গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
পর্ব- ৪৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–“জানেমান তোকে দেখলেই আমার মুড রোমান্টিক হয়ে যায়। যাকে বলে রোমান্স।” রুদ্রিকের তপ্ত নিঃশ্বাস যেনো আমার কাঁধে উপছে পড়ছে। আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। রুদ্রিক কী আমার প্ল্যান সম্পর্কে সব জেনে গেলো? রুদ্রিক আমাকে কোমর টেনে, আমাকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে বলে,
–“তা আমার জানেমান তুই কী ভেবেছিস? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারবো নাহ তোর প্ল্যান সম্পর্কে হুহ। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমার ভার্সিটির ব্যাগটা বের করে ফেলে। আমি এইবার জান যায় যায় অবস্হা।
রুদ্রিক ব্যাগটা বিছানায় রেখে পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
—“এতোবার বলার পর ও তুই আমার কথার অবাধ্য হয়েছিস। শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। ”
রুদ্রিক এগিয়ে আসছে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। রুদ্রিক আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে আমার গলার কামড় বসিয়ে দেয়। আমি চিৎকার করতে গেলে সে আমার মুখ চেপে ধরে। অনেক্ষন পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে, রুদ্রিক একটা ভাব নিয়ে বলল,
—-“আর কখনো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার চেস্টা করবি? ”
—–“আমি আবার কখন ষড়যন্ত্র করার চেস্টা করলাম? ”
—-“আমাকে ফাঁকি দিয়ে ভার্সিটি যাওয়া হচ্ছিলো। একে যড়যন্ত্রই বলে। ”
আমি গলার হাত বুলিয়ে ‘মাগো রাক্ষস একটা ‘ বলে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।
রুদ্রিক হাত ভাজ করে বলল,
—“তুই আমাকে রাক্ষস বললি? ”
—–“রাক্ষস কে রাক্ষস বলবো না তো কী বলবো?
আমার বেবী একবার শুধু আসুক। বিচার দিবো হুহ।”
রুদ্রিক আমাকে পাত্তা না দিয়েই কফি নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
আমিও মুখ বেঁকিয়ে কফি হাতে নিলাম। কফিতে চুমুক দিতে যাবো, তখনি সিথি ঘুমড়ো মুখ নিয়ে এসে বলল,
—“ভাইয়ূ-কাজল তোরা কী খবর পেয়েছিস,? ”
সিথির প্রশ্নে আমি পাল্টা প্রশ্ন করে বললাম,
—“কিসের খবর? ”
আমার প্রশ্নের মাঝেই মা এসে বলল,
—“দিয়া ও লাজুকের বিয়েটা পিছিয়ে গেলো। ৭-৮ মাস পর বিয়ে হবে। ”
রুদ্রিক কফির কাপটা রেখে রুমে এসে বলে,
—“হঠাৎ পিছিয়ে গেলো কেনো? ”
দিয়া পিপিও রুমে প্রবেশ করে বলে উঠলো,
—“তুই তো জানিস রুদ্রিক। ইশানি আপাইয়ের জন্যে বিসনেজ এর অনেক লস হয়ে গেছে। একটা ইম্পোর্টেন্ট প্রযেক্ট পেয়েছে আমাদেরকম্পানি,তাও সেইটা সুইজারল্যান্ড এ। আমাকে এবং নাকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্টকেই যেতে হবে এই প্রযেক্ট হ্যান্ডেল করতে। চিন্তা করিস নাহ আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।”
