গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- 29+30
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
লাইব্রেরিতে ঢুকতে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে কোলে তুলে নেয়। এতে আমি খানিক্টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। ছোট সাহেব খুশি হয়ে বলে,
–“আমি আজকে কতটা খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ রে কাজল। ”
ছোট সাহেবের খুশি দেখে আমিও হেঁসে বললাম,
—“কি এমন খুশির কথা? আমাকে বলুন, কিন্তু তার আগে আমাকে নামিয়ে তো দিন। যে কেউ যখন তখন চলে আসবে। ”
ছোট সাহেব বাঁকা হেঁসে বলে,
—“যে কেউ দেখুক তাতে আমার কী? এই রাফসিন শেখ রুদ্রিক কাউকে পরোয়া করেনা ওকে? ”
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
—-“হুম তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমাকে নামিয়ে দিন প্লিয প্নিয। ”
ছোট সাহেব আমার অনুরোধ শুনে আমাকে নামিয়ে দিলেন। আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“এইবার তো বলুন? খুশির এতো কারন? ”
ছোট সাহেব আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,
—“ম্যাম ইশানি পিপি আমাদের বিষয়টা মেনে নিয়েছে এন্ড ইশানি পিপি তোর বাবার কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়েও চলে যাবে। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ছোট সাহেবের কথা শুনে বিরাট বড় ঝটকা খেলাম।
ইশানি ম্যাম সবকিছু মেনে নিয়েছে? এতো সহজে?
উনার মতো অহংকারী মহিলা বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করতে এতো সহজে মেনে নিলো? কেনো যেনো আমার সবকিছু মেনে নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলল,
—“কি হলো কাজল তুই কী হ্যাপি নাহ? ”
ছোটসাহেবের কথা শুনে আমি সায় দিয়ে বললাম,
—-“হ্যাপি হবো কেনো ছোটসাহেব? খুব খুশি আমি।”
ছোট সাহেবের আমার কথা শুনে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
–“তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। কতটা খুশি আমি। কাজল তোকে নিজের করে পাবো আমি। ”
আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“এতোটা ভালোবাসেন আমাকে ছোটসাহেব আমাকে? ”
ছোটসাহেব আমার কথাশুনে কিছুটা ঘোরলাগা কন্ঠে বললেন,
—“ম্যাম আপনার ভাবনার বাইরেও অধিক ভালোবাসি আপনি আমি। আমি তোকে তোর মায়াবীর মুখখানার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। কে জানতো বল? আমি তোকে এতোটা ভালোবাসবো? ”
আমি চুপ হয়ে পড়লাম।
ছোট সাহেবের কথার মাঝে-ই’ ছোট সাহেবের ফোন বেজে উঠে।
ছোট সাহেব ‘জাস্ট আ মিনিট ‘ বলে একটু আড়ালে চলে যায়।
লাইব্রেরি থেকে সবকিছু-ই’ দেখছে সাদি এবং সিথি। তারা এইটা ভেবে নিশ্চিন্ত কাজল ও রুদ্রিকের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে আছে।
সিথি সাদির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—“সব কিছু-ই’ ঠিক মনে হচ্ছে,কিন্তু আমার ভয় শুধু পিপিকে নিয়ে। পিপি এতো সহজে সব কিছু মেনে নিলো? ”
সাদি নিজের চশমাটা ঠিক করতে করতে বলল,
