গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ২৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
—“আমাকে রোমান্টিক মুডে এনে তুই কোথায় যাচ্ছিস জান ? তোরও তো একটা গিফ্ট পাওয়া দরকার তাইনা? “কথাটি ছোট সাহেব আমাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি। রুদ্রিক মিটমিট করে হাঁসছে। তার ‘শুভ্ররাঙাপরীর ‘ লজ্জায় যেনো গালগুলো একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে। রুদ্রিক কাজলের ঠোটের দিকে এগোতে থাকে।
ছোটসাহেব এগোতে দেখে আমি কিছুটা অস্বস্হি নিয়ে-ই’ চোখ-জোড়া বন্ধ করে ফেলি।
রুদ্রিক হেঁসে কাজলের কপালে চুমু খায়।কাজল চোখ বন্ধ করেও প্রশান্তির হাঁসি দেয়।
রুদ্রিক বলে,
—” তুই আমার হৃদয়হরনী। তুই আমার শুভ্ররাঙাপরী। এই পৃথিবীতে সবথেকে বেশি যদি আমার কেউ আপন হয় সে হলো তুই। আমি আমার জীবনের প্রতিটা অনুভবে তোকে অনুভব করি।
তোর প্রতি আমার ভালোবাসার অধিকার রয়েছে। ঠিক তেমনি তোরও আমার প্রতি ভালোবাসার অধিকার রয়েছে।”
আমি ছোটসাহেবের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
—-“আমার অধিকার লাগবে নাহ ছোটসাহেব। আমার শুধু আপনাকে-ই’ লাগবে। ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসার টানে হলেও, আপনাকে আমার বড্ড চাই ছোট্টসাহেব। ”
কথাটি বলে আমি ছোটসাহেবকে জড়িয়ে ধরি।
রুদ্রিকও হেঁসে ফেলে।
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—” ম্যাডাম এখন আপনার বাড়ি যাওয়ার সময়।সো চলুন এখন যাওয়া যাক। ”
আমি উনার বুকে মাথা রেখে-ই’ কোনোরকম মাথা নাড়াই। যদিও যেতে ইচ্ছে করছে নাহ। তবুও থাকতে যেতে তো হবে।
রুদ্রিককেও বুকের মাঝে কিছুক্ষন রেখে দেয় তার ‘শুভ্ররাঙাপরীকে।’
___________________
দিয়া খেয়াল করছে। ইদানিং লাজুক খুব মুঁচকি মুঁচকি হাঁসছে। দিয়ার কেমন যেনো খটকা লাগলো। কোথায় যেনো সে শুনেছে। মানুষ নতুন নতুন প্রেমে পড়লে নাকি বেশি বেশি মুঁচকি হাঁসে। নাকবোঁচাও এ্যাসিস্টেন্টও কী কারো প্রেমে পড়েছে? নাহ ব্যাপারটা এখুনি দেখতে হবে। কথাটি ভেবে দিয়া কোমরে হাত দিয়ে লাজুকের কাছে গিয়ে বলে,
–“অফিস টাইম শেষ। আপনি এখন এখানে বসে আছেন কেন? ”
লাজুক কিছুটার অবাকের সুরে বলে,
–“ওমা শেষ হয়েছে বুঝি? দেখুন তো হবু বউয়ের চিন্তায় চিন্তায় সময়- কাল আজকাল কিছু-ই’ মাথায় থাকছে নাহ।
‘হবু বউ ‘ কথাটি শুনে দিয়া একপ্রকার চমকেউঠে।
–“হবু বউ ‘ মানে?
দিয়ার প্রশ্নে লাজুক কিছুটা ত্যারাভাবে বলে,
–“কেনো আবার? আপনি-ই’ তো বলেছিলেন আমার এখন বিয়েটা করে নেওয়া উচিৎ। তাছাড়া আমার মায়ের খুব ইচ্ছে আমার বিয়েটা দেখার। মা চায় আমি আমাদের গ্রামের মফুল চাচার মেয়েকে বিয়ে করে নেই। ”
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
দিয়ার মুখটা কাঁদু কাঁদু বলে,
—“আপনার মা চায় বলে আপনি বিয়েতে রাজিও হয়ে গেলেন। ”
লাজুক দাঁত কেলিয়ে বলে,
—“হবো নাহ কেন? মফুল চাচার মেয়ে বড্ড লক্ষি। সবে মাত্র ১৮তে পা দিয়েছে। বুঝেন-ই’ তো আমাদের মতো যুবকদের আবার এইরকম কম বয়সী মেয়েদের দিকে-ই’ দুর্বলতা বেশি। ”
দিয়ার কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। দিয়ার ইচ্ছে করছে লাজুকের মাথা ফাটিয়ে দিতে। ব্যাটার পেটে পেটে এত্তো শয়তানি। কথাটা ভেবে-ই’ দিয়ার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
নাহ নাহ রাগটাকে এখন ঠান্ডা করতে হবে। এই ব্যাটাকে কচি মেয়েকে বিয়ে করার শখ গুছিয়ে দিবে দিয়া। কথাটি ভেবে দিয়া গটগট করে বেড়িয়ে যায়।