—-“কতদিনের জন্যে যাচ্ছো? ” ( সিথি বলল)
—“৭ বা ৮ মাস লাগবে। ”
—–“তোমার ফ্লাইট কবে পিপি? ” (রুদ্রিক বলল)
—-“আজকেই। ”
আমি দিয়া পিপির কাছে গিয়ে বললাম,
—“নিজের খেয়াল রেখো পিপি। ”
পিপি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—“আমাদের পুচুর খেয়াল রাখিস। টেক কেয়ার অফ ইউর সেল্ফ।”
দিয়া পিপি চলে যাচ্ছে শুনে আমার এবং সিথির মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
দিয়া পিপি আমাদের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—–“এই তোরা কী মন খারাপ করিস নাহ ওকে? আমি খুব তাডাতাড়ি চলে আসবো। বাট চল আগে একটা সেল্ফি তুলে নেই।”
কথাটি বলে দিয়া পিপি নিজের ফোন বের করে। রুদ্রিক ও হাঁসিমুখে এগিয়ে এসে বলে,
—-“আমিও কিন্তু আছি সেল্ফিতে। ”
দিয়া পিপি হেঁসে অনেকগুলো সেল্ফি তুললো।
_____________
গাড়িতে বসে আছে লাজুক এবং দিয়া। উদ্দেশ্য এয়ারপোর্ট। লাজুক ড্রাইভ করতে করতে খেয়াল করে দিয়া জানালার দিকে তাঁকিয়ে আছে। লাজুক দিয়ার হাতে নিজের হাত রাখে। দিয়া লাজুকের দিকে তাঁকাতেই লাজুক বলে উঠলো,
—-” আমরা খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসবো। ”
—-“হু। ”
শুকনো মুখে জবাব দিলো দিয়া।
লাজুক বুঝে গেলো দিয়ার মুড আপাতত ভালো নেই। লাজুক কিছুটা রসিকতার ছলে বলল,
—-“একদিক থেকে কিন্তু ভালো হবে। এইযে দেখো মানুষ বিয়ের পর ঘুড়তে যায় কিন্তু আমরা বিয়ের আগেই ঘুড়তে চলে যাচ্ছি। আমরা একটু আলাদা তাই আর কি। ”
দিয়া মুচকি হেঁসে লাজুকের কাঁধে মাথা রেখে দেয়। লাজুক ও মুঁচকি হেঁসে ড্রাইভ করতে থাকে।
________
আমি নীচে এসে দেখি ছুটকি বসে আছে। হাতে তার আচারের বোতল। হ্যা মা পাঠিয়েছে। আমি ছুটকির কাছে গিয়েই আচারের বোতল টা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দেই। মায়ের হাতে আমের আঁচার মানেই ভিন্ন স্বাদ।
ছুটকি আনমনে কিছু ভেবে চলেছে। আমি আচার ছুটকির দিকে এগিয়ে দিতেই, ছুটকি ‘না’ বলে আবারো ফোনে মন দেয়।
আমি ছুটকিকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলে,
—“কিরে?তুই এতো চুপচাপ কেন? সেদিন বাবা-মা এসে দেখা করে গিয়েছিল তুই এলি নাহ। ”
ছুটকি ফোন টিপতে টিপতেই বলল,
—-“আমার এক্সাম ছিলো রে আপাই। ”
—–“তোর চোখ-মুখ দেখে কেমন শুকনো লাগছে। কী হয়েছে বোন? দেখ কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারিস। ”
—–“আচ্ছা আপাই এক তরফা ভালোবাসা শুধু কষ্ট দেয়? ”
ছুটকির প্রশ্নে আমি বললাম,
—-“হঠাৎ এই প্রশ্ন? ”
—-“তুই বল আপাই প্লিয। ”
আমি আচার মুখে নিয়ে বলতে লাগলাম
—-” এক তরফা ভালোবাসায় সুখ যেমন রয়েছে তেমনি কষ্টও রয়েছে। এক তরফা ভালোবাসায় শুধু কষ্ট থাকলেও,তাতে এক অন্যরকমের তৃপ্তি রয়েছে। যাকে বলে নিঃশ্বার্থ ভালোবাসার তৃপ্তি।নিঃশ্বার্থের ভালোবাসায় কোনোপ্রকার স্বার্থ থাকে নাহ। ”