—“যদি কোনো ঝামালা হলেও আমি আর তুমি আছি কি করতে? আমাদের সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ”
—-“হুম একদম ঠিক বলেছো সাদি ভাইয়া। ”
—-“তো এখন চলো আমরা এখন যাই। ওদের মতো ওরা থাকুক। ”
সাদির কথা শুনে সিথি বিড়বিড় করে বলে,
—“দিব্যি তো ছিলাম। এখন এই পড়ুয়া মাস্টার নিয়ে গিয়ে পড়তে৷ বসাবে দূর জীবনটা তেজপাতা করে ছাড়লো। ”
সাদি কড়া গলায় বলল,
—“কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো। ”
সিথি বিরক্তি মুখে ‘যাচ্ছি তো ‘ বলে পা বাড়ালো।
তা দেখে সাদি হাঁসলো। আজ-কাল সিথিকে পড়া দিয়ে জ্বালাতে তার ভালো-ই’ লাগে।
এদিকে,
লাজুক কেবিনে ঢুকতে-ই’ দিয়া হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলে,
—” নাকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্ট আপনার মায়ের ফোন নাম্বার টা দিন। ”
দিয়ার কথায় লাজুক কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
—“কিন্তু কেনো? ”
দিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
—“দিতে যখন বলেছি তখন দিন। “,
দিয়ার ধমকে লাজুক নিজের ফোনটা এগিয়ে দেয়।
লাজুকের ফোন নিয়ে দিয়া লাজুকের মাকে ফোন দেয়। লাজুকের মা কিছু বলার আগে-ই’
দিয়া তাড়াহুড়া করে বলে,
–“আআসসালামু আলাইকুম আন্টি। আপনি কিছু বলবেন তার আগে আমি কিছু বলতে চাই। আপনি আপনার ছেলের বিয়ে একজন নিশ্পাপ বাচ্ছা মেয়ের সাথে দিতে চাইছেন তা মোটেও ঠিক নয়। যাকে বলে একদম অন্যায়। আপনার ছেলের সাথে এতো পিচ্ছি মেয়েকে মানাবে নাহ। আপনার ছেলের মতো হ্যান্ডসাম নাকবোচার সাথে আমার মতো মেয়েকে-ই’ মানাবে। আন্টি আপনি কিন্তু আবার ভাববেন নাহ আমি আপনার ছেলেকে পছন্দ করি। জাস্ট বলে দিলাম আপনার ছেলের সাথে ওই পুচকি মেয়েকে একদম বিয়ে দিবেন নাহ হুহ। দিবেন না মানে দিবেন নাহ। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
দিয়া যেনো শান্ত কন্ঠে বড়সড় হুমকি দিয়ে দিলো লাজুকের মাকে।
কথাটি বলে-ই’ দিয়া লাজুকের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।
লাজুক ফোন কানে নিলো।
লাজুকের মা ফোনের ওইপাশ থেকে বলে উঠে,
—“কে ছিলো রে বাবা? বাবাগো মনে হচ্ছিলো খুব রেগে আছে। ”
লাজুক মুঁচকি হেঁসে বলল,
—“তোমার হবু বউমা ছিলো। তোমার হবু বউমাকে একটু-আকটু জ্বালিয়েছিলাম তাই সে রেগে আছে। ”
লাজুকের মা হেঁসে বললাম,
—“সত্যি তুই খুব দুষ্টু হয়েছিস লাজুক। তাড়াতাড়ি আমার হবু বউমাকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে আয় তো। ”
লাজুক হেঁসে বলে,
—“খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো। ”
কথাটি বলে লাজুক এগিয়ে গেলো অফিসের কফি কেন্টিনের দিকে। সে জানে এখন দিয়া সেখানে-ই’ আছে।
দিয়া কফি মুখে নিতে যাবে তখনি লাজুকের কথা তার কানে ভেসে উঠে।
—-“ম্যাম এখনো কী নিজের ভালোবাসাটা অপ্রকাশিত রাখবেন? মন খুলে যদি নিজের অনুভুতিগুলো-ই’ যদি প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে দিনশেষে শুধু আফসোস করে যেতে-ই’ হয়।”
দিয়া কফির কাপ টা রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
