ যাচ্ছে।
আমি মাকে থামিয়ে বললাম,
“মা প্লিয আর কান্না করিও নাহ। আমি তো ঠিক আছি তাইনা? ”
বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কিন্তু মা তুই হঠাৎ সুইমিংপুলে পড়ে গেলি কীভাবে?”,
বাবা-মা এখন বলা যাবেনা, কেউ ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফার্স্ট ফ্লোরে আটকে রেখেছিলো। নাহলে শুধু শুধু টেনশন করবে। আমি কথা ঘুড়ানোর জন্যে বললাম,
” বাবা এইট জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলে।বাদ দাও নাহ এইসব কথা। আমি তো এখন ঠিক আছি। ”
—–“আমিও কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কাজলরেখা। সত্যি তুমি এতো বেখায়ালি কেনো বলতো? ”
অতিপরিচিত কন্ঠে কানে আসতে-ই’ আমি সামনে তাঁকিয়ে দেখি ‘তনয় ভাই’।
এতোবছর পর তনয় ভাইকে দেখে আমি যেনো স্তব্ধ হয়ে যাই।
_____
জেনি নিজের ঘরে ভয়ে গুটিয়ে রয়েছে। রুদ্রিক যদি জানতে পারে এইসব এর পিছনে জেনি আছে তাহলে তো জেনি শেষ।
তখনি কেউ বলে উঠে,
—“জেনি ডার্লিং! ”
রুদ্রিককে এইসময় দেখে জেনি ভয়ে কেঁপে উঠে।
জেনি কাঁপা গলায় বলে,
“রুদ্রিক তুমি এখানে? ”
রুদ্রিক বাঁকা হেঁসে বলে,
“আরে জেনি ডার্লিং তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন? বি কুল। ”
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে..
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 💙)