কথাটি বলেই আমি আবারো আচার খাওয়াতে মন দিলাম।
ছুটকি মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনে মুঁচকি হাঁসলো। ছুটকি উঠে দাঁড়িয়ে আড়ালে গিয়ে, একটা ফোন নিয়ে তনয়ের নাম্বারে ফোন করলো।
তনয় অফিসে কাজ করছিলো। নিজের ফোন বাজতেই তনয় তাঁকিয়ে দেখে ছুটকির ফোন। তনয় বিরক্ত হয়ে ফোন ধরেনা। অনেক্ষন ধরে বাজার কারণে ফোনটা অবশেষে বাধ্য হয়েই ফোনটা ধরলো। ফোনের ওইপাশে কেউ কিচ্ছু বলছে নাহ। তনয় বুঝতে পেরেছে ফোনটা ছুটকি সহজে কথা বলবে নাহ।
তনয় ফোনটা কাত করে ধরে বলল,
—“কথা বলতে চাইলে বলো,নাহলে কেটে দাও। ”
ছুটকি ফোনের ওইপাশ থেকে মুচকি হেঁসে বলল,
—-“তনয় ভাই আমি জানি আপনি আমার প্রতি বিরক্তি হচ্ছেন, কিন্তু একটা কথা কী জানেন? আপনিও বিশ্বাস করেন, কতটা নিঃশ্বার্থভাবে ভালোবাসি আমি আপনাকে। ”
তনয় কথাটি শুনে কিছু বলল নাহ।
ছুটকি আবারো বলল,
—-“এই নিঃশ্বার্থ ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে আপনিও আমাকে ভালোবেসে ফেলবেন তনয় ভাই কথা দিলাম।”
কথাটি বলে ছুটকি ফোন কেটে দিলো।
তনয় প্রতিউত্তর দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে জানে না ভবিষ্যৎ কি হবে।
সিথি খেয়াল করলো রুমি সাদির সাথে নোটস নেওয়ার কথা বলে একপ্রকার চিপকে রয়েছে। সিথি এইবার আর সহ্য করলো নাহ। মেয়েটার ন্যকামি অনেক সহ্য করেছে সে আর সহ্য করবে নাহ।৷ সিথি রুমিকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়ে, সাদির পাশে ঘেসে বলে,
—“রুমি তুমি এখন যেতে পারো আমাদের একটু পারসোনাল কথা আছে। ”
রুমি বোধহয় সিথির কথা ভালো লাগলো নাহ। তাই সে সাদির দিকে তাঁকালো। সিথি রুমির চাহিনী দেখে ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
—“এইযে এদিকে তাঁকিয়ে লাভ নেই। তুমি যাও। সাদি ভাইয়ার সাথে আমার কথা আছে তুমি আমাদের মাঝখানে থেকে বিরক্ত করছো। সাদি ভাই তুমি কিছু বলো। ”
দাঁতে দাঁত চেপে সাদির দিকে তাঁকিয়ে কথাগুলো বলল সিথি। সাদিও সিথির কথায় সায় দিয়ে বলল,
—“রুমি তুমি এখন যেতে পারো। ”
রুমি ঘুমড়ো মুখ নিয়ে চলে গেলো। রুমকি চলে যেতেই, সিথি সাদির কলার চেপে ধরে বলে,
—“আরেকবার যদি ওই মেয়েকে তোমার আশপাশে দেখি, তাহলে বুঝবে মজা। ”
সাদি ঠোটে হাঁসি ঝুলিয়ে বলে,
—“আর ইউ জেলাস? ”
—“ওইযে আমার যে রোগে ধরেছে। যাকে বলে ‘প্রেমরোগ। তোমার ও এই রোগে খুব করে ধরবে। ”
সাদি প্রতিউত্তরে বলল,
—“এই রোগে তো আমি সেই কবেই আক্রান্ত হয়ে গেছি। ”
সাদির কথা শুনে সিথির কি হলো কে জানে? সে লজ্জায় উঠে দাঁড়ালো।
_____৭মাস পর,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি আমি। পেটটা বেশ ফুলে গেছে। আমার গালদুটোও বেশ ফুলে গেছে। রুদ্রিক আসতেই আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,
–“রুদ্রিক শুনো নাহ।”
—“কি হয়েছে?