—“ভালোবাসাকে বাস্তবতার ভীরে হারিয়ে যেতে দেখেছি। দেখেছি কীভাবে নিজের সবটুকু ভালোবাসা অন্য কারো মাঝে বিলিয়ে দিয়ে, নিজের অস্হিত্ব কীভাবে বিলিন হয়ে যায়। ”
লাজুক খানিক্টা অবাক হয়ে বলে,
—“আপনার কথা ঠিক বুঝলাম নাহ। ”
—-“আমার মেঝ আপাই ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে আত্বহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছিলো। তাই আমারোও ভালোবাসতে বড্ড ভয় করে নাঁকবোচা
এসিস্টেন্ট। ”
লাজুক দিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
—“জীবন সঠিক কারো হাত ধরলে দেখবেন ভালোবাসা খুব সুন্দর। ভালোবাসাকে একটিবার ভরসা করে-ই’ দেখুন দিয়া ম্যাম। ”
দিয়া অজান্তেই লাজুককে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। লাজুক হাঁসে।
অন্যদিকে,
রুদ্রিক ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে তাদের অফিসের বস মিঃ আশিয়াক রাইজাদার ফোন। রুদ্রিক ফোন রিসিভ করে বলে,
—-“জ্বী স্যার বলুন। ”
আশিয়াক রাইজাদা বললেন,
—-“আগামী সপ্তাহে আমাদের কম্পানির একটা ইম্পর্টেন্ট প্রযেক্ট আছে। আমি সেই প্রযেক্টের দায়িত্ব তোমাকে দিতে চাই। আমি জানি তুমি মানা করবে নাহ। ”
—-“তাহলে তো স্যার আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে
ঢাকার বাইরে যেতে হবে। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আশিয়াক বললেন,
—“তা তো যেতে হবে। রুদ্রিক অনেক ভরসা করে তোমাকে এই প্রযেক্টের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছি। আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে নাহ। ”
কাজলের থেকে এক সপ্তাহ দূরে যেতে হবে বলে রুদ্রিকের মন খারাপ হলেও, কাজের জন্যে তার সেক্রিফাইজড করলো।
রুদ্রিক হাঁসিমুখে বলল,
—-“ওকে স্যার আপনি চিন্তা করবেন নাহ।
কথাটি বলে রুদ্রিজ ফোন কেটে দিলো।
ছোটসাহেবকে শুকনো মুখে এগিয়ে আসতে দেখে,
আমি বলে উঠলাম,
–“কি হলো ছোটসাহেব? আপনার মুখটা হঠাৎ শুকনো লাগছে কেনো? ”
আমার কথা শুনে ছোটসাহেব বলে উঠলো,
—“কাজল তুই তো জানিস। আমি রাইজাদা গ্রুপ অফ কম্পনিতে চাকরী করি। স্যার আমাকে খুব ভরসা করে একটি প্রযেক্ট হ্যান্ডেল করতে দিয়েছেন। তাই আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে ঢাকার বাহিরে যেতে হবে। ”
ছোট সাহেবের সাথে কয়েকদিন দেখা হবে নাহ। ভেবে-ই’ মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তবুও মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বললাম,
—“এতো আরো খুশির খবর। এই প্রযেক্টে আপনি সফল হলে, আপনার কত নাম হবে তাইনা ছোটসাহেব? ”
—-“তা তো হবে,কিন্তু তোকে অনেক মিস করবো রে ‘শুভ্ররাঙাপরী’.। ”
আমি শুকনো হাঁসি দিলাম।
রুদ্রিক বুঝলো কাজলের মন খারাপ হয়েছে। তাই সে
বলে উঠে,
—-“চল আজকে আমি তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই। ”
—-“কোথায় যাবো? ”
—-“গেলে-ই’ দেখতে পাবি। আপাতত চল তো।”
কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমার হাত ধরে উনার গাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। ছোট সাহেব বললেন,
