গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story) পর্ব- ২৩

0
3918

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
পর্ব- ২৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
—“তোর মতো মেয়ে রাফসিন শেখ রুদ্রিকের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ভাবা যায়? যার পিছনে সারাদিনে মেয়েরা ঘুড়ঘুড় করে সেই ছেলের ঘুম তুই কেড়েছিস। কত্ত বড় সাহস তোর। ছোট সাহেবের এমন মেসেজে আমি চমকে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি মেসেজ এলো,
“নিশ্চই তুই খুব ভালো করে ঘুমাচ্ছিলি তাইনা? ঘুম ভালো হওয়ার-ই’ কথা নিজের আগের ভালোবাসা ফিরে এসেছে তাইনা । ”

রুদ্রিক মেসেজটি দিয়ে হাঁসলো। রুদ্রিক জানে এখন কাজল তাকে নিয়ে ভাব্বে। রুদ্রিকের ভাবনার মাঝে-ই’ একজন লোক এসে বললেন,

—“স্যার আপনার কথামতো আমরা সব রেডি করে ফেলেছি। ”

রুদ্রিক লোকটির দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—-“যেভাবে করতে বলেছিলাম সেভাবে-ই’ করেছেন তো? ”

লোকটি মিষ্টি হেঁসে বললেন,

—“অবশ্যই স্যার। আপনি ঠিক যেমনভাবে সবকিছুর আয়োজন করেছিলেন ঠিক সেভাবে-ই’ সবকিছু করেছি। ”

রুদ্রিক ‘ধন্যবাদ ‘ বলে লোকটিত হাতে এক হাজার একটি নোট বের করে দেয়। লোকটি নোট টা নিয়ে চলে যায়। রুদ্রিক দৃষ্টি সামনের দিকে।

সে পকেটে হাত গুজে একটি সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেটটা ধরাতে যায় কিন্তু সে ধরায় নাহ। পা দিয়ে পিষে ফেলে। রুদ্রিক গাড়ি বের করে বেড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে,

রুদ্রিকের নাম্বার কালকে থেকে বন্ধ। ইশানি শেখ চারদিকে পাইচারি করে যাচ্ছে। এই বিয়ের প্রস্তাব হাতছাড়া করা যাবে নাহ। কম্পানির অনেক লাভ হবে, যদি এই বিয়েটা হয়। ইশানি শেখ মনে মনে স্হির করে ফেলেন। যেকরে-ই’ হোক এই বিয়েতে রুদ্রিককে রাজি করাতে হবে। কথাটি ভেবে ইশানি শেখ
ইকবাল শিকদারের নাম্বারে ফোন করেন।

ইকবাল শিকদার বলে উঠেন,

—“জ্বী মিস ইশানি বলুন। ”

—-“আসলে আমি আপনাকে এবং আপনার মেয়েকে কালকে আমাদের বাড়িতে রাতের ডিনারের জন্যে ইনভাইট করতে চাই। তখন না হয় বিয়ের ব্যাপারটা এগিয়ে নেওয়ার যাবে।তখন রুদ্রিক ও উপস্হিত থাকবে। এতে সবথেকে ভালো দিকটি হচ্ছে ছেলে মেয়ে একে-অপরকে দেখে নিবে। ”

ইকবাল শিকদার হেঁসে বললেন,

—“অবশ্যই আমার আপনার প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে। ”

_______এদিকে,
উনার মেসেজের ঠিল কিরকম উত্তর দিবো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি নাহ। আমি কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বেশ বেলা হয়ে গেছে। ঘড়িতে এখন বাজে ১০টা। পাশে রাখা কফিটা মুখে দিয়ে রেখে দিলাম। আমার এখন কিছু-ই’ ভালো লাগছেনা। কিন্তু হুট করে ‘তনয় ‘ভাইয়ের ফিরে আসাটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি নাহ।
নিতিয়া ও তনয় ভাই এখানে তনয় ভাইয়ের আপন খালামনির বাসায় থাকছেন। তারা এখনো এখানে আছেন নাকি সিলেটে ফিরে গিয়েছেন? প্রশ্ন জাগলো মনের ভিতর আমার।
—-“কাজল এখন কেমন আছিস তুই?”