—-“আরে ম্যাম কোথায় যাচ্ছেন? আমাদের বিয়ের সব সেল্ফি কিন্তু আপনাকে-ই’ তুলতে হবে। ”
যাক বাবা চলে গেলো। ”
কথাটি বলে-ই’ লাজুক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো।
লাজুক আপনমনে বলে উঠে,
—“দিয়া ম্যাম এইবার আপনি কোথায় যাবেন? এইবার তো আপনাকে স্বীকার করতে-ই’ হবে। ভালোবাসেন আমাকে আপনি। ঠিক যতটা আমি আপনাকে ভালোবাসি। ”
কথাটি বলে লাজুক নিজের গাড়ির চাবি বের করে,নিজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।
_________
গাড়িতে বসে আছি। ছোটসাহেব গাড়ি চালাচ্ছেন।
আমি আছি অন্য চিন্তায়। ‘ছোটসাহেবরের অতীত ‘ সত্যি কষ্টকর। সবকিছু-ই’ যেনো রহস্য লাগছে আমার কাছে। ছোটসাহেবের ফুপিয়াম্মুর বিয়ে হয়নি। বিয়ের আগে-ই’ সে প্রেগনেন্ট ছিলো। যার কারনে বড়সাহেব কিংবা বড়ম্যামসাহেব মেনে নিতে পারেনি।
কুঞ্জ পিপির উপর অত্যাচার করেছিলো। তার পরেরদিন কুঞ্জ পিপি সুইসাইড করেন। কুঞ্জ পিপি মারা যাওয়ার পরে ইশানি ম্যাম এর ডিভোর্স
হয়। নাহ নাহ সবকিছু যেনো মাথায় ঝটলা পেঁকে যাচ্ছে। আমার ভাননার মাঝে-ই’ ছোটসাহেব গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললন,
——“কি এতো ভাবছিস? ”
—-“তেমন কিছু নয়। ”
—-“হুম আমাকে ছাড়া আর কোনো কিছু ভাবার আপাতত তোর দরকার নেই। ”
—“হুম তা তো বুঝেছি। ”
আমাদের কথার মাঝে-ই’ গাড়ি আমাদের বাড়ির সামনে চলে আসে।
ছোটসাহেব আমার দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—–“চলে এসেছি আমরা। ”
—“ওকে বায়। ”
কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে উনি আমার কোমড় চেপে ধরে বলে,
—“যাওয়ার আগে গালে আরেকটা কিস করে যা। যত-ই’ হোক আমাদের নিউ নিউ প্রেম বলে কথা।”,
আমি উনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললাম,
—“সবসময় দুষ্টুমির চিন্তা তাইনা? ”
কথাটি বলে উনার গালে আরেকটা কিস দিয়ে দৌড়ে
বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ি।
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে হাঁসতে হাঁসতে গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে।
আমি বাড়ির ভিডরে ঢুকে-ই’ তয়ন ভাইয়ের সামনে গিয়ে পড়ি। হয়তো উনি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সবকিছু-ই’ দেখে ফেলেছেন।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে’ই উনি বলে উঠেলেন,
—“আমাকে কোনো প্রকার এক্সকিউজ দেওয়ার প্রয়োজন নেই কাজলরেখা। তোমার মন চেয়েছে তাই তুমি আসোনি,কিন্তু আমি যতটুকু বুঝতে পারছি তুমি আজকে সারাটাদিন মিঃ রুদ্রিক শেখের সাথে ছিলে।
যা-ই’ হোক কিন্তু তোমাকে কালকের জন্যে হলেও আমার কিছু টাইম দিতে হবে।কিছু ব্যাপারে ক্লিয়ার হতে চাই আমি। কিছু কথা শুনতে চাই। আশা করি আমি সে-ই সময়টুকু পাবো।
কথাটি বলে-ই’ তনয় ভাই বেড়িয়ে যায়।
অন্যদিকে,
সাদি সবেমাত্র ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে কিছু অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্যে। সাদির মা ছেলেকে অনেকবার খাবারের জন্যে ডেকেছেন,কিন্তু প্রতিবার-ই’ তিনি ব্যর্থ। এই ছেলেকে নিয়ে সে পারেনা। সারাদিন পড়া এবং পড়া। সাদির বাবা আসলে সাদির মা ঠিক করেছেন,সাদির বাবাকে দিয়ে সাদিকে বকা খাওয়াবে।
সাদির কাজের মাঝে-ই’ তার ফোন বেজে উঠে। সাদি তাঁকিয়ে দেখে, সিথি ফোন করেছে। সাদি রিসিভ করে বলে,
—“হ্যা সিথি বলো। ”
সিথি কিছুটা চিন্তিত সুরে বলে,
—“এখানে তো আরেকটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
ভাইয়ু এবং কাজলের প্রেমে বিরাট বড় ঝামেলা যাকে বলে। “,
সাদি বলে,