—“উঠে পড়। ”
আমিও প্রশ্ন না করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ছোটসাহেব গাড়িতে উঠে পড়লো।
গাড়ি একটি আইস্ক্রিম পার্লারের সামনে রাখা হলো।
আইস্ক্রিম পার্লার দেখে আমি কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে বললাম,
—“আইস্ক্রিম পার্লার? ”
ছোট সাহেব আমার কথা শুনে বললেন,
—“হুম আইস্ক্রিম পার্লার। তোর পছন্দ না আইস্ক্রিম? আজকে তুই যত খুশি আইস্ক্রিম খেতে পারিস।”
আমি খুশি হয়ে বলি,
—-“সত্যি? ”
উনি মাথা নাড়িয়ে বলেন,
—“একদম সত্যি। ”
আমরা দুজনে আইস্ক্রিম পার্লারের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
ছোটসাহেব বলার সাথে সাথে-ই’
ভিন্ন ধরনের অনেকগুলো আইস্ক্রিম চলে আসলো।
আমি ভ্যানেলা আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।
রুদ্রিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে তার কাজলের দিকে। হঠাৎ করে-ই’ কাজলের মধ্যে শয়তানী বুদ্ধি চলে আসলো।
সে আইস্ক্রিম দিয়ে রুদ্রিকের গালের খানিক্টা অংশে লাগিয়ে দেয়।
কাজলের এমন কান্ডে রুদ্রিক কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,
—“এইসব কি কাজল কি করলি তুই? পুরো মুখে ভরিয়ে দিলি। ”
কাজল খিলখিল করে হেঁসে উঠে। কাজলকে হাঁসতে দেখে রুদ্রিক ও হেঁসে উঠে।
(নীচের কথাগুলো পড়বেন)
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
( আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রথম দিক থেকে-ই’ সরলভাবে চলছিলো।
অনেকগুলো পর্ব হয়ে গেছে। শেষের দিকে একটু ঝামালা থাকতে-ই’ পারে। গল্পে যেমন সুখ থাকবে তেমনি দুঃখ থাকবে স্বাভাবিক। তাই বলে আপনারা আগে থেকে-ই’ এতো রিয়েক্ট করছেন কেন? আপনাদের কিছু কমেন্ট সত্যি আশা করিনি। ইশানি ভুল করলে শাস্তি অবশ্যই পাবে। আপনাদের শুধু বলছি গল্পের সাথে থাকুন। গল্পটা ইঞ্জয় করুন। আমার উপর ভরসা রাখুন।
#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব-৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
—“কাজল আই নিড ইউ। তোকে এখন আমার খুব করে প্রয়োজন। এখুনি দেখা করতে চাই। আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি। তাড়াতাড়ি চলে আয়। ”
আমি মৃদ্যু হাঁসলাম ছোট সাহেবের
মেসেজ দেখে। সত্যি ছোটসাহেব ও পারেন। এখনোও সন্ধ্যে হয়নি। সাড়ে পাঁচটা হয়নি এখনো। বাবা চলে আসার আগে, আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে হবে। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিলাম। যাতে কেউ না দেখে। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের সত্যি আলাদা একটা মজা আছে। কথাটা ভেবে-ই’
আমি বাড়ির বাইরে বের হতে-ই’ ছোট সাহেবের দিকে আমার নজর যায়। ব্লাক কটন শার্ট পড়ে আছেন।
দেখে বুঝা-ই’ যাচ্ছে অফিস করে-ই’ সরাসরি এখানে চলে এসেছেন। আমি উনার দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছেন। বরাবরের মতো চুলগুলো কপালে লেপ্টে রয়েছে। উনার দিকে নজর সরছে-ই’ নাহ।
ছোটসাহেব আমাকে দেখে ক্লান্তমাখা হাঁসি দিলেন।