–“আমাকে গালদুটো কি খুব ফুলে গেছে?আমি জানি গালদুটো ফুলে যাওয়ার কারণে আমাকে খুব বাজে লাগছে? ”
রুদ্রিকের এক্সাম তাই পড়ছিলো। আমার কথা শুনে
রুদ্রিক মুচকি হাঁসে। রুদ্রিক খেয়াল করে দেখে লাল টকটকে গালদুটো ফুলে যাওয়াতে পুরো ফুটন্ত গোলাপের মতো লাগছে।
রুদ্রিক আমার কাছে এসে আমার গালদুটো টেনে ঘোরলাগা কন্ঠে বলে,
—“তুই জানিস কাজল? তোর ফুটন্ত গালদুটো আমাকে তোর দিকে কতটা আকর্ষিত করে। ”
আমি শুকনো ঢুগ গিলে বলে উঠলাম,
—“দেখো আমি কিন্তু তোমার মতলব বুঝতে পেরেছি। বাট এইসব কিচ্ছু হবে নাহ। আমি তোমার সাথে এখনো রেগে আছি। তুমি আমাকে বাইরে যেতে দাও হুহ। ”
কথাটি বলে আমি বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে পরি।
—–“তুই আবারোও রাগ করেছিস? ”
—-“রাগ করবো নাহ? তুমি আমাকে বাইরে যেতেই দিচ্ছো নাহ। দিনের পর দিন আমি মোটু হয়ে যাবো তারপর তুমি আবারোও নিউ গার্লফ্রেন্ড বানানো শুরু করবে। ”
মন খারাপ নিয়ে কথাগুলো বলে ডাইরিতে লিখা শুরু করে দিলাম।
প্রতিউত্তরে রুদ্রিক বাঁকা দাঁত দিয়ে শব্দ করে হাঁসলো। রুদ্রিকের ফোন বেজে উঠতেই আমি খেয়াল করে দেখি ‘জেনি ‘ নামটি। রুদ্রিক নামটি দেখে কেটে দিলো। এতোদিন পরে জেনি কেনো ফোন করেছে? প্রশ্নটা মনে নাড়া দিয়ে উঠলো।
রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ‘ঘুমিয়ে পড় রাত হয়েছে।’কথাটি বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। আমি ডাইরিটা পাশে রেখে শুয়ে পড়লাম।
_________________
সকাল সকাল রুদ্রিক কিছুটা তাড়া নিয়েই অফিসের কাগজ সব রেডি করে গুছিয়ে নিলো। আমি রুমে প্রবেসব করতেই,রুদ্রিক দ্রুত পা চালিয়ে আমাকে কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো। প্রতিদিনের মতো রুদ্রিক আমার কপালে চুমু খেলো নাহ কিংবা ঠিক ‘সময় মতো নিজের খেয়াল রাখবে’ জাতীয় কিছুই বলল নাহ ।
এইসব কিছুই রুদ্রিক প্রতিদিন করে,কিন্তু আজ
রুদ্রিক কিছুই বললো নাহ। গাড়ি নিয়ে রুদ্রিক বেড়িয়ে গেলো। আমি জানালা দিয়ে তাঁকিয়ে দেখতে লাগলাম। কোথায় গেলো রুদ্রিক? কালকে জেনির ফোন আসার পর থেকেই রুদ্রিকের মাঝে পরিবর্তন খেয়াল করছি।
রুদ্রিকের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে আনমনে বলে উঠলাম,
—-” পৃথিবীতে সবকিছু সহ্য করতে পারলেও,নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে একদিনের জন্যে অবহেলা সহ্য করা যায়না। রুদ্রিকের ভালোবাসা আমার কাছে যতটা সুখকর, রুদ্রিকের অবহেলা আমার কাছে ততটাই বেদানায়ক। ”
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু,💙আপ্নারা ইদানিং কমেন্ত করতে কিপটামি করতাছেন 🥱)