–” আমি যতটুকু জানি রুদ্রিকের তো কাজলকে প্রপোজ করেছে। ওদের মধ্যে এখন তো সব ঠিক-ই’ আছে। তাহলে আবার কিসের ঝামেলা? ”
—-“কিসের ঝামেলা? বাবা এবং পিপি ঠিক করছে ভাইয়ুর বিয়ে শহরের নামকরা বিসনেজম্যানের মেয়ে
মিশুর সাথে ঠিক করেছে,তাও ভাইয়ুকে না জানিয়ে।”
সাদি লাফ দিয়ে উঠে পড়ে বলে,
——“ওয়াট??? একদিকে ছিলো তনয় এখন আবার মিশু? ”
সিথি নক কামড়ে বলে উঠে,
—“আমি সত্যি জানিনা সামনে কি হবে। ”
_____________
খুশিমনে বাড়িতে ঢুকে নিজের বিয়ের খবর শোনার জন্য যেনো মোটেও প্রস্তুত ছিলো নাহ। রুদ্রিক।
রুদ্রিক এগিয়ে এসে বলে,
—“কি হচ্ছে কী এখানে? ”
ইকবাল সাহেব দাঁড়িয়ে বললেন,
—“এইতো রুদ্রিক বাবা চলে এসেছে। রুদ্রিক তোমার জন্য -ই’ তো এতোক্ষন অপেক্ষা করছিলাম। এসো এসো আমার হবু জামাতা বলে কথা। ”
রুদ্রিক অবাক হয়ে বলে,
—“মানেটা কী? ”
ইশানি মিশুর দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—“মিশু রুদ্রিককের সাথে কথা বলো। টেক ইট ইজি। ”
রুদ্রিককে দেখে কিছুটা সংকচ নিয়ে দাঁড়ায় মিশু। কেনো যেনো তার খুব লজ্জা পাচ্ছে। সে ভাবতে-ই’ পারছে নাহ রুদ্রিকের মতো এইরকম একজন স্টাইলিশ হ্যন্ডসাম ছেলে তার হবু বর। যদিও মিশুর পিছনে সারাদিন ছেলেরা ঘুড়ঘুড় করে,কিন্তু রুদ্রিককে দেখলে-ই’ মনের ভিতরে অদ্ভুদ ভালোলাগা কাজ করলো মিশুর।
রুদ্রিক এগিয়ে এসে বলল,
—“সত্যি আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি নাহ।”
আফজাল শেখ বললেন,
—-“কেনো দেখতে পারছো নাহ? আমরা তোমার সাথে ইকবাল সাহেবের মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি।”
জেসমিন শেখ বললেন,
—“অবাক হওয়ার কিছু-ই’, নেই রুদ্রিক। তোমার ইশানি পিপি-ই’ ঠিক করেছে এই বিয়ে।
রুদ্রিক অবাক হয়ে বলে,
—“ওয়াট? আমার বিয়ে? ”
ইশানি শেখ অবস্হা বেগতিক দেখে রুদ্রিকের কাছে গিয়ে বললেন,
—“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা আমি তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিবো। তুমি উপরে চলো। ”
রুদ্রিক মাথা নাড়িয়ে গটগট করে চলে গেলো।
ইকবাল শেখ এবং মিশু রুদ্রিকের কিছু না জানার কারণ
ঠিক বুঝতে পারছে নাহ।
ইশানি শেখ তাদের দিকে তাঁকিয়ে হেঁসে বললেন,
—–“আপনারা প্লিয বসুন।আমি এখুনি দেখছি। আসলে রুদ্রিককে বিয়ের ব্যাপারটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই রুদ্রিক জানতো নাহ। মনে হয় হঠাৎ করে বিয়ের ব্যাপারটা শুনে রুদ্রিক কিছুটা শকড হয়ে গেছে। চিন্তা করবেন নাহ। আমি দেখছি ব্যাপারটা। ”
কথাটি বলে ইশানি শেখ ও উপরে চলে গেলেন।
রুদ্রিক নিজের হাতের বাস্কটা লাত্থি দিয়ে ফেলে বলে উঠলো,
—“without letting me know
What does it mean to Take these nonsensical
dicisions? ”
(আমাকে না জানিয়ে, এইসব ফালতু সিদ্বান্ত নেওয়ার মানে কী?)
ইশানি শেখ এগিয়ে গিয়ে বললেন,
—“Clam down Rudrik.let me explain.”
(শান্ত হও আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলতে দাও)
রুদ্রিক ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
–“তুমি আবার কি বলবে ইশানি পিপি? আমি অন্তত তোমার থেকে এইসব আশা করেনি। ”
ইশানি শেখ বলে উঠেন,
–“রুদ্রিক মিশু খুব ভালো মেয়ে। তাহলে মিশুকে
বিয়ে না করার কোনো কারণ থাকতে-ই’ পারেনাহ। ”
রুদ্রিক দেয়ালে পাঞ্চ মেরে বলে,
—“অবশ্য-ই’ কারণ আছে। কেননা আমি কাজলকে
ভালোবাসি। “,
…বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 🌸💙) সবাই বড় বড় কমেন্ত করে দিবেন ওকে? 🥺)
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)