আমি বলে উঠলাম,
—“আপনাকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে ছোটসাহেব। ”
উনি চুলগুলো সাইডে সরিয়ে বললেন,
—“অফিসে কাজের যা প্রেশার পড়েছে। তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। কালকে-ই’ তো আমাকে বেড়িয়ে পড়তে হবে প্রযেক্টের উদ্দেশ্যে। ”
আমি নিজের ওড়না বের করে উনার ঘামটুকু মুছিয়ে দিয়ে, উনার গাড়ি থেকে বোতল বের করে উনার হাত ধরিয়ে দিলাম।
—-“পানি টুকু খাওয়ার সময় নেই। অথচ আমার সাথে দেখা করার ঠিক সময় আছে আপনার। ”
ছোটসাহেব আমার কথা শুনে হেঁসে বললো,
—-“জানেমান কি করবো বল? তোকে দেখার জন্যে আমার মনটা যে সবসময় উতলা হয়ে উঠে। তোর মায়াবী মুখখানায় একটিবার তাঁকালে-ই’ আমার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ”
—–“আহা রাফসিন শেখ রুদ্রিকের কবি কবি ভাব। ”
উনি কিছুটা ঠাট্টার ছলে বললেন,
—-“প্রেমের জন্যে মানুষ কত কি হয় বলতো? কেউ হয় দেবদাস আবার কেউ হয়ে উঠে আমার মতো কবি। ”
—-“তা কবি সাহেব আমাকে যদি কৃতার্থ হয়ে বলিবেন হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালেন যে? ”
—“অবশ্য-ই’ আপনাকে বলিবো। তার আগে চলুন সামনের দিকটায়। ”
কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমার হাত ধরে সামনের দিকে হাটতে লাগলেন। রাস্তায় তেমন লোক নেই। আমাদের বাড়িটা কিছুটা নির্জন হওয়ায়,লোক এখানে তেমন দেখা যায়না। বাড়ির পিছনে ছোট্ট একটি নদী বয়ে যায়।
আমি একেঅপরের হাত ধরে পুকুরের পাশে বেঞ্চে তে বসে পড়লাম।
সে এক বিদায়বেলা সূর্য ডোবার পালা দিনের সব কিছু শেষে সবচেয়ে ভাল মুহূর্ত হল পুকুরের পাড়ে সূর্যাস্ত দেখা। যাকে বলে গোধূলীর বেলা। নদীর সেই মন ভোলানো দৃশ্য সহজে কোন মানুষ কে দুর্বল করতে পারে।
——“কি সুন্দর দৃশ্য কাজল। মনটা-ই’ ভালো হয়ে উঠে। ”
—-“সুবর্ণরেখাতে সূর্যাস্ত দেখার এই অনুভূতির সাথে অন্যকিছুর সত্যিই কোন তুলনা হয়না। ”
ছোট সাহেব কিছুটা হতাশার সুরে বললেন,
—-“এই এক সপ্তাহ আমার কীভাবে কাটবে জানিনা। যেখানে তোকে নিজের চোখের আড়াল করে-ই’ মনে হয় তোকে হারিয়ে ফেলেছি। তোকে হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় আমার ভিতরে সবসময় কাজ করে। হয়তো ভালোবাসি বলে। ”
আমি উনার কাঁধে মাথা দিয়ে বললাম,
—-“আমাকে ভালোবাসেন বলে-ই নিজের ভালোবাসার উপর ভরসা রাখুন। ভালোবাসায় ভরসার জায়গাটা সব থেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কাজল শুধুমাত্র আপনার হয়ে-ই’ থাকবে। এইটুকু ভরসা রাখুন ছোটসাহেব। ”
ছোটসাহেব আমার নিজের থেকে ছাড়িয়ে,কিছুটা
বিরক্তি হয়ে বললেন,
—–“সবকিছু-ই’ ঠিক আছে,কিন্তু এখন যেহুতু আমরা প্রেম করছি সো এখন আমি তোর কোনো ছোটসাহেব নাহ বুঝেছিস? আমাকে রুদ্রিক বলে ডাকবি। ”
–‘না ‘ বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ছোট সাহেব ও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—-“কি হলো? ”
আমি মুখটা বেঁকিয়ে বললাম,
—“আপনি আমার ছোটসাহেব। তাই আপনাকে ছোটসাহেব বলে-ই’ ডাকবো হুহ। ”
উনি ধমকে বললেন,