নিতিয়া রুমে ঢুকে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে ফেলল।

আমি কোনরকম শুকনো গলায় বলে,

—“আছি ভালো-ই’। তা তোদের তো সিলেটে ফিরে যাওয়ার কথা। যাবিনা? ”

নিতিয়া মুখ ফুলিয়ে বলে,

—“কেনো আমরা চলে গেলে বুঝি ভালো হবে? ”

আমি বলে উঠলাম,

—-“নাহ । আসলে আমি শুধু একটু জিজ্ঞাসা করলাম। ”
মা রুমে ঢুকে বলে,

—“এইসব কি প্রশ্ন কাজল? তোর বাবা তোর সাথে এখন তনয়ের বিয়ের কথা ঠিক করছেন। সুতরাং নিতিয়াদের এখন সিলেটে যাওয়ার প্রশ্ন-ই’ উঠেনা।”

আমি বলে উঠলাম,

—“বিয়েতে তো আমি এখনো ‘হ্যা ‘বলেনি। ”

—–“তুই তো দ্বিমত ও পোষন করেসনি। ”

—-“কিন্তু মা….

আমার কথার মাঝে মা বলে উঠে,
—-কিসের কিন্তু তুই যাকে ভালোবাসিস তার সাথে-ই’ তো তোর বিয়েটা হচ্ছে। তাহলে সমস্যা টা কী? ”

আমি মায়ের দিকে স্হির দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,

—-“অনেকসময় ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়।। কিছু ভালোবাসা আড়ালে থাকতে থাকতে তা একসময় হারিয়ে যায় অন্য কারো ভালোবাসার মায়াজাল। ”

হ্যা ছোট সাহেবের মায়াজালে আমি পড়ে গিয়েছি। মনে মনে কথাটি বললাম আমি।

তনয় রুমে ঢুকে কাজলের এমন কথায় কিছুটা থেমে যায়। ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায় মানে কি? তারমানে কী কাজলরেখা এখন তাকে ভালোবাসা না? মনে মনে প্রশ্ন করলো নিজেকে তনয়।

আমার কথা শুনে নিতিয়া আমার পাশে এসে বলে উঠলো,

—-“তোর কথা আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ কাজল। তোর মনে হঠাৎ কি চলছে।”

নিতিয়ার প্রশ্নে আমি জানালার আকাশে দিকে তাঁকালাম। আমার মা কিছু বলবে তখনি কলিং বেল বেজে উঠে। মা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দেখে
‘রুদ্রিক ‘। রুদ্রিককে দেখে মা বলে উঠেন,

—-“আরে ছোট সাহেব এসো ভিতরে এসো বাবা। ”

রুদ্রিক ভিতরে ঢুকে-ই’ বলে,

—“আসলে কাজলের শরীরের অবস্হা জানার জন্যে এসেছিলাম। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে কাজলের মা এসে বলে উঠলেন,

—-“। তোমার জন্যে আমার মেয়েটি এইরকম একটা বিপদ রক্ষা পেলো তারমধ্যে তুমি আমাদের বাড়িতে এসেও খবর নিচ্ছো। সত্যি ছোট সাহেব তুমি খুব দায়িত্ববান ছেলে। ”

রুদ্রিক হাঁসে।

কাজলের মা বলে উঠলেন,

—“তুমি চাইলে কাজলের ঘরে যেতে পারো।
তনয় ও নিতিয়াও আছে। ”

তনয়ের কথা শুনে রাগ উঠলো রুদ্রিকের। এই লোকটা এতো কাজলের আশেপাশে ঘুড়ঘুড় করে। ইচ্ছে করে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। কথাটি ভেবে রুদ্রিক ও কাজলের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