—-“আমার মুখের উপর কথা বলিস তুই? এই রাফসিন শেখ রুদ্রিকের মুখের উপর কথা বলার সাহস কোথা থেকে পাস তুই? ”
আমি অবাক হয়ে বললেন,
—“ছোটসাহেব আপনি আবার আগের মতো থ্রেট দিচ্ছেন? ”
উনি বাঁকা হেঁসে বলে,
—-“জানেমান তুমি যদি সোজা পথে না হাটো তাহলে আমাকে তো আগের রুদ্রিক হয়ে-ই’ যেতে-ই’ হবে।”
আমিও নাছরবান্দা হয়ে বললাম,
—“বলবো নাহ। ”
—–“আমিও রাফসিন শেখ রুদ্রিক তোর মুখ থেকে রুদ্রিক ডাক বের করে-ই’ ছাড়বো। ”
কথাটি উনি আমার কোমড় চেপে ধরে আমার ঠোট ছোট্ট করে কামড় বসিয়ে দেন। আমি ‘আহ ‘ করে উঠি।
উনি বাঁকা হেঁসে বললেন,
—“আরো কয়েকটা লাভ বাইট লাগবে জান? ”
আমি ঠোটে হাত বুলিয়ে কিছুটা রাগান্বিত সুরে বললাম,
—-“আমার ঠোটের বারোটা বাজিয়ে বলছে লাভ বাইট হুহ। ”
—-“যদি নিজের ঠোটের তোরেটা না বাজাতে চাস,তাহলে তাড়াতাড়ি রুদ্রিক বলে ডেকে ফেল। ”
—-” অসভ্য লোক। বলবো নাহ হুহ। ”
কথাটি বলে-ই’ আমি দৌড় দিলাম। নাহলে উনি কি করতেন আল্লাহ-ই’ জানে। রুদ্রিক হেঁসে উঠে।
আমি পিছনে তাঁকিয়ে ছোটসাহেব বাঁকা দাঁতের হাঁসিখানা দেখে নিলাম। কি অসাধারন প্রানবন্ত হাঁসি তার। এই লোকটা আমাকে ভালোবাসে ভাবতে-ই’ শরীরে আলাদা শিহরন বয়ে যায়।
________
রুদ্রিক আজকে শেখ অফিসে এসেছে। তার পিপির সাথে দেখা করতে। আফজাল শেখ নিজের ছেলেকে দেখে কিছুটা খুশি হয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
—-“রুদ্রিক হঠাৎ তুমি অফিসে এসেছো যে….
আফজালের কথা শেষ হওয়ার আগে-ই’ রুদ্রিক তাকে এভোয়েড করে চলে যায়। এতে আফজাল শেখ কিছুটা ব্যাথিত হয়।
রুদ্রিক ইশানি শেখের রুমে গিয়ে বললেন,
—“পিপি আসবো? ”
রুদ্রিককে দেখে ইশানি শেখে হেঁসে বললেন,
—“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা হঠাৎ কি মনে করে? ”
ইশানি শেখের কথায় রুদ্রিক বলল,
—“পিপি আসলে আজকে আমি এক সপ্তাহের জন্যে জন্যে ভার্সিটির একটা ট্রিপে যাচ্ছি। ”
(রুদ্রিক ভাই মিথ্যে কথা বলো কেন পিপিকে 😤)
রুদ্রিকের কথায় ইশানি খুশি হলো। এই তো সুযোগ। রুদ্রিক নেই এই সুযোগে ইশানি নিজের কাজটা করে নিবে।
—-“ওকে আমার বাচ্ছাটা টাকা লাগবে তাইতো ওকে আমি দিচ্ছি।”
—“নাহ পিপি আমার টাকা লাগবে নাহ। আমি জাস্ট তোমাকে জানাতে এসেছিলাম। আমি তো থাকবো নাহ। তুমি যদি কাজলের বাবার সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলে নিতে তাহলে ভালো হতো। ”
ইশানি শেখ রুদ্রিকের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা তুমি নিশ্চিন্তে নিজের ট্রিপে যাও। আমি ভেবেছিলাম আজকে-ই’ কাজলের বাবার সাথে কথা বলবো। ”
রুদ্রিক ইশানিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—“তোমাকে কি বলে থ্যাংকস জানাবো আমি জানিনা,বাট ইউ আর দ্যা বেস্ট পিপি। লাভ ইউ। ”
—-“লাভ ইউ টু। ”
—-“ওকে আমার এখন গাড়িতে উঠে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। আই হেভ টু গো। ওকে বায় পিপি। ”
ইশানি শেখ মিষ্ট হেঁসে বললেন,
—-“টেক কেয়ার মাই চাইল্ড।”
রুদ্রিক বেড়িয়ে যায়।
আফজাল শেখ বের হয়ে মতিউর রাহমানের কাছে গিয়ে বলে উঠে,
—-“মতিউর তোমার নাকি কয়দিনের জন্যে ছুটি লাগবে?”
মতিউর রাহমান (কাজলের বাবা) বলে উঠেন,
—“বড় সাহেব আসলে আমি আমার কাজলের জন্যে বিয়ে ঠিক করেছি। ছেলে ভালো একটা কম্পানিতে চাকরী করে। ফ্যামেলিও অনেক ভালো। আমি চাইছি খুব তাড়াতাড়ি আমার মেয়েটার বিয়ে দিতে। তাই আর কি কয়েকটা ব্যস্ত থাকবো আসতে পারবো নাহ। এইরকম একটা ভালো ছেলে আমার মতো ড্রাইভারের মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে বলুন ছোটসাহেব?”
আজফাল শেখ বললেন,
—“এইভাবে বলো না মতিউর। আমাদের কাজল যথেষ্ট গুনবতী এবং লক্ষী মেয়ে। তাকে যে কেউ নিজের বাড়ির বউ করতে চাইবে। তুমি বরং ছুটি নাও কয়েকদিন এর জন্যে।
আফজাল শেখের কথার মাঝে-ই’ ইশানি শেখ এসে বললেন,
।—-“মতিউর তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আমার কেবিনের ভিতরে এসো। ”
মতিউর শেখ মাথা নাড়িয়ে ইশানির শেখের কেবিনে চলে গেলেন।
মনটা আজ ভিষন খারাপ। ছোটসাহেব আজকে চলে যাবেন ঢাকার বাইরে। সদর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। উদ্দেশ্য একটিবার ছোটসাহেবকে চোখের দেখা দেখতে পাওয়া। আমার প্রতিক্ষার অবশান ঘটিয়ে চলে এলেন। উনি গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলেন। সাদা শার্টে ফরমাল ড্রেসাপে ধারুন মানিয়েছে। আমার ছলছলে চোখে উনার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম।
(লেখিকা -রিমি)
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকালো। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে দিবে। রুদ্রিক কিছু না ভেবে কাজলের দিকে এগিয়ে গিয়ে, কাজলের হাতজোড়া ধরে বলে উঠলো,
—“আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো ততদিন নিজের খেয়াল রাখবি ওকে? ”
আমি কোনোরকম মাথা নাড়ালাম। ছোট সাহেব আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন,
—“একদম কাঁদবি না। তোর কান্না আমার সহ্য হয়না
বুঝিস না কেন? ”
–“আমি একদম কাঁদছি না। “(কান্নার সুরে বললাম)
ছোট সাহেব কিছুটা থেমে মিহি কন্ঠে বললেন,
—” কাজল তুই কালকে বলছিলি না? সম্পর্কে ভরসার জায়গাটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? একটা কথায় সবসময় মনে রাখবি, যেকোনো কঠিন পরিস্হিতিতে সবসময় স্ট্রং থাকবি। সবসময় মনে রাখবি তোর রুদ্রিক সবসময় তোর সাথে আছে। আমাদের ভালোবাসাকে আগলে রাখার জন্যে সবকিছু করতে পারে তোর রুদ্রিক। শুধু তুই ভেঙে পড়বি না। আমার উপর শুধু ভরসা রাখবি। ভালোবাসি। ”
কথাটি বলে-ই’ রুদ্রিক কাজলের কপালে গভীর ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দিয়ে, গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
ছোটসাহেবের কথাগুলো শুনে কেমন যেনো লাগছিলো। উনি কী কিছু বুঝাতে চাইছিলেন। আপাতত সেসব বিষয় মাথা না ঘামিয়ে আমি আলতো সুরে বলে উঠলাম,
—“নিজের খেয়াল রাখবেন। ভালোবাসি রুদ্রিক। ”
কাজলের মুখে ‘রুদ্রিক ‘ নাম শুনে রুদ্রিকের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।
রুদ্রিক গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। অনেক কাজ আছে তার। কিছু একটা ভেবে সে রহস্যময় হাঁসি দিলো।
ছোটসাহেবের গাড়ি চোখের আড়াল হতে-ই’ আমার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।
চলবে কী?
(রিচেক দিতে পারেনি)
(বাকি দুই পর্বে শুধু ধামাকা চলবে)