তনয় ভাই এগিয়ে এসে বললেন,

—-“কাজল তোমার সাথে আমার কিছুটা পারসোনালি কথা বলাটা প্রয়োজন। কিছু কথা ক্লিয়ার করতে চাই। ”

তখনি ছোট সাহেব শুকনো মুখে দরজায় নক করে বলে উঠে-

“ভিতরে আসবো? ”

তনয় রুদ্রিককে দেখে বলে,

—“আপনি হঠাৎ এইসময়? ”

রুদ্রিক তনয়ের দিকে তাঁকিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

—“কাজলকে দেখতে এসেছিলাম। আপনার কোনো সমস্যা? ”

তনয় হাত ভাজ করে বলে,

—“আমার সমস্যা হবে কেনো? কোনো সমস্যা নেই।”

ছোট সাহেবকে দেখে আমি পিছনে ঘুড়ে তাঁকিয়ে দেখি উনি স্হীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। হয়তো অনেক কিছু আমাকে বলতে চায়। আমি মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে তনয় ভাইকে উদ্দেশ্য করে খানিক্টা জোড়ে-ই’ বলি,

—-“তনয় ভাই আপনি আমার সাথে পারসোনালি কথা বলতে চান তাইতো? ঠিক আছে আমিও প্রস্তুত।
বিকালে আমি আপনাকে রেস্টুরেন্টে এর লোকেশন সেন্ট করে দিবো। তখন না হয় আমাদের ভিতেরের সব পারসোনাল কথা বলে নিবো। ”

কাজলের কথা শুনে রুদ্রিকের রাগ করা স্বাভাবিক হলেও সে রাগ করলো নাহ। বরং হাঁসলো খানিক্টা। কেননা রুদ্রিক জানে কাজল তাকে জেলাস ফিল করানোর জন্যে এইসব বলছে কিন্তু রুদ্রিকের মাথায় তো অন্য চিন্তা চলছে।

______________

বিকেল প্রায় ৪টা। ভাবলাম আজকে একটি শাড়ি পড়বো। যে-ই’ ভাবা সেই কাজ হুট করে একটি শুভ্র রংয়ের শাড়ি চুজ করলাম। শুভ্র রংটা ছোট সাহেবের খুব পছন্দের। যদিও ‘তনয় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি,কিন্তু তবুও ছোট সাহেবের পছন্দটা-ই’ আমার কাছে সব।

হাতের পার্সটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম নিজের গন্তব্যে।

বাড়ি থেকে বের হতে-ই’ ছোট সাহেবকে আমার নজর পড়লো। উনি গাড়ির সাথে হেলান দাঁড়িয়ে আছেন। বরাবরের মতো নিজের এক্টা ড্র্বেশিং লুক নিয়ে। উনি আমার দিকে একপলক তাঁকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত টা ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে, আমি তাজ্জব বনে গেলাম। উনিও ফ্রন্ট সিটে বসে সানগ্লাসটা পড়ে গাঠি স্টার্ট দিলেন। আমি কিছু বলবে উনি আমার ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে, আমার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন,

“ডোন্ট সাউট। একজায়গা যাবো সেখানে গেলে-ই’ সব জানতে পারবি। ”

কথাটি বলে উনি দূরে সরে আসেন । আমি শুকনো ঢুক গিললাম। উনি আমাকে ঠিক কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? উনার মুখে বাঁকা হাঁসি ঝুলছে।

বাকীটা আগামী পর্বে….

চলবে কী?

(কালকের পর্বটা স্পেশাল হবে 🤭)

বি দ্রঃ আজকের পর্ব হাবিজাবি লাগলে সরি। তাড়াহুড়োর ফল। 🤐এমনিতেও আজকে লিখার ইচ্ছে ছিলো নাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here